মজার সব আবিষ্কারের পুরষ্কার – ইগনোবেল Ig Nobel

আমারা অনেকেই নোবেল প্রাইজের কথা জানেন। কিন্তু ইগনোবেল প্রাইজের কথা খুব কম সংখ্যকই জানি। ইগনোবেল Ig Nobel প্রাইজ অনেকটা প্যারোডী নোবেল প্রাইজ। ইগ নোবেল Ig Nobel পুরস্কার দেয়া হয় হাস্যকর সব আবিষ্কারের জন্য এবং আসল নোবেল পুরস্কারের ব্যঙ্গ হিসেবেই। প্রতিবছর মজার কিন্তু প্রয়োজনীয় এমন ১০ টি ক্ষেত্রে এ পুরষ্কার দেয়া হয়। এই পুরুষ্কারের মূলমন্ত্র হল “গবেষনা যা প্রথমে মানুষকে হাসায় কিন্তু পরক্ষণে চিন্তা করতে বাধ্য করে”।

এই পুরষ্কারটির আয়োজক হাভার্ড ইউনিভার্সিটির বিদ্রূপাত্মক বিজ্ঞান ম্যাগাজিন এননালস অব ইম্প্রোবাবল রিসার্চ (এআইআর)। প্রতিবছর অক্টোবার মাসের শুরুতে নোবেল পুরষ্কার ঘোষনার আগে এই পুরষ্কারের ঘোষনা দেয়া হয় এবং সেপ্টেম্বারে শেষের দিকে হাভার্ডের স্যান্ডার্স থিয়েটার হলে এই পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রত্যেকবারে বারের মত এবারও সেপ্টেম্বারের ৩০ (2010) তারিখে পুরষ্কারের ২০তম আসরে ১০ টি ক্ষেত্রে মজার সব আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। আসুন দেখে নেই কি কি আবিষ্কারের জন্য কারা কারা এই পুরষ্কার পেল।

প্রকৌশলঃ

লন্ডন জিওলজিকাল সোসাইটির কারিনা এইচভেডো (Karina Acevedo) ও এগনেস রোসা (Agnes Rocha) কে যৌথভাবে প্রকৌশল বিভাগে পুরষ্কৃত করা হয়েছে। শুধুমাত্র ক্ষুদ্র একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে সামুদ্রিক বৃহদকার প্রানী(Whale) তিমি মাছের নাকের নকনি (Snot) সংগ্রহের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য তাদের এই পুরষ্কার দেয়া হল।

চিকিৎসাঃ

রোলার কোস্টার

চিকিৎসা ক্ষেত্রে এবছর ইগনোবেল দেয়া হয়েছে নেদারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব আমাস্টারডার এর সিমন রেইটভেল্ড (Simon Reitveld) ও টিলবার্গ ইউনিভার্সিটির ইলজা ভ্যান ভেস্ট (Ilja Van Beest) কে। রোলার কোস্টারে চড়লে আজম্যা রোগের উপসর্গ কমে যায় এই আবিষ্কারের জন্য তাদের এই পুরষ্কার দেয়া হল।

পদার্থবিজ্ঞানঃ

Working with sock

লিয়ান্নি পারকিন (Lianne Parkin), শেইলা উইলিয়ামস (Sheila Williams) এবং পাট্রিসিয়া প্রিস্ট(Patricia Priest) কে এবছর পদার্থবিজ্ঞানে ইগনোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। শীতকালিন দেশে বরফযুক্ত পথে হাটার সময় মোজা জুতার ভিতরে না পরে বাইরে পরলে আকস্মিক পড়ে যাওয়া রোধ করা যায় এই আবিষ্কারের জন্য তাদের এই পুরষ্কার দেয়া হল।

শান্তিঃ

কসম দিলে ব্যাথা কমে যায় এই আবিষ্কারের জন্য এবছর শান্তিতে ইগনোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্যের কিলি ইউনিভার্সিটির রিচার্ড স্টিফেন্স (Richard Stephens), জন এটকিনস (John Atkins)ও এন্ড্রু কিংস্টন (Andrew Kingston) কে।

পরিবহন পরিকল্পনাঃ

জাপানের বিজ্ঞানীরা [(তোসিয়ুকি নাকাগাকি(Toshiyuki Nakagaki), আটসুসি টেরো(Atsushi Tero), সেইজি টাকাগী(Seiji Takagi), টেটসু সাইগুসা(Tetsu Saigusa), কেন্টারো ইটো(Kentaro Ito), কেনজি ইয়ুমাকি(Kenji Yumiki), রায়ো কোবায়াসী(Ryo Kobayashi)]এবং ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা [(ড্যান বেব্বার(Dan Bebber) ও মার্ক ফ্রিকচার(Mark Fricker)] এ বছর পরিবহন পরিকল্পনা বিভাগে ইগনোবেল জিতেছেন। তাদের গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল শুধুমাত্র কাদার ছাচ ব্যবহার করে রেললাইনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা।

রসায়নঃ

oil and water never mix

এমআইটির(MIT) এরিক এড্যাম(Eric Adams), টেক্সাস এ এম ইউনিভার্সিটির স্কট সকলফস্কি(Scott Socolofsky), স্টিফেন মাসুটানি(Stephen Masutani) এবং ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম(BP) কে এবছর রসায়নে ইগনোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। “তেলে ও জলে মিশে না” এই কথাটি ভুল প্রমানের জন্য তাদের এই পুরষ্কার দেয়া হল।

জনস্বাস্থ্যঃ

দাড়িওয়ালা বিজ্ঞানীদের দাড়িতে মাইক্রোস্কপিক জীবানু থাকে এই আবিষ্কারের জন্য এবছর জনস্বাস্থ্য বিভাগে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুয়েল বারবেটো(Manuel Barbeito), চার্লিজ ম্যাথুস(Charles Mathews) ও ল্যারী টেইলর(Larry Taylor) কে এবছর এই বিভাগে ইগনোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। তারা সকলেই যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ফোর্ট ডিস্ট্রিকের ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেলথ ও সেফটি অফিসে কর্মরত।

অর্থনীতিঃ

গোল্ডম্যান সাচস, এয়াইজি, লেম্যান ব্রাদার্স, বিয়ার স্টিয়ার্ন্স, মেরিল লিনশম্যাগ্নেটার কোম্পানী সমুহের এক্সিকিউটিভ ও পরিচালক সমুহকে অর্থনীতি বিভাগে ইগনোবেল দেয়া হয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন ধারনা “নুন্যতম অর্থনৈতিক দায়ে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক অর্জন” দেয়ার জন্য।

ম্যানেজমেন্টঃ

ইটালির ইউনিভার্সিটি অব ক্যাটানিয়া এর আলেসসেন্দ্রো প্লুচিনো (Alessandro Pluchino), আন্দ্রে র‍্যাপিসারদা (Andrea Rapisarda) ও চেজার গরফালো (Cesare Garofalo) কে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ইগনোবেল দেয়া হয়েছে। “একটি প্রতিষ্ঠান আরো বেশী কার্যকর হয় যদি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের কে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি দেয়া হয়” এই তত্ত্ব গানিতিক ভাবে সুস্পষ্টভাবে প্রমানের জন্য তাদের এই পুরষ্কার দেয়া হল।

জীববিজ্ঞানঃ

চীনের বিজ্ঞানীরা (লিবিয়াও ঝ্যাং, মিন ট্যান, গুয়াঞ্জিয়ান জু, জিয়াংপিং ইয়ে, টিয়ু হং, সানয়ি ঝউ, সুয়ি ঝ্যাং) ও ইংল্যান্ডের গ্যারেট জোন্স কে এই বিভাগে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাদের কেন পুরস্কৃত করা হল তা আমার মাথায় ঢুকেনি আপনারা অনুবাদ(They win ignobel for scientifically documenting  fellatio in fruit bats)করে দেখে নেন। 😀

Level 0

আমি নিশাচর নাইম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 47 টি টিউন ও 1182 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

তেমন কিছু জানি না, কিছু জানলে তা অন্যদের শিখানোর চেষ্টা করি যতটুকু সম্ভব।জ্ঞান নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই প্রকৃত সার্থকতা।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

পোস্ট ইমেজ অপশান নেই কেন কেউ বলতে পারেন? টিউন ইমেজ যোগ করব কিভাবে?

পেজটা আরেকবার রিফ্রেশ করেন ……….

    ধন্যবাদ ভাই আপনাকে বা যিনি কাজটি করে দিয়েছেন তাকে।

হা হা
টিউন পড়ে খুব মজা পেলাম। নতুন বিষয় জানলাম।
ধন্যবাদ নাইম ভাই।

ভালো লেগেছে। বাস্তব প্রয়োগে এর স্বার্থক।

নতুন কিছু জানলাম,
অনেক অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

নতুন কিছু একটা জানলাম, ধন্যবাদ।

দুই বছর আগের লেখা এখন মনোনীত!!!! 😆

😀

সবার শেষ জীববিজ্ঞানে ইগ-নোবেল দেয়া হল কারন ওই বিজ্ঞানী ফল-বাদুড়ের যৌনাঙ্গ নিয়ে বৈজ্ঞানিক ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিলেন।

    @Black Dranzer:
    আপনার সাথে আরেকটু লাইন যোগ করেছি আমি :
    যৌন সঙ্গী/সঙ্গিনীর মুখ ব্যবহার পুরুষ প্রাণীর যৌনাঙ্গে যে কার্যকলাপের মাধ্যমে যৌন অনুভূতির উদ্রেক করা হয়, তাকেই বলে Fellatio | ফল-বাদুড়ের ক্ষেত্রে এই Fellatio র ডকুমেন্টারী করার জন্য ওই বিজ্ঞানীরা ওই পুরস্কার পান |
    (http://en.wikipedia.org/wiki/Fellatio)|

    আরেকটা কথা উল্লেখ করা বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবেনা | আমার মনে হয় নিশাকর নাইম ভাই পুরস্কারের কারনটা ঠিকই জানতেন; কিন্তু হয়ত দৃষ্টিকটু হতে পারে ভেবে পাঠকের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন ওই কারনটার মানে বের করার জন্য | তাকে আমি দোষ না দিয়েই বলছি; এটুকু বোধহয় আমরা খোলাখুলি বলতেই পারি | যৌনতার সাথে অশ্লীলতার অনেক পার্থক্য রয়েছে | পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদির সাথে সাথে আমাদের যৌনতার জ্ঞান ও থাকাই উচিত | এটা তো জীবনবিজ্ঞানেরই অংশ |

      @অনুপ: লেখাটা যখন লিখেছিলাম তখন আসলে ব্লগিং করতে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতাম। তাই লিখলাম না খুলে ব্যাপারটা।এখন অবশ্য ওগুলোর বালাই নেই।এখন যত পারি বিস্তারিত লিখতে চেষ্টা করি 😀

@রায়হান: এডমিনরে জিগান।উনি বলতে পারে সমস্যা কি? 😐

Level 0

পড়ে খুব ভাল লাগলো। ধন্যবাদ নাইম ভাই

Level 0

অনেক মজা পেলাম।।ভাল লাগলো।। টিউনারকে ধন্যবাদ।

Level 0

chorooooom post.

খুব মজা পেলাম।

চাইনিজ টা খুব মজা পাইলাম।

ভালু পোস্ট।

মাইক্রোস্কপিক জীবানু টা ক্ষতিকর কি?