প্রযুক্তি, কতো ছোট একটা শব্দ। কিন্তু, আমাদের জীবনে এর ভূমিকা অপরিসীম, এককথায়, অন্বসীকার্য। আমাদের প্রতিদিনের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিই হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তি ছাড়া একটা দিনও কি আমরা কল্পনা করতে পারি! আজকে আমাদের যে সভ্যতা, এর গড়ে উঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদানটি হচ্ছে এ প্রযুক্তির। আর এ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ও বিস্ময়কর অবদানটি হচ্ছে “রোবট” বা “রোবট প্রযুক্তি”। হ্যাঁ, আজকে আমার লেখার বিষয় হচ্ছে এই “রোবট” বা “রোবট প্রযুক্তি”। রোবট হচ্ছে একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বিশেষ, যা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সফলতার সাথে সম্পন্ন করতে পারে। আর এটি হচ্ছে রোবটিকস্ (Robotics) এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা আবার ইঞ্জিনিয়ারিং বিজ্ঞান এবং রোবট প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অন্যভাবে বলা যায়, রোবট সাধারণত একটি ইলেক্ট্রো-যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার কাজকর্ম, কাঠামো ও চলাফেরা দেখে মনে হয় সেটি নিজের ইচ্ছায় কাজ করছে, কারো দ্বারা এটি প্রভাবিত হচ্ছে না। মূলত, রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি প্রোগ্রাম বিশেষ যার পরিবেশ বুঝে কাজ করার ক্ষমতা আছে এবং যা দক্ষভাবে সুনিয়ন্ত্রিত চলন প্রদর্শন করতে পারে।
নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু রোবট সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
রোবট প্রযুক্তির প্রথম থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে এমন একটা রোবট বানানোর জন্য, যা পুরো মানুষের মতো চলাফেরা করবে, হাঁটতে পারবে মানুষের মতো সাবলীল ভঙ্গিমায়। এই লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো রোবট বানানো হয়েছে, যারা মানুষের মতো দু’পায়ে হাঁটতে না পারলেও ৪, ৬ বা তার চেয়ে বেশি পা ব্যবহার করে হাঁটতে পারে। কিন্তু, আগেই বলেছি তারা কেউ সাধারণত মানুষের মতো দু’পা ব্যবহার করে না। এক্ষেত্রে কিছুটা সফল বলা যায় এই ‘আইকাব’ রোবটটিকে কারণ এটি মানুষের মতো দু’পা ব্যবহার করে হাঁটার সময়। তবে এদের চলার পথ মসৃণ হতে হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন পড়লে এরা কিছুটা সিড়িও ভাঙ্গতে পারে। এদের প্রধান বিশেষত্ব এরা চলাফেরায় অনেকটা মানুষের মতো আচার-আচরণ প্রকাশ করে। আইকাব এর ডিজাইন করেছেন রোবটকাব কনসর্টিয়াম (RobotCub Consortium)।
আরকিউ-৪ গ্লোবাল হক হচ্ছে মানুষ ব্যতীত স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিত একটি রোবট বিমান, যা unmanned aerial vehicle (UAVs) নামেও পরিচিত। এই রোবট বিমানটি পরিচালনার ক্ষেত্রে মানুষের কোনো রূপ সম্পৃক্ততার প্রয়োজন হয় না। এটি অটোপাইলট ব্যবহার করে পরিচালিত হয় এবং ভ্রমণের প্রতিটি পর্যায়ে নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে। টেকঅফ, স্বাভাবিক ফ্লাইট এমনকি লেন্ডিং এর মতো কাজগুলোও এটি একা একাই সম্পন্ন করতে পারে। ধারণা করা হয়, যাত্রীবাহী বিমানের ক্ষেত্রে এটি ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত করবে। তাছাড়া, যুদ্ধ ক্ষেত্রেও এ বিমান দারূণভাবে কাজে লাগানো যায়। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ও অত্যন্ত নিখুঁততার সাথে পরিকল্পিতভাবে বিমান হামলা চালাতে পারে। এককথায়, বাহনের ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনয়ন করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
হিউম্যান সাইবারনেটিক এইচআরপি রোবটটি অবিকল মানুষের মতো দেখতে। এর মুখায়বে জাপানী মেয়ের চেহারা নিখঁতভাবে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে, দেখে মনে হতে পারে ১৯-২০ বয়সের কোন মেয়ে। এটি ছোট নাক এবং কাঁধ পর্যন্ত চুলের অধিকারী এক অপরূপ সুন্দরী নারী রোবট। এই রোবটটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি একটি মডেল কন্যা! মডেলদের ড্রেস পরে এই রোবটটি ৪২ রকমের স্টাইলে ক্যাটওয়াক করতে পারে। এর ব্যবহার অনেকটা স্বাভাবিক মানুষের মতো। যা সহজেই যেকোন মানুষের মন জয় করতে পারে। এটিকে মনে করা হয় নিকট ভবিষ্যতের স্বয়ংক্রিয় মানুষের অন্যতম মডেল হিসেবে। এই ধরনের রোবটের মতো আরও কিছু রোবট রয়েছে যারা দেখতে শুধু সুন্দরীই নয় বরং কেউ ওদের বিরক্ত করলে বা বাজে ব্যবহার করলে ঠাপ্পড়ের সাথে সাথে ইলেকট্রিক শক দেয় এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের নিকট নালিশ পর্যন্ত জানাতে পারে।
এই ধরনের রোবটগুলো ঘর পাহারা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রয়োজনে কোনো বিপদ দেখলে এরা সাবধান করে দিতে পারে। এটি চালানোর জন্য ব্যাটারীর প্রয়োজন হয় এবং প্রয়োজনের সময় এটি নিজেই নিজের চার্জের ব্যবস্থা করতে পারে। গোয়েন্দাগিরির কাজেও এই ধরনের রোবটগুলো বিশেষভাবে পারদর্শী।
এই ধরনের রোবটগুলো খুব মজার। এরা প্রয়োজনে আপনাকে ঘরের কাজে সাহায্য করবে, চা বানিয়ে দিবে, এমনকি রান্না-বান্নার কাজেও এ ধরনের রোবটগুলো বিশেষভাবে উপযোগী। এরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজেও বিশেষভাবে পারদর্শী। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এ ধরনের রোবটগুলো আপনার একাকীত্ব দূর করার জন্য আপনার সাথে কথা বলে আপনাকে সময় কাটাতেও সহায়তা করবে, কিন্তু এক্ষেত্রে তারা তাদের প্রোগামের বাইরের কোন কথা আপনার সাথে বলবে না, যা কথাবার্তা তারা বলবে তা আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা থাকতে হবে।
এখানে ছবিতে দুটো রোবট সাপকে দেখা যাচ্ছে। যার প্রথমটিতে ৬৪টি মোটর এবং পরের টিতে ১০টি মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে মানুষ পৌঁছাতে পারে না, সেখানে মানুষকে সাহায্য করার জন্য এ রোবটগুলোকে ব্যবহার করা হয়। নিরাপত্তা বা গোয়েন্দাগিরির কাজেও এ ধরনের রোবটগুলো সফল ভাবে ব্যবহার করা যায়। এরা দেখতে ভয়ংকর হতে পারে, কিন্তু কাজে-কর্মে অত্যন্ত যোগ্য ও সূচারু। জাপানী এসিএম-আর৫ এ ধরনের একটা রোবট।
‘কিসমত’ শব্দটি এসেছে আরবী, তুর্কি, হিন্দি, উর্দূ ও পাঞ্জাবী ভাষা থেকে। যার অর্থ, ভাগ্য। ‘কিসমত’ নামের এ রোবটটি অত্যন্ত বিশেষ ধরনের একটি রোবট। কেননা, এই রোবটটি মানুষের মুখের অনুভূতিকে নিজের মাঝেও ফুঁটিয়ে তুলতে পারে। অর্থাৎ, এটি এমন এক ধরনের রোবট যা এর চোখ, মুখ, ঠোঁট, গাল ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের বাহ্যিক অনুভূতিগুলো ফুঁটিয়ে তুলতে পারে এবং মানুষকে নকল করতে পারে। এই রোবটটিতে যে ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, তার দাম কম করে হলেও ২৫০০০ মার্কিন ডলার। এটি বিজ্ঞানীদের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার বলে ধরা হয়, কেননা এটিই একমাত্র রোবট যা মানুষের মুখভঙ্গি নিজের মুখয়বের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে।
আসলে রোবট নিয়ে বলতে গেলে লিখে শেষ করা যাবে না। কারণ, পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে। নিত্য নতুন আবিস্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন সব প্রযুক্তি, আর সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সব রোবট। যা একে অন্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি উন্নত ও সাবলীল। তাই বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন নিকট ভবিষ্যতেই হয়তো এমন কোনো দিন আসবে, যখন রোবট পুরোপুরি মানুষের মতোই সব কাজ করতে পারবে, পারবে নিজেকে মানুষের মতো করে তুলে ধরতে। সে পথেও কিন্তু পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে! কিন্তু আজ আর সে সম্পর্কে বলবো না। তার জন্য আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে।
[কারণ, আমার ঘড়ি অনুযায়ী এখন ভোর ৪টা বেজে ৩০ মিনিট। এতো রাত (নাকি ভোর) হয়ে গিয়েছে তারপরও আমি লিখছি….কেননা গত ১২ই মে আমি আমার শেষ টিউন করলেও পরবর্তীতে পরীক্ষা এবং অন্য অনেক ব্যস্ততা থাকার কারণে আর কোনো টিউন করতে পারছিলাম না, এমনকি আমার ব্লগেও অনেকদিন যাবত লেখা হয় না। তাই আজ যখন লিখতে বসেছিলাম, ঠিক করেছিলাম লেখা শেষ না করে আর উঠবো না! কারণ, না লিখতে, না লিখতে অভ্যাস এখন খারাপ হয়ে গেছে :(। তাই, এখন চেষ্টা করছি নিজের আমিকে ফিরে পাওয়ার জন্য। আশা রাখি, এখন থেকে আমি নিয়মিত থাকবো]
আমি ফাহিম আহ্মেদ। Manager, Transcom Electronics Ltd., Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 480 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ফাহিম আহ্মেদ। ভাল লাগে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতে, গান শুনতে আর প্রচুর বই পড়তে। আমি মুক্ত মনের স্বাধীন মানুষ হতে চাই, চাই লেখার স্বাধীনতা। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। স্বপ্নের মাঝেই আমি বাস্তবতার খোঁজ করি। স্বপ্নের রঙ্গিন ভেলায় ভেসে, আমি সত্য জগতে পাড়ি জমাতে চাই। চাই স্বপ্নীল আলোতে নিজেকে উদ্ভাসিত করতে।...
দুর্দান্ত টিউন অনেক অনেক ধন্যবাদ।