এমন একটি ভবিষ্যতের কথা ভাবুন তো যেখানে আপনি আপনার মনের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। ব্যাপারটা আসলে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আমরা আজ সেই নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়েছি।
এই টিউনে আপনাদেরকে ৮ টি বিদ্যমান গ্যাজেটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো যা আপনার মস্তিস্কের কমান্ডের মাধ্যমে আপনার বাস্তব জীবনের কাজগুলোকে সম্পূর্ণ করবে। তাহলে চলুন এই আকর্ষণীয় বিষয়গুলোকে আরও উৎঘাটনের জন্য মেইন বিষয়গুলো আলোকপাত করা যাক।
আমরা ও আপনারা সবাই তো সবাই কম্পিউটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে "মাউস" ও "কীবোর্ড" এর উপর নির্ভরশীল। এমন যদি হত যেমন আপনার মনকে কাজে লাগিয়ে সেই একই কাজ করতে পারছেন? হ্যাঁ নিউরো-টেকনলোজির কল্যাণে আজ তা সম্ভব। আর সে অসবভব কে সম্ভব করেছে EPOC । এটি একটি উচ্চ রেজল্যুশন ও অনেকগুলো চ্যানেলের সমন্বয়ে তারবিহীন নিউরোহেডসেট। এতে রয়েছে ১৪টি সেন্সর ও দুটি ইলেক্ট্রিক সিগনাল যা বাস্তব সময়ের ব্যবহারকারীর চিন্তা, অনুভূতি এবং এক্সপ্রেশন সনাক্ত করতে পারে। এটির সাহায্যে অনেক দূর থেকে কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং একবার চার্জ দিলে টানা ১২ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন।
এটি দিয়ে আপনি দুই ধরনের কাজ করতে পারবেন।
শৈল্পিক ও সৃজনশীল অভিব্যক্তিঃ আপনার চিন্তা, অনুভূতি ও আবেগ ব্যবহার করে আপনি পরিবর্তনশীল রঙ, সঙ্গীত, এবং শিল্প তৈরি করতে পারবেন। প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য জীবন পরিবর্তনকারী অ্যাপ্লিকেশন বের করেছে Emotiv. যেমন, হুইলচেয়ার নিয়ন্ত্রণ, মাইন্ড-কীবোর্ড ও হাত না দিয়ে খেলা যায় এমন সব গেমস।
গেম ও ভার্চুয়াল ওয়ার্ডসঃ আপনার মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনি এখন ভার্চুয়াল পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করতে পারেন। EPOC এর নিজেদের ডেভেলপ করা গেম ছাড়াও EmoKey এর সাহায্যে যে কোন গেম কে আপনি আপনার চিন্তা শক্তি দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারবেন ও খেলতে পারবেন। আর এটি নিতে হলে আপনাকে গুনতে হবে প্রায় ২৯৯ ডলার বা ২৩,৩২২ টাকা।
➡ ভিডিও - http://www.youtube.com/watch?v=LZrat-VG4Ms
MUSE নিত্য দিনের কাজে ব্যবহৃত ৬-সেন্সর বিশিষ্ট একটি ব্রেইনওয়েভ হেডব্যান্ড। এটি কোনো মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং কোন টাস্ক সম্পাদনের আগে আপনাকে গাইড করে জানিয়ে দেবে। এটি খুব হালকা ও পোর্টেবল ডিভাইস যা মূলত ডিজাইন করা হয়েছে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশান এর উপর ভিত্তি করে। এই অ্যাপ্লিকেশান গুলো মস্তিস্ক উন্নতি, ফিটনেস ট্রেনিং, মানসিক চাপ, অধ্যয়ন এবং আরো অনেক চর্চার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি আপনার মস্তিষ্কের সাথে কাজ করে আপনার মানসিক দক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলে।
MUSE কে আপনার স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট এর ব্লুটুথ মাধ্যমে কানেক্ট করে বিভিন্ন সব অ্যাপ্লিকেশান ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, MUSE এর সাহায্যে আপনার মনের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আন্ড্রয়েড বা আইফোন ডিভাইস গুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। আপনি এটির সাহায্যে টেকটিউনস ব্রাউজ করতে পারেন, গেম খেলতে পারবেন। আর সব কিছুই আপনি শুধু আপনার মস্তিস্ককে কাজে লাগিয়ে করতে পারবেন। অসাধারন এই ডিভাইসটির দাম পরবে প্রায় ১৬৫ ডলার বা ১২,৮৭০ টাকা।
➡ ভিডিও - http://www.youtube.com/watch?v=GYO_WC7TE4c
NeuroSky MindWave একটি ইউসার-ফ্রেন্ডলি নিউরো-হেডসেট যা আপনার কম্পিউটারকে আপনার প্রাইভেট টিউটরে পরিনত করেছে। এটির প্রধানত ডিজাইন করা হয়েছে ছোট বাচ্চার মস্তিস্ককে আরও উন্নত করার জন্য। এটি নিয়ে আনতে গবেষকদের EEG টেকনলোজির উপর এক দশক রিসার্চ করতে হয়েছে। এই ডিভাইসটি প্রায় ৭৯ টি কাস্টম অ্যাপস এর সমন্বয়ে গঠিত যেগুলোর বেশিরভাগই জুড়েই আছে লাইফ ইম্প্রভিং অ্যাপস ও এডুকেশোনাল গেম। এখন আপনার শিশুর ভবিষ্যৎ সুপারহিউম্যান হিসেবে তৈরির একমাত্র কারন হতে পারে এই প্রযুক্তি। আর এটি আপনি পাবেন মাত্র ৭৯ ডলারে।
➡ ভিডিও - http://www.youtube.com/watch?v=hqeiPvFzK9A
আপনি কই ভাবতে পারেন শুধুমাত্র আপনার চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপনি গাড়ি চালাতে পারেন। জার্মানির একদল গবেষক আজ এটিকে সম্ভব করেছে। এটি ও একটি ওয়ারলেস নিউরোহেডসেট যাতে Emotiv EGG টুল ব্যবহার করা হয়েছে। এটি গাড়ির drive-by-wire সিস্টেমের সাথে যুক্ত হয়ে গাড়িতে বিশেষ কমান্ড পাঠায়। মস্তিস্ক থেকে পাঠানো বিশেষ বার্তা তখন গাড়িকে স্টিয়ারিং বা ত্বরান্বিত করে। গবেষকরা দাবি করে এটি ভবিষ্যতের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসবে এবং এটি গুগলের ড্রাইভারলেস কার থেকে অনেক উন্নত। তারা এটিকে নামকরন করেছেন "MadeInGermany" নামে। দামের ব্যাপারে কোন তথ্য না পাওয়ায় দিতে পারলাম না।
➡ ভিডিও - http://www.youtube.com/watch?v=iDV_62QoHjY
বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ সুবিধা হল এটি অসমর্থ মানুষেরকে আশা দেয়। এই নিউরোবিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞানের বেশ কিছু ভালো আবিষ্কারের মধ্যে DARPA’s Prosthetic Arm ও একটি। এটি একজন অঙ্গ হারানো মানুষকে তার প্রকৃত হাতের অনুভুতি ফিরিয়ে দেয়। এটি আপনার মস্তিস্কের চিন্তা কে কাজে লাগায় এবং তা আপনার বাহুতে প্রেরন করে হাতকে বিভিন্ন দিকে মুভ করায়। এটির সাহায্যে আপনি যে কোন বস্তুকে ধরতে পারবেন, মাটি থেকে তুলতে পারবেন এবং আরও অনেক কাজও করতে পারেন। এটি আপনার হাতের একটি ভালো বিকল্প যা দিয়ে আপনি স্বাভাবিক হাতের মতই স্বাধীনভাবে সব কাজ করতে পারেন।
➡ ভিডিও - http://www.youtube.com/watch?v=suwZ5D9bk0M
নিউরোবিজ্ঞানের একটি মহৎ ও ফানি আবিষ্কার এই Necomimi ও Shippo. Necomimi হল একটি বিশেষ হিউম্যান অঙ্গ যা ব্রেইনওয়েভ সেন্সর ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটি দেখতে প্রায় বিড়াল, বাঘ বা সিংহের কানের মত। এটি আপনার দেহের অনুভুতি প্রকাশের জন্য নতুন অঙ্গ বিশেষ। এটি আপনার বিশেষ মুহূর্ত গুলোতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করে। যেমন, আপনার মস্তিস্ক যখন রিলাক্স থাকে তখন এটিও রিলাক্স মুডে থাকে, আপনি যখন কোন কিছুতে মনোযোগী হবেন তখন এটি আপনা আপনি দাড়িয়ে যাবে।
Shippo প্রযুক্তিটি আরও বেশি মজাদার। এটি আপনার শরীরের অতিরিক্ত নতুন একটি লেজ হিসেবে কাজ করে। Neurowear এর আবিস্কারকরা Necomimi-র ব্যাপক সাফল্যের পর তাদের অনুরধে এই নতুন প্রযুক্তি বাজারে নিয়ে আসে। আপনি যখন সুখী ও রিলাক্স থাকবেন তখন আপনার পেছনে লাগানো লেজটি দুলতে থাকবে যা বিভিন্ন লোমযুক্ত প্রাণীরা করে থাকে।:D এই বিশেষ প্রযুক্তির আমেজ পেতে হলে আপনাকে ৯৯ ডলার খরচ করতে হবে।
➡ ভিডিও - http://www.youtube.com/watch?v=w06zvM2x_lw এবং http://www.youtube.com/watch?v=qvHcBq7UaY0
Neuro Turntable এমন একটি প্রযুক্তি যার সাহায্যে আপনি আপনার মোবাইলের গানকে আপনার মস্তিস্কের সাহায্যে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। এই Neuro Truntable মিউজিক প্লেয়ারের একটি বিপ্লবী ধারণা যা মানুষের নিউরাল ওয়েবকে সনাক্ত করে সে মোতাবেক কাজ করে। আপনি যখন মনোযোগী হবেন তখন গান শুরু হবে। আবার আপনার গান অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে যখন আপনি কারো সাথে কথা বলবেন অথবা অন্য কিছু নিয়ে ভাববেন। Neuro Turntable মিউজিক প্লেয়ার বর্তমানে আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি প্লেয়ার। শুধু আপনার মোবাইলে নিউরো-সেন্সর সেট করুন এবং Neuro Turntable মোবাইল থেকে আপনার গান টি নির্বাচন করুন। আর আপনার চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছামত গান শুনুন।
➡ ভিডিও - http://www.youtube.com/watch?v=Z0fOJCCiglQ
Orbit Helicopter একটি শিক্ষামূলক হেলকপ্টার খেলনা যা আপনি নিজের মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাতাসে উড়াতে পারবেন। এটি নিয়ন্ত্রন করার জন্য রয়েছে একটি নিউরো হেডসেট। এই ছোট্ট জিনিসটি দেখতে অনেকটা Leonardo Da Vinci’s সময়কার হেলকপ্টারের মত। এটির দাম ১৪৯ ডলার।
আমি রনি সাটিয়ার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 573 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কিভাবে সার্চ করে এই তথ্য গুলো খুজে পান? ইংরাজি তথ্য গুলো বাংলায় অনুবাদ করেন? পারলে জানাবেন। যাতে আপনার মত অনেকেই সেটা করে আর যাতে অনেক বেশি করে নতুন নতুন প্রযুক্তি জানতে পারি। সবাই মিলে কাজটা ভাগ করে নিলে সবারই ভাল।