খ্রিস্টের জন্মেরও শত শত বছর আগে মিশরে গড়ে উঠেছিল এক অসাধারণ সভ্যতা। যেখানে তারা গড়ে তুলেছিল সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন রহস্যমন্ডিত পিরামিড। এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে সবচেয়ে প্রাচীন হলেও সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একমাত্র পিরামিডই এখনো পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে।
যার কাঠামো আধুনিক বিজ্ঞানের সকল শাখায়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আর্কিটেকচারাল হিসাবে এ ধরনের কাঠামো সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রতিরোধক এবং স্থায়ী হয়ে থাকে। এটা খুবই সম্প্রতি দেখা গেছে যে পিরাপিড আসলে একট রেশনাল স্ট্রাকচার।
পিরামিডের গঠনশৈলীর প্রভাব সারা পৃথিবী ব্যাপী। পৃথিবীর সকল প্রান্তেই পিরামিডের আদলে বহুস্থাপনা গড়ে উঠেছে।
একবার ভাবুনতো, উপরের চিত্রের মানুষগুলোর তুলনায়, তীর চিহ্ন নির্দেশিত বড় বড় পাথরগুলো কিভাবে এত উপরে তোলা হয়েছিল। অনেক পদ্ধতি থাকতে পারে কিন্তু আমরা কোন সময়ের কথা আলোচানা করছি তা একবার ভাবতে হবে।
এখন থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে আমাদের মুহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মৃত্যুবরণ করেন। তারও প্রায় ৬০০ বছর আগে জিশু-খ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করে। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় তারও প্রায় ৩৫০০ বছর আগেকার।
অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ১৪০০ + ৪০০ + ৩৫০০ = ৫৫০০ বছর আগে মানুষের তুলনায় অস্মাভাবিক রকম বড় পাথরগুলো কিভাবে এত উপরে তোলা হয়েছিল ?? আধুনিক যুগের মানুষের কাছে এটা বড় একটা রহস্য। সাধারণ রোডের উপর দিয়ে কোন গাড়ী বা যন্ত্রছাড়া এত বড় পাথর টেনে আনা কত অসাধ্য তা আমরা সবাই কল্পনা করেতে পারি। কিন্তু মিশুরর মরুভূমির বালুর উপর দিয়ে এত বড় পাথর টেনে আনা তা কত অসাধ্য তা আমাদের কল্পনার বাহিরে। কেউ কখনো বালির উপর দিয়ে সাইকেল চালাতে গেলেই দেখবেন বালি কিভাবে তার উপর দিয়ে চলমান বস্তুকে টেনে ধরে।
৫৫০০ হাজার বছর আগে মিশরে কেন সমগ্র পৃথিবীতেই এমন কোন প্রযুক্তি ছিল না যারা দ্বারা এ বিশাল বিশাল স্থাপনা গুলো তৈরী করা সম্ভব।
একারনেই হয়তোবা অনেকেই এ বিশাল স্থাপনাগুলোর পেছনে কোন রহস্যময় অতিপ্রাকৃত শক্তির অস্তিত্ত্ব অনুভব করেন।
সে সময় মিশরের লোকেরা ফারাও রাজাদের নিজেরদের দেবতা মনে করতো এবং মৃত্যুর পর তাদের পরবর্তী জীবনে চলার জন্য তার সমাধিতে তাদের মমিকৃত মৃতদেহের সাথে প্রচুর পরিমানে ধন সম্পদও দিয়ে দিত। ফারাও রাজাদের এ সমাধিগুলোকে যথেষ্ট নিরাপদ করে দেয়ার জন্য এর উপর তৈরী করা হত পিরামিড আকৃতির সুবিশাল কাঠামো। যত বড় রাজা, তত বড় পিরামিড।
গবেষনা অনুসারে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে 1539 BC থেকে 1075 BC পর্যন্ত পিরামিডের মত করে বা নির্ভেজাল লাইমস্টোন কেটে প্রায় ৬৩ টি সমাধি তৈরী করা হয়েছিল। যার বেশির ভাগের মধ্যেই প্রবেশপথ গুপ্ত এবং পথটি অনেক দীর্ঘ এবং ক্রমে নিম্নগামী অসংখ্যা ছোট বড় করিডরের জটিল বিন্যাসের মাধ্যমে অবশেষে গিয়ে ফারাওদের সমাধিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। সমাধিগুলোতে নানা রকমের প্রতীক, দেয়ালে খোদাইকৃত ছবি, অন্যজগতে ভ্রমনের তথ্য এবং নতুন জীবনের প্রয়োজনীয় সকল উপাদান দেয়া থাকতো। ধন-সম্পত্তির কথাতো আগেই বলেছি। এর রুমগুলোর একদম কেন্দ্রে থাকতো স্বর্ণমিন্ডিত ফারাও রাজাদের শবাধার।
ফারাও রাজারদের সমাধিগুলোর একটি নমুনা চিত্র
এ রুমগুলো খুবই সতর্কতার সাথে সীল করে দেয়া হতো এবং এ সমাধির মূল্যবান দ্রব্য রক্ষা করার জন্য তখনকার মিশরের শ্রেষ্ঠ আর্কিটেক্টরা চোরদের ধোকা দেয়ার উপযোগি ডিজাইন করার দায়িত্ব পেত। মাঝে মাঝে প্যাসেইজ ওয়েগুলো বন্ধ করার জন্য বিশাল এবং মজবুত গ্রানাইটের প্লাগ ব্যবহার করা হতো। চোরদেরকে দমন করার জন্য নকল দরজা, গোপন রুম ইত্যাদি অসংখ্য ব্যবস্থার পরও প্রায় ক্ষেত্রেই সমাধির প্রবেশ প্রথে অভিশাপ মন্ত্র দিয়ে নিরাপদ করে দেয়া হত।
কিন্তু কালক্রমে পূর্ব-সাবধানতা মূলক পরিকল্পনাগুলোর বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছিল। প্রাচীন যুগের চোর এবং ডাকাতেরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ঠিকই সমাধির পথ খুজে বের করতে এবং সকল ধন-সম্পত্তি আত্নসাৎ করতে সক্ষম হয়েছিল।
একই কারনে অর্থাৎ গুপ্তধনের আসায়, মিশরের বুকে শত শত গবেষক হন্যে হয়ে সমাধিগুলোতে ঘুরে বেড়ীয়ে নিজেদের জীবন শেষ করে দিয়েছেন।
মিশরের অতিপ্রাচীন স্থাপত্য আবিষ্কারের অভিযানগুলো প্রকৃতপক্ষে পূর্ণাঙ্গ আঙ্গিকে শুরু হয় ১৮ শতাব্দীতে।
১৯ শতাব্দীতে এসে ইউরোপীয়রাও এ গুপ্তধনের সন্ধ্যানে আগ্রহী হয়ে উঠে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে হতাশ হতে হয়েছিল কারন যথেষ্ট গবেষনা করে কোন সমাধি আবিষ্কার পর দেখা যেত আগেই কেউ না কেউ সেই গুপ্তধন নিয়ে গেছে।
১৮ শতাব্দী পর্যন্তও সমাধিগুলোতে কোন অভিশাপের অস্তিত্ত্বতের ব্যাপারে সাধারন মানুষ জানত না। কিন্তু ১৯ শতকের প্রথম দিকে ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার ও তার দল তুতেন খামুন নামক একজন ফারাও রাজার সমাধি এবং তাতে প্রচুর পরিমানে ধন-সম্পত্তি খুজে পান। তারপর থেকেই সমাধিগুলোতে বিদ্যমান অভিশাপের বিষয়টি সবার নজরে আসে। কারন উক্ত সমাধির প্রবেশপথে খোদিত ছিল একটি অভিশাপ। যা এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতেই তুতেন খামুনের অভিশাপ নামে পরিচিত।
আমার আজকের টিউনের বিষয়ও তাই –
হাওয়ার্ড কার্টার
১৮৯১ সালের কথা হাওয়ার্ড কার্টার নামক একজন অল্পবয়স্ক ইংলিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ মিশরের মাটিতে পা রাখেন। মিশরের প্রাচীন স্থাপনা নিয়ে তার প্রচন্ড আগ্রহ কারন স্থাপত্য শিল্পের এত প্রাচীন এবং সুসংবদ্ধ নমুনা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। বছরের পর বছর তিনি কাজ করে গেলেন। তার অদম্য শিল্পগুনকে কাজে লাগিয়ে রানী হৎসিপসুটের মন্দিরের দেয়ালের ছবিগুলোর নমুনা তৈরী করলেন প্রায় ছয় বছর ধরে।
মিশরে থাকাকালীন বছরগুলোতে তিনি তার প্রাপ্ত গবেষনা এবং অনুসন্ধান থেকে এটা অনুভব করছিলেন যে কমপক্ষে একটি আনাবিষ্কৃত সমাধি এখনো মিশরে রয়েছে। আর তা হচ্ছে ফারাও রাজাদের মধ্যে একেবারেই অপরিচিত রাজা তুতেন খামুনের সমাধি এবং তার ধারনাই সত্যি ছিল।
*************
তুতেন খামুন
ফারাওদের ১৮ তম রাজবংশের রাজাদের মধ্যে তুতেন খামুন ছিলেন ১১ বা ১২ তম। তিনি 1333 - 1324 B.C.E. কারো কারো মতে 1336 - 1327 B.C.E. পর্যন্ত মিশরের রাজত্ব করেন। তিনি রানী আনখেসেনপাতিন নামে অল্প বয়স্ক এক যুবুতীকে বিয়ে করেন। অনেক গবেষকের মতে রানী আনখেসেনপাতিন আসলে তুতেন খামুনের বোন ছিলেন।
তুতেন খামুনের পিতা আখেন-আতেন
তুতেন খামুনের পিতার নাম ছিল আখেন-আতেন। তার পিতার পরই তুতেন খামুন সিংহাশনে বসেন। তার পিতা “আতেন” (সূর্য দেবতা) নামক একটি নতুন ধর্ম গ্রহন করানোর জন্য জোর তার রাজত্ত্বে ব্যপক প্রচেষ্টা চালান। আগে মিশরের লোকেরা “আমুন” (বায়ু এবং শ্বাস নিঃশ্বাসের দেবতা) এর উপাসক ছিল। তার পিতা তখনকার মিশরের জনগনের উপর তার সৃষ্ট ধর্মটি চাপিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ শুরু করে এবং পূর্বের ধর্মীয় উপাসনালয় এবং স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা শুরু করে। তার লক্ষ ছিল আমুন নামটি বিলুপ্ত করা। ফলে তৎকালীন মিশরের জনগনে মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ সময়ে তারা পিতা মারা যান কিন্তু কি কারনে তা এখন পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেছে? তবে অধিকাংশ গবেষকের মতে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
তুতেন খামুন পিতার মৃত্যুর পর মাত্র নয় বছর বয়সে সিংহাসনে আরোহন করেন এবং আবার পুরাতন ধর্ম অর্থাৎ “আমুন” এর উপাসনা প্রচলন করেন এবং সে অনুসারে নিজের নাম পরিবর্তন করে জনগনকে আশ্বস্ত করেন।
তুতেন খামুনের প্রকৃত নাম ছিল তার পিতার মত তুতেন-খাতেন এবং তার স্ত্রীর নাম ছিল রানী আনখেসেনপাতিন। কিন্তু তার পিতার মৃত্যু পরিবর্তিতে সমর্থন বাড়ানোর জন্য তিনে শীঘ্রই নিজের নাম তুতেন-খাতেন থেকে তুতেন-খামুনে এবং স্ত্রীর নাম আনখেনপাতিন-আমুনে পরিবর্তন করেন।
হায়ারোগ্লিফিতে লিখা তুতেন খামুনের নাম
গবেষকদের মধ্যে তুতেন খামুনের নাম নিয়ে যথেষ্ট মতবেদ রয়েছে। কারো কারো মতে তার নাম তুতেন-খামুন, কারো মতে তুতেন-খামেন আবার কারো কারো মতে তুতেন-খাতন। প্রকৃত পক্ষে তার নাম গুলো বেশির ভাগই হায়ারোগ্লিফি হরফে লিখা ছিল। যার অর্থ আধুনিক সভ্য মানুষের কাছে প্রায় ১৮০০ বছর দুর্বোধ্য ছিল এবং তার অর্থ উদ্ধারের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে মাত্র ১৯ শতকে।
হায়ারোগ্লিফির একটি নমুনা
ভাষাকে লিখে প্রকাশ করার সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতির একটি ছিল এই হায়ারোগ্রাফি। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন হায়ারোগ্লিফিক লিখাটি প্রায় খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় ৩৩০০ বা ৩২০০ বছর পূর্বে লিখা। হায়ারোগ্লিফিতে কোন Vowel নেই। এ কারনে ঠিক কিভাবে হায়ারোগ্লিফি উচ্চারন করতে হবে এটা বের করা প্রায় অসম্ভব।
আর একারনেই তুতেন খামুনের নামের সঠিক উচ্চারন নিয়ে নানা জনে নানা মত প্রচলিত আছে।
আয় (Ay)
ইতিহাসের কোথাও এটা খুজে পাওয়া যায়নি কিভাবে তুতেন খামেনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ গবেষকেরই ধারনা ছিল তাকে হত্যা করা হয়েছে। তুতেন খামুন দুই দুইটি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। তবে অনেক গবেষক এটা বিশ্বাস করেন যেহেতু তুতেন খামুনের কোন বংশধর ছিল না তাই তাকে হত্যা করলেই তৎকালীন রাজাকে সাহায্য করার জন্য সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত “আয় (Ay)” সিংহাশনের দখল খুব সহজেই পেয়ে যেত। একারনেই “আয়” তাকে হত্যা করে। এ হত্যা কান্ডে তুতেন খামুনের স্ত্রী এবং তাকে বহনের কাজে নিয়োজিত গাড়ির চালকও জড়িত বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেন।
ফারাও রাজাদের সামনে হোরেম-হ্যাব
এটা সত্য হওয়ার যথেষ্ট কারনও রয়েছে কারন তুতেন খামেনের মৃত্যুর পর তার পরবর্তি রাজা হান “আয়” এবং দু:খের বিষয় তিনিও বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন নি, তার কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে নেন তৎকালীন সৈনাপতি “হোরেম-হ্যাব”। উভয়েই সমস্ত রাজকীয় দলিল দস্তাবেজ, খোদিত দেয়াল লিখন হতে তুতেন খামেনের নাম মুছে দেন এবং তার সম্পর্কিত যাবতীয় জিনিস ধ্বংস করে দেন। ফলে ইতিহাস থেকে তুতেন খামেনের নাম মুছে যায় চিরতরে। কিন্তু ভুল ক্রমে কতিপয় অগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ছোট দ্রব্যসামগ্রীতে তার নাম রয়ে যায়। “তুতেন খামেন নামক একজন ফারাও রাজা ছিলেন” ১৯২২ -১৯২৩ সালের আগে সেটাই ছিল একমাত্র প্রমান।
তুতেন খামুনের এক্সরে করা করোটির ছবি
তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারের পর তার শরীর প্রায় তিনবার এক্সরে করে পরীক্ষা করা হয়েছিল। সর্বশেষ এক্সরের তথ্যমতে মিশর, ইতালি, সুইস এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বিশেষজ্ঞরা একমত প্রকাশ করেন যে, কোন কারনে তুতেন খামুনের বাম পা মারাত্নকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং সে পায়ের হাড়ে চিড় দেখা দেয়। ফলে খুবই অল্প সময়েই তুতেন খামুনের মৃত্যু ঘটে।
তুতেন খামুনের মমি
সংক্ষেপে তুতেন খামেনের বাহ্যিক গঠন:
মাথা: সম্পূর্ণ মুন্ডিত।
চোখ: বিস্তৃত।
কান: ৭.৫ mm ব্যাস বিশিষ্ট ছিদ্র যুক্ত।
করোটি: সম্পূর্ণ খালি। (মস্তিষ্ক)
আক্কেল দাঁত: সামান্য উত্থিত।
উচ্চতা: ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি।
বয়স: প্রায় ১৮।
************
আসুন আমরা আবার সেই হাওয়ার্ড কার্টারের কাহিনীতে ফিরে যাই। (অভিশাপের শুরু)
(মিশরে থাকাকালীন বছরগুলোতে তিনি তার প্রাপ্ত গবেষনা এবং অনুসন্ধান থেকে এটা অনুভব করছিলেন যে কমপক্ষে একটি আনাবিষ্কৃত সমাধি এখনো মিশরে রয়েছে। আর তা হচ্ছে ফারাও রাজাদের মধ্যে একেবারেই অপরিচিত রাজা তুতেন খামুনের সমাধি এবং তার ধারনাই সত্যি ছিল।) তারপর থেকে:
লর্ড কার্নার্বন
হাওয়ার্ড কার্টার তার বিশ্বাসকে কাজে পরিনত করতে অর্থাৎ এ সমাধিটি খুজে বের করতে লর্ড কার্নার্বন নামক একজন সম্পদশালী লোকের সাহায্য পেলেন। লর্ড কার্নার্বন হাওয়ার্ড কার্টারকে তার সমস্ত অভিযানের খরচের যোগান দিলেন।
কিং ভ্যালী (যেখানে ফারাও রাজাদের সমাধিত করা হতো)
তখন সবাই ধরানা করত, কিং ভ্যালীতে অর্থাৎ তৎকালীন মিশরের রাজাদের সমাধির জন্য নির্দিষ্ট উপত্যকায় যত সমাধি ছিল তার সবগুলোই ইতিমধ্যে আবিষ্কার হয়ে গেছে এবং বেশির ভাগ সমাধির সম্পত্তিই ইতিমধ্যেই চোর-ডাকাতেরা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এটা বুঝাই গিয়েছিল কিং ভ্যালীতে আবিষ্কার কারার মতো আর কিছুই বাকী নেই।
হলোও তাই। পাঁচ বছর ধরে অদম্য হাওয়ার্ড কার্টার তার অভিযানের দল নিয়ে সম্পূর্ণ কিং ভ্যালী চষে বেড়ালেন অসংখ্যা জায়গা খুড়লেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না। এটা বোঝাই যাচ্ছিল তার ৫ বছর যাবত সময় শুধু বিফলেই নষ্ট করেছেন।
১৯২২ সালের দিকে লর্ড কার্নার্বন হাওয়ার্ড কার্টারকে ইংল্যান্ডে ডেকে পাঠান এবং জানান যে তিন আর এ আভিযানের খরচ বহন করবেন না। হাওয়ার্ড কার্টারের পাঁচ বছরের সমস্ত কষ্ট বৃথা যাবে এটা ভেবেই তিনি শেষ আরেক সিজন খোড়াখোড়ির কাজের জন্য অর্থ দিতে কার্নার্বনকে রাজি করান।
হলুদ ক্যানারী পাখি
এবার মিশরে আসার সময় তিনি সাথে করে একটি হলুদ ক্যানারী পাখি নিয়ে আসেন। ইংরেজিতে “ক্যানারী” এর একটি অপ্রচলিত অর্থ হল গুপ্তচর। হাওয়ার্ড কার্টারের দলের সুপারভাইজার একারনেই তাকে বলেছিল “গোল্ডেন বার্ড” এটি হয়ত আমাদেরকে সে গুপ্ত সমাধির সন্ধান এনে দিবে। মনে হয় হয়েছেও তাই।
নভেম্বরের ৪ তারিখ ১৯২২ সাল, হাওয়ার্ড কার্টারের কর্মচারীরা কর্মরত অবস্থায় তুতেন খামেনের সমাধির প্রবেশপথে সর্বপ্রথম হোঁচট খেল। তারা রাজা Ramesses IV এর সমাধিতে প্রায় দুইলক্ষ টন ধ্বংসাবশেষ অপসারন করার পর নিচে পাথর কেটে তৈরী করা একটি সিড়ির সন্ধান পেলেন। খুড়তে খুড়তে তারা একই রকম আরো প্রায় ১৫টি সিড়ি অতিক্রম করে অবশেষে একটি প্রাচীন এবং সীল করা দরজার সামনে এসে উপস্থিত হলেন। দরজার উপর হায়ারোগ্লিফিক লিখাতে বড় করে লিখা ছিল: “তুতেন খামেন”
তুতেন খামুনের সমাধিস্থলের নমুনা চিত্র
এর দরজাটি অতিক্রম করে ভেতরে ঠিক একই রকম আরেকটি দরজা পাওয়া গেল। সে দরজাটি অতিক্রম করে ভেতরে ঠিক একই রকম আরেকটি দরজা পাওয়া গেল অবশেষে সেটি অতিক্রম করে অভিযাত্রী দলটি পৌছে গেল তুতেন খামুনের সমাধিতে।
সবচেয়ে ভেতরের কফিন
ভেতরে পাওয়া গেল স্বর্নমন্ডিত একটি কফিন। তা খুলে দেখা গেল ভেতরে ঠিক একই ধরনের আরেকটি কফিন। সে কফিন খুলে দেখা গেল তার ভেতরে ঠিক একই রকম স্বর্ণমন্তি আরেকটি কফিন এবং অবশেষে সে কফিন খুলে পাওয়া গেল তুতেন খামুনের মমিকৃত শবদেহ।
এছাড়াও সম্পূর্ণ সমাধির আশেপাশের বিভিন্ন রুমগুলোতে পাওয়া গেল অসংখ্যা মহামূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী যার বেশির ভাগই ছিল স্বর্ণমন্ডিত।
দ্রব্যসামগ্রীর কয়েকটির চিত্র নিচে দেয়া হল:
তুতেন খামুনের কফিন
স্বর্ণদিয়ে তৈরি ফারাও রাজাদের সৈন্যবাহিনী
শ্বেত পাথরে তৈরী ফারাও রানীদের মূর্তি
স্বর্ণেমন্ডিত একটি বাক্স
এ সম্পত্তির পরিমান এতই বেশি ছিল যে এক কথায় বলতে গেলে তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারের পর স্বারা পৃথিবীর মানুষ রীতিমত স্তব্ধ হয়ে যায়।
কারন তুতেন খামুন ফারাও রাজাদের মধ্যে খুবই অল্পসময় রাজত্ব করেন এবং খুবই অপরিচিত ছিলেন। তার সমাধিতেই যদি এত ধন-সম্পত্তি পাওয়া যায়। তাহলে বড় বড় সমাধিগুলোতে কত সম্পত্তি লুকানো ছিল ???
বর্তমান যুগে এটা খুবই বড় প্রশ্ন। কিন্তু ওগুলোর কথা এখন আর ভেবে লাভ নেই কারন চোর-ডাকাতের বহুআগেই তা হস্তগত করে নিয়েছে।
তুতেন খামুন খুবই অপরিচিত ফারাও রাজা ছিলেন বলে চোর-ডাকাতেরা তার সমাধি খুজে পাওয়া কোন চেষ্টাই হয়তো করেনি। একারনেই আধুনিক বিশ্বের আবিষ্কৃত একমাত্র অক্ষত সমাধিটিই হল তুতেন খামুনের সমাধি।
অভিশাপের পরিনতি
যেদিন অভিযাত্রী দল প্রথম তুতেন খামুনের সমাধির হদিস ফেল সেদিন রাতেই হাওয়ার্ড কার্টার তার বাসায় ফিরে এসে তার কাজের লোকের হাতে কয়েকটি হলুদ পালক দেখতে পান। ভয়ে আতঙ্কিত কাজের লোকটির কাছে তিনি জানতে পারেন যে একটি কোবরা সাপ তার ক্যানারী পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে।
হাওয়ার্ড কার্টার কুসংস্কারকে মোটেই বিশ্বাস করতেন এবং তিনি মোটেও না ঘাবড়ে গিয়ে কাজের লোকটিকে এটা নিশ্চিত করতে বলেন যে সাপটি বাসার বাহিরে গিয়েছে। কাজের লোকটি হাওয়ার্ড কার্টারের হাত ধরে তাকে অনুরোধ করে বলেন:
“ফারাওদের সাপ আপনার পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে কারন এটি তাদের সমাধি খুজে পেতে সাহায্য করেছে। ফারাওদেরে সমাধিতে তাদের বিরক্ত করা আপনার উচিত হবেনা ।”
সত্যিকার অর্থেই ফারাওদের সুরক্ষার প্রতীক হচ্ছে কোবরা এবং শুকুন। আপনারা তুতেন খামেনের বর্মটির উপর তাকালেই দেখবেন মাথার উপর একটি কোবরার প্রতিকৃতি।
কার্টার শীঘ্রই লর্ড কার্নার্বনের কাছে একটি টেলিগ্রাম প্রেরন করেন এবং তাকে তার আবিষ্কার নিজের চোখে দেখার জন্য মিশরে আসার জন্য অনুরোধ করেন।
Count Louis Hamon
লর্ড কার্নার্বনকে হাত দেখার জন্য বিখ্যাত Count Louis Hamon নামক তার এক বন্ধু মিশর যেতে বারন করে। কারন তিনি দুর্ঘটনাক্রমে এটা জানতে পারেন যে “লর্ড কার্নার্বন তুতেন খামেনের সমাধিতে আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বেন যা কখনো সেরে উঠবে না এবং মিশরেই তিনি মৃত্যু বরণ করবেন।”
পাঁচ পাঁচটি বছর যিনি কোন প্রাপ্তির আশা না করেই তুতেন খামেনের সমাধি খোজায় অর্থ সরবরাহ করে গেলেন তার আগ্রহকে দমিয়ে রাখে তখন এমন কেউই ছিল না।
তাই লর্ড কার্নার্বন সমস্ত বাধা অতিক্রম করে মিশরে এসে পৌছলেন এবং হাওয়ার্ড কার্টারের সাথে ৩০০০ বছরের মধ্যে প্রথম কেউ সমাধিটিতে হস্তক্ষেপ করল।
ফারাও রাজাদের সমাধিগুলোতে অভিশাপ ছিল কিনা সন্দেহ ছিল। কারন সবগুলো সমাধি আবিস্কারের পরেই দেখা গেছে সমাধিগুলো সীল করার পরেও কেউ না কেউ প্রবেশ করেছিল এবং বহনযোগ্য সম্পত্তিগুলো নিয়ে গেছে। যদি অভিশাপ থাকতোও তাও কারো না কারো উপর তা হয়তো বর্ষিত হয়ে গেছে।
কিন্তু তুতেন খামুনের সমাধিটিই ছিল একমাত্র সমাধি যাতে তাকে সমাধিত করার পর আর কেউই প্রবেশ করেনি।
একারনেই যিনি এটি প্রথম উন্মোচিত করেছেন তার উপরই অভিশাপ আরোপিত হওয়ার কথা এবং তাই হয়েছে। সম্ভবত সে কারনেই তুতেন খামুনের অভিশাপ সবার নজরে চলে আসে।
যাই হোক, লর্ড কার্নার্বন সমাধিটি খোলার পর রহস্যজনক হলেও সতিকার অর্থেই আর বেশি দিন বাঁচেন নি। সামান্য মশার কামড়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, পরে মশার কামড়ের ক্ষতস্থান সেভ করার সময় কেটে যায় এবং ইনফ্যাকশন হয়ে তা একসময় নিউমোনিয়ায় রূপ নেয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তাকে অতি শ্রীঘ্রই কায়রো হসপিটারলে স্থানান্তরিত করা হয়।
ম্যারি কুরেলি
এ সময় বিতর্কিত এক ব্রিটিশ লেখিকা ম্যারি কুরেলি সবাইকে সতর্ক করে বলেছিলেন:
খুবই সন্মানের সাথে এবং নির্বিঘ্নে সায়িত একমাত্র অনাবিষ্কৃত ফারাও রাজার সমাধিতে এবং তার সমাধিতে রক্ষিত তার ধন সম্পদে হস্তক্ষেপ করায় কিছু আতঙ্ক চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে – এবং এটা ছাড়া আমার মাথায় কিছুই আসছে না। আমার কাছে "The Egyptian History of the Pyramids" নামে খুবই প্রাচীন এবং দুর্লভ একটি আরবি বই রয়েছে। যাতে লিখা আছে “ ফারাও রাজার সমাধিতে অনধিকারা প্রবেশ করবে তার জন্যে অপেক্ষা করছে সবচেয়ে ভয়ংকর শাস্তি। বইটিতে কয়েক ধরেনর বিষের কথা উল্লেখ আছে এবং সেগুলো ফারাও রাজার কফিনে এতই সুচারুভাবে লাগনো আছে যে, কেউ এটা স্পর্শ করলে সে জানতেও পারবে না কিভাবে সে ভুগতে যাচ্ছে। ”
সেই জন্যেই আমি জিজ্ঞেস করছি, “এটা কি সত্যিই কোন মশার কামড় ছিল যে কারনে লর্ড কার্নার্বন এতটা অসুস্থ হয়ে গেলেন ?”
তার কথাকে সত্য প্রমানিত করে দিয়ে সমাধিটি উন্মোচিত করার মাত্র ৭ সপ্তাহের মাঝেই মাত্র ৫৭ বছর বয়সে লর্ড কার্নার্বন প্রচন্ড কষ্ট পেয়ে মারা গেলেন এবং খুবই রহস্যজনক ভাবে হাজার কিলোমিটার দূরে একই রাত্রেই তার পোষা কুকুরটি রক্ত হীম করা এবং ভৌতিক শব্দে আর্তনাদ করতে থাকে এবং অদৃশ্য কোন কিছুর বিরুদ্ধে প্রচন্ড গর্জন করতে করতে মৃত্যু বরণ করে। লর্ড কার্নার্বনের মৃত্যুর সময় সমস্ত কায়েরো শহরী কোন বিদ্যুতহীন অন্ধাকার সাগরে পতিত ছিল।
আরো রহস্যজনক ব্যাপার হলে এই যে, লর্ড কার্নার্বনের মৃত্যুর মাত্র দুইদিন পরে তুতেন খামুনের মমিকৃত দেহটি পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় যে, মমিটির বাম গালে কার্নার্বনের মত ঠিক একই জায়গায় একটি ক্ষত রয়েছে।
সারা বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় বিষয়টি খুবই ফলাও করে প্রচার করা হয় এবং অনেক পত্রিকা এটা নিয়ে বাড়াবাড়িও শুরু করে। তারা প্রচার করে সমাধির প্রবেশ পথে হায়াগ্লিফিক হরফে লিখা ছিল:
"Death shall come on swift wings to him who disturbs the peace of the King"
পত্রিকাগুলোর মতে এর অর্থ বুঝতে পারার সাথে সাথেই হাওয়ার্ড কার্টার এটি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলেন। কারন এর অর্থ বুঝতে পারলে তার সমাধিতে কর্মরত শ্রমিকদের মনে ভয় জাগ্রত হতে পারে এবং এতে সমাধি আবিষ্কারের অভিযান থেমে যেতে পারে।
স্যার অর্থার কোনান ডয়েল
এ সময় অনেক নামিদামী ব্যক্তি অভিশাপের অস্তিত্ত্বের পক্ষে তাদের মত প্রকাশ করেন এদের অন্যতম হলেন স্যার অর্থার কোনান ডয়েল। যার লিখা শার্লোক হোমস সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এখনো সবচেয়ে দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা কাহিনী।
নস্ট্রাডার্মুসও
প্রায় ৫০০ বছর আগে বিখ্যাত ভবিষ্যতবানী কারক “নস্ট্রাডার্মুসও” তার বই Quatrain 9.7 এর কবিতায়ও এ ব্যাপারে ভবিষ্যত বানী করে বলেছিলেন যে:
“সেই ব্যক্তি যে খুজে পাওয়া সমাধিতে ছুটে আসবে
এবং তা উন্মুচিত করবে
কেউ প্রমান করতে পারবে না
কিন্তু তার উপর শয়তান আচর করবে
হয়তোবা তিনি কোন ব্রিটন বা নরম্যান কিং হবেন
অভিশাপের কোন প্রমানই পাওয়া যাবে না
কিন্তু অনেকের বিশ্বাসই যথেষ্ট”।
(উল্লেখ্য লর্ড কার্নার্বন একজন সম্ভ্রান্ত আর্ল বংশের সদস্য ছিলেন, যারা সম্রাটের অবর্তমানে দেশ শাসন করতো।)
যাক লর্ড কার্নার্বনের মৃত্যুর পর সবকিছু শেষ হয়ে গেলেও হতো। কিন্তু আরও অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে লাগলো।
Arthur Mace
কার্নার্বনের মৃত্যুর কিছুদিন পর এ অভিযানের আরেকজন নেতৃত্বস্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ Arthur Mace একই হোটেল কন্টিনেন্টালে প্রচন্ড রকম ক্লান্তি অনুভব করতে থাকেন এবং অভিযান দলের ডাক্তার এবং স্থানীয় ডাক্তারদেরকে হতবুদ্ধ করে দিয়ে তিনি কিছুক্ষন পরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
George Gould নামক কার্নার্বনের একবন্ধু কার্নার্বনের মৃত্যুর কথা জানতে পেরে মিশরে রওনা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য সমাধিটি দেখার পরের দিনই তিনি প্রচন্ড জ্বরে ভেঙ্গে পড়েন এবং ১২ ঘন্টার মধ্যই মৃত্যুবরণ করেন।
Joel Wood নামক একজন শিল্পপতি সমাধিটি ভ্রমন করে দেশে যাওয়ার পথে প্রচন্ড জ্বরে মৃত্যু বরণ করেন ডাক্তাররা এর জন্য কোন সঠিক ব্যাখ্যা খুজে পাননি।
Archibald Reid নামক একজন রেডিওলজিস্ট তৎকালীন সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তুতেন খামুনের এক্স-রে রিপোর্ট করে তার বয়স এবং মৃত্যুর কারন জানার চেষ্ট করেছিলেন। প্রচন্ড ক্লান্ত এই অভিযোগে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান। কিন্তু ইংল্যান্ডে অবতরনে কিছুক্ষন পরেই রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু ঘটে।
সমাধিটি আবিষ্কারের চার মাস পর কার্নার্বনের ব্যক্তিগত সেক্রেটারী Richard Bethell তার বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং এ সংবাদ শুনার পর তার পিতা আত্নহত্যা করেন।
সমাধিটি উন্মোচনের সময় কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন তার মধ্যে ১২ জনই পরবর্তি ৬ বছরের মধ্যে মারা যায় এবং অস্বাভাবিক কারনে। একই ভাবে ২ জন ছাড়া বাকী সবাইও পরবর্তি ৭ বছরের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু বরন করেন।
লর্ড কার্নার্বনের সৎ -ভাই পাগল হয়ে যায় এবং আত্নহত্যা করে। পরবর্তিতে ধীরে ধীরে খনি খননের কাজে বিভিন্নভাবে জড়িত প্রায় ২১ জন ব্যক্তি মৃত্যুবরন করে।
খনি খননের কাজে নিয়োজিত সবার মধ্যে একমাত্র হাওয়ার্ড কার্টারই বৃদ্ধ বয়স স্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩৯ সালে । কিন্তু সবাই তার মত ভাগ্যবান ছিলেন না।
যখন অসংখ্য মিশর গবেষক এবং শিক্ষাবিদ অভিশাপের অস্তিত্ত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছিলেন তখন অন্য অনেকেই এ অভিশাপের প্রভাবে মৃত্যুবরন করছিল।
তুতেন খামুনের সামধিতে প্রাপ্ত প্রাচীন নমুনাসমূহ নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করার জন্য ফ্রান্স মিশরের সাথে একটি চুক্তি করে। মিশরের প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক দ্রব্যসামগ্রী বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম এর বিরোধিতা করেন কারন তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন যদি এ দ্রব্যসামগ্রী মিশরের বাহীরে যায় তাহলে তার কি ভয়ানক পরিনতি হবে। কিন্তু তিনি আলোচনা করে সরকারকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন এবং দিনের বেলাতেই প্রকাশ্যে সম্পূর্ণ খালি রাস্তায় তিনি একটি প্রাইভেট কারের আঘাতে সাথে সাথেই মৃত্যু বরন করেন।
সম্ভবত অভিশাপ সম্পর্কিত সবচেয়ে অদ্ভূত ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল Richard Adamson এর বেলায়।
তুতেন খামেনের সমাধির আবিষ্কারের ঘটনার সাথে জড়িত সবার মধ্যে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকা একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন এই Richard Adamson। তিনি লর্ড কার্নার্বনের দেহরক্ষী ছিলেন। তিনি তুতেন খামেনের অভিশাপের বিরুদ্ধে প্রথমবার যখন মুখ খোলেন তার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি যখন পরবর্তিতে আবার জনসম্মূখে অভিশাপের বিরুদ্ধে কথা বলেন তার ছেলে একটি বিমান দূর্ঘটনায় তার কোমর ভেঙ্গে ফেলে। কিন্তু তিনি তার পরেও অভিশাপটিকে বিশ্বাস করতে রাশি ছিলেন না এবং ব্রিটিশ টেলিভিশনে এক স্বাক্ষাতকারে আবারো সেই একই কথা বলেন। সেইদিনই তিনি যখন টেলিভিশন স্টুডিও ছেড়ে যাচ্ছিলেন পথে তার ট্যাক্সি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তিনি যাপিয়ে পড়েন, আকস্মিকভাবে দিক পরবর্তন করা একটি গাড়ী তার মাথার মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূর দিয়ে চলে যায়। হয়তো কর্মক্ষেত্র একসময় দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় আত্নরক্ষার কিছু কায়দা তার জানা ছিল। শরীরের কয়েক জায়গায় ফ্রাকচার এবং থেঁতলানো অবস্থায় তাকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই ৭০ বছরের জীবনে প্রথম বারের মত তিনি অভিশাপটির কথা শিকার করেন।
অভিশাপটি সবচেয়ে বড় প্রমানের আরেকটি ঘটেছিল ১৯৭২ সালে। যখন তুতেন খামেনের সমাধির মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী লন্ডনে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের খুবই খ্যাতিমান একটি প্রদর্শনীতে আনা হয়েছেল। এ ঘটনাটি ঘটেছিল পূর্বে উল্লেখিত মিশরের প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক দ্রব্যসামগ্রী বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম এর পরবর্তি ঐ একই পদে অধিষ্ঠিত Dr Gamal Mehrez এর ক্ষেত্রে। তিনি তুতেন খামুনের প্রতি উপহাস করে বলেছিলেন “আমি আমার সারা জীবন মিশরের প্রত্নতত্ত্ব গবেষনায় কাটিয়েছি এবং আমি জানি তুতেন খামুনের অভিশাপ সম্পর্কিত সমস্ত দুর্ঘটনা শুধু নিছক দুর্ঘটনাই এগুলো সত্যিকার অর্থেই কাকতালীয়”। হয়তো এ কথা বলার কারনেই, হয়তোবা কাকতালীয় ভাবেই ইংল্যান্ডের রয়েল এয়ার ফোর্স প্লেনে বয়ে আনা তুতেন খামুনের সমাধির প্রাচীন দ্রব্য সামগ্রী বোঝাই বাক্সগুলো পরিদর্শন শেষে পরবর্তি রাতেই তার মৃত্যু ঘটে।
ইংল্যান্ডে সেই রয়েল এয়ার ফোর্সের বিমানে ক্রু-রাও পরবর্তি জীবনে অস্বাভাবিক মৃত্যু, শারীরিক দুর্ঘটনা, দূর্ভাগ্য, দুর্যোগ ইত্যাদিতে পতিত হয়।
Flight Lieutenant Rick Laurie চার বছরের মাথায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু বরন করেন। কেউ হয়তো তখন এটাকে তুতেন খামুনের অভিশাপ বলে মনে করেননি। কিন্তু Rick Laurie এর wife প্রকাশ্যে সবার সামনে ঘোষনা করেন তুতেন খামুনের অভিশাপেই তার মৃত্যু হয়েছে।
যে সময়ে তুতেন খামুনের সমাধির দ্রব্যসামগ্রী ইংল্যান্ডে আনা হয়েছিল প্রতিবছর ঠিক সেই সময়ে Ken Parkinson নামক সেই বিমান একজন ইঞ্জিনিয়ার হার্ট-অ্যাটাকে আক্রান্ত হতেন এবং এভাবেই ১৯৭৮ সালেই হার্ট-অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
Rick Laurie এবং Ken Parkinson পূর্বে কখনোই হার্ট-অ্যাটাকে পতিত হন নি এবং মিলিটারী ডাক্তারা তাদেরকে সম্পূর্ণ ফিট বলে ঘোষানা করেছিল।
সেই ফ্লাইটের সময় Chief Technical Officer “Ian Lansdown” কৌতুক করে তুতেন খামুনের মৃতদেহ বহনকারী বাক্সটিকে লাথি মেরে বলেছিল দুনিয়া সবচেয়ে দামি জিনিসকে লাথি মারলাম হা হা হা..। কিছুদিন পরেই অন্য একটি প্লেন থেকে নামার সময় তার পায়ের নিচের প্লেনের সিড়িটি আকস্মিকভাবেই ভেঙ্গে পড়ে এবং “Ian Lansdown” সেই পাটি মারাত্নকভাবে ভেঙ্গে যায়।
সেই ফ্লাইটে অবস্থানকারী Jim Webb নামক একজন ফ্লাইট ল্যাফটেন্যান্ট এর সমন্ত ধন-সম্পত্তি আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
সেই ফ্লাইটের Brian Rounsfall নামক একজন পানীয় ও খাবার পরিবেশন কারী তুতেন খামুনের শবদেহ বহনকারী কফিনের উপর কার্ড খেলেছিল বলে শিকার করে। তিনিও পর পর দু্ইবার হার্ট-অ্যাটাকের পর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
সেই বিমানেরই একজন মহিলা অফিসারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের পর ইংল্যান্ডের রয়েল এয়ার ফোর্স টিম থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
অনেকেই বলেন অভিশাপের কোন ভিত্তি নেই এর সবচেয়ে বড় প্রমান হাওয়ার্ড কার্টার। সমাধিটি খোলার বহু পূর্ব থেকেই যিনি তার এর উপর কাজ করে আসছিলেন এবং এ সমাধিতে প্রাপ্ত হাজার হাজার দ্রাব্যাদির ক্যাটলগ তৈরি করে এবং কোথায় কোন জিনিস কিভাবে ছিল তার ছবি বা নমুনা তৈরি করে যিনি তার জীবন অনেক সময় ব্যয় করেছেন এ অভিশাপ যদি থাকতই তাহলে সবার আগে তাকেই আক্রমন করত। কিন্তু এমন কিছুই ঘটেনি।
অভিশাপকে বিশ্বাস করে এমন অনেকেরই ধারনা, সম্ভবত মিশরের প্রতি হাওয়ার্ড কার্টারের ভালোবাসাই তাকে রক্ষা করেছে। লর্ড কার্নার্বন তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারে অর্থ সহায়তা দেন ঠিকই তবে একেবারেই নিঃস্বার্থভাবে নয়। তুতেন খামুনের সমাধি আবিষ্কারের পর তিনি সমাধির সকল দ্রব্যাদি ইংল্যান্ডে নিজে যাওয়ার ব্যবস্থা করছিলেন।
তখন মিশরের ইতিহাস ও ঐতিয্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হাওয়ার্ড কার্টার এর বিরোধিতা করেছিলেন । একজন ইংলিশ হওয়া সত্ত্বেও ১৭ বছর বয়স থেকেই তিনি মিশরের বিভিন্ন সমাধির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষনের জন্য কাজ করে আসছিলেন এবং জীবনের শেষ মূহুর্ত্য পর্যন্ত মিশর নিয়েই কাজ করে গেছেন। একারনেই অভিশাপটিকে সম্পূর্ণরূপে অবিশ্বাস করা সত্ত্বেও মিশরের প্রতি তার ভালোবাসাই হয়ে গিয়েছিল তার রক্ষাকারী শক্তি। তার কবরের বেদীর উপর লিখা এপিট্যাপ থেকেই তা বোঝা যায়। এপিট্যাপটি নিম্নরূপ:
"May your spirit live,
May you spend millions of years,
You who love Thebes,
Sitting with your face to the north wind,
Your eyes beholding happiness"
(উল্লেখ্য যে: ঠিক একই জিনিস তুতেন খামুনের সমাধিতেও লিখিত ছিল।)
জাহী হাওয়াজ
এ অভিশাপটি এমন কোন ব্যাপার না যে তা শুধু কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং অশিক্ষিত লোকেরাই এটা বিশ্বাস করে। অনেক বিজ্ঞ এবং বিজ্ঞান মনস্ক মানুষও এটা বিশ্বাস করেন বলে মত দেন। স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের পর এ অভিশাপে বিশ্বাসীদের অন্যতম আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ জাহী হাওয়াজ। মিশরের বিভিন্ন সমাধি নিয়ে কাজ করায় তার ছিল দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। ২০০৫ সাল তুতেন খামুনের শবদেহের সর্বশেষ যে ত্রিমাতৃক CT Scan করা হয় সেই দলের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি নিজেই।
তিনি বলেন “আমি অভিশাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছি না কারন আজকে আমার জীবনে বহুত কিছু ঘটে গিয়েছে। আজকের দিনে আমাদের দল খুবই মারত্নক একটি দুর্ঘটনায় পড়ে গিয়েছিল কিন্তু সামান্যর জন্য বেঁছে গিয়েছি। আমরা যখন CT Scan করছিলাম তখন বাহিরে প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়েছিল এবং আমাদের CT Scan করার কম্পিউটারটি কোন কারন ছাড়াই দু’ঘন্টা যাবৎ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল”।
সর্বশেষ তিনি এই বলে কথা শেষ করেন যে,
“I think we should still believe in the curse of the Pharaohs”
আসলেই রহস্য রয়েই গেছে এবং থাকবে। কারন বছরের পর বছর ধরে একই সমাধির দ্রব্যসামগ্রীর সাথে জড়িত অসংখ্য মানুষ কাকতালীয়ভাবে মরে যাচ্ছে এটা বিশ্বাস করার চেয়ে অভিশাপে বিশ্বাস স্থাপন করা অনেক সহজ।
হয়তো সত্যিই ৩৫০০ পূর্বের পবিত্রভাবে শায়িত ফারাও মমিগুলোকে রক্ষাকারী এক অন্ধকার এবং অতি-পাকৃত শক্তি এখনো পৃথিবীর বুকে সবার অগোচরে অফুরন্ত রহস্যের এবং দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে এখনো রয়ে গেছে।
উপরে কথাগুলো মিথ্যাও হতে পারে আবার সত্যও হতে পারে।
বিজ্ঞান যেহেতু প্রমান করতে পারেনি এগুলো মিথ্যা, সেকারনেই এগুলো অবিশ্বাস করার কোন মানে নেই।
আবার, তেমনি যেহেতু বিজ্ঞান এটা প্রমানও করেনি যে এগুলো সত্যিই সম্ভব তাই এগুলো বিশ্বাস করার মানেও নেই।
এ বিষয়ে আমি এতটা জ্ঞানী নই যে কোনটি সঠিক আর কোনটি বেঠিক তা নির্ণয় করতে পারবো।
কিন্তু যখন অসংখ্য সাক্ষ্য-প্রমান চোখে পড়ার পরও আমরা না দেখার ভান করে থাকি এবং কাকতালীয় বলে চালিয়ে দেই তখন সত্যিই আমার মনে প্রশ্ন ঝিলিক দিয়ে উঠে।
আসলেই কোনটি সঠিক ??????
(এ প্রশ্নে জবাব আমার কাছে নেই। তবে আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম)
আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
আমি TareqMahbub। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 47 টি টিউন ও 464 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Programmer at Business Innovation & Incubation Center, Banani. Worked @ Harry & Michael IT Center as a Web Developer. Worked @ Kazi IT Center as a Web Developer, Graphic Designer, Virtual Assistant. Worked @ IQRA MODEL SCHOOL & COLLEGE as a full time teacher & typist. Student at American International...
awesooooooooooooooome!!!