বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আশাকরি আল্লাহ্র অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।
আমরা সবকিছুই বুঝি তবে অনেক পড়ে। ধোঁকা খেয়ে বুঝি। ধোঁকা খাবার আগে না। আমরা ছিলাম সবকিছুতে সয়ংসম্পুর্ণ। ইংরেজরা ব্যাবসা করতে এসে আমাদের শাসন করে গেলেন। এসব এখন শুধুই ইতিহাস। এই টিউনটা দিলাম বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে। আমার চেয়ে আপনারা আরো ভালো জানেন।
টিউনটিতে বিখ্যাত গণিতজ্ঞ “ইয়াকভ পেরেলমান” এর একটি লেখার অনুবাদ। দেখুন সেই কবে বিখ্যাত গণিতজ্ঞ “ইয়াকভ পেরেলমান” এই হিসেবটি ক্লিয়ার করে দেখিয়েছেন। এখকার অবস্থা তো আরো করুন। এখন ধোঁকা বাজির হিসেব আরো মর্ডান, আল্ট্রা মর্ডান হয়েছে। আগে তো পণ্য দিত এখন তো শুধু শুধু খাটিয়েই যায়। মাঝে মাঝে আমাদের দেশের চোর গুলোকে নিয়ে ভাবলে খুব দুঃখ লাগে। একজন বা মুষ্টিমেয় কয়েকজন ভাওতাভাজির প্লান আটে আর খেসারত দিতে হয় কত-শত নিরীহ মানুষকে। তাহলে দেখুন অনুবাদ টিউনটি-
“সাইকেলের জুয়াচুরি”
জনপ্রিয় কতগুলো সংবাদপত্রে নিয়মিত বিজ্ঞাপণ দিয়ে ব্যাপারটা শুরু হলো। টোপটা অনেকেই গিললো, তারা কোম্পানীর কাছে লিখে পাঠালো ণিয়মাবলীর জন্যে। তাদের কাছে এল এক বিস্তৃত তালিকা।
১০ রুবলের (মুদ্রা) বদলে তারা যা পেল তা কিন্তু সাইকেল নয়। তারা পেল চারটে কুপন, এগুলেকে আবার ১০ রুবল দামে তাদের বন্ধুদের কাছে বেচতে বলা হল। এভাবে যে ৪০ রুবল আদায় হলো, তা দিয়ে দেয়া হল সেই প্রতিষ্ঠানকে। তখন প্রতিষ্ঠানটি তাকে সাইকেলটি দিল। তাহলে সত্যিসত্যিই ১০ রুবলে সাইকের পাওয়া গেলো। বাকি ৪০ রুবল এল তার বন্ধুদের পকেট থেকে। আসলে এই ১০ রুবল দেয়া ছাড়াও কাস্টমারকে চারটি কূপন কেনার লোক জোগার করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হল। অবশ্য তাতে তার পয়সা খরচা কিছু হল না।
এই কুপনগুলো কী? কাস্টমার ১০ রুবলের জন্য কি কি সুবিধা পেল? সে একই ধরনের পাঁচটা কুপনের সংগে তার কুপনটা বদলে নেবার অধিকার টাকে কিনে নিয়েছল। অন্যভাবে বলতে গেলে সাইকেলের দাম ৫০ রুবল আদায় করার সুযোগের দাম দিয়েছল। এই সাইকেলটা কিনতে তার আসলে লাগল কুপনের টাকাটা, মাত্র ১০ রুবল। নতুন করে যারা কুপনের মালিক হল তারা আবার প্রত্যেকে বিলি করার জন্য পেল পাঁচটা কুপন, এভাবে চলল।
একবার দেখলে সমস্ত ব্যাপারটার ভেতর কোনো জুয়াচুরি আছে বলে মনে হবে না। বিজ্ঞাপনদাতা তার কথা রাখল। সাইকেলটা কিনতে খদ্দেরকে আসলে ১০ রুবলই দিতে হল। প্রতিষ্ঠানটিরও কিছু ক্ষতি হচ্ছিল না, মালের পুরো দামটাই তারা পেয়ে যাচ্ছিল।
তবুও ব্যাপারটা ছিল পরিস্কার জুয়াচুরি। কারণ বহু লোক তাদের শেষ কুপনগুলো বেচতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হল। তাই রাশিয়াতে এর নাম হল “ধ্বস” আর কোম্পানীর লাভের টাকাটা এদের কাছ থেকেই জুটেছিলো। দু’দিন আগে বা পরে এমন একটা অবস্তা এল যে কুপনের মালিকদের পক্ষে ওগুলো বিক্রি করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ল। কুপনের মালিকের সংখ্যা কত তাড়াতাড়ি বেড়ে যাচ্ছিল। কাগজ পেন্সিল নিয়ে হিসেব কষতে বসলেই ঘটনাটার আসল পরিনতি দেখা যাবে।
প্রথম কিস্ততে যারা সরাসরি পতিষ্ঠানটি থেকেই কুপন কিনেছিল, সাইকেল কেনার নতুন লোক জোগার করতে কোনো অসুবিধাই হয় নি তাদের। এই দলের প্রত্যেককে লেনদেনটার ভেতর চারজন নতুন লোক নিয়ে এলো। এদের আবার কুপনগুলো বিক্রি কতে হল ২০ জনের (৪ x ৫) খেতর, আর তা করতে গিয়ে তাদের কুপন কেনার সুবিধা সম্বন্ধে বিশ্বাস জন্মাতে হল। ধরে নেয়া যাক তারা তা পারল, তখন ২০ জন নতুন করে অংশ গ্রহণ করল এই কাজে।
ধ্বসটার গতি আর পরিধি (ভর, বেগ) দুইই বেড়ে গেল। কুপনের ২০ জন নতুন মালিককে কুপনগুলো ছড়িয়ে দিতে হল আরও ২০ x ৫=১০০ জনের কাছে।
এই পর্যন্ত সর্বপ্রথমে যারা কুপন পেয়েছিল তারা প্রত্যেক খেলার ভেতর টেনে এনেছে ১+৪+২০+১০০=১২৫ জন লোককে। এদের ভেতর ২৫জন সাইকেল পেয়েছে। বাকি ১০০ জনকে একটি করে সাইকেল পাবার আশা দেয়া হয়েছে, আর এই আশাতেই তারা প্রত্যেকে দিয়েছে ১০ রুবল করে।
“ধ্বস” এবার বন্ধুবান্ধবদের ছোট পরিধি ভেদ করে ছড়িয়ে পড়েছে সারা শহরে, সেখানে কেনবার নতুন লোক খুঁজে পাওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠলো। শেষ যে ১০০ জন কুপন কিনল তাদের আবার বিক্রি করতে হল ৫০০ জন নতুন শিকারের কাছে। তাদের আবার নিয়ে আসতে হল ২৫০০জনকে। শহরটা একেবারে কুপনে ছেয়ে যেতে লাগল, দিনে দিনে কুপন কিনতে চায় এমন লোক পাওয়া কঠিন হয়ে উঠলো।
এই চরম অফারে যারা এসেছিলো তাদের সংখ্যা পিরামিডের মতো করে সাজালে দাঁড়ায়-
১
৪
২০
১০০
৫০০
২৫০০
১২, ৫০০
৬২, ৫০০
শহরটা যদি বড় হয় আর সাইকেল চড়া লোকের সংখ্যা হয় ৬২, ৫০০ তাহলে ৮ কিস্তিতেই “ধ্বস” টি পম্পুর্ণ হয়ে যাবে। এই সময়ের ভেতর সমস্ত লোকই পরিকল্পনার আওতায় এসে গেছে। কিন্তু এদের মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগই সাইকেল পাবে। বাকি লোকদের কাছে থাকবে কুপন। সে কুপনগুলো বিক্রির সম্ভবনা আর এ জন্মে হবে না।
এমনকি একটি রাষ্ট্রে কোটি কোটি লোক বাস করলেও সেখানে আর কয়েকটি কিস্তিতেই খেল খতম হতে বাধ্য। কারণ সংখ্যার পিরামিড বেড়ে যাচ্ছে অবিশ্বাস্য গতিতে। নবম কিস্তির পর থেকে সংখ্যাগুরো এরকম দাঁরাচ্ছে:
৩, ১২, ৫০০
১৫, ৬২, ৫০০
৭৮, ১২, ৫০০
৩, ৯০, ৬২, ৫০০
আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ১২ নম্বর কিস্তিতেই একটা দেশের প্রায় সমস্ত অধিবাসিদের গ্রাস করে ফেলা সম্ভব। আর এই জাল কারবারীদের হাতে ঠকে যাবে তাদের ৪/৫ ভাগ।
কোম্পানীর আরো যে সুবিধা গুলো হলো। তারা জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক ভাগ ক্রেতার জন্যে চার ভাগকে দাম দিতে বাধ্য করেছে। এই দল হয়েছে পরের দলের যোগানদাতা। তাছাড়া তারা পাচ্ছে নিজে থেকে উৎসাহী একদল মার্কেটিং এর লোক।
রুশরা এই ব্যাবসাটির নাম দিয়েছিলো “পারস্পরিক জুয়াচুরির হিমানী প্রপাত”।
যা হোক, আমি কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিকে হেয় করার জন্য টিউনটি দেই নি। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে বিখ্যত গনীতজ্ঞ “ইয়াকভ পেরেলমান” সাহেব কে কি বলবেন জানি না। আমার পক্ষে আপনাদেরকে ইচ্ছে কৃত দুঃখ দেয়া সম্ভব না। আর অনিচ্ছাকৃত দুঃখ দেয়ার ক্ষমা চিরন্তণ।
আপনাদে খারাপ ভালো অভিজ্ঞতা টিউটমেন্ট আকারে প্রকাশ করলে খুশি হবো। মন খুলে বলুন না প্লিজ!
জানেন? আমি ল্যান নেটওয়ার্কিং এর কাজ বেশ ভালই। মাঝে মাঝে অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করতো আপনি কি নেটওয়র্কিং করেন। আমি অকপটে বলতাম “হ্যা”এখন বলতে দিধ্বা হয়। কোন নেটওয়ার্কার ভেবে বসে কে জানে (?) এখন নেটওয়ার্কার বলতে তাকে পুরোপুরি ল্যান, ম্যান, ওয়ান জানা লাগবে এমন ভাবার কোনো মানে হয় না। এমএলএম কোম্পানী কেন যে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক খেতাব টি হ্যাক করলো কে জানে!
কষ্টকরে আমার এই টিউনটি দেখার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত ও পরিতৃপ্ত। আপনাদের ব্যাপক সাড়া আমার নিত্যদিনের প্রেরণা।
আমি মোঃ আসিফ- উদ-দৌলাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 1147 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মা ও বাংলা ভাষার কাঙ্গাল
এত কষ্টের করে টিউন টা করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ…সবাই পরলে তাতেই এর স্বার্থকতা