সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ইনকামের সেক্টরগুলো কি, পূর্ণাংগ গাইডলাইনসহ

সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে শক্তিশালী অনলাইন মার্কেটিং মাধ্যম। এক্ষেত্রে আপনি যদি ভাল দক্ষ হোন, তাহলে অনলাইনের অনেকগুলো ইনকামের পথ তৈরি হয়ে যাবে।  দক্ষ সোশ্যালমিডিয়া মার্কেটারদের জন্য বাংলাদেশের চাকুরি বাজারে চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। সাধারণত ১৫,০০০টাকা – ৫০,০০০টাকা বেতনের চাকুরি রয়েছে দক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারদের জন্য।

social-media

সোশ্যালমিডিয়া মার্কেটারদের জন্য কি কি কাজ সহজ?

যেকোন অ্যাফিলিয়েশনের মাধ্যমে ইনকাম: অ্যাফিলিয়েশনের প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য সেলস ফানেল তৈরি করতে হয়। আর এ সেলস ফানেল তৈরি করতে সবচাইতে বেশি সাহায্য করে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটিস। টার্গেট ব্যক্তিদের কাছে সঠিক পদ্ধতি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার মাধ্যমে প্রোডাক্টের ব্যাপারে কিংবা প্রোডাক্ট সম্পর্কিত নিশ সাইটকে মানুষের কাছে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়।

টিসপারিংয়ের মাধ্যমে ইনকাম: টিসপারিং (teespering) বাংলাদেশে ইদানীং অনেক জনপ্রিয় অনলাইন ইনকাম পদ্ধতি। এটাও অ্যাফিলিয়েশন সিস্টেমে ইনকাম হয়। এটার ইনকামের জন্য ৯৯% পরিমান সোশ্যালমিডিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়।

অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ইনকাম: টার্গেটেড ট্রাফিক যত বেশি অ্যাডসেন্স লাগানো সাইটে নিয়ে আসা যায়, তত বেশি ইনকামের সম্ভাবনা বাড়ে। বর্তমান যুগে ট্রাফিক আনার সবচাইতে বড় মাধ্যমে হচ্ছে সোশ্যালমিডিয়া সাইটগুলো। তবে স্পামিং না, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে মার্কেটিং করলেই শুধুমাত্র ভাল পরিমান ট্রাফিক পাওয়া সম্ভব।

ইকমার্স ব্যবসা:  ইকমার্স ব্যবসা যারা করেন, তাদের মার্কেটিংয়ের সবচাইতে বড় জায়গাটি হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়াই হচ্ছে প্রোডাক্ট কিনার জন্য ক্লায়েন্ট খুজে বের করার সবজায়গাতে বড় জায়গা। নিজের ইকমার্স সাইটকে ব্রান্ডিং করা এবং ক্রেতা খুজে বের করার জন্য সবাই সবচাইতে বেশি নির্ভর করে সোশ্যাল মিডিয়ার উপর।

ফাইভারে সফলতা: ফাইভারে গিগ তৈরির পর সেটিকে মার্কেটিং না করলে শুরুতে কাজ পাওয়াটা মোটামুটি অসম্ভব। এ গিগকে মার্কেটিং করার জন্য সবচাইতে কাযকরী জায়গা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। টার্গেটেড ট্রাফিকদের নজরে বিরক্তি সৃষ্টি না করে সঠিকভাবে গিগটিকে নিয়ে আসতে পারলেই শুধুমাত্র গিগ বিক্রি সম্ভব।

গ্রাফিক রিভার কিংবা থিম ফরেস্টের সেল বৃদ্ধি: গ্রাফিক রিভার কিংবা থিম ফরেস্টের থিম আপলোড করলেই কাজ শেষ না। যতবেশি বিক্রি করা যাবে থিমটি, তত বেশি ইনকাম হবে। তাই থিম বিক্রির জন্য ৮০% মার্কেটিং সোশ্যাল মিডিয়াতে করতে হয়।

লোকাল যেকোন ব্যবসা: ইদানীং লোকাল ব্যবসাগুলো (রেস্টুরেন্ট, ড্রেস, ট্রেনিং ইত্যাদি) তাদের প্রচারের জন্য অনলাইনকেই সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, টিউনার, লিফলেট, পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিয়েও যে পরিমাণ সফল হতে পারিনি, শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিং করে তার চাইতে ৯০ গুণ বেশি সফল হয়েছি। বাংলাদেশের লোকাল যে কোন ব্যবসার জন্য শুধুমাত্র ফেসবুক মার্কেটিংটাই যথেষ্ট।

ব্লগে ট্রাফিক বৃদ্ধি: ব্লগে ট্রাফিক না আসলে ইনকাম সম্ভব না্। যত ট্রাফিক তত ইনকাম। এ ট্রাফিক যোগাড় করার জন্য অভিজ্ঞরা ৮০% নির্ভর করে সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্কেটিংয়ের উপর।

এসইওতে র‌্যাংকিং: কোন সাইটকে যখন গুগলের সার্চের টপে নিয়ে আসবেন, তখন অনেকগুলো প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ প্রসেসগুলোর মধ্যে সোশ্যালমিডিয়া সিগনালকে গুগল সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ সোশ্যাল মিডিয়া সিগন্যালের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে সোশ্যালমিডিয়াতে মার্কেটিং করতে হয়।

উপরের কথাগুলো পড়ার পর আশা করি বুঝতে সহজ হচ্ছে, অনলাইন ভিত্তিক যেকোন ইনকাম সোর্সে সফল হওয়ার জন্য সোশ্যালমিডিয়াতে এক্সপার্ট হওয়ার গুরুত্ব সবচাইতে বেশি। আমি নিজেও গত ৪বছর ধরে সোশালমিডিয়াকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কারণে আজকে এ অবস্থানে আসতে পেরেছি, যেকোন প্রজেক্টে সফলও হচ্ছি।

social_media-wide

সো্শ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন গ্রুপে গিয়ে লিংক কিংবা নিজের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করাকে আমি সোশ্যাল মিডিয়া জ্ঞান বলছিনা। আরও বিশাল জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং সেগুলো প্রাকটিসের মধ্যে নিয়েও আসতে হবে। তাহলেই সফল হওয়া সম্ভব। এবার দেখি কি কি জানা দরকার।

যে কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে সফল হতে হলে যা যা জানা জরুরী:

সেলস ফানেল কি :  সেলস ফানেল সম্পর্কে না জেনে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করলে স্পামিং ছাড়া আর কিছুই বের হবেনা। এ স্পামিং কখনও ভাল কোন ফলাফল নিয়ে আসেনা। কিছুদিন পরই হতাশ হয়ে পড়তে হয়। সেলস ফানেল সম্পর্কে ভালভাবে জেনে তারপর সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্যাম্পেইন সেট করতে হয়। তাহলেই অ্যাফিলিয়েশনে বিক্রি, লোকাল ব্যবসা কিংবা ব্লগে ট্রাফিক বৃদ্ধিসহ সবকিছুতে সফল হওয়া সম্ভব হবে।

লিড খুজে বের করার পদ্ধতি: সেলস ফানেল তৈরি করতে গেলে লিড খুজে বের করার পদ্ধতিটা আয়ত্ব করতে হবে। লিড খুজে না বের করে মার্কেটিং করলে সাময়িক কিছুটা সফল হতে পারেন কিন্তু পরবর্তীতে সব বন্ধ হয়ে যাবে। তখন  মার্কেটিংয়ের জন্য স্পামিং পথ বেছে নিতে হবে কিন্তু তাতেও কোন লাভ হবেনা।

সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপগুলোতে অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি বা লিড নার্সিং: সোশ্যালমিডিয়া গ্রুপের ভিতর লিডগুলোকে রাখতে হবে। এরপর এ লিডগুলোকে সেলসে রুপান্তরের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে নার্সিং করতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে না করলে লিডগুলো সেলসে রুপান্তরের পরিবর্তে বিরক্ত সৃষ্টি হয়ে কমিউনিটি ত্যাগ করবে এবং যে প্রোফাইল হতে মার্কেটিং করা হয়, সেই প্রোফাইলকে ব্লক মারার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট তৈরির পদ্ধতি: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের জন্য কনটেন্ট সবচাইতে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে কনটেন্ট তৈরির বিষয়ে নজর রাখতে হবে মানুষের জন্য যাতে বিরক্তির কারণ তৈরি না হয়। শুধুমাত্র আর্টিকেল লিখাকে কনটেন্ট বলেনা। ইনফোগ্রাফিক, ভিডিও, মিমি তৈরিও শিখা থাকতে হবে।

ক্লায়েন্ট নার্সিং করার উপযোগী কনটেন্ট ডেভেলপ:  লিডদেরকে প্রোডাক্ট কিনার ব্যপারে আগ্রহী করার জন্য কনটেন্ট ডেভেলপ করা করতে হবে নিয়মিত। মনে রাখতে হবে, আপনার একটা অফারেই কেউ টাকা খরচ করে প্রোডাক্ট কিনবেনা। প্রোডাক্ট কিনতে খরচ করার আগে ক্লায়েন্ট অনেক কিছু ভাবে। ক্লায়েন্টকে সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী করবে এরকম কনটেন্ট তৈরি করতে হবে নিয়মিত।

সোশ্যাল মিডিয়াতে ইনফ্লুয়েন্সার কিভাবে হতে হবে:  যে পণ্য কিংবা সেবা নিয়ে কাজ করছেন, সেই বিষয়টিতে নিজেকে এক্সপার্ট বা ব্রান্ড হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিষ্ঠা করার  চেষ্টা করেন। তাহলে আপনার কথাতে মানুষ প্রোডাক্ট কিনার ব্যপারে আগ্রহী হবে। নিজেকে ব্রান্ড করার এ বিষয়টিকে সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষাতে ইনফ্লুয়েন্সার বলে।

সোশ্যাল মিডিয়া ক্যালেন্ডার প্রস্তুত: সোশ্যাল মিডিয়াকে যখন আপনার পণ্য কিংবা ব্লগের মার্কেটিংয়ের জন্য ব্যবহার করছেন, তখন খুব বেশি জরুর হচ্ছে, আপনার টিউনগুলো মানুষের যাতে বিরক্তির সৃষ্টি না করে। বিরক্তির কারণ হলে মানুষ আপনার প্রোফাইলকে আনফলো কিংবা ব্লক মারবে। তখন প্রোডাক্ট কিনা দুরের কথা আরও নেগেটিভ অবস্থান তৈরি হবে। এজন্য পরিকল্পনামাফিক কনটেন্ট পাবলিশ করলে বিরক্তির সৃষ্টি হয়না। লিড নার্সিংটাও ভাল হয়। এভাবে পরিকল্পনামাফিক কনটেন্ট পাবলিশ করার জন্য সোশ্যালমিডিয়া ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করতে হয়।

social_media_freak

পরিকল্পনামাফিক মার্কেটিং না করলে কিংবা স্পামিং করার ক্ষতিকর কিছু দিক:

-   প্রচুর প্রমোশন হবে কিন্তু প্রোডাক্ট সেল কিংবা ব্লগে ট্রাফিক কোনটাই পাওয়া যাবেনা।

-   বিভিন্ন গ্রুপ গুলো থেকে ব্যান হতে হবে।

-   অন্যরা ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ব্লক করবে।

-   নেগেটিভ ব্রান্ড ভ্যালু তৈরি হবে।

-   সবশেষ পুরো প্রজেক্টটাই ব্যর্থ হয়ে আর্থিকভাবে বিশাল ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিষয়ক আমার কিছু রিসোর্স সবার সাথে শেয়ার করছি

ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে অনেকেই শিখার মত টিউনগুলো চেয়েছে। সবার জন্য কাজে লাগবে এখন পযন্ত আমার লেখাগুলো একসাথে শেয়ার করছি।
আর্টিকেল লিংক: 
১) ফেসবুক মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত জানার লিংক: http://genesisblogs.com/tutorial-2/638
২) অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি করার হাতে কলমে প্রশিক্ষণ
পর্ব:১: http://genesisblogs.com/tutorial-2/16914
পর্ব:২: http://genesisblogs.com/tutorial-2/17082
৩) ফেসবুক ব্যবহার করে অনেকেই ব্যবসা করছে। সেই বিষয়ে বিস্তারিত টিউটোরিয়াল:
পর্ব-১: http://genesisblogs.com/freelancing-2/15977
পর্ব-২: http://genesisblogs.com/freelancing-2/16166
৪) ফেসবুক মার্কেটিং করতে গিয়ে কিছু ভুল করি, যা অনেক বেশি ক্ষতি করছে।
http://genesisblogs.com/tips-2/17963

 প্রেজেন্টেশন স্লাইড:
১) প্রোডাক্ট বিক্রির ক্ষেত্রে জেনে রাখতে হবে।
লিংক: http://www.slideshare.net/ekramict/buy-cycle-of-product
২) ফেসবুক মার্কেটিং অ্যাডভান্স টিপস
লিংক: http://www.slideshare.net/ekramict/facebook-marketing-advance-tips


 ভিডিও লিংক:
১) অনলাইনে অ্যাফিলিয়েশন কিংবা প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য মার্কেটিং শুরু করার আগে এ ভিডিওটি দেখে নিন।
লিংক:https://www.youtube.com/watch?v=aIu3wwoEK1E
২) ফেসবুক পেইড ক্যাম্পেইন:
লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=F1_szEuXSyU

 

যেকোন প্রশ্ন করুন, আমার ফেসবুক পেজে: https://www.facebook.com/ekram07/

Level 0

আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 102 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

সুন্দর পোস্ট