ফেসবুকে সারাদিন বিনাকারনে আমরা প্রচুর সময় নষ্ট করি। কিন্তু ফেসবুকে ব্যয় করা এ সময়টুকু ব্যয় করে ঘরে বসেই অনেক বড় ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। ঘরে বসেই সম্ভব প্রচুর আয় করা। অনেককেই বিভিন্ন সময় এ ব্যপারে বিচ্ছিন্নভাবে পরামর্শ দিয়েছি। ক্রিয়েটিভ আইটিতেও এসইও কোর্স করানোর সময় সবাইকে ওডেস্ক কিংবা অন্যকোন মার্কেটপ্লেসে কাজ না করে উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করার জন্য সোশ্যালমিডিয়াকে ব্যবহার করে নিজের একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে আয় করার জন্য উৎসাহিত করি। এব্যাপারে বিভিন্ন টিপস সবসময় আমার স্টুডেন্টরা পেয়ে এসেছে।
এবার এ ব্যাপারে সবার জন্য টিউন লিখেছি, যার ১ম পর্ব ইতিমধ্যে অনেকেই পড়েছেন।
যারা এখনও পড়েননি, তাদের জন্য আবার এখানে লিংক দিচ্ছি।
আজকের পর্বে মূলত ফেসবুক পেজের লাইক বাড়ানো এবং অ্যানগেজমন্টে বাড়ানো শিখাবো। ফেসবুকে শুধু লাইক বেশি থাকলেই আসলে সেল হবে এটা অনেকের ধারণা। যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ফেসবুক পেজে অ্যানগেজমেন্টটা সবচাইতে জরুরী।
- প্রতিদিন ফেসবুক পেজটিতে ৩টি করে টিউন দিবেন। কি টিউন করবেন, সেগুলো নিয়ে আগে কিছুটা ব্রেন স্ট্রোমিং করে নিন। ব্রেন স্ট্রোমিং করার ব্যপারে কিছু পরামর্শ দিতে পারি। ধরি, আপনার ব্যবসাটি হবে দেশীয় ভেজাল মুক্ত খাবার, যেমনঃ ফরমালিন মুক্ত আম। তাহলে ফরমালিনের আপনার কন্টেন্ট গুলো হবে, ফরমালিনের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, আম নিয়ে বিভিন্ন টপিকসও এখানে যুক্ত হতে পারে।
এবার তাহলে এ সম্পর্কিত অনলাইনে কি কি টিউন আছে সেগুলো খুজে বের করে আগে সব লিস্ট করে রাখুন।
- লিস্ট করে রাখা সব টিউনগুলো থেকে এবার কন্টেন্ট তৈরি করুন। ফেসবুকের কন্টেন্ট সাইজ বেশি বড় না হওয়াটাই ভাল। ব্লগের কনটেন্ট হতে হয় বড়। অনলাইন থেকে খুজে বের করা আর্টিকেলগুলো থেকে নিজের মত করে কন্টেন্ট তৈরি করুন। কপি কন্টেন্ট না করে নিজের মত করে কন্টেন্ট উপস্থাপন করুন। কপি কন্টেন্ট ব্যবহার করলে ব্রান্ডিংয়ে কম সফল হবেন। এমন কন্টেন্ট তৈরি করুন, যা মানুষের জন্য উপকারী হবে। মানুষের উপকারী তথ্য দিয়ে কোন টিউন করলেই, পেজের মেম্বাররা আপনাকে বন্ধু মনে করা শুরু করবে, আপনার উপর আস্থা শুধুমাত্র তখনই তৈরি হবে।
(শুরুতে কখনই বিজ্ঞাপন টাইপ কোন টিউন করবেননা, তাতে বন্ধুত্ব তৈরি হবেনা, দূরত্ব তৈরি হবে।)
- প্রতিদিনের ৩টি টিউনের মধ্যে একটি টিউন কুইজ টাইপ হতে পারে। কুইজ টাইপ টিউনে টিউমেন্ট এবং লাইক প্রচুর পাওয়া যায়।
- সপ্তাহের একদিন ইনফোগ্রাফিকস ধরনের টিউন করতে পারেন। ছবি সম্পর্কিত টিউনগুলো প্রচুর শেয়ার হয় এবং অ্যানগেজিংও প্রচুর বৃদ্ধি পায়। আমি আমার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/ekram07) এ কাজটি করেছিলাম। সেই রকম একটি ইমেজ এখানে শেয়ার করছি।
ইমেজটি লক্ষ্য করলে দেখবেন, সেখানে মানুষের জন্য উপকারী তথ্য দেওয়া আছে এবং ছবিটি দেখতেও আকর্ষণীয় হওয়ার কারনে অবশ্যই এটা শেয়ার হবে। ছবিটির নিচের ফেসবুক পেজের নাম থাকার কারনে, যাদের ওয়্যালে শেয়ার হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে তাদের বন্ধুরা পেজটি সম্পর্কে জানতে পারবে। আর বার বার এ পেজটির নাম জানলেই, সেটি ব্রান্ড হয়ে দাঁড়াবে। ব্যবসায়িক কারনে তৈরি কোন ইমেজ কেউ সেটি শেয়ার করবেনা।
কোন একজন ডিজাইনারকে দিয়ে একটিমাত্র ছবি তৈরি করে নিন। পরে প্রতি সপ্তাহে শুধুমাত্র লেখা আর ছবি খুব সহজে নিজেই পরিবর্তন করে নিন। কাজটি তাহলে সহজ হয়ে যাবে।
- শুরুর দিকে খুব সতর্কভাবে প্রতি ৩দিন পর পর কোন একটি টিউনে আপনার ব্যবসার কথা বলতে পারেন, তবে এত তাড়াতাড়ি সরাসরি প্রোডাক্ট বিক্রির কথা বললে, সেটি ব্রান্ডিংয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সেরকম একটি টিউনের উদাহরণ দিচ্ছি এখানেঃ
গত সপ্তাহে রাজশাহীতে আমার নিজের পরিচিত একটি বাগান থেকে ইকরাম ভাইয়ের কাছে ১মণ আম বিক্রি করেছিলাম। উনার পরিকল্পনা ছিল, আমগুলো ১মাস ধরে খাবে। কিন্তু ২ দিন পর দেখেছে, বেশির ভাগ আম পচে কাল হয়ে গেছে। হুমম, এটিই হচ্ছে, ফরমালিন মুক্ত আমের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
- মানুষের জন্য উপকারী এবং আপনার ব্যবসা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝে চেষ্টা করুন, ব্লগে টিউন করেন। ব্লগটিউনটির নিচে শুধু পেজে লাইক দেওয়ার অনুরোধ করে পেজের লিংক দিয়ে আসলেই হবে। ব্লগটিউনে আর অন্য কোন বিজ্ঞাপন চালানোর লোভ সংবরণ করুন। এরকম ব্লগের জন্য টিউন মাসে ২টি হলেই চলবে। আরও বেশি করতে পারলেতো কথাই নাই। ভালই হবে।
- কাছের মানুষদের কাছ থেকে পেজের রিভিউ অংশে ভাল রিভিউ লিখে নিন। অনুরোধের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে হতে পারে শুরুর দিকে। যারা একটু অনলাইনে বেশি পরিচিত তাদের কাছ হতে রিভিউ নিতে পারলে বেশি ভাল হবে। এ রিভিউ দেখে মানুষের মনে আপনার কাছ হতে প্রোডাক্ট কিনার ব্যাপারে আস্থা তৈরি হবে। কাছের মানুষের কাছে প্রোডাক্ট বিক্রি করেই রিভিউ নিন, মিথ্যা রিভিউ নেওয়ার দরকার নেই।
- ১মাস পর থেকে প্রতিদিনের ৩টি টিউনের মধ্যে একটি টিউন অবশ্যই একটি বিজ্ঞাপনধর্মী টিউন হবে। দুটিও হতে পারে। চেষ্টা করুন, সেই ব্যবসা সম্পর্কিত নিজের যেকোন কাযক্রমগুলোই সেখানে টিউন করার জন্য্। তাহলে অ্যানগেজিংটা অনেক বাড়বে। তবে সবসময়ই বিজ্ঞাপনের বাইরেও সবার জন্য উপকারী কনটেন্ট অবশ্যই করার দিকে সচেতন থাকতে হবে।
- যেসব টিউনগুলো সবার জন্য কাজে লাগবে, সেই টিউনগুলো অন্যগ্রুপেও শেয়ার করুন। তাহলে এ ফেসবুক পেজটির লাইক বাড়তে থাকবে।
- ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন। ভিডিও শেয়ার হয় প্রচুর। সেখান থেকেও অনেক লাইক বৃদ্ধি পাবে। মাসে একটি ভিডিও আপলোড করার পরিকল্পনা রাখলেই ভালই হবে।
- মাসে একটি করে বিশেষ অফার দিতে পারেন। তবে সবসময় ব্যতিক্রম কিছু উদ্যোগ নিলে সেটি মানুষের নজরে খুব সহজে আসবে। এরকম একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ফেসবুকে দেখলাম। সেটি শেয়ার করলাম।
Food Republic is calling all foodies for an Epic Challenge! Introducing The Abomination Challenge! Finish it all in 30 minutes and get all for free! Are you Ready?
Rules:
1. This challenge applies for one person
2. Time starts as soon as the timer starts
3. The challenger needs to clear all of the food and drink that is served
4. Food Republic reserves the right to change or omit any part of the challenge without prior announcement.
এরকম ক্যাম্পেইন কমপক্ষে ৩মাসে একবার হলেও অবশ্যই করতে হবে। এটি আপনার ব্রান্ডিং কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবে।
- যদি লোকাল ব্যবসা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে অফলাইন বিভিন্ন উদ্যোগও অবশ্যই নিতে হবে। না হলে ব্রান্ডিং করা যাবেনা। গরীব কিংবা এতিমদের বিনামুল্যে ফ্রি ফল খাওয়ানোর উদ্যোগ, এরকম কিছু অফলাইন ক্যাম্পেইন ব্রান্ডিংয়ের কাজকে অনেক সহজ করে দিবে। নিজের মাথা থেকে ব্যতিক্রম কিছু এরকম উদ্যোগ নিতে পারেন।
অ্যানগেজমেন্ট এবং পেজের লাইক বৃদ্ধির আরও অনেক ধরনের উপায় বের করা যেতে পারে। এগুলো এখানে আর আলোচনা করলামনা।
৭ম ধাপঃ প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য পেমেন্ট সিস্টেম): সবগুলো পেমেন্ট সিস্টেমের ব্যবস্থা করা না গেলেও চেষ্টা করতে পারেন জনপ্রিয় সকল পেমেন্ট সিস্টেমগুলোতে ক্লায়েন্টের পেমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশের জন্য বিকাশ, ব্রাক ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক এই জনপ্রিয় পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর মাধ্যমে পেমেন্টের ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে।
সব লেনদেন যতটুকু সম্ভব স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করবেন। তাহলেই সবার মধ্যে ব্যবসা সম্পর্কে আস্থা তৈরি হবে। এবং ব্যবসা অনেক বড় হবে, এবং সেই সাথে টিকবেও অনেকদিন।
পেজের অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা আগে সাজিয়ে নিন। তাহলে কাজের সুবিধা হবে। আমি আমার বউয়ের হিজাবসহ মহিলাদের ড্রেসের ব্যবসার ফেসবুক পেজের (Joti Hizab:https://www.facebook.com/Joti.hizab) পরিকল্পনাটা করে দিয়েছি। সেটি সবার সাথে শেয়ার করছি। নিচের লিংক থেকে সেটি ডাউনলোড করে নিন। সেই সাথে পেজটিতে লাইক দিয়ে সবসময়ের টিউনগুলো অনুসরণ করতে পারেন, তাহলেও সব আইডিয়া একদম পরিস্কার হয়ে যাবে।
http://www.mediafire.com/view/c5yfdv69cqu8i19/Joti_Hijab.pdf
অনুপ্রেরণা: দেখুন কিছুদিন আগে আমার তৈরি এফকমার্স ব্যবসা সম্পর্কিত টিউটোরিয়াল ভিডিও (https://youtu.be/EIoFkZFrSKs ) দেখার পর আমার পরিচিত একজন একটি পেজ তৈরির মাত্র ১০দিনের মধ্যে ৭টি প্রোডাক্ট সেল করেছে এবং ৩০০০টাকা ইনকাম করেছে। সেই পেজটি থেকে মাত্র ১সেকেন্ডে একটি রুটি তৈরির যন্ত্র বিক্রি করার হচ্ছে।
১) প্রোডাক্ট সিলেকশন:
ক) প্রোডাক্ট সিলেকশনটি উপযুক্ত ছিল। এমন প্রোডাক্ট ছিল যা সবার জন্যই অত্যন্ত দরকারী।
খ) প্রোডাক্টটি খুবই আনকমন ছিল যা খুব সহজলোভ্য ছিলনা।
২) মার্কেটিং:
ক) প্রোডাক্টটি নিয়ে ব্লগিং হয়েছে। ব্লগের কনটেন্টেই টার্গেটেড মানুষদের মনের ভিতর নাড়া দেওয়া মত করেই সকল বাক্য লিখা ছিল।
যেমন: টাইটেল ছিল: “কমিয়ে ফেলুন পরিশ্রম, বাঁচিয়ে ফেলুন মূল্যবান সময়”
গ) পেজটিতে নিয়মিত টিউন দেওয়া হয়েছে। সেই টিউনকে আবার প্রতিদিন প্রায় ২০টা পেজে শেয়ার করা হয়েছে।
ঘ) সবার জিজ্ঞাসার উত্তরটিও নিয়মিত প্রদান করা হয়েছে।
এ টিউনটি পড়ার পর আশা করব, কেউ আর বেকার, অনেক গরীব, কাজ নেই, সেই বিষয় নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে আমাকে নক দিবেননা। এরপরও কেউ বেকার সেটি শুনতে পাওয়াটা দুঃখজনক। আমিতো কষ্ট করে লিখে সবার জন্য উপকার করার চেষ্টা করেছি। যারা পাঠক, তাদের কাছে অনুরোধ টিউনটি পড়ার পর নিজের ওয়্যালে শেয়ার করবেন। তাহলে অনেক মানুষ উপকৃত হবে।
আমি মোঃ ইকরাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 102 টি টিউন ও 130 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
নিজেকে অনলাইন ব্রান্ড এক্সপার্ট হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করলেও গ্রাফিকস, ওয়েবডিজাইন এবং অ্যানিমেশন বিষয়েও প্রচুর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ব্লগিংটা নেশার কারনে করি। নিজের ব্লগের লিংকঃ http://genesisblogs.com/