স্প্যামিংঃ ফেসবুকে নিরাপত্তা এবং কিছু কথা

ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, ওসাইবার এখন আমাদের প্রতিদিনের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য একটা অংশে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে তরুন সমাজের কাছে। আমাদের ব্যক্তিত্বের অনেকাংশই প্রকাশ পায় আমরা নিজেদেরকে এসব সোশ্যাল মিডিয়াতে কিভাবে উপস্থাপন করি তার ভিত্তিতে! ব্যক্তি ইমেজও তাই আংশিকভাবে এর উপর নির্ভরশীল। সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ফেসবুক নিঃসন্ধেহে সবচেয়ে জনপ্রিয়।

সর্বশেষ হিসাবমতে বাংলাদেশে এখন ১০ লাখের বেশী ফেসবুক ইউজার রয়েছেন (আসল এবং ফেইক মিলে)। ফেসবুকে ফ্রেন্ডলিস্টে বন্ধু-বান্ধব, অফিসের সহকর্মী, শিক্ষক এবং বাবা-মা পর্যন্ত থাকেন। ফলে আমরা ফেসবুকে কি করছি বা কি পোস্ট করছি তা সবার নজরে চলে আসে। অনেকের ফেসবুকের ওয়ালে পাবলিক এক্সেস থাকে। ফলে তার ওয়াল পোস্ট সবাই দেখতে পারছেন। তাই আপনার যেকোন পোস্টের জন্য বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন বা অসন্মানিত হতে পারেন। ইদানিং অনেকেই ফেসবুকের বিভিন্ন আপত্তিকর পোস্টের কারনে নানা ভাবে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন। আর দিনে দিনে এ ধরনের স্প্যামিং এর ঘটনা বাড়ছে তো বাড়ছেই।

কিভাবে এধরনের স্প্যামিং ছড়ায়ঃ এ ধরনের স্প্যামিংকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ

১। ক্লিক জ্যাকিং,

২। লাইক জ্যাকিং,

৩। ম্যালিশিয়াস কোড,

৪। ম্যালিশিয়াস ফেসবুক এপ্লিকেশন, ইত্যাদি।

নিচে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছিঃ

১। ক্লিক জ্যাকিংঃ ক্লিক জ্যাকিং হলো অনিচ্ছাসত্বে কোন লিঙ্কের উপর ক্লিক করা। সাধারন HTML বা CSS এর বিশেষ ট্রিক্স ব্যবহার একটা পেজের উপর আরেকটা পেজ লোড করা হয়। এছাড়া কোন ভিডিও বা ইমেজের উপর লুকানো অন্যকোন পেইজের লিঙ্ক দেওয়া হয়।

ধরুন, মজার কৌতুক পেইজের লিঙ্ক, বা বিশেষ কোন ভিডিও ইউআরএল, যা দেখতে ইউটিউব লিঙ্কের মতোই মনে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে কোন থার্ডপার্টি লিঙ্ক। যখন কোন ইউজার তাতে ক্লিক করবেন, তখন তিনি অন্যকোন লিঙ্ক যেমনঃ http://habijabi.etaseta.com এ ফরওয়ার্ড হবেন। তখন আপনাকে বিশেষ কোন বাটনে ক্লিক করতে বলা হবে। আপনার মনে হবে এই বাটন বা লিঙ্কে ক্লিক করলেই কাংখিত ফাইলটি ওপেন হবে। কিন্তু তাতে ক্লিক করলেই আপনার পিসিতে বিশেষ কোন ম্যালিশিয়াস প্লাগইন ইনস্টল হবে। অনেক ক্ষেত্রে লিঙ্কে ক্লিক করা ব্যতিতই তা ইনস্টল হতে পারে। যারা অপারেশন পাসওয়ার্ড দেখেছেন, তারা হয়তো এটি দেখে থাকবেন। আর এই প্লাগইনটি আপনার তথ্য হ্যাকারকে সরবরাহ করতে পারে।

আবার দেখা যায় এ ধরনের কন্টেন্ট এর পেছনে কোন লুকানো লাইক বা শেয়ার বাটন থাকে। অনেক সাধারন ব্যবহারকারীর পক্ষে এটি বুঝা নিতান্ত কঠিন। অনেক সময় ব্যবহারকারীকে কোন একটি ক্যাপচা পুরন করতে বলা হয়। এই ক্যাপচার পেছনেও কোন লাইক বা শেয়ার বাটন থাকে। যখন আপনি ক্যাপচাটি সাবমিট করবেন, তখন বিশেষ কোন কন্টেন্ট আপনার ওয়ালে শেয়ার হয়ে যাবে আপনার অজান্তেই।

২। লাইক জ্যাকিংঃ এটিও অনেকটা ক্লিক জ্যাকিং এর মতোই। অনেক সময় দেখা যায়, কোন সাইট থেকে কোন ফাইল দেখার জন্য বা ডাউনলোড করার জন্য জোরপুর্বক্ লাইক আদায় করে থাকে। কারন লাইক না দিলে আপনি উক্ত কন্টেন্টটি দেখতে পারবেন না। এখানে অনেক সময় এমন হয়, আপনি লাইক দেবার পর তা ফিড আকারে আপনার বন্ধুদের বা যারা আপনাকে ফলো করছেন তাদের ওয়ালে আপনার রেফারেন্স আকারে চলে যাবে। আর যদি উক্ত কন্টেন্টটি কোন বাজে ইমেজ বা ভিডিও হয় তবে আপনার ফলোয়ারদের অবস্থা কেমন হতে পারে তা তো বুঝতেই পারছেন। অনেকেই হয়তো এমন দেখেছেন যে আপনার আইডি থেকে কিছু একটা শেয়ার করা, অথচ আপনি সেটা সম্পর্কে জানেনই না। যেসব সাইটে ফেসবুক লাইক বাটন আছে, সেসব সাইট থেকেও লাইক জ্যাকিং সম্ভব। তাই বলে আবার ওয়েবমাস্টাররা লাইক বাটন ইউজ করা বাদ দিবেন না, শুধু মাত্র ভেরিফাইড প্লাগইন বা ফেরিফাইড কোড ইউজ করলেই চলবে। সমচেয়ে ভালো হয় ফেসবুক থেকে দেওয়া কোড ইউজ করলে।

অনেক সময় হ্যাকাররা লাইক বাটনের উপর একটি স্বচ্ছ লেয়ার দিয়ে দেয়। আর এই লেয়ারের সাথে লাইক বাটনের লিঙ্ক করে দেয়। এতে করে আপনি কনটেন্টের যেখানেই ক্লিক করেন না কেন, তা উক্ত লাইক বা শেয়ার বাটনেই হিট করবে।

৩। ম্যালিশিয়াস কোড/স্ক্রিপ্টঃ এটা আরেক ধরনের স্প্যামিং, যা ফেসবুক একাউন্টের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এতে হ্যাকাররা ইউজারকে কোন লোভনীয় অফার সহ বিশেষ লিঙ্ক দিয়ে থাকে। যখন ইউজার উক্ত লিঙ্ক ব্রাউজ করেন, তখন উক্ত স্ক্রিপ্ট তার একাউন্ট নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে নেয়। তখন হ্যাকার আপনার একাউন্ট ব্যবহার করে মেসেজ পাঠানো, ওয়াল পোস্টিং ইত্যাদি করতে পারে।

৪। ম্যালিশিয়াস ফেসবুক এপ্লিকেশনঃ অনেকেই হয়তো ফেসবুকে বিভিন্ন গেম খেলে থাকেন। আর ইদানিং বিভিন্ন রকম ফেসবুক এপ্লিকেশনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েই হ্যাকাররা ইউজারের জন্য তথ্য চুরির বিভিন্ন রকম এপ্লিকেশন ডেভেলপ করছে। ফেসবুকে অনেক থার্ডপার্টি এপ্লিকেশন রয়েছে, যা সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি স্টান্ডার্ড মেনে তৈরী করা হয় না। আর এটা ব্যবহার করেই তারা ইউজারের গোপনীয় তথ্য চুরি করে নেয়।

এসব থেকে নিরাপদ থাকার কিছু উপায়ঃ

০১. প্রথমত সন্দেহজনক সকল লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় .tk থেকে নেওয়া বিশেষ সাইটে বলা হয় অমুক তিনটি পেইজ লাইক করে অমুক বার্তা ফেসবুকের বিশ জায়গায় শেয়ার করলে ৫০০ টাকা মোবাইলে ফ্লেক্সি। বিকাশ অনুমোদিত :-P, বিস্তারিত bikashteka.tk ইত্যাদি। এসব থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকবেন।

০২. যদি মজিলা ফায়ারফক্স এর জন্য NoScript অ্যাডঅন রয়েছে। এটা ইউজ করতে পারেন। এছাড়া অন্যন্য ব্রাওজারের জন্যও অনুরুপ এক্সটেনশন রয়েছে। এগুলো ইউজ করলে ক্লিক জ্যাকিং এর ক্ষেত্রে ওয়ার্নিং মেসেজ পাবেন।

০৩. সকল ব্রাউজারের আপডেট ভার্শন ব্যবহার করবেন এবং ভালো এন্টিভাইরাস (ইন্টারনেট সিকিউরিটি সহ) ব্যবহার করবেন। আর খেয়াল রাখবেন, যাতে সন্দেহজনক কোন লিঙ্ক ব্রাউজের সময় যাতে আপনার ফেসবুক বা অন্যকোন একাউন্টে লগইন করে না থাকেন।

০৪. ফেসবুকে কোন সন্দেহজনক লিঙ্ক/ক্লিক/কন্টেন্ট/এপ্লিকেশন দেখলে Report/Mark as spam এ ক্লিক করে রিপোর্ট করুন।

পরিশেষে, নিজে নিরাপদ থাকুন এবং শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকেও সতর্ক করুন।

আমি উদয় খান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 85 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস