জি, বর্তমানে এমনটা বলা যায় যে, তাইওয়ানের কোনো এক কোম্পানি পৃথিবীর সমস্ত ইলেকট্রনিক্স ও
টেক কোম্পানি কে নিয়ন্ত্রন করছে। নিয়ন্ত্রন করছে বলতে কিছুটা এমন বুঝায় যে, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস তৈরির জন্য সব ধরনের পার্টস পৃথিবীর সমস্ত কোম্পানিকে Provide এই TMSC কোম্পানিটি। অর্থাৎ এই টি এম এস সি যদি কোনো কোম্পানির সাথে তাদের চুক্তি বাতিল করে তাদেরকে পার্টস দেওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে একদম শিউর বলতে পারব যে, সেই কোম্পানিটি আর তাদের ব্যাবসা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। একদম সরাসরি ও অফিসিয়াল ভাবে কোম্পানি টি বন্ধ হয়ে যাবে। এই দিক দিয়ে বলা যায় টি এম এস সি একভাবে ইলেকট্রিনক্স কোম্পানি গুলোকে নিয়ন্ত্রন ই করছে।
2020-2021 সালের দিকে একবার পৃথিবীর বেশ কয়েকটি কোম্পানি কয়েক মাসের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ ওই সময় তাইওয়ান এ খরা চলছিল ফলে তারা চিপ তৈরি করতে এবং অন্যান্য কোম্পানি গুলোকে সাপ্লাই দিতে পারছিল না। ফলে ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি গুলোকে কয়েক মাসের জন্য তাদের কোম্পানি বন্ধ রাখতে হয়। তাহলে আপনারাই বুঝেনিন, TMSC এখন আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপুৃর্ন। নিচে TMSC এর ছোট্ট একটি সংজ্ঞা জেনে নিন।
TMSC কি?
TMSC এর ফুল মিনিং হচ্ছে Taiwan Semiconductor Manufacturing Company, Limited. অর্থাৎ, ইহা একটি সেমিকন্ডাকটর উৎপাদন করা কোম্পানি। যাদের তৈরী সেমিকন্ডাক্টর সমস্ত ইলেকট্রনিক ও আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে বিক্রি করা হয়। পৃথিবীর ৭০% ইলেকট্রনিক্স ও টেক কোম্পানি গুলো তাদের সেমিকন্ডাটর এই TMSC থেকেই নেয়। এবার আপনারা সেমিকন্ডাকটর এর ব্যাপারে জেনে নিন।
সেমিকন্ডাটর অর্থাৎ অর্ধ পরিবাহী পদার্থ হচ্ছে এমন এক ধরনের পদার্থ যার মধ্য বিদ্যুৎ চলাচল করতে যেয়ে শক লগে অথবা বাধাপ্রাপ্ত হয়। যেমন:- মানুষের শরীর। প্রতিটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিদ্যুৎ পরিবাহী হলেও ডিভাইস গুলো কাজ করার জন্য সক জাতীয় অর্থাৎ অর্ধ পরিবাহী পদার্থ এর প্রয়োজন পর যেটা প্রোভাইড করে TMSC কোম্পানি। মানুষের শরীর ও একটি অর্ধ পরিবাহী পদার্থ। কিন্তু কিন্ত মানুষ একটি সামাজিক জীব হবার কারণে মানুষের শরীর কে সেমিকন্ডাকটর হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
একটি ফ্যানের উদাহরণ দেই। আমরা যেমনটা দেখি যে একটি ফ্যান এ বিদ্যুত সংযোগ দিলেই ফ্যান টি ঘুরে। কিন্তু ফ্যান টি ঘুরার মূল কারণ অনেকে জানি না। একটি ফ্যানের মধ্য সারিবদ্ধ ও বৃত্তাকার ভাবে দেওয়া হয়েছে সেমিকন্ডাকটর। তাই আমরা যখন ফ্যান টি চালু করি তখন সবগুলো সেমিকন্ডাক্টর সক লেগে সামনের দিকে ধাক্কা খায়।
এর ফলে ফ্যান টি নড়ে সামনের দিকে এগোয়। সামনে আরো সেমিকন্ডাক্টর থাকায় সেগুলোও ধাক্কা খায়। সবগুলো ধাক্কা খেয়ে সামনের দিকে এগোতেই থাকে। এবং আমরা দেখি যে ফান টি ও ঘুরতেই থাকে।
আমি আগেও জানিয়েছি যে, আজকাল এমন কোনো কোম্পানি নেই যারা TSMC এর প্রোডাক্ট ব্যবহার করেনা। আপনার ঘরের প্রত্যেকটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এর কোনো একটু পার্টস এই TMSC কোম্পানীর থাকবেই। তাদের কাছে এখন ১১০০০+ প্রোডাক্ট এবং ৬০০+ বায়ার রয়েছে। এবং সেই বায়ার গুলো আপনি কিংবা আমি নয়। প্রতিটি বায়ার এক একটি সুনামধন্য কোম্পানী।
তার পরও আমি তিনটি কোম্পানীর নাম উল্লেখ করেছি যারা এই TMSC এর উপর একটু বেশিই নির্ভরশীল।
এই তিনটি কোম্পানির নাম বললাম এইগুলো TMSC এর সাথে একটু বেশিই জড়িত। এখন TSMC কিংবা তাইওয়ানের এর এতো বড় একটি সফলতার পূর্বের ইতিহাস জেনে নেওয়া যাক।
সাল ১৯৭০। তাইওয়ান যখন পৃথিবীর সবচাইতে অনুন্নত দেশ ছিল। উন্নয়ন ই ছিলো না উল্টো দিনে দিনে অবনতি হচ্ছিল। তাইওয়ান সরকার ব্যাপারটাকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখছিল। উন্নয়ন এর দিকে না গেলে দেশ খুব শীগ্রই দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পথে।
এমন সময়ে তারা উন্নয়ন এর পথে এগোবার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রডাক্ট উৎপাদনের চেষ্টা করল। এবং সকল ধরনের প্রডাক্ট উৎপাদন করে বিদেশে বিদেশে রপ্তানি করার চেষ্টা করছিল। কিন্ত দুঃখের বিষয় ছিলো যে, তাইওয়ানের প্রোডাক্ট কেউ ই কিনতে চাইতো না। প্রডাক্ট খারাপ ছিলো না। আসল ব্যাপারটা এমন ছিলো যে, যেই দেশ তাইওয়ানের কোনো প্রডাক্ট কিনতো সেই দেশের সাথে চীনের সরাসরি শত্রুতা সৃষ্টি হতো।
এইসময় একজন ইঞ্জিনিয়ার এর পরামর্শে তাইওয়ান সরকার দেখতে পেয়েছিল যে চিপ উৎপাদন সমস্ত কোম্পানি গুলো অনেক বেশি বেশি টাকা বিনিয়োগ করছে। কিন্ত তারা যেখানে হাতে কলমে চিপ টা তৈরি করবে, হাতের কাজ দিয়ে যখন চিপ টাকে মজবুত করবে সেই দিক দিয়ে তারা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। তখন সেই ইঞ্জিনিয়ার সরকার থেকে অনুমতি ও কিছু আর্থিক সুবিধা নিল। এই কারণে যে, সে নিজে একটা কোম্পানি খুলবে সেই কোম্পানিটি এই সঠিকভাবে চিপ ডেভলপমেন্ট কাজ করবে এবং পৃথিবীতে সেমিকন্ডাকটর এর যে ঘাটতি রয়েছে সেটা পূরণ করবে।
কিন্ত তাদের কপাল থেকে কালো ছায়া এখনো দুর হয়নি। সরকার মাত্র ২০% ইনভেস্ট করলো তো বাকি ৮০% ইনভেস্ট করবে কে? এর জন্য তাইওয়ান আশেপাশের সমস্ত দেশ থেকে ইনভেস্ট এর জন্য সাহায্য চাইলো। কিন্তু কোনো দেশ বা কোনো কোম্পানি ই তাদেরকে সাহায্য করেনি।
অবশেষে সেই ফিলিপস কোম্পানি তাদের কোম্পানীর মূলধনের ২৮% ইনভেস্ট করতে রাজি হয়। মোট হলো 48% বাকি 52% সেই লোকাল ছোটো বড়ো ইনভেস্টর রা মিলে একটু একটু করে দিয়ে চালু করা হয় কোম্পানির কার্যক্রম। তখন সময় ছিলো ১৯৮৭ সাল।
তারা কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস তৈরি করছেনা। তারা তৈরী করেছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এর ছোটো বড়ো পার্টস সামগ্রী। ধীরে ধীরে বিক্রি করতে লাগলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। অবশেষে ১৯৯৭ সালে TSMC ছিলো তাইওয়ানের প্রথম কোম্পানি যাঁরা আমেরিকার স্টক এক্সচেঞ্জে বিজনেস শুরু করলো। TSMC এর কাছে এখন 600 বিলিয়ন ডলারের মনোপলি রয়েছে।
শুধু তাই নয়? তখন TSMC এর সাথে যাঁরা চুক্তি করছিল তারাও ধীরে ধীরে সফল হচ্ছিল। যেমন:- মিডিয়াটেক, ফক্সকন ইত্যাদি।
আজকে হয়ত আর কিছু লেখা হবেনা। এই গল্প থেকে আমাদের অনেক কিছুই শিক্ষনীয় ব্যাপার রয়েছে যেটা আমি আর ভেঙে বুঝালাম না। ধন্যবাদ।
আমি মো মারুফ শেখ। ৪র্থ সেমিস্টার, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 29 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।