তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কোনো ডেমেজ ডিভাইস রিপেয়ার করতে এখন আর ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিয়ারিং এর উপর পিএইচডি ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। ছোটখাট যেকোনো রিপেয়ারিংয়ের কাজ আমরা সবাই টুকটাক করতে পারি। এই যেমন নতুন বাসায় কম্পিউটার সেট করা। আগেকার দিনে সিপিইউ ও মনিটরের তাঁরগুলো সেটআপ করে দেবার জন্য ৩০০ টাকা দেওয়া লাগতো আইটি ম্যানকে! চিন্তা করা যায় কোন জায়গা থেকে আমরা কতদূর এগিয়ে এসেছি? এছাড়াও বর্তমানে ইউটিউবে রিপেয়ারিং এর উপর বিভিন্ন টিউটোরিয়াল রয়েছে যেগুলো ফলো করলেই যেকেউ টুকটাক রিপেয়ারিং এর কাজ করে নিতে পারবে।
তবে আর ডেমেজকৃত ডিভাইসের যদি ওয়ারেন্টি থাকে তাহলে শুধু শুধু নিজে কস্ট করে রিপেয়ারিং করতে যাবেন কেন, সরাসরি ডিভাইসটি নিয়ে চলে যান কাস্টমার কেয়ারে। আর ওয়ারেন্টি না থাকলে সমস্যার ভিক্তিকে নিজে অথবা সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে ডিভাইসটি ঠিক করানোর চেষ্টা করতে পারেন।
কিন্তু কিছু কিছু ডিভাইস রয়েছে যেটা একবার নস্ট বা ডেমেজ হয়ে গেলে রিপেয়ারিং করা প্রায় অসম্ভব। যেমন বাংলাদেশে মাইক্রোম্যাক্স কোম্পানির স্মার্টফোনগুলোর কোনো খুচরা যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না বিধায় এগুলোর কোনো কিছু নস্ট হয়ে গেলে পুরো স্মার্টফোনটাকেই ফেলে দিতে হয়। আবার বাংলাদেশে আপনি আইপড ন্যানোর ব্যাটারী খুঁজে পাবেন না এবং সাধারণ ভাবে আইপডের ব্যাটারী রিপ্লেস আপনি নিজেও করতে পারবেন না ইত্যাদি।
আজকের টিউনে আমি ১০টি এমন কিছু টেকনোলজি পণ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যেগুলো নস্ট হলে সেটা রিপেয়ার করা প্রায় অসম্ভব। সেটা রিপেয়ার করার চাইলে ওয়ারেন্টি থাকলে রিপ্লেসমেন্ট এর জন্য আবেদন করা কিংবা নতুন ডিভাইস কেনাটাই উত্তম। তো চলুন দেখে নেই কি কি পণ্য রিপেয়ার করা প্রায় অসম্ভব:
হ্যান্ডহেল্ড কাস্টম গেমিং ডিভাইসের মধ্যে নিনটেনডো ব্রান্ডের গেমিং কনসোলগুলো অন্যতম। তাদের মধ্যে একটি হলো নিনটেনডো 2DS XL। কিন্তু এই ডিভাইসটি একবার ডেমেজ হয়ে গেলে সেটা রিপেয়ার করা প্রায় অসম্ভব। কারণ নিচের দিকে ৩টি ট্রিপয়েন্ট স্ক্রু খোলার পর আপনি দেখে অবাক হয়ে যাবেন যে চার্জিং কানেক্টর আর হেডফোন জ্যাক র্পোট এই ২টি জিনিস সরাসরি মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত করা রয়েছে, অর্থ্যাৎ আপনি ডিভাইসটি নিচের দিক থেকে খূলতে পারবেন না। কিন্তু উপরের দিকে ডিসপ্লেটি খুলে নিয়ে তারপর ডিভাইসটি রিপেয়ার করা সম্ভব কিন্তু ডিসপ্লে টি আবারো সুক্ষভাবে সঠিক স্থানে বসানোটাই হলো ঝামেলা। কারণ ডিসপ্লেটি ভালো মানের আঠা দিয়ে বাসানো থাকে সেটা খোলার সময় অধিকাংশ সময়ে ডিসপ্লেটি ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই এই ডিভাইসটি রিপেয়ার করা প্রায় অসম্ভব। আর বাংলাদেশে বসে এটি রিপেয়ার করার চিন্তা করাটাও বোকামি!
স্মার্ট যুগে স্মার্ট হোম স্পিকার এমাজন ইকো শো বর্তমানে অনেক ঘরেই ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু আপনি জানেন কি এই ডিভাইসটি রিপেয়ার করা প্রায় অসম্ভব? কেন? কারণ এর ডিসপ্লেটি ডিভাইসের একদম মাঝে এমন ভাবে বসানো হয়েছে যেটা না ডেমেজ করে তুলে আনা প্রায় অসম্ভব। আর এর বাটন এবং পাওয়ার জ্যাকও সরাসরি মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত। তাই এটি ডেমেজ হয়ে গেলে সরাসরি এমাজন সার্ভিস স্টোরে নিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানে কাজ।
গ্যালাক্সি নোট ৭ এর ব্যাটারী বিস্ফোরণের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যান নি? তাহলে এবার গ্যালাক্সি নোট ৮ নিয়ে আপনি কি নিশ্চিন্ত? কিন্তু এটা শোনার পর আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন না। কারণ স্যামসং গ্যালাক্সি নোট ৮ ডিভাইস টি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে সেটার কোনো খুচরা যন্ত্রাংশ নস্ট হয়ে গেলে পুরো ডিভাইসটিই আপনাকে ফেলে দিতে হবে। কারণ ডিভাইসটির সামনের এবং পেছনের প্যানেলগুলো তৈরি করা হয়েছে স্ট্রং adhesive দিয়ে। আর ডিভাইসটির ব্যাটারী রিপ্লেসমেন্ট করাও যাবে না। তাই নোট ৮ এর ওয়ারেন্টি উর্ত্তিণ হয়ে যাবার পর এটি একটু সাবধানে ব্যবহার করুন।
অ্যাপল ডিভাইসগুলোই সাধারণভাবে রিপেয়ার করতে একটু বেগ পোহাতে হয় আমাদের টপ সার্ভিসিং ম্যানদেরকেও। আর এক্ষেত্রে অ্যাপল আইম্যাকও কোনো ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আপনি এই ডিভাইসের ডিসপ্লে গ্লাস ও রেটিনা পরিবর্তন করতে পারবেন না কারণ এই দুটি একসাথে Fused করে বানানো হয়েছে। আর এদেরকে ডেমেজ করা ছাড়া এদেরকে আলাদা করা অসম্ভব। কিন্তু এই ডিভাইসের র্যাম রিপ্লেস করা যায় তবে র্যামে অবস্থায় অনেক ভেতরে হওয়ায় প্রায় অনেককিছু খুলে নিয়ে তার সেখানে আপনি পৌঁছাতে পারবেন।
আপনি যদি 5th Gen এর আইপ্যাড ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এখন থেকে এটা খুব সাবধানে ব্যবহার করবেন। কারণ এই ডিভাইস একদমই UNREPAIRABLE! কারণ এর পিছনের দিকে ব্যাটারী সহ প্রায় সব কিছুতেই শক্তিশালি আঠা ব্যবহার করা হয়েছে এবং সামনের এলসিডি ডিসপ্লেতেও Sticky tape ব্যবহৃত হয়ে যা খুলতে গেলে ডিসপ্লেটাই ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে প্রায় ৯৫%!
সারফেইস বুক ২ একটি চমৎকার ডিভাইস। এটি ল্যাপটপের স্মার্টনেসকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আপনি জেনে হতাশ হবেন যে এই ডিভাইসটি রিপেয়ার করা প্রায় অসম্ভব। কারণ এর ব্যাটারী, ডিসপ্লে এবং বেইস কভার adhesive দিয়ে বেশ ভালো করেই টাইট ভাবে বসানো থাকে। আর বাকি যন্ত্রাংশগুলো পেছনে মাদারবোর্ডের নিচে থাকে আর সেগুলো রিপেয়ার করতে গেলে আপনাকে মাস্ট প্রথমে মাদারবোর্ডটি খুলে নিতে হবে যেটা করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ।
ম্যাকবুক প্রোর পেছনের শুধুমাত্র কেসিংটা আপনি স্ট্রু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুলতে পারবেন ব্যস। আর কিছু করা যাবে না এই ডিভাইসটিতে। কারণ এর ব্যাটারীটা কেইসের সাথে আঠা দিয়ে বেশ ভালো করেই বসানো থাকে। আর এর সিপিইউ, র্যাম এবং মেমোরী গুলো সরাসরি মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত থাকে তাই এটি রিপেয়ার করা অসম্ভব। তাই সাবধানে ব্যবহার করাই শ্রেয়।
মাইক্রোসফটের চমৎকার ল্যাপটপ মডেল হচ্ছে Surface Pro কিন্তু এটির কোনো কিছু রিপেয়ার করতে হলে আপনাকে মাস্ট এর ডিসপ্লে টা খুলে নিতে হবে কারণ নিচের দিক থেকে এর খোলার কোনো অপশন নেই। আর এর ডিসপ্লেটি ডেমেজ না করে খোলার উপায়ও কম তাই এটি রিপেয়ার করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।
অ্যাপলের নতুন আইফোনের মডেলের সাথে এর হেডফোনগুলোকেও স্মার্ট বানানো হয়েছে। আর একই সাথে এই এয়ারপডসগুলোকেও রিপেয়ার করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে আপনাকে। বলতে গেলে এটি রিপেয়ার করা একদমই অসম্ভব। কারণ এর ৯৭% কম্পোনেন্টসকে আঠা দিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে যা একবার খুলে ফেললে আর আগের স্থানে সঠিক ভাবে বসানো যায় না। তাই এয়ারপডসগুলো সাবধানে ব্যবহার করা উচিত।
অ্যাপল ম্যাকবুক মডেলগুলো রিপেয়ার আপনি সবর্ত্র করতে পারবেন না। আর যারা এই দু:সাহসীক কাজ টা করবে তাদেরকেও বেশ বাগ পোহাতে হয়। কারণ ম্যাকবুকের প্রসেসর, র্যাম এবং হার্ডড্রাইভ সরাসরি মাদারবোর্ড এর সাথে যুক্ত থাকে যার কারণে এগুলো খোলা যায় না। আর এর রেটিনা ডিসপ্লেতে কোনো ধরনের প্রটেক্টিভ গ্লাস নেই যার কারণে এটি খোলার সময় ভেঙ্গে যাবার চান্স অনেক থাকে। আর এর ব্যাটারীকে শক্তিশালি আঠার সাহায্যে কেইসে ফিট করে বাসানো হয়। তাই এটি রিপ্লেয়ার করা প্রায় অসম্ভব।
তো এই ছিলো দামী ব্রান্ডের কিছু Unrepairable ডিভাইস। আপাতত দৃস্টিতে এগুলো নেগেটিভ পয়েন্ট হলেও আসলে ডিভাইসগুলোর কোয়ালিটি এতটাই ভালো হয় যে এগুলো খুব সহজে নস্ট হয় না তাই এগুলোতে রিপেয়ারের চান্স দেওয়া হয়নি। উদাহরণ স্বরুপ আমি বলতে পারি নরমাল ব্রান্ডের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন আমরা অহরহ নস্ট বা ডেমেজ হতে দেখি কিন্তু আইফোন নস্ট হয়েছে এটা আমরা খুবই কম দেখতে পাই। হ্যাঁ আপনি চলন্ত বাস থেকে আইফোন ফেলে দিলে কিংবা মটরসাইকেলে চাকার নিয়ে আইফোন চালান করে দিলে সেটা নস্ট হবেই! হাহাহা।
তাই টিউনের শেষে বলতে চাই যে এই ডিভাইসগুলোর কোয়ালিটি আসলেই ভালো তাই এগুলো নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। আজ তাহলে এ পর্যন্তই থাক। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি কমিউনিটি প্লাটফর্ম টেকটিউনসে। ভালো থাকবেন, টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!