এফ.এম ট্রান্সমিটার নিয়ে বানাতে গিয়ে ব্যর্থ? জেনে নিন এফ.এম ট্রান্সমিটার বানাতে গিয়ে প্রথম প্রথম আমরা ব্যর্থ হই কেন?

আসসালামু আলাইকুম। ইলেক্ট্রনিক্স বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করছি আপনার সবাই ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে একটু ব্যতিক্রম একটা বিষয় শেয়ার করবো। আমরা যারা ইলেক্ট্রনিক্স ভালোবাসি তাদের সবারই একটা বিশেষ শখ থাকে নিজের একটা এফ.এম ট্রান্সমিটার তৈরী করার। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখে দেখেও আমরা এফ.এম ট্রান্সমিটার বানাতে পারি না। আমি আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কেন আমরা এফ.এম ট্রান্সমিটার বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হই। তবে শুরুতেই বলি রাখি, আমরা

এফ.এম ট্রান্সমিটার কি? এফ.এম ট্রান্সমিটার হলো এমন একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস যা কোন শব্দ তরঙ্গকে রেডিও সিগন্যালে কনভার্ট করে অন এয়ার করতে পারে যার ফলে আশেপাশে থাকা রেডিও রিসিভারে সেই শব্দ শোনা যায়। অর্থ্যাৎ এটা একটা মিনি রিডিও স্টেশন। ইন্টারনেটে খুঁজলে এফ.এম ট্রান্সমিটার বানানোর প্রচুর ভিডিও এবং সার্কিট ডায়াগ্রাম পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরও আমরা মোটামুটি সবাই প্রথম প্রথম এই ডিভাইসটি তৈরী করতে ব্যর্থ হই। কেন আমরা ব্যর্থ হই। আসলে আমরা আমাদের অজান্তেই এমন কিছু ভুল করে থাকি যা আমরা জানিই না। কিন্তু এ বিষয়গুলোই এফ.এম ট্রান্সমিটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। এফ.এম ট্রান্সমিটার সফলভাবে বানাতে হলে প্রথমেই আমাদেরকে এফ.এম ট্রান্সমিটারের মেকানিজম অর্থ্যাৎ এটা কিভাবে কাজ করে সেটা বুজতে হবে।

এফ.এম ট্রান্সমিটারে মূলত তিনটি প্রধান অংশ থাকে। অডিও ইনপুট, এমপ্লিফিকেশন, ট্রান্সমিটিং। আসুন আমরা এগুলো নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করি।

অডিও ইনপুট

অডিও ইনপুট সেকশনে মূলত অডিও ইনপুট নেয়া হয়। কিছু কিছু এফ.এম. সার্কিটে মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয় আবার কিছু কিছুতে মোবাইলের স্টেরিও ফোন কানেক্ট করে মোবাইলের অডিও চালানোর ব্যবস্থা থাকে। এগুলো মূলত ইনপুট অংশে করা হয়।

এমপ্লিফিকেশন

এমপ্লিফিকেশন পার্ট হলো এফ.এম ট্রান্সমিটারের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। এই অংশের কাজ হলো ইনপুটে সে অডিও কে এমপ্লিফাই করা হয়। অডিওতে কোন নয়েজ থাকলে তা কমানো এবং শব্দ যাতে স্পষ্ট শোনা যায় তার জন্য যাবতীয় অপারেশন করা হয় এই অংশে।

ট্রান্সমিটিং

ট্রান্সমিটার হলো একটি এফ.এম ট্রান্সমিটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রথম দুইটি অংশ আমরা অডিও এমপ্লিফায়ারেও দেখি। কিন্তু একটা এফ.এম ট্রান্সমিটারের সাথে একটা অডিও এমপ্লিফায়ারের পার্থক্য হলো এই অংশে। আপনারা সহজেই বুজতে পারছেন এফ.এম ট্রান্সমিটারে প্রধান কাজ অর্থ্যাৎ শব্দকে বাতাসে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটাই মূলত হয় এই সেকশনে। মজার ব্যাপার কি জানেন প্রথম দুইটি অংশে যদি আমরা ছোট খাটো ভুল করি তাহলেও কোন সমস্যা হয় না। ছোট খাটো ভুল বলতে হয়তো শব্দটা যতটা ক্লিয়ার হওয়ার কথা তা না হয়ে একটু শোঁ শোঁ করতেছে। ওটা ব্যাপার না। কিন্তু যদি ট্রান্সমিটার পার্টে সামান্য একটু ভুলও করেন তাহলে আপনার ট্রান্সমিটার কাজ করবে না।

ট্রান্সমিটার পার্টে একটা অংশ হলো ট্যাংক কয়েল পার্ট বা যাকে LC Circuit বলা হয়। নামটা এরকম হওয়ার কারণ হলো এখানে একটা ইন্ডাক্টর এবং একটা ক্যাপাসিটরকে প্যারালাল ভাবে সংযোগ দেয়া হয়। ইন্ডাক্টরকে L দ্বারা এবং ক্যাপাসিটরকে C দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সেই থেকেই এর নাম LC Circuit. মনে রাখবেন এফ.এম ট্রান্সমিটারের ট্রান্সমিটিং অংশের একটা বিশেষ অংশকেই LC Circuit বলা হয়, পুরো এফ.এম ট্রান্সমিটারকে নয়। মূলত একটা ইন্ডাক্টর এবং একটা ক্যাপাসিটরকে প্যারালাল ভাবে কানেকশন দিলে এখানে রেডিও সিগন্যাল তৈরী হয়। যাকে ক্যারিয়ার ওয়েভ বা বহনকারী তরঙ্গ বলা হয়। মজার বিষয় হলো এই ট্যাংক কয়েল বা LC Circuit এ যে ক্যারিয়ার ওয়েভ তৈরী হবে তার সাথে আমাদের শব্দটাকে যদি আমরা মিক্সড করে দেই তাহলে তা ক্যারিয়ার ওয়েভের সাথে বাতাসে ছড়িয়ে যাবে। মানে বহনাকারী তরঙ্গ আমাদের মূল শব্দ তরঙ্গকে বহন করে নিয়ে যাবে। এই অংশটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন বললাম? আসলে আমরা যে ইন্ডাক্টর আর ক্যাপাসিটর ব্যবহার করে এই সার্কিট তৈরী করবো তাদের মানের উপরই আমাদের ট্রান্সমিটারের ফ্রিকুয়েন্সিটা কত হবে তা নির্ভর করে। নিচে আমি এদের মধ্যকার সম্পর্কের একটা সূত্র দিলাম।

আপনারা চাইলে এই ওয়েবসাইট থেকে অনলাইন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে খুব সহজেই হিসাবটা বের করে নিতে পারবেন। দেখা যায় কি, আমরা অনেকেই এই হিসাবটাই জানি না। আচ্ছা বলেনতো হিসাবটা না করলে জানবো কিভাবে আমাদের ট্রান্সমিটারের ফ্রিকুয়েন্সি কত? অনেকেই মোবাইলের রেডিওতে ৮৭.৫ মেগাহার্জ থেকে ১০৮ মেগাহার্জ এর যে রেঞ্জ আছে পুরোটা খুঁজেও তার ট্রান্সমিটারটা খুঁজে পায়না। আচ্ছা ধরেন আপনার যে ট্রান্সমিটার তার ফ্রিকুয়েন্সিটা হলো ১২০ মেগাহার্জ। তাহলে আপনিই বলেন, কেয়ামত পর্যন্তও মোবাইলে বসে বসে সার্চ করলে রেডিওতে আপনার ট্রান্সমিটারটা শুনতে পারবেন? মোটেও না। তাহলে শুনতে হলে কি করতে হবে? নিশ্চয় ট্রান্সমিটারকে এমনভাবে তৈরী করতে হবে যেন তার ফ্রিকুয়েন্সিটা রেডিও রিসিভারের যে রেঞ্জ আছে সেই রেঞ্জের মধ্যে পড়ে অর্থ্যাৎ ৮৭.৫ থেকে ১০৮ মেগাহার্জ এর মধ্যে পড়তে হবে। ভালো কথা, ধরেন আপনি হিসাব করে নিলেন বা সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনার ট্রান্সমিটার এমনভাবে তৈরি করবেন যেন তার ফ্রিকুয়েন্সিটা ১০৫ মেগাহার্জ হয়। তাহলে তো শুনতে পারবেন। উপরের ক্যালকুলেটর থেকে হিসাব করে বের করে নিলেন যে ১০৫ মেগাহার্জ ফ্রিকুয়েন্সি তৈরী করতে হলে কত মানের ইন্ডাক্টর এবং ক্যাপাসিটর ব্যবহার করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, 4pF মানের একটা ক্যাপাসিটরের সাথে একটা 0.57438 microHenry এর একটা ইন্ডাকটর প্যারালাল ভাবে সংযোগ দিলে সার্কিটে ১০৫ মেগাহার্জের ফ্রিকুয়েন্সি তৈরী হবে। সহজ হিসাব তাই না? জ্বী না এখনো কাহিনী আছে, মার্কেটে আপনি ওই মানের ক্যাপাসিটার টা হয়তো খুঁজে পাবেন। কিন্তু এই মাপের ইন্ডাকটর পাবেন কই? এই মানের ইন্ডাক্টর আপনি কোথায় খুঁজে পাবেন না। তবে এ সমস্যা সমাধানের একটা উপায় ্‌আছে। ইন্ডাক্টরটা নিজেই তৈরী করা। তামার তারকে পেঁচিয়ে কয়েল বানিয়ে খুব সহজেই ইন্ডাক্টর বানানো যায়। এবার খুশি? জ্বী না খুশি হওয়ার কোন কারণ নাই। কারণ তামার তার পেঁচিয়ে কয়েল বানিয়ে ইন্ডাক্টর বানানো যায় সহজে এ কথা ঠিক কিন্তু একটা নির্দিষ্ট মানের ইন্ডাক্টর তৈরি করতে হলে আপনাকে আবার প্রচুর হিসাব নিকাশ করতে হবে। তবে এর সমাধানও অনলাইনে আছে। এই ওয়েবসাইট থেকে একটা নির্দিষ্ট মানের ইন্ডাক্টরের জন্য কত মোটা তারকে কত প্যাঁচ দিয়ে কয়েল বানাতে হবে তা হিসাব করে নিতে পারবেন। এবার তো খুশি? সব হিসাব পেয়ে গেছেন। জ্বী না আরো একটু সমস্যা রয়ে গিয়েছে। সেটা হলো তামার তার দিয়ে কয়েল বানিয়ে যে ইন্ডাক্টর তৈরী করা হয় এগুলো এতই সুবেদী যে যদি সামান্য একটু নড়াচড়া খায় তাতেই বিশাল পরিমাণে মান পরিবর্তন হয়ে যায়। অর্থ্যাৎ সঠিকভাবে সবকিছু তৈরী করার পরও যদি ভুলে কয়েলে সামান্য একটু আঘাত কিংবা নড়াচড়া হয় তাতেই ইন্ডাক্টরের মান পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর ইন্ডাক্টরের মানে একটু পরিবর্তন হলেই পুরো সার্কিটের ফ্রিকুয়েন্সি বিশালরকম ভাবে পরিবর্তন হয়ে যাবে। বিষয়গুলো নিয়ে আমি দুই পর্বের একটা ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরী করেছি। আজকের পর্বে আমি উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো। ভিডিওটি দেখলে আপনারা খুব সহজেই বিষয়গুলো বুজতে পারবেন। ভিডিওটি দেখুন:

আগামী পর্বে আমি দেখাবো কিভাবে একটা এফ.এম ট্রান্সমিটার সফলভাবে তৈরী করতে হলে কিভাবে প্রয়োজনীয় হিসাব নিকাশ গুলো করতে হয়। সেই পর্ব দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি। ভিডিওটি ভালো লাগলে আমার চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করার অনুরোধ থাকলো।

সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

 

Level 0

আমি নাদিমুল হক জুলাস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 26 টি টিউন ও 72 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

প্রিয় নাদিমুল হক জুলাস,

আমি টেকটিউনস কমিউনিটি ম্যানেজার, শোয়াইব,

টেকটিউনস থেকে আপনার সাথে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করতে চাচ্ছি। টেকটিউনস থেকে আপনার সাথে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করার জন্য http://techtun.es/2obSQxE লিংকটিতে ক্লিক করে আপনার সাথে যোগাযোগের প্রয়োজনীয় তথ্য সাবমিট করে আমাদের সাহায্য করবেন আশা করছি।

ছদ্ম ছবি, নাম, ইমেইল, ফোন, ঠিকানা ও সৌশল Contact পরিহার করে আপনার প্রকৃত/আসল ছবি, নাম, ইমেইল, ফোন, ঠিকানা ও সৌশল Contact দিন। যেহেতু টেকটিউনস থেকে আপনার সাথে অফিসিয়ালি যোগাযোগ করা হবে।

সাবমিট করার পর আমাদের এই ম্যাসেজের রিপ্লাই আপনার কাছ থেকে আশা করছি।

ধন্যবাদ আপনাকে।

We Are Waiting for your next Video////

nice tutorial….you could be a good teacher. Waiting for your next video

দারুন