উপরের দুটাই মেকানিক্যাল সুইচ। কিন্তু কার্যপদ্ধতি ভিন্ন। প্রথমটিকে বলে পুশ সুইচ। স্বাভাবিক অবস্থায় এটি বন্ধ অবস্থায় থাকে। এটি একবার চাপলে সার্কিট অন হয়, কিন্তু ছেড়ে দিলেই অফ হয়ে যায়। মানে এর স্বাভাবিক অবস্থা (ষ্টেবল ষ্টেট) একটি (মনো ষ্টেবল), যা হলো বন্ধ অবস্তা। পরের সুইচটিকে বলে টগল সুইচ। ছবি মতে দেখা যায় যে এটিকে নীচে টেনে আনলে অফ থাকে যতক্ষননা উপরে চাপ দিয়ে অন করা হয়। আবার একবার অন হলে টেনে নীচে আনার আগ পর্যন্ত (আজীবন) অন থাকে। অর্থাৎ এর স্বাভাবিক অবস্থা (ষ্টেবল ষ্টেট) দুই (বা বাই ষ্টেবল)।
আমাদের বাসাবাড়ির ইলেকট্রিক সুইচগুলা টগল প্রকৃতির বা বাইষ্টেবল সুইচ। কিন্তু ইলেকট্রনিক সুইচিং ডিভাইসগুলো সাধারনত মনোষ্টেবল প্রকৃতির। যেমন একটি রিলেতে যতক্ষন ভোল্টেজ থাকে ততখন অন থাকে কিন্তু ভোল্টেজ চলে গেলেই অফ হয়ে যায়।
আবার টগল সুইচের বেশ কিছু অসুবিধাও আছে। ধরা যাক বাসায় অটো কন্ট্রোল দিয়ে পাম্প কন্ট্রোল করতে চাচ্ছ। পাম্পের সাথে ভারী টগল সুইচ লাগানো। এখন একটি ইলেক্ট্রনিক কন্ট্রলারে পক্ষে ঐ ভারী সুইচ দিয়ে পাম্প অন অফ সম্ভব নয় তার দরকার ইলেক্ট্রনিক সুইচ।
এই দুই সুবিধাই যদি পুশবাটনে বাস্তবায়ন করা যায় তবে কেমন হয়। অর্থাৎ একটি ইলেক্ট্রনিক বাই ষ্টেবল সুইচ ? যেমন এক পুশে অন আরেক পুশে অফ। টিভির রিমোট কন্ট্রোলের পাওয়ার বাটন টেপার অভিজ্ঞতা অবশ্যই আছে নাকি? এই বাইষ্টেবল ইলেকট্রনিক সুইচ গুলাই একটি ফ্লিপ ফ্লপ (সংক্ষেপে ফফ বলব)। এক একটা ফফ দুইটি অবস্থা ধরে রাখতে পারে বলে এদের ১ বিট (অন =১, অফ =০) ইলেক্ট্রনিক স্মৃতি বা মেমোরী হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আমরা যে বলি আমার মেমোরী এত মেগা বাইট তার মানে, অত x10^6 x 8 টি ফফ আছে (যেমন ১০ মেগাবাইট = 10 x 1000000 x 8 = 80000000 টি ফফ)। এছাড়া প্রায় সব ডিজিটাল সার্কিট, আইসি এই ফফের উপর নির্ভরশীল।
প্রথমে দেখাযাক সিম্পলি কিভাবে ফফ বানানো যায়। নিচের সার্কিটে দুটি পুশ বাটন ও দুইটি ট্রাঞ্জিষ্টর ব্যবহার হয়েছে। এমতাবস্থায় পাওয়ার দিলে যে কোন একটি ট্রাঞ্জিষ্টার চালু হবে ও সংশিলষ্ট লেডটি জ্বলবে (কোনটি জ্বলবে বলা অনিশ্চিত)। ধরা যাক বাম পাশের ট্রাঞ্জিষ্টর চালু তাই বাম পাশের লেডটি জ্বলছে। এখন বাম পাশের পুশবাটনটি চাপলে বামপাশের ট্রাঞ্জষ্টারের বেস গ্রাউন্ড বা নেগেটিভে সংযুক্ত হওয়ায় তা বেস ভোল্ট হারায় ফলে ট্রাঞ্জিষ্টার বন্ধ হয়ে যায়। অপরপক্ষে ডানপাশের ট্রাঞ্জিষ্টারটির কালেক্টর ভোল্টেজ বেড়ে বায়াস পাওয়ায় চালু হয়ে যায় এবং ডানের লেড জ্বলতে শুরু করে। এবার পুশবাটন ছেড়ে দিলেও চা চলতে থাকে যতক্ষননা ডান পাশের পুশ বাটনটি চাপা হয় এভাবে অল্টারনেট করে বাটন চেপে পুশবাটন দিয়ে লেড জ্বালিয়ে রাখা যায়।
এই সার্কিটটিতে আসলে দুইটি পুশ বাটন দিয়ে একটি টগল বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যেটি আমরা অনেকক্ষেত্রেই ব্যবহার করি। যেমন এক সুইচ দিয়ে পাম্প অন করা (ধরা যাক সবুজ সুইচ) আরেক সুইচ দিয়ে অফ করা (ধরা যাক লাল সুইচ)। পরবর্তিতে আমরা রিমোট বাটনের মতো এক পুশ বাটনেই দুটি কাজ করা দেখবো।
নিচের বামপাশের সার্কিটটি লক্ষ্য করি। এতে কেবল একটি পুশবাটন আছে। এখানে দুইটি ট্রাঞ্জিষ্টরের সাথে দুটি ক্যাপাসিটরও লাগানো হয়েছে। এখন এই সার্কিটটিকে পুশ বাটন দিয়ে পাওয়ার দেয়ার সাথে সাথে দুই ক্যাপাসিটরের মধ্যে চার্জ হবার একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ধরা যাক বাম পাশের ক্যাপাসিটরটি প্রথমে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। এতে ডান পাশের ট্রাঞ্জিষ্টর বেস বায়াস পাওয়ায় অন হয়ে ডানের লেড জ্বালিয়ে দেয়, প্রতিযোগিতায় আপাতত হেরে বামের ট্রাঞ্জিষ্টার পরের মওকার অপেক্ষায় থাকে। ২য় বার যখন পুশ বাটন চাপা হয় তখন বাম পাশের ক্যাপাসিটর অলরেডি চার্জড থাকায় আর চার্জ নেয়না এবার ডান পাশের ক্যাপাসিটর চার্জ গ্রহন করার সুযোগ পায় সাথে সাথে বামের ট্রাঞ্জিষ্টার বেস বায়াস পাওয়ায় চালু হয়ে যায়, কিন্ত সে কালেক্টর থেকে প্রচুর কারেন্ট নিজে নিয়ে যাওয়ায় ডান পাশের ট্রাঞ্জিষ্ট্র বায়াস হারিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রতিযোগিতার এই পর্যায়ে বাম পাশের ট্রাঞ্জিষ্টার জয়ী হয়। ডান পাশের ট্রাঞ্জিষ্টর আবার পরের মওকার জন্য অপেক্ষায় থাকে। এভাবে পুশ-অন, পুশ অফ হতে থাকে।
বাম পাশের সার্কিটকে মডিফাই করে ডান পাশের সার্কিটটি এমন ভাবে করা যা প্রাক্টিকেল লোড চালাতে পারে। বাম পাশের লেড কে একটা রেজিষ্ট্যান্স দিয়ে আর ডান পাশের লেডটিক রিলে দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আর অন্যান্য রেজিষ্ট্যান্সকেও ম্যাচিং করা হয়েছে।
যদিও ডান পাশের সার্কিটটিকে প্র্যাক্টকেল বলা হয়েছে কিন্তু এর সীমাবদ্ধতা হলো লোডের উপর ভিত্তি করে এর রেসিষ্ট্যান্স ম্যাচিং করতে হয় এছাড়া পুশ বাটন টিপার সময় কয়েকবার ফলস ট্রিগারিং হয়ে পড়ে (মেকানিকাল সব সুইচেই কম বেশী এই সমস্যা হয়-এক বারে কানেক্ট না হয়ে, অন-অফ-অন এভাবে হয়)। এই দুর্বলতা দূর করতে আমরা আবার ৫৫৫ আইসির শরনাপন্ন হব।
আমাদের অতি প্রিয় ৫৫৫ আইসিটি প্রায় আগের প্রজেক্টগুলার মতোই কানেক্টেড শুধু একটি পুশ বাটন, একটি ১ মাইক্রোফেরাড ক্যাপাসিটর আর ১০০ কে রেজিষ্টর আমদানি করা হয়েছে। এটি আগের কার্য পদ্ধতির মতোই পুশ অন, পুশ অফ হয়। সুবিধা হলো লোড বদল হলেও এর সার্কিট উপাদান গুলি একই থাকে আর হিস্টোরিসিস ভালো থাকায় পুশ বাটনের ফলস ট্রিগারিংও ঠিক করে ফেলে।
আমরা ফফের এই বৈশিষ্ঠ গুলা ব্যবহার করে পরবর্তিতে মজার মজার সব সার্কিট তৈরী করব।
পূর্বে এখানে প্রকাশিতঃ http://www.amaderelectronics.com/?p=525
আমি শামীম আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 17 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Vai onek valo laglo