রাসবেরি পাই কি ? এটা হল একটা ক্রেডিট কার্ড সাইজের কম্পিউটার। আপনার কাছে কোন এটিএম কার্ড আছে ? সেটাই হাতে নিয়ে দেখুন। তাহলেই এটার আকৃতিটা ভালভাবেই বুঝতে পারবেন।
Raspberry pi
কি আছে এটাতে ? একেবারেইই সাধারণ ভাবেও যদি বলি তাহলে বলতে হবে এটাতে আছে ব্রডকম কোম্পানির ৯০০ মেগাহার্টজ গতির কোয়াড কোর কর্টেক্স এ৭ প্রসেসর এবং সেইসাথে ১ জিবি র্যাম। এটাকে যেন আবার অ্যান্ড্রয়েড এর সাথে মিলিয়ে ফেলেন না। এর ব্যাপার স্যাপার ই আলাদা।
এতো গেল ভিতরের কথা। আর কি কি আছে এতে ?
i. প্রথমেই বলতে হবে HDMI পোর্টের কথা। যেহেতু কম্পিউটার, সেহেতু ডিসপ্লে তো লাগাতেই হবে। HDMI পোর্টের সাহায্যে একে HDMI সাপোর্টেড মনিটরের সাথে যুক্ত করতে হবে। HDMI সাপোর্টেড মনিটর না থাকলেও সমস্যা নেই HDMI to VGA কনভার্টার ব্যাবহার করে সহজেই একে সাধারণ মনিটরের সাথে যুক্ত করা যাবে।
ii. আরও আছে চারটা ফুল সাইজের ইউএসবি পোর্ট। যেটাতে ইউএসবি কিবোর্ড, মাউস, মডেম, ওয়াইফাই ডঙ্গল এমনকি পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ পর্যন্ত ব্যাবহার করা যাবে।
iii. আছে একটি ফুল সাইজের ইথারনেট পোর্ট যেটাতে ১০০mbps গতিতে নেটওয়ার্কিং এর কাজ করা যাবে।
iv. একটি মিনি ইউএসবি পোর্ট আছে যেটার মাধ্যমে রাসবেরি পাইকে পাওয়ার সাপ্লাই করতে। পাওয়ারের জন্য মোবাইল ফোনের চার্যারকেই ব্যাবহার করা যাবে।
v. একটি 3.5mm অডিও পোর্ট আছে যেটার মাধ্যমে স্পিকার, ইয়ারফোন, হেডফোন সংযোগ করা ছাড়াও কম্পোজিট RCA ভিডিও আউটপুট পাওয়া যাবে যেটার মাধ্যমে সাধারণ টিভিতেও সংযোগ করা যাবে।
vi. একটি মাইক্রো এসডি মেমোরি কার্ড স্লট আছে যেটাতে ৩২ জিবি পর্যন্ত মেমোরি কার্ড ব্যাবহার করা যাবে।
এটাই রাসবেরি পাইয়ের মূল স্টোরেজ। রাসবেরি পাইতে কোন অনবোর্ড মেমোরি নেই।
vii. এটাতে আছে ৪০টি GPIO হেডার পিন। (General Perposse Input Output) যেগুলোতে প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে রিয়েল ওয়ার্ল্ড এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে।
viii. আরও আছে একটি ডিসপ্লে পোর্ট এবং একটি ক্যামেরা পোর্ট যেটাতে টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে এবং ক্যামেরা মডিউল যুক্ত করা যাবে।
.
.
এবার আসি কিভাবে এটাকে ব্যাবহার করবেন। ধরেই নিচ্ছি এটাকে আপনি ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিকল্প হিসেবে ব্যাবহার করতে চাচ্ছেন।
প্রথমেই আপনাকে একটা রাসবেরি পাই কিনতে হবে। এর দাম ৫০০০ টাকা। কিনতে পারবেন এই ঠিকানা থেকে।
কেনার লিঙ্ক
এরপর যেই অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যাবহার করতে চাচ্ছেন। সেটির ওএস ফাইল ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে একটি সদ্য ফরমেট করা মেমোরি কার্ডে কপি করতে হবে।
অপারেটিং সিস্টেম লিস্টঃ
1. Raspbian.
2. Arch Linux ARM.
3. OSMC.
4. OpenELEC.
5. Snappy Ubuntu Core.
6. Ubuntu MATE.
7. Debian Jessie.
8.Windows 10.
9. Android
এরপর মেমোরি কার্ডটি আপনার রাসবেরি পাইতে লাগাতে হবে।
এত ঝামেলা না করে একটি "অপারেটিং সিস্টেম প্রি ইন্সটল করা মেমোরি কার্ড"ও কিনে নেওয়া যায়। যেটা রাসবেরি পাই কেনার লিঙ্কটাতেই পাওয়া যাবে।
তারপর রাসবেরি পাইটিতে মনিটর, ইউএসবি কিবোর্ড এবং মাউস লাগাতে হবে। মোবাইল ফোনের চার্যার দিয়ে এটাকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। এরপর এটি নিজে নিজেই চালু হবে। প্রথমেই ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড চাবে। ইউজার নেম এর ঘরে "pi" এবং পাসওয়ার্ডের ঘরে "ruspberry" লিখে এন্টার চাপলেই ডেস্কটপ মোডে চালু হবে।
এইতো চালু হয়ে গেল আমাদের মিনি কম্পিউটার রাসবেরি পাই। এটাতে আগে থেকেই কিছু অ্যাপস ইন্সটল করা আছে। চাইলে নতুন কোন অ্যাপ কিংবা গেম ডাউনলোড করে ইন্সটল করা যাবে। এটাতে একটা স্পিকারও লাগিয়ে নেওয়া যায়। এই কম্পিউটার দিয়ে গান শোনা, ভিডিও দেখা, নেট ব্রাউজিং করা, গেমস খেলা, কম্পিউটারের অন্যান্য কাজ যেমন ওয়ার্ড প্রসেসিং, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি সবই করা যাবে।
একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করতে চাইলে প্রত্যেকটা অপারেটিং সিস্টেম আলাদা আলাদা মেমোরি কার্ডে ইন্সটল করতে হবে। এরপর যখন যেটা খুশী সেই মেমোরি কার্ড রাসবেরি পাইতে লাগিয়ে চালু করলেই হল।
.
.
এবার আসি এটা দিয়ে কি কি করা যাবে। যদিও রাসবেরি পাই একটি লো কনফিগারেশনের কম্পিউটার তারপরও পৃথিবীজুড়ে এর আছে প্রায় ৩ মিলিয়ন ব্যাবহারকারি। মুলত এর বহুমুখী ব্যাবহার যোগ্যতার জন্যই এটি সবচাইতে বেশী জনপ্রিয়। এর ৪০টি GPIO পিন এর মাধ্যমে যেকোনো ইলেক্ট্রনিক্স এর সাথে একে যুক্ত করা যায় এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রাসবেরি পাই একটি লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমানে মাইক্রোসফট ও গুগল একে পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং সহযোগিতা করছে।
যে যে কাজে ব্যাবহার করা যাবেঃ
১. প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখতে খুবই সুবিধাজনক। বিশেষ করে স্কুল ছাত্রদের জন্য।
২. রোবট বানানো যাবে।
৩. হোম অটোমেশন এর কাজে ব্যাবহার করা যাবে।
৪. অনেক গুলো রাসবেরি পাই সংযুক্ত করে সুপার কম্পিউটার বানানো যাবে।
৫. ওয়েব সার্ভার হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে।
৬. কম্পিউটার সায়েন্স এর শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করতে পারবে।
৭. প্রোগ্রামিং করা যাবে।
৮. হ্যাকিং শেখা ও চর্চা করা যাবে।
৯. ওপেনসোর্স হওয়ায় যে কেউ এটার মূল সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে পারবে।
১০. দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ ডেস্কটপ ও মিডিয়া ডিভাইন হিসেবে ব্যাবহারের সুযোগ তো থাকছেই।
আমি tufantamim। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 23 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অনেক পরিশ্রমের পর অবশেষে টিউনটি করতে পারলাম। ছবি দিতে পারছিলামনা।