ইলেক্ট্রনিক্সে হাতেখড়ি পর্ব-১’এ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর আপনাদের সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি পর্ব-২.১ এ। প্রায় সব সার্কিটেই কিছু কমন কম্পোনেন্ট ব্যবহৃত হয়। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই কম্পোনেন্টগুলো কী কী-
● রেজিস্টর
● ক্যাপাসিটর
● সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস
● ইন্ডাক্টর
● সুইচ
● কানেক্টর প্রভৃতি।
বেসিক ইলেক্ট্রনিক্স শিখতে হলে আমাদের প্রত্যেকটি কম্পোনেন্ট কী, তাদের সিম্বল (যা দেখে সার্কিট ডায়াগ্রাম থেকে কম্পোনেন্ট সনাক্ত করবেন), সার্কিটে কী কাজে ব্যবহৃত হয় এবং একক জানতে হবে।
এই পর্বে রেজিস্টরের ওপর সাধারণ আলোচনা থাকবে।
রেজিস্টরের প্রধান কাজ কারেন্ট’কে বাধা দেওয়া। মনে মনে নদীতে বাধেঁর কথা চিন্তা করুন।নদীতে পানির স্রোত বাধেঁ এসে বাধা পায়। ফলে পানির স্রোতের তীব্রতা কমে যায়। ইলেক্ট্রনিক্সে কারেন্টকে যদি পানির স্রোত হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে রেজিস্টর বাধেঁর কাজ করবে। সহজভাবে, রেজিস্টর সার্কিটে প্রবাহিত কারেন্টের মান’কে লিমিট করে।
রেজিস্টরের এই ধর্মকে রেজিস্ট্যান্স বলা হয়।
রেজিস্ট্যান্সের একক ওহম (Ω)। রেজিস্টরের মান এক ওহমের ভগ্নাংশ থেকে শুরু করে কয়েক মিলিওন ওহম পর্যন্ত হতে পারে।
রেজিস্টরকে সার্কিটে R দ্বারা প্রকাশ করা হয়। রেজিস্টরের সিম্বল এরকম-
রেজিস্টরের নিজস্ব কোন দিক(পোলারটি) নাই। এর ভেতর দিয়ে যে কোন পথে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে।তাই সার্কিটে আপনার যেমনভাবে খুশি কানেক্ট করতে পারবেন। রেজিস্টরের দুপ্রান্তকে ১,২ চিহ্নিত করুন।
নন পোলার ধর্মের কারনে রেজিস্টরকে উপরের দুটি ছবির যেকোন একভাবে কানেক্ট করলেই চলবে।
সার্কিটে রেজিস্টর ব্যবহারের সময় দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-
১। টলারেন্সঃ ধরা যাক কোন সার্কিটে আমি ১০০ Ω মানের রেজিস্টর ব্যবহার করব। দোকান থেকে ১০০ Ω মানের রেজিস্টর কিনে আনলে সবসময় সেটির মান একদম ১০০ Ω নাও হতে পারে। ১০০ Ω না হয়ে সামান্য কম বা বেশি হতে পারে। মানের এই সামান্য বিচ্যুতিকে টলারেন্স বলে। +/-৫% টলারেন্স অর্থ হল ১০০ ওহম মানের কোন রেজিস্টরের মান ৯৫-১০৫ Ω এর ভেতর হবে। তবে টলারেন্স লিমিটের ভেতর এই সামান্য বিচ্যুতি সার্কিটে কোন প্রভাব ফেলবে না বললেই চলে।
২।পাওয়ার রেটিং: রেজিস্টর সহজেই গরম হয়ে যায়। যদি খুব বেশি গরম হয়, তাহলে রেজিস্টর নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই রেজিস্টরের পাওয়ার রেটিঙ্ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। সিম্পল সার্কিট গুলোতে সাধারণত কোয়ার্টার ওয়াট (0.25W) রেটিং’র রেজিস্টর ব্যবহার করা হয়। দোকানি’কে পাওয়ার রেটিং’র উল্লেখ না করলেও কোয়ার্টার ওয়াট রেটিং’র রেজিস্ট্যান্সই দিয়ে থাকেন। তাই চিন্তার কিছু নাই।
রেজিস্টরের প্রকারভেদঃ
১।কার্বন রেজিস্টর।
২।মেটালফিল্ম রেজিস্টর।
*ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এগুলো না জানলেও চলবে বিধায় আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হল।
৩। ভেরিয়েবল রেজিস্টর বা পটেনশিওমিটারঃ অনেক সময় ইলেক্ট্রনিক সার্কিটে রেজিস্ট্যান্স বাড়ানো-কমানোর মাধ্যমে সার্কিট কন্ট্রোল করার দরকার হয়। এজন্য ভেরিয়েবল রেজিস্টর ব্যবহার করা হয়। ভেরিয়েবল রেজিস্টরের আরেক নাম পটেনশিওমিটার বা পট। অধিকাংশ পটেনশিওমিটার রোটারি (ঘোরানো) সুইচের মত বা নবের মত হয়ে থাকে।
প্রতিটি পটেনশিওমিটারের নির্দিষ্ট মান থাকে। যেমন ধরুন-10kΩ(কিলোওহম)। অর্থ হল এই পট সর্বোচ্চ 10kΩ রেজিস্ট্যান্সের বাধা তৈরি করতে পারে। বামের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন পটের ৩ টি পিন ও একটি নব থাকে। দুই পাসের দুইটা পিন ফিক্সড আর মাঝেরটা ভেরিয়েবল।দুই পাশের পিন দুটিcircuit e লাগালে ফিক্সড ১০k পাওয়া যাবে আর যদি দুই পাশের যেকোনো ১ টি ও মাঝের টা লাগান তাহলে ভ্যারি করা যাবে। নব ঘুরিয়ে রেজিস্ট্যান্সের মান ভ্যারি করতে হয়।ফিক্সড মানের রেজিস্ট্যান্স ব্যবহারের দরকার হলে সাধারণ রেজিস্টর ব্যবহার করলেই হয়। পটের দাম নরম্যাল রেজিস্টরের চেয়ে অনেক বেশি। তাই এক্ষেত্রে দুপাশের পিন কানেক্ট করে পট ব্যবহার করা বোকামি।
সার্কিটে কিন্তু ৩টি পিনের ভেতর যেকোন ২টি পিন কানেক্ট করলেই হবে। এক্ষেত্রে মাঝের পিন বা গ্রাউন্ডকে অবশ্যই কানেক্ট করতে হবে। এখন ধরা যাক আপনি কোন সার্কিটে 10 kΩ পটের ১ ও ২ নম্বর পিন কানেক্ট করেছেন। নবের কোন এক পজিশনে আপনি যদি ঐ দুটি পিনের ভেতর 3kΩ রেজিস্ট্যান্স এপ্লাই করে থাকেন, তাহলে ২ ও ৩ নম্বর পিনের ভেতর (10-3)=7kΩ রেজিস্ট্যান্স তৈরি হবে।
পটেনশিওমিটারের সার্কিট সিম্বল-
আমরা সিম্পল সার্কিট তৈরিতে লিনিয়ার পটেনশিওমিটার ব্যবহার করি। যার অর্থ হল পটেনশিওমিটারের নব যে কোন দিকে (ডানে অথবা বামে) নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘোরালে সর্বদা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেজিস্ট্যান্সের পরিবর্তন ঘটে।
কালার কোডের মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্সের মান নির্ণয়ঃ
রেজিস্টরের গায়ে সরাসরি মান লিখা থাকে না। মান প্রকাশ করার জন্য একটা রেজিস্টরের গায়ে সাধারনতঃ চারটা দাগ বা ব্যান্ড থাকে। সাধারণত বাম থেকে ডান দিকে পড়তে হয়। এর মধ্যে চতুর্থ দাগটি হচ্ছে টলারেন্স কালার এটি বেশীর ভাগ সময় সোনালী অথবা রুপালি কালারের হয়ে থাকে। সোনালীর জন্য +/-৫% এবং রুপালির জন্য +/-১০% টলারেন্স হয়। বাকি তিনটা দাগের জন্য দশটি কালার ব্যবহার করা হয় এবং প্রতিটি কালারের জন্য নির্দিষ্ট মান থাকে। এখন প্রশ্ন হল আমরা কোনটিকে প্রথম ব্যান্ড ধরব?
যে ব্যাণ্ডটি রেজিস্টরের যে কোন এক প্রান্তের তুলনামূলক বেশি কাছাকাছি থাকে, তাকে প্রথম ব্যান্ড ধরে পর্যায়ক্রমে ডানদিকে ২য়, ৩য়, ৪র্থ ব্যান্ড ধরতে হবে।
খালি চোখে কোন ব্যান্ড রেজিস্টরের প্রান্তের কাছাকাছি আছে সেটি নাও বোঝা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রেজিস্টরের যেকোন এক পাশে সোনালী/রূপালী রঙ থাকলে তাকে ৪র্থ ব্যান্ড ধরতে হবে। এবার তাহলে তার বিপরীত প্রান্তকে ১ম ব্যাণ্ড ধরে পর্যায়ক্রমে ডানদিকে আসতে হবে। নিচের ছবি দেখুন-
১ম ব্যান্ড সনাক্ত করুন। এবার বামপাশ থেকে প্রথম কালারটার মান একটা কাগজে লিখুন। দ্বিতীয় কালারটার মান তার ডান পাশে লিখুন এবং তৃতীয় কালারটার মানের সমপরিমাণ শুন্য ডান পাশে বসান। যে মান টা আপনি পেলেন সেটা ওহমস এ। ওহমকে ১০০০ দিয়ে ভাগ দিলে কিলোওহম আর ১০০০০০০ দিয়ে ভাগ দিলে মেগাওহম মান পাবেন।
**তবে আপনার কাছে মাল্টিমিটার থাকলে এই কষ্ট আপনাকে করতে হবে না। মাল্টিমিটারকে রেজিস্ট্যান্স মেজারিং মোডে সেট করে এর প্রোব দুটির মাঝখানে রেজিস্টর ধরলেই ডিসপ্লে তে রেজিস্ট্যান্সের মান সরাসরি দেখাবে।
রেজিস্টর সম্পর্কে মোটামুটি এটুকু জানলেই চলবে। এতো দীর্ঘ টিঊন ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
আমি মিশুক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 46 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
সাধারণ একজন মানুষ। ঘৃণা করি দুটো জিনিশ-প্রতারণা ও উপেক্ষা।
টিউনটি পূর্বে রনি পারভেজের ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগে প্রকাশিত।