ভিডিও ক্যামেরা, আজও সাধারন মানুষের মনের অন্দরে সাড়া জাগায়। পরিবারের প্রিয়জনদের স্থিরচিত্র অনেক তুলেছেন, কিন্তু তাদের কথা, হাসি, পারিবারিক আড্ডা, ছুটির দিনের মূহুর্তগুলি, বিয়ের অনুষ্ঠানগুলি সব জীবন্ত করে রাখার উপায় এই ক্যামেরার মাধ্যমেই। চাইলে সিটিজেন জার্নালিস্ট হয়ে উঠতে পারেন, শহরের এই প্রান্তে ওই প্রান্তে কিম্বা অন্য জেলায় গিয়ে নানাধরনের ডক্যুমেন্টারী ছবি বানিয়ে ফেলতে পারেন এর মাধ্যমে। জিনিসটা এখন আর সাধ ও সাধ্যের সীমার বাইরে নয়। এটা দিয়ে ভিডিও চিত্র গ্রহণ করাও খুব কঠিন নয়। কিন্তু সঠিক একটি ভিডিও ক্যামেরা কেনার আগে বিভিন্ন ধরনগুলি জেনে নেওয়া ভালো।
সাধারনত পাঁচ রকমের হয়। MiniDV, প্রফেশনালরাও ব্যবহার করেন, ছোট্ট ক্যাসেটে রেকর্ডিং হয়। কিন্তু, আমরা এই ক্যাসেট থেকে ভিডিওকে কমপিউটারে কিম্বা সিডিতে / ডিভিডি'তে না আনলে আমাদের পক্ষে অসুবিধা হয়ে দাঁড়াবে। প্রফেশনালদের স্টুডিওতেই ব্যবস্থা থাকে এইসবের। কিন্তু আমরা বাড়িতে এটা করতে গেলে ভিডিও ক্যাপচার কার্ড লাগবে আলাদা করে। স্থিরচিত্র যেভাবে SD Card'এ রেকর্ড হয়, কিছু ভিডিও ক্যামেরাতেও এইভাবে করা যাবে, তবে অবশ্যই বেশিক্ষণের ভিডিও রাখা যাবেনা। কিন্তু ক্যামেরাগুলি ছোট, তাই পকেটেও রেখে দেওয়া যায়। Flash Memory'তেও রেকর্ড করার মতো ভিডিও ক্যামেরা আছে। এটিও অল্পক্ষণের ভিডিও চিত্র ধারনের কাজে লাগবে। যদি এতে খুব অসুবিধা মনে করেন, তাহলে আছে DVD-R camera, বাজার থেকে ভালো ব্ল্যাঙ্ক ডিভিডি কিনে তাতে বসিয়ে দিন, রেকর্ডিং হতে থাকবে ডিভিডিতেই। কোয়ালিটি ভালোই, কিন্তু ভালো মানের ভিডিও চিত্র তুলতে গেলে ৩০ - ৪৫ মিনিটের বেশিক্ষণের ভিডিও এতে ধরা যাবেনা। সরাসরি এই ডিভিডি আপনার প্লেয়ারে দিয়ে টিভিতে ভিডিও দেখে নিতে পারবেন। সবশেষে আছে HDD ভিডিও ক্যামেরা, এর মধ্যেই আছে 40 থেকে 160GB হার্ড ডিস্ক। দীর্ঘক্ষণের ভিডিও ধরে রাখা যাবে। সাধারন মানের (standard definition) প্রায় ১৪ ঘন্টার ভিডিও আর সর্বোচ্চমানের (full high definition) প্রায় ৫ ঘন্টার ভিডিও এতে রাখা যাবে (হিসাবটি দিলাম 40GB হার্ড ডিস্কের ক্ষেত্রে)।
নির্মাতাদের মধ্যে Sony, Canon, Panasonic, JVC, Sharp এদের ক্যামেরাগুলি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। Sony'র একটি MiniDV ক্যামেরার দাম ২৩০-২৫০ ডলার। এদের ডিভিডি ক্যামেরার দাম পড়বে ২৭০ ডলার - ৫০০ ডলার। হার্ড ডিস্ক ক্যামেরার দাম ৩০০ ডলার থেকে শুরু। Sony'r হাই ডেফিনিশান ভিডিও ক্যামেরা ৪৫০ ডলার থেকে শুরু, ১২০০ ডলার পর্যন্ত আছে, এর পরেরগুলি প্রফেশনাল বড় ক্যামেরা।
(আমি ডলারে দাম দিলাম যাতে যেকোনো দেশে অবস্থানরত বাঙালীরা সহজেই তাদের স্থানীয় দাম হিসাব করে নিতে পারেন। ডিলারদের কাছে নানাবিধ ডিস্কাউন্ট পাওয়া যাবে। উৎসবের দিনে এবং বড় বড় খেলার আগে যেমন ফুটবল/ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ওলিম্পিক/কমনওয়েলথ গেমসের আগে বিশেষ আকর্ষনীয় ছাড় থাকে। আমি শুধুই Sony'র দাম দিয়েছি কারন সারা পৃথিবীতে ভিডিও ক্যামেরার শৌখিনরা এই ব্র্যান্ডকেই একবাক্যে সেরা বলে মেনে নেন)
সব ব্র্যান্ডের ক্যামেরাতেই ২ - ৫ মেগাপিক্সেল স্থিরচিত্র নেওয়া যাবে। কিছু ক্যামেরায় এখন ১০ মেগাপিক্সেলও পাওয়া যাচ্ছে। MiniDV হ্যান্ডিক্যামে স্থিরচিত্র নিলে তা ক্যাসেটেই রেকর্ড হয় এবং পরে তা খুঁজে পেতে অসুবিধা হবে। ১ ঘন্টার ক্যাসেট অনেক ধীরগতিতে চালিয়ে রেখে ভিডিওর মাঝখান থেকে একটি বা কয়েকটি স্থিরচিত্র খুঁজে বের করা অনেক কঠিন কাজ। ধৈর্য ফুরিয়ে যাবে, রাগ হতে থাকবে। তাই ক্যাসেটে রেকর্ডিং হয় এমন ক্যামেরায় কেউ স্থিরচিত্রের আশা রাখবেন না।
সব ক্যামেরার সাথে আবশ্যিক ভাবে দেওয়া আছে USB cable, AV cable; যারা হাই ডেফিনিশান ক্যামেরা নেবেন, এবং বাড়িতে যদি হাই ডেফিনিশান টিভি থাকে, তাহলে HDMI cable আলাদা কিনে নিতে হবে। এই জিনিসের অনেক দাম, তাই ফ্রি দেয়না ক্যামেরার সঙ্গে। যে মডেলের ক্যামেরা, সেই মডেলের টিভি হলে অনেক ফিচার টিভি ও ক্যামেরার মাঝে ব্যবহারযোগ্য হবে।
এবারে সামান্য SD/HD ভিডিও'র নন-টেকনিক্যাল ব্যবহারিক পরিচিতি। সাধারনভাবে MPEG2 ফরম্যাটে রেকর্ডিং হবে। 40GB হার্ড ডিস্কের ক্ষেত্রের হিসাব এইরকম... SD Long Play (LP) ২৭ ঘন্টা ৪০ মিনিটের ভিডিও রেকর্ডিং হবে। SD SP (standard quality) 6 Mbps ১৪ ঘন্টা ৩০ মিনিট রেকর্ডিং। SD HQ 9 Mbps ৯ ঘন্টা ৪০ মিনিটের রেকর্ডিং। হাই ডেফিনিশান রেকর্ডিং হবে M2TS ফরম্যাটে (MPEG2 Transport System)। রেকর্ডিং সময় AVC HD 5 Mbps 1440x1080/60i - ১৫ ঘন্টা রেকর্ডিং; AVC HD 7 Mbps 1440x1080/60i - প্রায় ১২ ঘন্টার রেকর্ডিং; AVC HD 9 Mbps (HQ) 1440x1080/60i - ৯ ঘন্টা ৪০ মিনিট; এবং ফুল হাই ডেফিনিশান 1920x1080/60i resolution AVC HD 16 Mbps প্রায় ৫ ঘন্টার রেকর্ডিং হবে। ছবি এবং ভিডিও মিলিয়ে মিশিয়ে তুললে প্রায় ৩০০০ থেকে ৫০০০ ছবি রাখা যাবে।
শব্দ রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে হাই ডেফিনিশান ক্যামেরায় 5.1 channel surround sound রেকর্ডিং পাবেন। অবশ্যই সেটা Dolby Digital। চাঞ্চল্যকর মনে হতে পারে, বেশ কিছু মডেলে মাক্রোফোন জুমিং করা যাবে। ঠিক যেমন স্থিরচিত্রের বেলায় জুম করা হয় তেমন। লেন্স যতোই জুম করবেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাইক্রোফোনটিও দুরের শব্দ নিতে চেষ্টা করবে। ভিডিও 4:3 স্ট্যান্ডার্ড কিম্বা 16:9 ওয়াইডস্ক্রিন করতে পারবেন (আপনার টিভি সেট কেমন তার উপরে এই সেটিং আগেই করে নিতে পারবেন)। এন্টি-শেক/ইমেজ স্টেবিলাইজার, নাইটশট মোড, ফেস ডিটেকশান, ভিভিড/রিচ কালার (XV Color) মোড সবই পাবেন আধুনিক ভিডিও ক্যামেরায়। খুব দ্রুতগতির action sequence তোলার জন্য ১২-সেকেন্ডের স্লো-রেকর্ডিং ফিচারও আছে। আপনার প্রিয় ক্রিকেটারের বোলিং কিম্বা ব্যাটিং একশান স্লো-মোডে তুলে রাখতে পারবেন, আপনার প্রিয় গলফারের লঙ শটের স্লো রেকর্ডিং করতে পারবেন।
ব্যাস, আর কি? ভিডিও ক্যামেরার ক্ষেত্রে এর বেশি সাধারনত জানতে লাগবেনা। তাও, বেসিক আইডিয়া নিয়ে গুগল সার্চ দিয়ে নির্দিষ্ট ক্যামেরার স্পেসিফিকেশান জেনে নিতে পারেন আরো বিশদে।
আমি রিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 362 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জীবনের সব ভুল, যদি ফুল হয়ে যায়... জীবনের সব কালো, যদি আলো হয়ে যায়...
নতুন করে ধন্যবাদ দিতে চাই না।এতো সহজ করে যে এই কথাগুলা বাংলা ভাষায় পড়তে পারব তা কখনো ভাবিনি।
ভবিষ্যতে ফটোগ্রাফির কলাকৌশল নিয়ে লিখা আশা করছি।কেননা এই টপিকে শেখার আসলেই কোন শেষ নেই।একজন ভালো ফটোগ্রাফার তার ছবি তোলার মেধা আর সৃষ্টিশীলতা দিয়ে তুচ্ছ কোন বিষয়কে কাজে লাগিয়েই সবার চোখে অসাধারনভাবে তা ফুটিয়ে তুলে সমাজের উন্নয়নে নিজের ভূমিকা রাখতে পারেন।আবার অজ্ঞতার জন্য অনেক এমেচার বিশেষ কোন মুহুর্তকেই বিষাদময় বানিয়ে ফেলতে পারেন(এই অভিজ্ঞতা আমার আছে,২০০১ সালে এক বিয়েতে)।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল।