LCD এবং Plasma TV নামগুলি আমরা শুনে ফেলেছি। আমরা অনেক শোরুমে দেখেছি নানা মডেলের এইসব টেলিভিশান। দামের ট্যাগ দেখে হয়তো বা মনে মনে কেঁদেছি। কিন্তু মনের ভিতরে শখের মৃত্যু হয়নি, কি, তাইনা? কিনতে না পারলেও জানতে ক্ষতি কি? এবং, বলা তো যায়না, কোনোদিন কিনে ফেলার সময় উপস্থিত হতে পারে! কোনটা কিনবেন? বাহারী নামেই সন্তুষ্ট হয়ে কিনে ফেলবেন, নাকি সামান্য কিছু জেনে নেওয়াও ভালো?
প্রথমেই আসি স্ক্রিন সাইজের প্রসঙ্গে। LCD TV সাধারনত ১৩ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৬৫ ইঞ্চি পর্যন্ত আছে। এর বেশি সাইজের স্ক্রিনও আছে, শার্প বের করেছে ১০৮ ইঞ্চির টেলিভিশান। এতোবড় সাইজের স্ক্রিন যারা নিতে চায় তারা Plasma TV কিনে ফেলে কারন দামের ফারাক সেখানে বেশি নয়। অন্যদিকে Plasma TV স্ক্রিন সাইজ সাধারন ভাবে ৩২ ইঞ্চি থেকে ৬৩ ইঞ্চি পর্যন্ত আছে। এখানেও, প্যানাসনিক একটি ১০৩ ইঞ্চি বের করেছে, তবে বেজায় দাম! আগামী বছরে নাকি ১৫০ ইঞ্চি টিভি আনবে তারা। এইখানে ইঞ্চির মাপ আড়াআড়িভাবে স্ক্রিনের এক কোনা থেকে অন্য কোনা পর্যন্ত মাপা হয়। ছোট সাইজের LCD'গুলি আমরা অনেকেই কমপিউটার মনিটর হিসেবে ব্যবহার করছি। কিন্তু একই মাপের LCD TV'র দাম বেশি পড়বে, কারন তাতে অন্যান্য যন্ত্রাংশও থাকবে। টেলিভিশানের ক্ষেত্রে আমাদের শখ জাগবেই একটু বড় সাইজের স্ক্রিন নেওয়ার। ইচ্ছেমতো কিনে ফেললেই আশানুরূপ ফল নাও পেতে পারেন। বিচার করুন আপনার ঘরের সাইজ, টিভি থেকে দর্শকের আসন কতোদূরে। দূরত্ব খুব কম হয়ে গেলে ছবি দেখতে অনেক খারাপ লাগবে। কিনে ফেলার পরে টিভি কিম্বা নিজের বাড়িঘর দুটির কোনোটিই তো বদলাতে পারবেন না, তাই আগেই বিচার করে নেওয়া ভাল এবং ঘরের মাপ অনুযায়ী টিভির মাপ হলেই ভালো।
যেখানে টিভি রাখবেন, সেখান থেকে দর্শক আসনের মোটামুটি দুরত্ব আগেই মেপে নিন। শোরুমে গিয়ে সেইমতো দূরত্ব থেকে চালিয়ে রাখা টিভির স্ক্রিনে ছবির কোয়ালিটি লক্ষ্য করুন। যারা টিভির ব্যাপারে ভীষণ ডিটেইল চাইছেন, তারা ডিভিডি কিম্বা ব্ল্যু-রে ডিস্কের মতো কিছু দিয়েও টিভির ছবি পরীক্ষা করতে পারেন, শোরুমে সেটা বলবেন যিনি ডেমো দেবেন তাকে। সাধারন টিভি চ্যানেল দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই টিভির মান সঠিক বোঝা সম্ভব হয়না আমাদের দেশে, যেখানে সবখানে ডিজিটাল চ্যানেল নেই, থাকলেও ডিজিটাল ট্র্যান্সমিশান নেই। Cable Operator'এর যন্ত্র analog হলেও একই সমস্যা। যেহেতু অনেক টাকা দিয়েই কিনছেন, তাই ডিভিডি/ব্ল্যু-রে ডিস্কের সিনেমা চালিয়ে পরীক্ষা করে নিন টিভির কোয়ালিটি। (দয়া করে এক্ষেত্রে পাইরেটেড ডিস্কের সিনেমা সাথে নেবেন না, তাতে ফলাফলেও পাইরেসি হয়ে যাবে :D)
এর পরেই আসছি viewing angle বিষয়ে। সবই ফ্ল্যাট স্ক্রিন, কিন্তু কতোখানি angle থেকে দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার ভাবে? LCD TV (এবং কমপিউটার মনিটরগুলি) তৈরী হয়েছিল স্ক্রিনের সরাসরি সামনে বসে থাকা দর্শকের জন্য। অন্য angle থেকে দেখলে আবছা দেখাতো, রঙেও সামান্য হেরফের হতো। কিন্তু পরে স্ক্রিন সাইজ বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়ানো হল viewing angle, এখন প্রায় ১৭৫ ডিগ্রী এঙ্গেল থেকে দেখা যায়। কিন্তু এঙ্গেল বাড়লে তারতম্য হয় কিছুটা। Plasma TV viewing angel হচ্ছে ১৭৮ ডিগ্রী, এবং কোনো হেরফের নেই ছবিতে। ১৭৮ ডিগ্রী মানে প্রায় স্ক্রিনের সাথে একই প্লেনে ফ্ল্যাট আঙ্গেল। এতোখানি এঙ্গেল থেকেও পরিষ্কার ছবি দেখা যায়। বাড়িতে খুব বেশি দর্শক না থাকলে LCD TV'তেই কাজ চলে যাবে, তবে টেকনোলজির দিক দিয়ে এবং টাকার সমস্যা নাহলে অবশ্যই এক্ষেত্রে Plasma TV নেওয়াই ভালো, ইচ্ছেমতো ঘরের যেকোনো কোনা থেকেই টিভি দেখতে পারবেন।
স্ক্রিন রেফ্রেশ রেট, অথবা পিক্সেল রেসপন্স টাইম হচ্ছে অন্যতম প্রধান বিষয়। LCD স্ক্রিনগুলি বানানো হয়েছিল মূলত স্থির ছবির জন্য। কিন্তু যতো দিন গেছে, রিফ্রেশ রেট উন্নত করার প্রয়োজন হয়েছে, নইলে টিভিতে চলচ্চিত্র দেখে কেউ আনন্দ পাবেনা। আজকাল গড়ে 5-7ms রিফ্রেশ রেট পাওয়া যাচ্ছে সমস্ত LCD TV'তে। আর Plasma TV'র ক্ষেত্রে এর চিন্তা নেই, প্রায় CRT TV'র মতোই রিফ্রেশ রেট। তাই ছবিও অনেক উচমানের।
এতো দামী টিভি, চলে কতোদিন, এর আয়ু কতো? LCD TV'তে থাকে একটি ব্যাক-লাইট, যার আয়ু গড়ে ৩০ থেকে ৬০ হাজার ঘন্টা। এই ব্যাক-লাইট বদল করা যেতে পারে, কিন্তু এর যা দাম তাতে নতুন LCD TV কিনে ফেলতে পারবেন। Plasma TV'র ক্ষেত্রে আবার একটু ভিন্ন ভাবে আয়ু স্থির করা হয়। আপনারা যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তারা নিশ্চয় রসায়নে কিছু কিছু এলিমেন্টের 'half life' নামের একটি কথা শুনেছেন। Plasma TV'র ক্ষেত্রেও হাফ-লাইফ হিসেবে মান নির্ধারন করা হয় এর আয়ুর। এক্ষেত্রে হাফ-লাইফ হচ্ছে, কেনার সময়ে স্ক্রিনের যে ঔজ্জ্বল্য থাকে, তার একেবারে অর্দ্ধেক ঔজ্জ্বল্য পর্যন্ত মান কমে আসতে যেটুকু সময় লাগে, সেটিই এই টিভির হাফ-লাইফ। Plasma TV'র হাফ-লাইফ ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ঘন্টা। প্যানাসনিক দাবী করছে যে তাদের নতুন সেট নাকি ১ লক্ষ ঘন্টার হাফ-লাইফ দিচ্ছে তারা। তেমন বড় কিছু নাহলে এইসব টিভি কিনে ১০ বছর নিশ্চিন্তে থাকুন। (১০ বছর, দিনে ১২ ঘন্টা করে চালালে মোট ৪৩,৮০০ ঘন্টার রানটাইম ধরেছি আমি)
দুই ধরনের টিভিই অত্যন্ত যত্নে রাখতে হয়, তুলনামূলক ভাবে Plasma TV'র বেশি যত্নের প্রয়োজন। এই টিভির ওজন বেশি। ঘরের যে দেওয়ালে এটিকে লাগাতে চান, সেই দেওয়ার যথেষ্ট ওজন ধারন করার ক্ষমতা না রাখলে এই টিভিকে স্ট্যান্ড দিয়ে মাটিতে রাখাই ভাল, কিম্বা বেশ শক্তপোক্ত টেবিলে/ক্যাবিনেটের মধ্যে। দেওয়ালে লাগাতে হলে নিজে এই কাজ না করাই ভাল। অভিজ্ঞ লোকের হাতেই দেওয়ালে লাগানোর ব্যবস্থা করবেন। আর হ্যাঁ, এই টিভি দেওয়ালে লাগানোর আলাদা ওয়াল মাউন্ট পাওয়া যায়, সেটাও দামী বেশ, কিন্তু ওটা দিয়েই লাগাবেন নইলে টিভি খুলে পড়ে যেতে পারে। LCD TV এতোখানি ভারী নয়। নিজেও লাগাতে পারবেন দেওয়ালে। স্বাভাবিক কোনো ওয়াল মাউন্ট দিয়েও লাগাতে পারেন। আরেকটা কথা, Plasma TV'র অপারেটিং টেম্পারেচার কিন্তু LCD TV'র থেকে অনেক বেশি, অর্থাৎ চলতে চলতে গরম হয় বেশি, সেই তুলনায় LCD TV ততোখানি গরম হয়না।
মোটামুটি ধারনা পেয়ে গেলেন? এবারে যেদিন ইচ্ছা, সঙ্গে টাকা থাকলেই নিজের পছন্দ ও প্রয়োজন মতো টিভি কিনে ফেলতে পারবেন। শোরুমে ডেমো পার্সন যাই বোঝাক আপনাকে, তার কিছুটা হলেও বুঝবেন, একেবারে না জানার থেকে এইটুকু জানাই বা কম কিসে?
আমি রিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 362 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জীবনের সব ভুল, যদি ফুল হয়ে যায়... জীবনের সব কালো, যদি আলো হয়ে যায়...
Top tuner list er 1st honourable apu….jottil lekhsen