সালাম সবাইকে। আজ আপনাদের সাথে পানির নিচের রোবট বিষয়ক কিছু তথ্য শেয়ার করবো। লেখাটি অনুমতিক্রমে সংকলিত করা হয়েছে।
পানির নিচের বাহন নির্মানের ইতিহাস অনেক পূরোনো। সম্ভবত, এরিষ্টোটল প্রথম ব্যাক্তি, যিনি ‘বোটম্যান’ নামক পানির নিচে চলতে পারে এমন একটি বাহন তৈরী করেন। এই বাহনের সাহায্য আলেকজ়ান্ডার দ্যা গ্রেট যাকে অনেকে সম্রাট জুলকারনায়েন বলে থাকেন; টিরো যুদ্ধের সময় প্রায় অর্ধেক দিন পানির নিচে ছিলেন। এরপর ১৬২০ সালের দিকে, ড্রেবেল নামক একজন ওলন্দাজ প্রকৌশলী, পানির নিচে বৈঠার সাহায্য চালানো যায় এমন একটি সাবমেরিন নির্মান করেন। এই জলযানটি সে সময় বিশেষ সাড়া ফেলে।
কারন এর সাহায্য যেকোন মানুষ, বিশ্বের যেকোন বন্দরে, কোন অনুমতি ছাড়াই অবতরন করতে পারতেন। এছাড়া সমুদ্রের উপর দিয়ে চলার যে বিপদসমূহ যেমন, ঝড়, বাতাস, জলদস্যুদের আক্রমন ইত্যাদি থেকে এই যানটি নিরাপদ ছিলো। এরপর দ্বিতীয় পানির নিচের যে বাহনটি সর্ম্পকে জানা যায়, তার নাম টার্টেল বা কচ্ছপ। আমেরিকান ঘরোয়া যুদ্ধের সময়, ডেভিড বুস্নেল নামক এক ব্যাক্তি তার ঘরের ভিতরেই এই
মেশিনটি নির্মান করেন। এই বাহনটি একজন যাত্রী নিয়ে পানির নিচে যেতে পারতো এবং এই মেশিনেই সর্বপ্রথম প্রপালশনের জন্য স্ক্রু ব্যবহার করা হয়। এই বাহনটি নিয়ে সার্জেন্ট লী নামক কন্টিনেন্টাল বাহিনীর একজন সৈনিক, নিউইয়র্ক বন্দর অবোরধকারী ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ এইচ এম এস ঈগলকে হামলা করেন। এই হামলায় এইচ এম এস ঈগলের কোন ক্ষতি না হলেও, ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয় টার্টেল। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পানির নিচের যান সর্ম্পকে আগ্রহী হয়ে পড়ে, তৈরী হতে থাকে বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন সার্ম্যথের সাবমেরিন। এর সাথে সাথে এগিয়ে চলতে থাকে পানির নিচের জগত সর্ম্পকে মানুষের জ্ঞান। বর্তমানে, বিশ্বের অত্যাধুনিক সাবমেরিন সমূহ মাসের পর মাস পানির নিচে ডুবে থাকতে পারে। এদের ভিতরে থাকে পানি ভেঙ্গে বাতাস বানানোর মেশিন। সাথে থাকে পর্যাপ্ত খাবার এবং সমুদ্রের লোনা পানিকে, বিশুদ্ধ মিষ্টি পানি বানানোর মেশিন। এই যানগুলো, তাদের চারপাশের কয়েক কিলোমিটার পরিধিতে, সমুদ্রের উপরে এবং নিচের এলাকায় অবস্থানকারী, প্রতিটি বাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করতে পারে। নিঃশব্ধ পরমানূ শক্তি চালিত এই বাহনসমূহ, সবার অজান্তেই পুরো পৃথিবী এক ডুবে ঘুরে আসতে পারে।
এতো গেলো সাবমেরিনের কথা। কিন্তু আমাদের লক্ষ রোবট সাবমেরিন নির্মান। রোবট সাবমেরিনের ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো নয়। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির ডায়রিতে, রোবট সাবমেরিন বিষয়ক কিছু ডিজাইন পাও্যা যায়। ১৮৯৮ সালে, নিকোলাস তেসলা নামক এক বৈজ্ঞানিক, রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যায় এমন একটি সাবমেরিন নির্মান করেন। এটি সেসময় এতটা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো যে, বিখ্যাত মেডিসন স্কয়ারে এটি প্রর্দশন করা হয়েছিলো। কর্মক্ষেত্রে, সর্বপ্রথম যে রোবট সাবমেরিনটিকে দেখা যায় তার নাম স্কপিয়ো। ২০০৫ সালে, প্রশান্ত মহাসাগরের প্রায় ২০০ মিটার তলদেশে, রাশিয়ান মনুষ্যবাহী সাবমেরিন এস-২৮ আটকা পড়ে। এই সাবমেরিনটির পিছনের পাখায় তার জড়িয়ে যাওয়ায়, এটি সমুদ্রের নিচে বন্ধ হয়ে যায়। এর পরদিন, ব্রিটিশ রোবট সাবমেরিন স্কপিয়ো হাজির হয়। আরও একদিন অভিযান পরিচালনা করে স্কপিয়ো, এস-২৮ এর পাখায় জড়িয়ে যাওয়া তার কাটতে সক্ষম হয়।
পানির নিচের চলনক্ষম রোবট নির্মান বিজ্ঞানিদের জন্য একটি স্বপ্ন। বিজ্ঞানীদের এই আকাঙ্খার পিছনে কারনও কম নয়। যেখানে সমুদ্রের গভীরতা গড়ে ৩৮০০ কিলোমিটার, সেখানে মানুষ মাত্র পানির নিচে কয়েক কিলো্মিটার যেতে পেরেছে। এই সমুদ্রের বিশালতা এবং গভীরতা কতখানি বেশি, এই বিষয়টি সহজভাবে বোঝার জন্য বলা যায়, সমুদ্রের ভিতর হিমালায় পর্বত ছেড়ে দিলে তা একবারে তলিয়ে যাবে, একটুও ভেসে থাকবে না। এই গভীর সমুদ্রের তলদেশে কখনো সূর্যের আলো পৌছেনা। তাই এখানের তাপমাত্রা অনেক কম এবং সাথে সাথে আছে পানির প্রচন্ড চাপ। এই রুদ্র পরিবেশের প্রচন্ড চাপ সহ্য করে কি ধরনের প্রানী সাগরের গভীরে বাস করে?
এসব অজানা প্রশ্নের সাথে রয়েছে সম্পদ লাভের আকাঙ্ক্ষা। হাজার হাজার বছর ধরে সাগরের বুকে অজস্র মালবাহী, যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল করেছে এবং এখনো চলছে। যুদ্ধ এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারনে, কতো জাহাজ আশ্রয় নিয়েছে সাগরের তলদেশে। সেসব জাহাজ থেকে, সে সময়ের অনেক অজানা তখ্য জানা সম্ভব এবং সম্পদ আহরন সম্ভব। এছাড়াও সাগরের তলদেশ তেল, গ্যসসহ অসংখ্য খনিজ সম্পদের খনিতে ভরপুর। কিছু অতি আবশ্যকীয় খনিজ সম্পদের বিশাল মজুদ সাগরের নিচে আছে। উদাহরনস্বুরুপ, টাইটানিয়াম একটি খনিজ ধাতব, যা বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহার করা হয়। সহজভাষায়, টাইটানিয়াম স্টীলের মতো শক্ত, কিন্তু স্টীলের চেয়ে অনেকগুন হাল্কা। চিকিৎসা ক্ষেত্রে (যেমন ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগাতে), পরিবহন ক্ষেত্রে টাইটানিয়ামের ব্যবহার অনেক। এই টাইটানিয়াম আকরিকের মূল উক্স সমুদ্রের তলদেশ। এসব কারনে, সাগরের নিচে চলনক্ষম রোবট বানাতে বিজ্ঞানিদের আগ্রহ দিনকে দিন বেড়েই চলছে। এছাড়াও, সাগরের নিচে টেলিফোনের তার এবং তেলের পাইপ লাইন বসানো এবং এর রক্ষনাবেক্ষন, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সার্ভে এবং বিভিন্ন সামরিক প্রয়োজনে পানির নিচে চলনক্ষম রোবটের চাহিদা রয়েছে।
যদিও, পানির নিচের রোবট বানানো কোন সহজ কাজ নয়। এটি প্রকৌশলীদের জন্য এখনো বিরাট একটি চ্যালেঞ্জ। পানির নিচের মাত্র কয়েক শত ফিট গভীরে চাপ ২০-১০০০ATM এবং তাপমাত্রা ৩ থেকে ১০ ডিগ্রী। আরও গভীরে চাপ এত বেশী যে, তা ভারী লোহার প্লেট বাকাতে সক্ষম। এছাড়াও পানির নিচে জীবনের জন্য বা ইঞ্জিন চালনার বা জ্বালানী পোড়াবার জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেনের বড়ই অভাব। পানির নিচে লবনের ঘনত্ব অনেক বেশি, যা রোবটসহ বিভিন্ন মেশিনের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং রোবটের ডিজাইন এমন হওয়া দরকার যাতে, রোবট সেইসব প্রতিকুল পরিবেশে চলতে পারে।
পানির নিচে চলনক্ষম রোবট বানানো্র আগে কিছু কথা জানা জরুরী। প্রথমত, পানির নিচে গভীরে, সাধারন রেডিও ওয়েভ কাজ করে না। সুতরাং, বইয়ে যে রিমোট কন্ট্রোল সার্কিট ডায়াগ্রাম দেয়া আছে, তা এখানে কাজ করবে না। পানির নিচে VHF(Very High Frequency) ওয়েভ কাজ করে। সেক্ষেএে এই বইতে যে রোবটটি ডিজাইন করা হবে, তা নিয়ন্ত্রিত হবে তার বা কেবল এর সাহায্য অথবা সর্ম্পুন্ন স্ব-নিয়ন্ত্রিত বা অটোমেটিকভাবে। তার দিয়ে কমান্ড, কন্ট্রোল [command, control] সিগ্যনাল প্রেরন করে রোবটকে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, রোবটটি ঢ়েউ বিহীন পানিতে চালনা করতে হবে।
পানির নিচের রোবট অধ্যায়ে দুটি রোবট নির্মান দেখানো হয়েছে। এদের একটি হচ্ছে, মাছ রোবট। এই মাছ রোবটটি পানির নিচে মাছের মতো চলতে পারে এবং লেকের তলার চিত্র পাঠাতে পারে। এই রোবটটি তার দিয়ে নিয়ন্ত্রন যোগ্য অথবা কোন তার ছাড়াও নিয়ন্ত্রনযোগ্য। দ্বিতীয় রোবটটি হচ্ছে, লেক এক্সপ্লোরার বা লেক পরিভ্রমনকারী। এই রোবটটি একটি ছোট সাবমেরিনের মতো লেকের নিচে চলাচল করতে পারে। এটি ডুবতে এবং ভাসতে পারে, এমনকি পানির নিচে কোন এক স্থানে ভারসম্যপূর্ন অবস্থায় থাকতে পারে। এটিকে তারের সাহায্য বা সর্ম্পূন্ন অটোমেটিকভাবে মিশন সর্ম্পন্ন করতে পারে। রোবটটি সর্ম্পকে বিস্তারিত পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।
আরো দেখুন নিচের লিঙ্কেঃ
https://docs.google.com/file/d/0B_2MZD6mxahXTFN1XzhUQUFfVVE/edit
আমি hanif254। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 22 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ!