গণিতের ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগে আমরা আগে জেনে নি, গণিত কি? গণিত কথাটি এসেছে ‘গণনা করা’ থেকে। কথাটির অর্থ হলো ‘গণনা-বিজ্ঞান’ অর্থাৎ যে বিশেষ জ্ঞান দ্বারা গণনা করা হয়ে থাকে তাকেই গণিত বলা হয়। কথটি অনেক দিনের পুরোনো। আর্যদের প্রাচীন শাস্ত্র যে বেদ, সেই বেদেরও বিভিন্ন জায়গায় ‘গণিত’ কথাটির বিশেষ উল্লেখ আছে। বেদের একটি অংশের নাম ‘বেদাঙ্গ জ্যোতিষ’। পন্ডিতেরা মনে করেন, বেদাঙ্গ রচনা করা হয়েছিল যীশু খিৃষ্টর জন্মের অন্তত বারো শ বছর বা তারও আগে। প্রাচীন আর্য বা হিন্দুরা গণিতকে বিজ্ঞান হিসেবে যে কত উঁচু আসন দিয়েছিলেন তার প্রামণ পাওয়া যায় বেদাঙ্গের একটি বাক্য থেকে। তাতে লেখা আছে, ময়ুরের মাথায় যেমন শিখা, সাপের মাথায় যেমন মণি, ঠিক সে রকম শাস্ত্রের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো গণিত। গণিত কি এ সম্পর্কে আমাদের জানা হলো, আসুন আমরা জেনে নি গনিতের ইতিহাস সম্পর্কে।
এক কথায় ‘গণিত’ বলে প্রকশ করলেও এর বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধেও হিন্দু পন্ডিতেরা বেশ কিছু জানতেন। বৌদ্ধ শাস্ত্রাদিতে দেখা যায় যে, গণিতের রয়েছে তিনটি বিভাগ : 1. মুদ্রা অর্থাৎ আঙুলের সাহায্যে গণনা করা যায় যে গণিত, 2. গণনা অর্থাৎ মনে মনে হিসাব করা যায় যে গণিত এবং 3. সংখ্যায়ন বা উচ্চ পর্যায়ের গণিত। অবশ্য সংখ্যায়ন কথাটি গণিতরে সব রকম শাখা সম্বন্ধেই ব্যবহার করা চলে। আজকালকার দিনে আমরা গণিত বা অঙ্ক বলতে শুধু মাত্র গণনা বা সংখ্যায়ন বুঝি না, কথাটি আজ আরও ব্যাপক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি প্রভৃতি। কিন্তু সেকালে গণিতশাস্ত্রের মধ্যে জ্যোতির্বিদ্যাকেও ধরা হতো। জ্যামিতিও পরবর্তীতে খাটি গণিতশাস্ত্রের আওতায় বেরিয়ে আসে। জ্যামিতির সে সময়ের নাম ছিল ক্ষেত্রগণিত। বা কল্পসূত্র।
পাটিগণিত, বীজগণিত প্রভৃতির কথা উল্লেখ করলাম; এ নামগুলো কী করে এল? যে কোনো শাখায় গণিতের কথা ধরা যাক না কেন, না লিখে কোন গণনাকার্য করা যায় না। অবশ্য আঙুলে গুণে বা মনে মনে হিসেব করে ছোট খাট
অংকের সমাধান করা যায় বটে, কিন্তু জটিল কিছু করতে গেলেই তার জন্যে কোন লিখবার সরঞ্জাম দরকার। এ কাজে দুইটি জিনিস চাই। এক. – যার ওপর লেখা হবে; দুই.- যা দিয়ে লেখা হবে। যার ওপর লেখা হবে সে কাজে কোনো বোর্ড বা ‘পাটি’ ব্যবহার করা চলে; যা দিয়ে লেখা হবে তা কোনো খড়িমাটি করা হত তারই নাম দেওয়া হয় পাটি গণিত। সেকালে মাটি বা পাটির ওপর বালি ছড়িয়েও এ কাজটি সমাধান করা হত। এজন্যেই পাটিগণিতের আর এক নাম দেওয়া হয়েছিল ধূলি কর্ম। অবশ্য এ নামটার তেমন চল নেই, কিন্তু পাটিতে লেখার চল ওঠে গেলেও পাটিগণিত নামটি রয়েই গেছে। পাটিগণিত বলতে এখন আমরা বুঝি যে শাস্ত্রের সাহায্যে উচ্চ পর্যায়ের গণনাকার্য করা যায়।
পাটি গণিত আর বীজ গণিতের মধ্যে তফাৎ কি তোমরা খানিকটা জান। পাটিগণিতে কতকগুলি সংখ্যা ব্যবহার করার রীতি আছে। কিন্তু বীজগণিতে অজানা সংখ্যা বা বীজ ব্যবহার করা হয় সংখ্যার বদলে। কোনও প্রতীক (ইংরেজীতে যাকে বলে “সিম্বল”) বা কোন অক্ষর দিয়ে এই অজানা সংখ্যা বা বীজ বুঝানো হয়।
গণিতের ইতিহাসে প্রাচীন ভারতের একজন বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ ছিলেন ব্রহ্মগুপ্ত। তিনিই সর্বপ্রথম পাটিগণিত ও বীজগণিতের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি করেন। তিনি একটি বিখ্যাত একটি অঙ্গের বই লিখেছিলেন ‘ব্রহ্মস্ফুট-সিদ্ধান্ত’ নাম দিয়ে। এই বইটিতে বীজগণিত সম্বন্ধে যে অধ্যেয়ের আলোচনা করেছেন সে অধ্যায়ের নাম দিয়েছিলেন ‘কুট্টক’। প্রাচীন ভারতের আর একজন বিশেষ নামকরা গণিতজ্ঞ পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন শ্রীধর আচার্য। তিনিই বীজগণিত ও পাটিগণিতকে আলাদা ভাবে বিচার করেছেন।
অঙ্কশাস্ত্রের ইংরেজী নাম ম্যাথম্যাটিক্স (Mathematics)। কথাটি এসেছে গ্রীগ শব্দ ম্যাথিন থেকে; এ কথাটির মানে হলো শিক্ষা করা। পাটিগণিতের ইংরেজী নাম (Arithmetic); এ শব্দটি ‘অ্যারিথমোস’ কথার ইংরেজী নাম জিওমেট্রি। এ শব্দটি এসেছে পৃথিবী এবং পরিমাপ থেকে। (জিও হচ্ছে পৃথিবী, মেট্রি হচ্ছে পরিমাপ করা। ) ত্রিভুজের তিনটি কোণ; ত্রিভুজের নাম ত্রিকোণমিতি। ইংরেজীতে ‘ট্র্যাঙ্গেল (টাই- অ্যাঙ্গেল) অর্থাৎ ত্রিভুজ থেকেই ট্রিগোনিামেট্রি (Trigonometry)।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর যেখানেই গণিতশাস্ত্রের আরম্ভ হয়ে থাকুক না কেন, গণিতশাস্ত্র দুইটি মূল ধারনার ওপর নির্ভর পুরোপুরি বর্তমান। তবে সপ্তদশ শতাব্দির শেষের দিকে গণিতের আরও একটি নতুন শাখার প্রবর্তন হয়। সেটি হচ্ছে বিশ্লেষণ গণিত যাকে ইংরেজীতে অ্যানালাইটিক্যাল ম্যাথম্যাটিক্স বলে। বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটনের নাম তোমরা সবাই জান। তিনি গণিতশাস্ত্রে নানা আবিস্কার করে গেছেন। সে যুগের আর একজন গণিতজ্ঞ ছিলেন লিবনিৎস। লিবনিজ এবং নিউটন হলেন বিশ্লেষণ গণিতের প্রবর্তক। তোমরা যখন কলেজে পড়বে তখন তোমরা অঙ্ক নিয়ে পড়লে ইনটিগ্রাল এবং ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাসের সঙ্গে পরিচয় ঘটবে। এই ক্যালকুলাস মুলত বিশ্লেষণ গণিতেরই একটি অংশ বিশেষ। আমার জানা মতে এটি গণিতের ইতিহাস।
আমি ফারুক আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।