"এন্ট্রেপ্রেনিওর" শব্দটি শুনলে আমাদের মাথায় আসে মার্ক জুকারবার্গ, যিনি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু ইনি ছাড়াও আরো অনেক আছে। বর্তমানে পুরো বিশ্ব জেফ বেজোস (আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা)এবং এলন মাস্ক (স্পেসক্স র প্রতিষ্ঠাতা) নিয়ে মাতামাতি করছে। এদেরকে প্রত্যেক দেশের সরকার আমন্ত্রণ করছে বিনিয়োগ করার জন্য এবং দেশের যুবক - যুবতীদের রোজগার দেওয়ার জন্য।
তো আমি অনেক দিন ধরে ভাবছি যদি এই সফল এন্ট্রেপ্রেনিওরদেড় কিছু বৈশিষ্ট্য যদি জানতে পারতাম তাহলে আমিও একজন সফল এন্ট্রেপ্রেনিওর হতে পারতাম এবং আপনাদেরকে ও সফল হতে সাহায্য করতাম। আজকের বিষয় এই সফল এন্ট্রেপ্রেনিওরদেড় বৈশিষ্ট্য নিয়ে যা জানতে পারলে আপনারা নিজেদেরকে সফল এন্ট্রেপ্রেনিওর হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
তো আজকের প্রশ্ন, সফল এন্ট্রেপ্রেনিওর হতে গেলো কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত?
ব্যতিক্রম ছাড়া, এন্ট্রেপ্রেনিওররা সবসময় কাজ নিয়ে স্পষ্ট যে কেন তারা এই কাজটা করছে এবং তাদের এই কাজটা করার পেছনে একটা বড় কারণ থাকে। এবং এটা আলাদা আলাদা এন্ট্রেপ্রেনিওর উপর নির্ভর করে, কিছু এন্ট্রেপ্রেনিওর র উদ্দেশ্য থাকে টাকা কামানো (বহুত টাকা কামানো) এবং অন্যরা তাদের প্রভাবের দ্বারা গোটা বিশ্বকে বদলাতে চায়। তাদের আসল উদ্দেশ্য কি সেটা বিচার করা আমাদের কাজ নয়, কিন্তু একটা কথা বলতে পারি তাদের উদ্দ্যেশ্যে জানার গুরুত্বকে আমরা অবহেলা করতে পারিনা।
এটা একটা মজাদার চরিত্র। এবং বিশ্বের যত এন্ট্রেপ্রেনিওর আছে যাদেরকে আপনারা জানেন তাদের প্রত্যেকের ভেতরে একটা অবিশ্বাস্য রকমের আত্মবিশ্বাস আছে। যদি কেও সাথ না দেয়, তথাপি ও তারা নিজের বিশ্বাসে এগিয়ে চলে। আমার মতে এটা সব চরিত্রের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কারণ এর মানে হলো সন্দেহ, ভয় এবং আত্মবিশ্বাসকে ছাপিয়ে যাওয়া, যেটা পুরো কঠিন সবার জন্য করা।
আমি অনেক সময় ভাবি যে সফল এন্ট্রেপ্রেনিওরদেড় মনে হয় একজোড়া " সুযোগ চশমা " আছে। তারা যেকোনো ভাবে যেকোনো পরিস্তিতিতে সুযোগকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এবং এই সুযোগটি কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রে এবং যেমন বয়স্করা বলেছেন, ধনী হয় কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রে। একবার যদি তারা খুঁজে পায় ক্ষেত্রটি, তাহলে তারা এমনকি আরো ভালো করে ওই ক্ষেত্রে মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারে।
ব্রায়ান ট্রেসি একজন মোটিভেশনাল স্পিকার লিখেছিলেন একটা চমৎকার বই " ফোকাল পয়েন্ট " যেখানে সে ব্যাখ্যা করেছেন মনোনিবেশ করা এবং মনোযোগ থাকার প্রক্রিয়া। আমার মনে হয় যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো সফল এন্ট্রেপ্রেনিওরদেড় মধ্যে থাকে। তাহাদের কিছু ক্ষমতা থাকে যেমন নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং কর্মকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এবং বর্তমানে থাকা।
আর সময়কালে যা আসে তাদের সামনে তাতে মনোনিবেশ করা।
এই সমস্ত নেতাদের একটি অবিশ্বাস্যভাবে উদার প্রকৃতি আছে। এটিকে আমরা বলি একটি সাংস্কৃতিক অবদান এবং এটি তাদের উত্তরাধিকারদেড় জন্য কিছু ছাপ ছেড়ে যায়। অনেকের পক্ষে এটি তাদের উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে।
আমার কাছে এই বিশ্বমানের এন্ট্রেপ্রেনিওরদেড় মধ্যে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক হলো সবচেয়ে বয়স্ক এবং কনিষ্ঠ। বয়স্করা এমন কিছু অর্জন করেছে যা বেশিরভাগ লোকেরা স্বপ্ন দেখতে পারে তার থেকেও বেশি কিছু অর্জন করেছে, তবুও তাদের এখনও একটি মুক্ত মন আছে। এতো কিছু করার পরেও তারা বসে নেই, এর পরিবর্তে তারা সর্বদা শেখার চেষ্টা করে।
স্পষ্টতই এই এন্ট্রেপ্রেনিওরদেড় অবিশ্বাস্য নেটওয়ার্ক রয়েছে, তবে তাদের সাথে কথা বলার সময়, তাদের নেটওয়ার্কের প্রতি তাদের মনোভাব লক্ষ করা আকর্ষণীয়। ব্যতিক্রম ছাড়াই তারা তাদের নেটওয়ার্কগুলি ব্যতিক্রমী সম্মানের সাথে আচরণ করে। তারা বহু বছর ধরে এই সম্পর্কগুলি তৈরি করেছে, তাদের যোগাযোগগুলি বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তারা একে অপরের ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে।
তারা তাদের নেটওয়ার্কগুলিতে বিনিয়োগের জন্য সময় এবং শক্তি ব্যয় করে, তারা যতটা নেয় তার চেয়ে বেশি দেয় এবং প্রতিদানের প্রত্যাশা ছাড়াই তারা কাজ করে।
অভিজাত এন্ট্রেপ্রেনিওররা বুঝতে পারেন যে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার, শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজের যত্ন নিন এবং নিয়মিতভাবে তাদের ব্যাটারি রিচার্জ করার জন্য সময় নিন। এটি কোনও ঐচ্ছিক কার্যকলাপ নয়, এটি একটি প্রয়োজনীয় কার্যকলাপ।
আমি অবশ্যই এন্ট্রেপ্রেনিওরদেড় কতগুলো বৈশিষ্ট্যটি দেখেছি - তারা নিজেদের চ্যালেঞ্জ করে সব সময়। তারা সব সময় শিখতে চায়, তারা এমন কিছু কাজ করে যে তাদের সুবিধাজনক অবস্থান থেকে বেরিয়ে আস্তে চেষ্টা করে, তারা নিজেদেরকে শারীরিকভাবে চাপ দেয়, তারা কঠোর পরিশ্রম করে। এই মনোভাব তাদেরকে উৎসাহিত করে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য এবং শক্তিশালী করে তোলে। এটি আমাদের জীবনে সমস্ত সমস্যাগুলির মুখোমুখি করার জন্য আরো সক্ষম করে তোলে।
মজার বিষয় হল এই অবিশ্বাস্য এন্ট্রেপ্রেনিওররা বেশিরভাগই টেকনো নিয়ান্ডারথালস, তবে এটি তাদের গুরুত্বকে বিশ্বাস করতে বাধা দেয় না। তারা প্রযুক্তিতে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে থেমে থাকে না। এটি সেই বিশ্বাস যা তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র দক্ষতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রযুক্তি আসার সাথে সাথে তারা জানতে চেষ্টা করে এবং বিনিয়োগ করে।
আমরা সকলেই আমাদের জীবনে উত্থান-পতনের মুখোমুখি হই। কিছু হতভাগ্য মানুষ আছে যারা সবসময় পতনের মুখোমুখি হয়, যেটা তাদের মনোবল ভেঙে দেয়। আমি যে সকল বিখ্যাত এন্ট্রেপ্রেনিওরদের অধ্যয়ন করেছি তাদের সকলেরই জীবনে অবিশ্বাস্য চ্যালেঞ্জ ছিল। তারা সহজেই এই চ্যালেঞ্জগুলির আড়ালে থাকতে পারে, কিন্তু তারা তা করে না। তারা সময়ের সাথে সাথে সহনশীল হয়ে উঠেছে এবং প্রতিদিন আরও বেশি সহনশীল হয়ে উঠছে।
সঠিক মানসিকতা থাকা, প্রচুর সুযোগকে গ্রহণ করা, এটি একটি ধনী এন্ট্রেপ্রেনিওর এবং দরিদ্র এন্ট্রেপ্রেনিওর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে।
যে কোনও সীমাবদ্ধ বিশ্বাসকে পরিবর্তন করা যায়, আমাদের কেবল পরিবর্তনের দৃঢ় ইচ্ছা থাকতে হবে। আপনি যদি ভেঙে অসুস্থ হয়ে পড়েন তবে আপনার নিজের কোটিপতি মনকে বিকাশ করুন।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে খুব সহজ মনে হলেও বাস্তবে এগুলো পালন করা রীতিমতো কঠিন। তার কারণ আপনাকে বিভিন্ন রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আপনার মনোবল ভেঙে দিতে পারে। প্রথম প্রথম হয়তো বহুত বাঁধা আসবে। আপনি ব্যর্থ হবেন। কিন্তু দৃঢ় নিশ্চয়তা থাকলে সময়ের সাথে সাথে আপনি সকল বাঁধা অতিক্রম করে একজন সফল এন্ট্রেপ্রেনিওর হিসেবে নিজেকে স্থাপিত করতে পারবেন। একটা সফল এবং অসফল এন্ট্রেপ্রেনিওরদের পার্থক্য তৈরী হয়, এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে সঠিক ভাবে পালন না করাতে।
শেষ করার আগে, একটা প্রশ্ন, আপনি কি পারবেন একজন সফল এন্ট্রেপ্রেনিওর হতে?
আমি অভিজিত চৌধুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 30 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 9 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 6 টিউনারকে ফলো করি।
লিখতে চাই ,নিজেকে প্রকাশ করতে চাই।লেখার মাধ্যমে অন্যকে জানাতে চাই।