এবারের রমজান হোক শ্রেষ্ঠ রমজান

 

এবারের রমজান হোক শ্রেষ্ঠ রমজান

 

কেন রোজা রাখবেন

ওজন কমাতে পারবেন সহজে

ওজন কমাতে চাইলেও রোজা বা উপবাস আপনার জন্যে খুব কার্যকরী। ড. এরিক রভুসিনের এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে ওজন কমাতে গিয়ে প্রতিদিন কঠোরভাবে খাবার নিয়ন্ত্রণের চেয়ে একদিন স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া এবং তার পরদিন কিছুই না খাওয়া –এরকম ‘সবিরাম উপবাস’ অনেক ভালো ফল দিতে পারে। তিনি বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকার চেয়ে সবিরাম উপবাস একটি ভালো বিকল্প।

আপনি সহজে বুড়ো হবেন না

আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিংয়ের নিউরো সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মার্ক পি ম্যাটসন ও তার সহকর্মীরা দেখান যে, নিয়মিত ডায়েটিং করলে একজন মানুষের দেহে যে প্রভাবগুলো পড়ে রোজা বা উপবাসও সেই একই প্রভাব ফেলে। ইঁদুরের উপর এবং পরে মানুষের ওপর ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা একদিন পর পর উপবাসের প্রভাব নিয়ে এই গবেষণাটি তারা পরিচালনা করেন। তারা বলেন, উপবাসের ফলে দেহে এমন কিছু প্রোটিন উৎসারিত হয় যেটা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেশনজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং স্নায়ুকোষের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে বয়সজনিত রোগ যেমন, অ্যালঝেইমার, হান্টিংটন বা পার্কিনসন্সের ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়। তারা দেখেন, কয়েক ঘণ্টা পর পর নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ রক্তে শর্করার মান সবসময় উঁচু রাখে। শক্তি উৎপাদনের জন্য এই শর্করাকে বিপাক হতে হয়। এই বিপাকের একটি উপজাত হলো জারণ। এই জারণের ফলে দেহে সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীল অক্সিজেন অণু, যার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলো বুড়িয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করা। কিন্তু রোজা বা উপবাস এ প্রক্রিয়াকেই পাল্টে দেয়। অনাহারের ফলে দেহে যে সাময়িক শক্তি সংকট হয় তা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রোটিন উৎপাদনে উৎসাহ দেয়, এমনকি নতুন ব্রেন সেলও জন্মায়।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে

রোজা রাখলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। ম্যাটসন এর ব্যাখ্যায় বলেন, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া মানে দেহকোষগুলোতে ইনসুলিনের স্থিতিশীল সরবরাহ। এই তৃপ্ত এবং অলস কোষগুলো তখন হয়ে যায় ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্ট। আর ডায়াবেটিসের লক্ষণ এটাই। কিন্তু মাঝে মাঝে খাওয়া-দাওয়া বাদ দিলে এ কোষগুলো আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠে এবং বিপাক করতে পারে দক্ষভাবে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমার সাথে সাথে উচ্চরক্তচাপ এবং হার্ট-অ্যাটাকের আশংকাও কমে।

কোলেস্টেরল কমায়

সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকজন কার্ডিওলজিস্ট একদল স্বেচ্ছাসেবীর ওপর একটি গবেষণা চালান। ৩০ দিন রোজা রাখার পর দেখা গেল দেহের ওজন বা সুস্থতাবোধের ওপর কোনো প্রভাব না পড়লেও তাদের রক্তের লিপিড প্রোফাইলের ওপর চমৎকার প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ তাদের রক্তে এলডিএল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমেছে। শুধু মুসলমানরাই নন, অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উপবাসকালীন সময়েও একই প্রভাব দেখা গেছে তাদের দেহে।

ক্যান্সার ঝুঁকি কমায়

ক্যান্সারের ক্ষেত্রে উপবাসের কোনো প্রভাব আছে কি না তা নিয়ে মানুষের ওপর এখনো কোনো গবেষণা না হলেও প্রাণিদের ওপর ইতোমধ্যেই এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে এবং তাতে দেখা গেছে উপবাসের ফলে তাদের লিম্ফোমার ঝুঁকি কমেছে, টিউমার অপসারণ পরবর্তী বেঁচে থাকার হার বেড়েছে। এছাড়া উপবাস ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কিছু কিছু সেলের পুনরায় বৃদ্ধিকে ঠেকায়।

স্ট্রেস কমায়

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স এর গবেষণায় দেখা গেছে উপবাস স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, সুস্থতার অনুভূতিকে বাড়ায় এবং দীর্ঘজীবন এনে দেয়।

রক্তচাপ কমায়

গবেষণায় আরো দেখা গেছে রোজা বা উপবাস ব্যায়ামের চেয়েও কার্যকরভাবে হার্টবিট ও ব্লাড প্রেশার কমাতে পারে।

 

রমজানে করণীয় বর্জনীয়

প্রিয় সুহৃদ, আপনি ভাগ্যবান। আপনি একটি রমজান মাস পেয়েছেন। আসুন, ছোট ছোট কিছু পালনীয় অনুসরণের মাধ্যমে এবারের রমজানকে করে তুলি জীবনের শ্রেষ্ঠ রমজান।

১. ২০১৪ সালের ১ রমজানে প্রকাশিত হয়েছে ‘আল কোরআন : বাংলা মর্মবাণী’-এর পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ। গুরুজী শহীদ আল বোখারীর সংকলনকৃত এই মর্মবাণীকে বলা যায় বাংলা ভাষায় কোরআনের প্রথম কোনো মর্মানুবাদ যা এত সহজ সরল, এত প্রাঞ্জল। একটি নির্দিষ্ট নিয়তে ২৭ রমজানের আগে নিয়মিত পড়ে এ কোরআনকে খতম করুন। তাদের জন্যে আখেরি দোয়ায় বিশেষ প্রার্থনা হবে।

২. বাইরে দাওয়াত না থাকলে বাসায় গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নিয়ে পরিবারের সবাই একসঙ্গে ইফতার করুন। ইফতারের আগে সবাই মিলে মর্মবাণী পাঠের আয়োজন করতে পারেন।

৩. সেহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। সেহরি শেষে দাঁত ব্রাশ ও অজু করে কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসুন। ফাউন্ডেশন প্রকাশিত 'আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী' অডিও শুনতে থাকুন। ফজরের নামাজ শেষেও যতক্ষণ ইচ্ছা কোরআনের বাংলা মর্মবাণী শুনতে পারেন। তারপর মেডিটেশন করে দিনের কাজ শুরু করুন। সেহরির পর বিছানায় গড়াগড়ি করা বা ঘুমানোর অভ্যাস যত এড়ানো যায় তত ভালো।

৪. সাহাবীরা একটি নতুন আয়াত শোনার পর ছুটোছুটি শুরু করতেন কে কার আগে, কত মানুষের কাছে এ বাণী পৌঁছে দিতে পারেন। আপনিও এ সুযোগ নিন আল কোরআনের বাংলা মর্মবাণী বিতরণের মাধমে। একটি বিশেষ নিয়তে ৪০ জনকে পৌঁছে দিন এ পু্স্তিকাটি।

৫. নামাজ জামাতে আদায়ের চেষ্টা করুন। নামাজের পর নীরবে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার তাসবীহ পাঠ করুন।

৬. প্রতিদিন ৩০ মিনিট পবিত্র কোরআনের বাংলা মর্মবাণী পড়ুন/শুনুন।

৭. পরচর্চা ও গীবত নিজে করবেন না। অন্যরা করলেও তাতে অংশ নেবেন না।

৮. অপ্রয়োজনীয় কথা, বিতর্ক, ঝগড়া, উত্তেজনা ও চ্যাঁচামেচি থেকে দূরে থাকুন।

৯. খাদ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেয়া, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত মুনাফা, অসহায়ের ওপর জুলুম করা থেকে বিরত থাকুন।

১০. যত বেশি সময় সম্ভব আল্লাহর মহিমা ও গুণাবলি নিয়ে ভাবুন। তার নৈকট্য লাভের উপায় নিয়ে চিন্তা করুন।

১১. নিয়মিত মেডিটেশন করুন। শুক্রবার পরিচিতদের নিয়ে সাদাকায়নে আসুন।

১২. রোজার শুদ্ধতা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্যে কাফফারা স্বরূপ দুঃস্থ ও বঞ্চিতদের কল্যাণে মাটির ব্যাংকে দানের পাশাপাশি এককালীন দানও আপনি করতে পারেন। আর এতে করে আপনি হতে পারবেন সঙ্ঘবদ্ধ দানের অংশীদার যা পুরো দানের সওয়াবের ভাগীদার করবে আপনাকে। শুধু তাই নয়, রমজানে সঙ্ঘবদ্ধভাবে হওয়ার ফলে এ দান (৭০ x ৭০) ৪৯০০ গুণ বরকতের। এছাড়া আপনি অংশ নিতে পারেন করসেবায়। নবীজী (স) দুস্থ ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করাকে এতেকাফের চেয়েও বেশি সওয়াবের বলে উল্লেখ করেছেন।

১৩. পবিত্র কোরআনে নামাজ কায়েমের পাশাপাশি যাকাতদাতা হওয়ারও নির্দেশ রয়েছে। রূপার বর্তমান বাজারদর হিসেবে ৩২ হাজার টাকা (নিজের খরচ মেটানোর পর) এক চান্দ্র বছর জমা থাকলে আপনি যাকাতদাতা। রমজানে যাকাতের অর্থ কোয়ান্টাম যাকাত ফান্ডে প্রদান ৪৯০০ গুণ বরকতের।

১৪. ফাউন্ডেশন আয়োজিত কোয়ান্টায়নে খতমে কোরআনে অংশ নিন। ২০১৪ সাল থেকে এ কার্যক্রমে  আমরা ব্যবহার করছি নিজস্ব অডিও। আল কোরআন বাংলা মর্মবাণীর এ অডিওতে কণ্ঠ দিয়েছেন গুরুজী শহীদ আল বোখারী মহাজাতক। ধ্যানের গভীর আত্মনিমগ্নতার স্তরে কোরআনের বাণী আপনার মধ্যে নতুন অনুরণন সৃষ্টি করবে, জানাকে মানায় রূপান্তরের আকুতি অনুভব করবেন নিজের ভেতর থেকে।

১৫. রোগ ও সমস্যামুক্তিতে ধ্যানের স্তরে প্রার্থনার জন্যে সদকা হিলিংয়ে নাম দিন। কোয়ান্টাম সাইকি কার্যক্রমের অংশগ্রহণকারী হয়ে থাকলে হিলিংয়ে অংশ নিন।

১৬. এ রমজানকেই মনে করুন আপনার জীবনের শেষ রমজান। আত্মশুদ্ধি ও হক্কুল ইবাদে সাধ্যমতো সর্বোচ্চ প্রয়াস দিয়ে সার্থক করে তুলুন এবারের রমজান।

 

রমজান সংযম এর মাস, খাদ্য উৎসব এর মাস নয়

 

রমজান সংযম

এর মাস,

খাদ্য উৎসব এর

মাস নয়

 

 

 

সেহরি ও ইফতারে কী খাবেন, কী খাবেন না

সেহরি:

সারাদিন খাওয়া হবে না ভেবে সেহরিতে ভূরিভোজ রোজার কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। বিশেষত, মাছ-মাংস অর্থাৎ প্রোটিন জাতীয় খাবার পানির তৃষ্ণা বাড়ায়। তাই সারাদিন তৃষ্ণাহীন ঝরঝরে অনুভূতি পেতে সেহরিতে ভাতের সাথে শুধু সবজি (ভাজি বা ঝোল করে) খান। সেহরিতে অল্প হলেও খান। প্রয়োজনে খেজুর-কলা বা দই-চিড়াও খেতে পারেন।

ইফতার:

ইফতারে ভাজা-পোড়া, গুরুপাক ও অতিরিক্ত মশলাদার, রকমারি অস্বাস্থ্যকর খাবার ও শরবতের পরিবর্তে দুই/ তিনটি খেজুর খেয়ে পানি পান করুন। খেজুর ও পানি মিলে সুক্রোজ তৈরি করে, যা তাৎক্ষণিক প্রাণশক্তি এনে দেয়। মাগরিবের নামাজ পড়ার পর রাতের খাবার (শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিম, ডালসহ অন্যান্য সুষম খাবার) খেয়ে নিন।

 

Quran

কোরআন নাযিল করা হয়েছিল পথভ্রষ্ট মানুষকে আলোর পথ দেখানোর জন্য। অন্ধকারাছন্ন আরব জাতি সহ সমগ্র মানব জাতির মুক্তির পথ হচ্ছে কোরআন। আর তাই আরবি ভাষায় কোরআন তেলাওতের পাশাপাশি আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কোরআন এর বিধি নিষেধ জানা খুবই জরুরী। যেন আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম মেনে চলতে পারি। আমাদের করনীয় বর্জনীয় জানতে পারি। তাহলে আমরা আরও বেশি সচেতন হতে পারব। আর এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আল কোরআনের বাংলা মর্মবাণী প্রকাশ করেছে। এটি অনুবাদ নয়, মর্মবাণী।

 

 আল কোরআন - বাংলা মর্মবাণী

পবিত্র কোরআনের সরল বাংলা মর্মানুবাদ। ২০১৩ রমজানে কোরআনের ৩০ তম পারা ও আরো সাত টি সূরা নিয়ে পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়েছিল মর্মবাণীর 'আমপারা' পর্বটি। আর ২০১৪, ১ লা রমজানে প্রকাশিত হয়েছিল ১ থেকে ৩০ পারা অর্থাৎ পুরো কোরআনের মর্মানুবাদ নিয়ে ৬৫৬ পৃষ্ঠার পুস্তক 'আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী'। এছাড়া সেবা প্রকাশনীর উদ্যোগে এর পেপারব্যাক সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছে। আর ১ রমজান ২০১৫ সালে আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী প্রকাশিত হয়েছে পেপারব্যাক সংস্করণ। চাইলে যে কেও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এর সারাদেশের যেকোনো সেন্টার-শাখা-সেল সংগ্রহ করতে পারবেন।

পিডিএফ ভার্সন: ডাউনলোড

আল কোরআন - বাংলা ওয়েবসাইট

আর কিছুদিন পরেই আমরা পাচ্ছি কোরআন নাজিলের পূণ্যময় মাস মাহে রমজান। সারা বছরের মধ্যে রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা, মহত্ব অনেক বেশি। এ মাসে বেশি বেশি কোরআন চর্চা বিশেষ বরকতপূর্ণ। তাই কোরআনকে ভালোভাবে বুঝতে আর উপলব্ধি করতে আল কোরআন বাংলা মর্মবাণীর পূর্ণাঙ্গ অডিও সংস্করণ প্রকাশিত হলো আল কোরআন সাইটে।

আল কোরআন সাইটের এবারের নতুন সংযোজন হলো আগের চেয়ে আরো বেশি বিশেষায়িত ও দ্রুতগতির সার্চ ইঞ্জিন। এখানে যে-কোনো শব্দ দিয়ে সার্চ করলে সে শব্দটি কোন সূরায় কতবার আছে তা দেখা যাবে, শব্দটি হাইলাইট হবে।

এবার এ সাইটে আরবি, বাংলা ও উভয় ভাষার একসাথে পড়া ও শোনার সুযোগ রয়েছে। আরবি তেলাওয়াতটি প্রখ্যাত ক্বারী আল্লামা শেখ হুজাইফির থেকে সংগৃহীত এবং বাংলা মর্মবাণীর অডিওটি শোনা যাবে সংকলক শহীদ আল বোখারীর কণ্ঠে।

হোমপেজেই সন্নিবেশিত হয়েছে সূরার লিস্ট। সেখান থেকে সরাসরি সূরাগুলো আলাদাভাবে ডাউনলোড করা এবং শোনা যাবে। মেনুতে পাওয়া যাবে-স্মার্টফোন অ্যাপ, আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী-এর পিডিএফ ভার্সন, রমজানের বিশেষ ডাউনলোড বান্ডল, আখেরি দোয়ার সময়সূচি, আল কোরআনের দোয়া ও রোজা বিষয়ে তথ্য, প্রশ্ন-উত্তরসহ আরো অনেক কিছু।

এছাড়াও এ সাইটের বিশেষ আকর্ষণ হলো সূরা/আয়াত লোকেটর। এটি আছে সাইটের ওপরের ডান কোনায়। এখানে যে কেউ আয়াত এবং সূরা নম্বর দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সূরার ঐ আয়াতে সরাসরি যেতে পারবে। যেমন আয়াতুল কুরসি শুনতে বা পড়তে 2.255 দিলে সরাসরি সূরা বাকারার ২৫৫ আয়াত চলে আসবে।

ওয়েবসাইট লিঙ্ক: http://alquran.org.bd/

 

আল কোরআন - স্মার্টফোন অ্যাপ

app

আল কোরআন-বাংলা মর্মবাণীর এই এন্ড্রয়েড অ্যাপটিতে বাংলা ও উভয় ভাষার একসাথে পড়া ও শোনার সুযোগ রয়েছে। আরবি তেলাওয়াতটি প্রখ্যাত ক্বারী আল্লামা শেখ হুজাইফির থেকে সংগৃহীত এবং বাংলা মর্মবাণীর অডিওটি শোনা যাবে সংকলক শহীদ আল বোখারীর কণ্ঠে। যেকোনো আয়াতকে পছন্দ করে রাখার এবং শেয়ার করার সুযোগ রয়েছে।

আল কোরআন অ্যাপ ডাউনলোড: প্লে-স্টোর  এপিকে ফাইল

 

 

get

পবিত্র রমজান মাসের তাৎপর্য নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে এ মাসের গুরুত্ব আল্লাহ পাকের কাছে অসীম। কীভাবে এ মাসের বরকতকে পরিপূর্ণ করা যাবে সে ব্যাপারে কোরআন এবং হাদিস থেকে পাওয়া যায় অসংখ্য নির্দেশনা। তারই কিছু সংখ্যক নিয়ে সংকলিত হয়েছে এ আর্টিকেলটি 'রমজান- হাতভরে শুধু পাওয়ার মাস'। রমজানের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে কোরআন নাজিলের এ মাসে কোরআনকে কীভাবে আমল করতে হবে তার কিছু চমৎকার দিক-নির্দেশনা আছে এখানে-

রমজানের প্রস্তুতি

ইসলামের দৃষ্টিতে ১২ চান্দ্র মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস হলো রমজান। আল্লাহপাক বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, অন্য ১১ মাসের তুলনায় রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা, মহত্ত্ব কত বেশি।

ইবাদতের মাস এ রমজানে সব নবী-রসুলই ইবাদতে সময় দিয়েছেন। আর শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স) যেভাবে রমজানকে গ্রহণ করেছেন, সৎকাজের মধ্যে অতিবাহিত করেছেন, তা আমাদের জন্যে অনুসরণীয়। হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রমজান মাস এসেছে কি না তা আমরা রাসুলকে দেখে বুঝতে পারতাম। অর্থাৎ অন্য সময়ের তুলনায় এ মাসে তার ইবাদত বন্দেগি এত বেড়ে যেত যে, অন্যরা তাকে দেখে বুঝত যে, এখন রমজান চলছে।

রসুলুল্লাহ (স) রমজানের এ কঠোর কার্যক্রমের প্রস্তুতিও নিতেন আরো আগে থেকেই। আয়েশা (রা) এর আরেকটি বক্তব্য এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলতেন, রমজান এলে রাসুল যেন কোমরে গামছা বেঁধে নামতেন। রমজান মাসে হঠাৎ করে আসা জীবনযাপনের যে পরিবর্তন, ইবাদতের কঠোরতা- এই পরিবর্তনটা যাতে বিরক্তির সৃষ্টি না করে, ইবাদতে যাতে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে - এই জন্যে শাবান মাস থেকেই নবীজী এর পাঁয়তারা করতেন, প্রচেষ্টা চালাতেন। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেছেন যে, নবীজী রমজান মাস বাদ দিলে শাবান মাসে সবচাইতে বেশি রোজা পালন করতেন।

আল্লাহর ক্ষমাশীলতা

আল্লাহ মানুষকে ভালবাসেন, ভীষণ ভালবাসেন। এজন্যে তিনি মানুষকে বার বার ক্ষমা করে দিয়েছেন। মানুষ যাতে বার বার সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ পায় সেই সুযোগ আল্লাহপাক দিয়েছেন।

নবীজী বলেন, এক নামাজ থেকে আরেক নামাজ কাফফারা, এক জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা একজন মানুষের জীবনের কাফফারা, এক রমজান থেকে আরেক রমজান কাফফারা। এখানে কাফফারা মানে সমান সমান করে দেয়া। অর্থাৎ ফজরের নামাজ থেকে যোহরের নামাজ পর্যন্ত একজন মানুষ যে ভুল করে, যোহরের নামাজ আদায় করার সাথে সাথে আল্লাহ সেটা মাফ করে দেন। এরকম এক জুম্মা থেকে আরেক জুম্মার ফাঁকফোকর দিয়ে যদি কোনো অপরাধ থেকে যায় আল্লাহ মাফ করে দেন। ঠিক সেরকম এক রমজান থেকে আরেক রমজান - এই একটা বছর চেষ্টা করার পরেও অজ্ঞাতে কোনো ভুলত্রুটি থেকে গেল যখনই রমজান মাসের চাঁদ উঠল আর যেই বিশ্বাসী নারী-পুরুষ এই রমজানকে স্বাগত জানালো, গ্রহণ করল - এই গ্রহণ করাটাই তার জন্যে একটি বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। সুবহানাল্লাহ! তাহলে কী রকম ভালবাসা, আন্তরিকতা এবং মূল্যবোধ দিয়ে রমজানকে গ্রহণ করা উচিত এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি। সহজ কথা হচ্ছে মানুষকে নিষ্পাপ রাখার জন্যে বা নিষ্পাপ করার জন্যে আল্লাহ যে প্রক্রিয়া দিয়েছেন এটাই নবীজী ব্যাখ্যা করেছেন।

রমজান তাই নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ

সাধারণভাবে ধারণা হলো, রমজান একটা কষ্টকর সময়। না খেয়ে, না পান করে থাকতে হবে। আরো অনেক কিছু আছে যা করা যাবে না ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রমজান আমাদেরকে পরিশুদ্ধ করার মাস। যেমন, একটি মেশিন। নির্দিষ্ট সময় পরে এটা সার্ভিসিং করাতে হয়। নইলে মেশিন ডিস্টার্ব করতে থাকে, ঠিকমতো কাজ করানো যায় না। মানুষের জন্যে মাহে রমজানও তেমনি। প্রতি ১১ মাস পর পর এই মাসটি আসে একজন মানুষের জন্যে সুস্বাস্থ্য, প্রশান্তি, আর সাফল্যের বারতা নিয়ে।

যেমন, কেউ ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে ভুগছে। এই রোগগ্রস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় পরিপূর্ণ একটি সুস্থ শরীরের অধিকারী হওয়ার সুযোগ এই রমজানের মধ্যে রয়েছে। ঠিক একইভাবে একজন মানুষ ১১ মাস ভুলভ্রান্তি করার মাধ্যমে তার পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং বলতে গেলে দিশাহারা হয়ে যাওয়ার মতো পারিবারিক অসন্তোষ; বলাও যায় না, আবার সমাধানও খুঁজে পাচ্ছি না। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে এই পারিবারিক অসন্তোষ সম্পূর্ণরূপে দূর করে দিয়ে স্বর্গীয় সুখ ফিরিয়ে আনার জন্যে এই রমজান মাসকে আল্লাহ দিয়েছেন।

নবীজী বলেছেন যে এ মাসে বিশ্বাসীর রিজিক বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আমরা অর্থকষ্টে থাকি; অভাববোধে ভুগি। এটা একজন নিঃস্ব যেমন, একজন ধনীও তেমন। যেমন, একজন কোটিপতি যখন ভাবে তার যদি দেড়কোটি টাকা থাকত!, তখন সে আসলে অভাববোধে ভুগছে। এই দৈন্যদশা থেকে মুক্ত হয়ে একজন মানুষ প্রকৃত প্রাচুর্যবান হতে পারে এই রমজান মাসের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে।

আল্লাহ নিজেই দেবেন এর প্রতিদান

১২ মাসের ভিতর এই মাসটি অত্যন্ত মর্যাদাবান, অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি মাস। সেটা কীভাবে?

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হাদীসে কুদসীতে বলেন, “রমজান ব্যতীত অন্য সময় যে-কোনো কাজের বিনিময় আমি ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করে দিই। কিন্তু রমজান মাসে যে ব্যক্তি রোজা রাখছে এই রোজার যে বিনিময় এটা আমি কোনো হিসাব করে দেই না। এটার কোনো সীমা-সংখ্যা আমি ঘোষণা করি নাই এবং এটা আমি অন্য কোনো ফেরেশতার দায়িত্বেও দিয়ে দেই নাই। এই কাজটির ফল আমি নিজ হাতে প্রদান করব আমার ইচ্ছেমতো। প্রদান করব আমার বান্দার প্রয়োজন অনুসারে। এ থেকেই বোঝা যায়, আল্লাহ কত বড়, তিনি আমাদের কত ভালবাসেন! ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই –
ধরুন একজন গরিব মানুষ একজনকে টেলিফোন করল, চাচা আমার বাবা অসুস্থ। কী হবে? হাসপাতালে নেব পাঁচ হাজার টাকা লাগবে। এখন চাচা তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দিলেন। দেখা গেল যে, চিকিৎসা সম্পন্ন হয় নি। তার আরো টাকা লাগছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার আর এই চাচার কাছে চাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কিন্তু চাচা যদি সেরকম আন্তরিক হয়, তাহলে বলবে যে, ভাতিজা পাঁচ হাজার, দশ হাজার বুঝি না, তোমার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দাও। চিকিৎসা করাও। রিলিজ করার সময় আমাকে বলো।

কী হলো? তার পাঁচ হাজার টাকায়ও হয়ে যেতে পারে আবার ৫০ হাজার টাকাও লাগতে পারে। অর্থাৎ রিলিজ করা পর্যন্ত সে দায়িত্ব নিয়ে নিল। আমরা আমাদের কর্মের দ্বারা বুঝছি যে, ধরেই নিলাম যে সৎকর্ম আমাদের কমতি পড়ে গেল, তখন যদি এই রোজার ফজিলত আল্লাহ ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ দিতেন দেখা গেল যে এগুলো দেয়ার পরেও আমি মুক্তি পাচ্ছি না। সেজন্যে আল্লাহ এই একটি সোর্স হাতে রেখে দিয়েছেন। তাতে বোঝা যায় যে, আমরা মুক্তি পাই, আমরা ভালো থাকি এই বিষয়টি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ। এটা তিনি হাতে রেখে দিয়েছেন যে এটা দিয়ে তিনি প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাকে পার করে দেবেন। কোথাও আটকে গেলাম তো আরেকটু বাড়িয়ে দিলেন। এজন্যেই বলা হয়েছে যে, রমজান হচ্ছে নাজাতের মাস।

ওভারটাইম যখন ৭০ গুণ

আল্লাহপাক বলেন, রমজানের সম্মানার্থে এ মাসে যেকোনো ভালো কাজের প্রতিদান আমি ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দিই। আপনি একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কথা চিন্তা করুন। সাধারণভাবে ওভারটাইমের ঘোষণা শ্রমিকদেরকে সেভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারে না। কিন্তু যখন বলা হয় এটা দ্বিগুণ হবে বা ত্রিগুণ হবে, তখন কিন্তু শ্রমিকদের উৎসাহ, কাজের উদ্যম সবই এত প্রবল হয় যে, অনেক কাজ করেও কোনো ক্লান্তি নেই। সেরকমই রমজানে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই ওভারটাইম ৭০ গুণ। তার মানে- কী পরিমাণ সক্রিয় আমাদের হতে হবে তা বোঝা যায়। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এই করুণাধারা কিন্তু একটা চাঁদ উঠা থেকে আরেকটা চাঁদ উঠা পর্যন্ত। এরপরে তাঁর করুণা থাকবে, কিন্তু হয়ে যাবে সীমিত হিসাবের গণ্ডিতে আবদ্ধ, নিয়ন্ত্রিত। আর এই যে রমজান মাসের রহমত এবং এই যে দান অনুদান বা প্রবৃদ্ধি - এটা হচ্ছে সীমাহীন, কমপক্ষে ৭০ গুণ। এখানে এসে আমরা ঝিমিয়ে পড়ি আর নবীজী কোমরে গামছা বেঁধে নেমে যেতেন।

বিশ্বাসীর সমস্ত কাজই ইবাদত

আর রমজান মাসে শুধু রোজা নয় বা শুধু ইবাদত নয়, একজন বিশ্বাসীর প্রতিটি কাজই ইবাদত বলে গণ্য যদি সে কোনো অন্যায় না করে বা দুরভিসন্ধিমূলক কাজ না করে। এমনকি তার ঘুম, তার খাওয়া-দাওয়া, তার কাপড় কাঁচা তার গোসল তার পেশা তার সবকিছুই ইবাদত বলে গণ্য হয়। কাজেই আমাদের কী করা উচিত তা বোঝা যায়।

আমরা নিশ্চয়ই সেই ব্যবসায়ীর মতো হতে চাই না, যারা দুই-একটা কাজে লাভ পেয়েই ছুটি কাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, আর বলে বেড়ায় আমি তো চাকরি করি না, ইচ্ছেমতো অফিসে যাই, কারণ আমার নিজের ব্যবসা। কারণ আরো তিন/ চার মাস চলার পয়সা আছে। তো সেই আহাম্মক ব্যবসায়ী কিন্তু বেশিদিন টিকে না। বরং আমরা সেই বুদ্ধিমান, সচেতন ব্যবসায়ীর মতো হতে চাই যে এসময় আরো বেশি সচেতন হয়। কারণ প্রকৃতির নিয়মই এটা যে, সবসময় একই ধারা অব্যাহত থাকে না। এজন্যেই রমজানকে এত গুরুত্বের সাথে নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়।

কোরআন এবং রমজান

আমরা যদি দেখি রমজান এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? কোরআন নাজিলের কারণে। পৃথিবীতে আল্লাহ যত কাজ করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শ্রেষ্ঠতম কাজ হিসেবে তিনি মনে করেন কোরআন নাজিলকে। কোরআন নাজিল যখন সম্পন্ন হলো, তিনি ঘোষণা করলেন, আজ আমি আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম। তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করলাম। অর্থাৎ গোটা মানবজাতির জন্যে কোরআনকে একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরে আল্লাহ নিজেই সন্তোষ প্রকাশ করছেন। আর এতই আনন্দিত হয়েছেন যে এই মাসটিকে ১১ মাসের তুলনায় অনেক মর্যাদাবান করেছেন! শুধু তা-ই নয়, এই মাসে একটি রাত যেটাকে আমরা কদরের রাত জানি সেই রাতটিকে হাজার মাসের দিনরাতের চাইতেও বেশি মর্যাদাবান করেছেন।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে ২০১৪ সালের ১ রমজানে প্রকাশিত হয়েছে আল কোরআন বাংলা মর্মবাণীর পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ। পবিত্র কোরআনের সহজ সরল বাংলা মর্মানুবাদের এ সংকলনটি নিয়মিত পড়ে আগামী ২৭ রমজানের আগে খতম করুন। আপনার উপলব্ধির জগতে আসবে এক বাঁকবদল। যত বেশি বার পড়বেন তত আপনার বিশ্বাস প্রগাঢ় হবে।

চারপাশের ৪০ ঘরে ছড়িয়ে দিন

সাহাবীরা একটি নতুন আয়াত শোনার পর ছুটোছুটি শুরু করতেন কে কার আগে কত মানুষের কাছে এ বাণীকে পৌঁছে দিতে পারেন। কোরআনের জ্ঞান নিজে জানা যেমন ফরজ, তেমনি অন্যকে জানানোও একইরকম গুরুত্বপূর্ণ। এ রমজানের সেরা কাজ তাই এ মর্মবাণীটি নিজে পড়া, অনুধাবন করা এবং অনুসরণের চেষ্টা করা। সেইসাথে তা লাখো হাতে পৌঁছে দেয়া।

এ লক্ষ্যেই আল্লাহর এই রহমতকে চারপাশের চল্লিশ ঘরে আমরা পৌঁছে দিতে চাই। রমজানে আমাদের লক্ষ্যই হবে চারপাশের চল্লিশ ঘরে মর্মবাণীটি পৌঁছে দেয়া। যাতে লাখো লাখো মানুষের কাছে আমরা এটি পৌঁছে দিতে পারি এবং এক লক্ষ ২৪ হাজার বা দুই লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসুল সবার জন্যে আমরা এ সৎকর্ম উৎসর্গ করতে পারি। তাদের জন্যে যখন উৎসর্গ করব তখন আমাদের সবকিছু আল্লাহই দেখবেন। আল্লাহর যারা প্রিয় বান্দা নবী-রসুল, তাদের জন্যে আমরা যখন উৎসর্গ করছি তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের যারা আত্মীয়স্বজন আছেন তারা এবং আমরাও স্রোতের মধ্যে চলে যাবো।

আসলে লাখ লাখ তো আমরা একটা সংখ্যা বোঝানোর জন্যে বললাম। প্রকৃতপক্ষে আমাদের চেষ্টা থাকবে যতজনের কাছে আমরা এই রহমতের বাণী পৌঁছাতে পারি। আমাদের এই ১৬ কোটি মানুষের দেশ, আমাদের মনছবি হবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পড়তে পারে এমন প্রতিটি মানুষের কাছে এটা পৌঁছে দেয়া। আর সবাই মিলে কাজ করলে সবার কাজের সম্মিলিত সওয়াব আমরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে পাবো। যেমন, সবাই মিলে যদি আমরা দুই লাখ বা পাঁচ লাখ পুস্তিকা বিতরণ করি, তাহলে আলাদা আলাদাভাবে আমরা প্রত্যেকেই এরকম দুই লাখ বা পাঁচ লাখ বিতরণের পুণ্যের অংশীদার হবো।

প্রসঙ্গ নাজাতের মাস - মৃতের নাজাত, জীবিতের নাজাত

এই মাস নাজাতের মাস, সেটা আপনারা অনেকভাবেই শুনেছেন। কিন্তু কিসের নাজাত, কীভাবে নাজাত? এই নাজাতটা দুই ধরনের। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তারা যদি কবরে বন্দী অবস্থায় থাকেন, নবীজী (স) বলছেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সারাবছরই কিছু কিছু লোককে কবরের কষ্ট থেকে মুক্ত করেন, নাজাত দেন। কিন্তু রমজান মাসে তার কয়েকগুণ লোককে কবরের কষ্ট থেকে মুক্ত করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! এখন এই মুক্ত কারা হবে খুব চিন্তার বিষয়।

পৃথিবীর বাস্তবতাকে কল্পনা করুন। পৃথিবীতেও আমরা দেখি, বিভিন্ন দিবসে সরকার সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদেরকে মুক্তি দেন। ঈদ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে এই মুক্তিদান হয়। এখন কাদেরকে এই মুক্তি দেয়া হয়? হঠাৎ করে একটা লটারি করে যার নাম উঠল তাদেরকে নাকি যাদের আপনজনরা বছরের পর বছর চেষ্টা করছে তাদের ছাড়িয়ে নেয়ার জন্যে, কর্তৃপক্ষকে হয়রান করে ফেলছে খোঁজ-খবর নিতে নিতে তাদের? নিঃসন্দেহে যারা ধন্না দিয়ে আছে তাদের। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঐ লোকগুলোরই কিন্তু তালিকা তৈরি করা হয়।

এমনকি সাজা হয় নি, কিন্তু খোঁজ খবর নেয়ার কেউ নেই বলে বিনা বিচারে বছরের পর বছর ধরে জেল খাটছে, এমন ঘটনাও কিন্তু অহরহই ঘটছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারেও সকাল-সন্ধ্যা দিবানিশি প্রতিনিয়ত যেসব জীবিত লোকেরা তাদের মৃত পরিচিতজনদের জন্যে চোখের পানি ফেলে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, প্রতিনিয়ত যার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় যা আল্লাহ দেখেন এই রমজান মাসে আসলে তালিকাটা তাদেরই তৈরি করা হয়।

কাজেই হঠাৎ শুনলে ‘ওহ, আপনার বাবা মারা গেছে’ চেহারা অন্ধকার হয়ে যায়। কী লাভ, সারাবছর তো মনে পড়ে না? মৃত্যুদিবস লিখে রাখেন। ঐদিন মনে পড়ে; লাভ নাই। এক হচ্ছে প্রতিনিয়ত আল্লাহপাকের কাছে চাইতে হবে। দ্বিতীয়ত এই মাসটা যেহেতু আল্লাহপাক বিশেষভাবে ঘোষণা করেছেন সেহেতু এই মাসে একটি প্রার্থনা যেন এমন না যায় যে আপনি আপনার মৃত ব্যক্তিদের জন্যে ক্ষমা চান নি। নাজাতের মাস মানে এই এবং নাজাত পেতে হলে আমাদের সবাইকে এরকম সক্রিয় হয়ে উঠতে হবে।

নাজাতের দ্বিতীয় দিক

নাজাতের দ্বিতীয় আরেকটি দিক হচ্ছে আমরা যারা জীবিত আছি আমরা কি আসলে মুক্ত? আমরাও যারা জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে অমানবিক কার্যক্রম করে ফেলেছি অর্থাৎ গুনাহর কাজ করেছি আপন লোকদেরকে শত্রু বানিয়ে ফেলেছি, নিজের সাথে নিজে জুলুম করেছি, অবধারিতভাবে তার কিছু কর্মফল আমরা ভোগ করছি। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা অশান্তিতে পড়েছি, আমার মেধা থেমে গেছে, ব্যর্থতা চতুর্দিক থেকে গ্রাস করেছে। এটি হচ্ছে আমাদের বন্দিত্ব যারা জীবিত আছি।

রমজান মাস শুধু মৃতদের জন্যে নাজাতের মাস নয়, আমরা যারা মনোদৈহিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি, আমাদেরও নাজাতের পথ হতে পারে যদি আমরা চাই। রমজান মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরাও আবার পরিপূর্ণরূপে মুক্তি লাভ করতে পারি। বেরিয়ে আসতে পারি আমাদের লালিত অভ্যাসচক্র থেকে।

দান

এ মাসে নবীজী খুব বেশি দান সদকা করতেন। কেন, এটাও আমরা বুঝতে পেরেছি যে অন্যসময় এক টাকা দান করলে এক টাকারই সওয়াব। এই মাসে দান করলে ৭০ গুণ। বরং যারা যাকাতদাতা হই নি, তারাও যদি সামান্য দান করি তা যাকাতের সমান সওয়াব হওয়ার কথা, যেহেতু একটি নফল ইবাদাত করলে ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব।

আমরা যারা মাটির ব্যাংকে দান করি আমরা কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি যে এটা কোয়ান্টামের কোনো নিজস্ব প্রোগ্রাম নয়। এই কর্মপন্থাটা হচ্ছে মহান স্রষ্টার এবং প্রণয়ন করেছেন আমাদের জন্যেই। আমরা বুঝি নাই; কোয়ান্টামে আসার কারণে গুরুজী আমাদের কাছে ভিন্ন এঙ্গেলে আমাদের কাছে সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আমি কোয়ান্টামকে দান করি না, আমি মাটির ব্যাংকে দান করি না, আমি আল্লাহর হুকুম পালন করি মাটির ব্যাংকে দানের মাধ্যমে। এই যে পরিচ্ছন্ন একটি দৃষ্টিভঙ্গি - এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমরা দান করার সাথে সাথে প্রথম পুরস্কার পাই আমাদের প্রশান্তি আসে; এরপর যা যা আসে সেটা ভিন্ন। রমজান মাসে যেহেতু প্রতিটি দান ৭০ গুণ, তাহলে ৩০ দিন যতবার যত বেশি দান করব সেই পরিমাণ সঞ্চয় আমার বাড়বে।

এই মহৎ কাজে আমরা ইতিমধ্যে অন্যদেরকেও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি অর্থাৎ মাটির ব্যাংক বিতরণ করছি। রমজান মাসের এই উপকারিতা তাদেরকেও বুঝাব যে এই মাসে দান করলে অনেক সওয়াব হয়; আপনার প্রাপ্তিটা অনেক বেড়ে যাবে। আর বোঝাতে গিয়ে আপনার প্রাপ্তিও অনেক বেড়ে যাবে।

যাকাত

ঠিক একইভাবে যাকাত কার্যক্রমে আমরা অংশগ্রহণ করব। প্রথমত আমরা খুব সিরিয়াসলি চিন্তা করব যে, আমি যাকাতদাতা হয়েছি কি না। ৩২ হাজার টাকার সম্পদ সব মিলিয়ে একবছর আমার জমা ছিল কি না। এটা একটা জিহাদের সওয়াব যখন আপনি যাকাতদাতা হওয়ার জন্যে সময় দিচ্ছেন, মেধা দিচ্ছেন। আল্লাহ আনন্দিত হবেন যে আমার এই বান্দা খুব চেষ্টা করছে দেখছে যে, সে যাকাতদাতা হয়েছে কি না। দেখা যাবে যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি যাকাতদাতা হয়ে গেছেন। আর আপনি যখন যাকাত দেয়া শুরু করবেন সেখানে রহমত আসবে, প্রবৃদ্ধি আসবে, প্রশান্তি আসবে।

এর পাশাপাশি যাকাত দিতে উদ্বুদ্ধ করা। রমজান মাসে যেহেতু আল্লাহ বেশি বোনাস, বেশি ওভারটাইম ঘোষণা করেছেন আমরা এইভাবে আমাদের কাজগুলো বাড়িয়ে নিতে পারি।

তারাবি

তারাবি সুন্নত। সুন্নত আমাদের দৃষ্টিতে একটু সাধারণ মানের ইবাদত। কিন্তু খেয়াল করার বিষয় হলো সুন্নত বললেও এর বিনিময় আল্লাহ ঘোষণা করেছেন রোজার সমান। নবীজী (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আত্মপর্যালোচনা এবং বিশ্বাসের সাথে রমজান মাসে দিনের বেলা রোজা পালন করবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’। ঠিক একইভাবে নবীজী (স) বলছেন ‘রমজান মাসে রাতের বেলা যে ব্যক্তি বিশ্বাস এবং আত্মপর্যালোচনার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগী করবে অর্থাৎ তারাবি পড়বে তারও অতীতের সমস্ত গুনাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাফ করে দেবেন।

নবীজী (স) আরো বলেন, "আল্লাহ রমজান মাসে দিনের বেলা রোজা রাখা ফরজ করেছেন আর আমি রাতের বেলা তোমাদের জন্যে তারাবি নামাজ সুন্নত করেছি।"

আর তারাবির নামাজ ৮ রাকাত না ২০ রাকাত – এ নিয়ে একটি মতান্তর আছে। একটি মসজিদের খতিব হিসেবে আমি একসময় আট রাকাত তারাবীর ফতোয়া দিতাম। সবাই তো খুব খুশি। কিন্তু এখন আমি বুঝতে পেরেছি এই আট রাকাত মানে ঐ রুকু সেজদার আট রাকাত না, আট রাকাত মানে এক রাকাতে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করতেন নবীজী। অর্থাৎ এই রাকাত গুণে সওয়াব লাভ করা যাবে না।

এই বিষয়টি আমরা একটু দৃষ্টিতে আনতে চাই। আমরা পরিকল্পিতভাবে যাতে ঠিকভাবে তারাবি আদায় করতে পারি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মহিলারাও চেষ্টা করবেন, মহিলাদের জন্যে যেসব মসজিদে জামাত হয় সেই সব মসজিদে গিয়ে তারাবি আদায় করতে। ঘরে বসে তাড়াহুড়া করে নয়।

আপনি মনোযোগ দেন ইবাদত-বন্দেগীর দিকে দুই রাকাত দুই রাকাত করে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা নামাজ আদায় করেন। আসলে এই দুই ঘণ্টা রুকু সিজদায় উঠা-বসার কারণে আমি ফিল করেছি, তারাবি পড়তে কষ্ট হয় কিন্তু তারাবি পড়ে বের হলে মনে হয় নতুন জীবন পেলাম। এই দীর্ঘ সময় রুকু সেজদা করতে করতে শরীরের ফিটনেসটা এমন পর্যায়ে চলে আসে চমৎকার একটা তৃপ্তি চলে আসে। ভয়ে ভীত হয়ে বসে বসে দুরাকাত বা চার রাকাত না পড়ে সবাই একটু চেষ্টা করবেন দাঁড়িয়ে বসে রুকু-সেজদা করে দুরাকাত দুরাকাত করে মাঝখানে একটু তাসবিহ-তাহলিল, তওবা-ইস্তেগফার করে, পানি পান করে, একটু বিশ্রাম নিয়ে কমপক্ষে দুই ঘণ্টায় নামাজটা আদায় করেন; আপনার সার্বিক ফিটনেস ইনশাল্লাহ চলে আসবে এবং নবীজীর (স) যে ঘোষণা সেই ঘোষণা অনুসারে ইনশাল্লাহ আমরা সওয়াব লাভ করতে পারব।

ইফতার, রোজার খাদ্যাভ্যাস এবং ফিজিক্যাল ফিটনেস

প্রচলিতভাবে আমরা ইফতারে ভাজাপোড়া খেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু এর কারণে রমজানে ইবাদত করার জন্যে যে দৈহিক ফিটনেস দরকার, সেটা আমাদের কমে যায়। তো শুরু থেকেই কোয়ান্টাম খেজুর পানি দিয়ে ইফতার করতে বলছে। আশ্চর্য ব্যাপার এর মধ্যে একটি সহীহ হাদীস পেয়ে গেলাম যেখানে নবীজী বলছেন, যখন ইফতার করার সময় হবে তখন ইফতার করবে একটি খেজুর দিয়ে কেননা এর ভিতরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বরকত রেখে দিয়েছেন।

আমার শরীর ঠিক থাকবে কি না আমি দুর্বল হয়ে যাবো এতসব প্রশ্ন এই এককথায় শেষ যে একটা খেজুর খেয়ে ইফতার করব; পেট ভরে খাব না কেন? এটার ভিতরে বরকত আছে! শুধুমাত্র পানি দিয়ে ইফতার করো। কারণ এটি হচ্ছে তোমার স্বাস্থ্যের জন্যে সবচেয়ে উপযোগী পানীয়, সুবহানাল্লাহ! খেজুরের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে শুকনা খেজুর, ভেজা খেজুর, পাকা খেজুর আধা-পাকা খেজুর। এটার ব্যাখ্যায় নবীজী অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু মূল কথা এটাই যে, ইফতারি হতে হবে খেজুর-পানি। খেজুর না থাকলে শুধু পানি।

আমরা এটাকে ফরজ করছি না গুরুজীও এটাকে ফরজ করে দেন নি। খেজুরের সাথে মুড়ি কলা ডিম এসবও থাকে। কিন্তু ভূরিভোজ থাকে না। মূল দৃষ্টিভঙ্গিটা হচ্ছে যে শরীরের বারোটা বাজানো যাবে না। কোনোভাবেই এটা স্বাস্থ্যসম্মত না, শরীয়তসম্মত না, ইবাদাত সম্মত না। আমি নিজে এত কষ্ট করে একটা কাজ করলাম নিজ হাতে এটার সওয়াবও নষ্ট করে দিলাম আর শরীরেরও বারোটা বাজালাম। কেন এই বোকামির কাজটা করব?

ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে যদি আমরা একটি মাস সাধনা করি তাহলে একমাসের সাধনার ফলে আমাদের শরীর এই প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এবং বাকী ১১ মাসও আমরা এই অনুসারে চলতে পারবো; এটাই হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা।

এমনকি চিকিৎসকরাও প্রশ্ন করতে পারবেন না যে, না, এইভাবে শরীর টেকে না। বরং আমাদের যে লালিত অভ্যাস এইখানে আমরা হেরে যাই। তো আমরা সারাজীবন কি শুধু হারতেই থাকব? আমরা হারতে চাই না, আমরা জিততে চাই। আল্লাহ যেহেতু এই শরীরটা বানিয়েছেন তিনি বুঝতে পেরেছেন যে ১১ মাস আমি এটার সর্বনাশ করেছি। তিনি এবার টেক কেয়ার করছেন, হস্তক্ষেপ করছেন যে, এই মাসটা এই রকম চলো, তাহলেই তুমি সুস্থ থাকবে। আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে মেডিকেল সায়েন্সের তথ্যের ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ দিতে পারি যে, এইভাবে যদি আমরা রোজা রাখতে পারি তাহলে আমাদের ফিটনেস ফিরে আসবে।

দেহের শুদ্ধতা, আত্মার শুদ্ধতা

রোজা শুধু পানাহার বর্জন করার নাম নয়। স্বয়ং আল্লাহ- আল্লাহর রাসুল বলছেন এ কথা। বরং এটা রোজার একটা অংশ। প্রকৃত রোজা তাহলে কী? নবীজী (স) বলছেন, প্রকৃত রোজা হচ্ছে বেহুদা কথা, ঝগড়া ফাসাদ, তর্ক-বিতর্ক অশ্লীল খারাপ আলোচনা ইত্যাদি যাবতীয় গুনাহর কাজ থেকে ফিরে থাকার নাম।

তাহলে আপনি একবার মিলিয়ে নেন নবীজীর ঐ পদ্ধতিমতো শুধুমাত্র একটি খেজুর পানি দিয়ে ইফতার করে সাধারণ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে যে শারীরিক প্রশিক্ষণ চলছে একমাস; শারীরিক ফিটনেস চলে আসবে। ঠিক একই সাথে আমি যদি বেহুদা কথা থেকে মুক্ত থাকি, তর্ক-বিতর্ক বন্ধ করি, গালিগালাজ না করি, গীবত না করি, রিএকটিভ না হই, তাহলে আরেক দিক থেকে আমার আত্মিক শক্তি জাগ্রত হবে। জৈবিক শক্তির শৃঙ্খলে যে আত্মিক শক্তি বন্দী হয়ে আছে অতিরিক্ত লোভলালসা, রাগ ক্ষোভ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষের মাধ্যমে সেই শৃঙ্খলগুলো আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমার আত্মা মুক্ত হচ্ছে, মুক্তি পাচ্ছে।

তাহলে রোজার এই দুটো দিক আমাদেরকে অন্তত লালন করতে হবে। কারণ প্রচলিত অর্থে দেখাদেখি রোজা তো আমরা রাখতে চাই না। কষ্ট তো সমানই হচ্ছে। বরং তাদের কষ্ট আরো বেশি হচ্ছে। আর আমরা যখন বুঝব তখন এর ভিতরে থাকবে আনন্দ। কারণ আমি আমার শরীরের ফিটনেস ফিরিয়ে আনার জন্যে পানাহার বর্জন করছি মালিকের ইচ্ছায়। আমি রাগ ক্ষোভ ঘৃণা হিংসা ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ রাখছি, ঝগড়া ফাসাদ থেকে মুক্ত থাকছি কি জন্যে? মালিক বলছেন এটা করলে আমার আত্মিক শক্তি জাগ্রত হবে। আর আমার যদি আত্মিক শক্তি জাগ্রত হয়, শারীরিক ফিটনেস ফিরে আসে, তাহলে আমার ব্যর্থতা কোথায়! চূড়ান্ত সাফল্য প্রদানের জন্যেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সামনে এই রোজাকে উপস্থাপন করেছেন।

এতেকাফ

এতেকাফ প্রত্যেক বিশ্বাসী নরনারীর জন্যে জরুরী। এটা হচ্ছে শেষ দশকে যেহেতু লাইলাতুল কদর আছে এই লাইলাতুল কদর ধরার জন্যে নবীজী শেষ দশকে এতেকাফ করেছেন এবং এতেকাফ করতে বলেছেন। কদর খোঁজার জন্যে যে ইবাদত সেটাকে আল্লাহ এত পছন্দ করেন যে স্বয়ং নবীজীর কাছেও তিনি এটা প্রকাশ করেন নি। তিনি রমজানের প্রথম ১০ দিন এতেকাফ করেছেন। লাইলাতুল কদর পান নি। এর পরের বছর দ্বিতীয় দশক এতেকাফ করেছেন, দ্বিতীয় দশকেও তিনি পান নি।

নবীজী বলছেন ২০ রমজান হয়ে গেছে সবাই চলে যান। কিন্তু আমি আজকের রাতটা থেকে যাব। যেহেতু নবীজী (স) থাকছেন, আর কেউই যায় নি। ঐদিন হালকা বৃষ্টি হয়েছে এবং নবীজী ফজরের পরে সাহাবায়ে কেরামদের দিকে ফিরে বসলেন। সাধারণত এ সময়টা উনি বসতেন দোয়া করার জন্যে, কথা বলার জন্যে, তাদের কথা শুনার জন্যে।

যে সাহাবী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন তিনি বলছেন যে, “নবীজী (স) ফিরেই একটা চমৎকার হাসি দিলেন এবং বললেন আজকে আমরা লাইলাতুল কদর পেয়েছি।” সেই রাতটি ছিল ২০শে রমজান দিবাগত রাত অর্থাৎ ২১ শে রমজানের রাত। এবং ঐ সাহাবী বলছেন যে, নবীজীর (স) কপালে এক পশলা বৃষ্টিমাখা ধুলো লেগেছিল। কারণ মসজিদে নববীর ছাউনি ছিলো খেজুর পাতার। আর মেঝে ছিলো বালুর। তো বালুতে হালকা বৃষ্টি পড়লে যেরকম একটু দলা পাকিয়ে থাকে সেরকম ধুলো ছিল তার কপালে।

নবীজী এরপর থেকে আরো লাইলাতুল কদর পেয়েছেন কিন্তু পেয়েছেন যতগুলো সব বেজোড় রাতে। এজন্যেই বলেছেন শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা লাইলাতুল কদর খুঁজবে। আর লাইলাতুল কদর কেন খুঁজবে? আমরা আসলে যারা ঐ শবে বরাত উদযাপন করি ভাগ্যরজনী মনে করে এটা ভুল। ভাগ্যরজনী আসলে লাইলাতুল কদর। আর কদরের রাতের ইবাদত-বন্দেগী আসলে হাজার মাসের দিবারাত্রির সমান একটি রাত। সেই রাতটি যেহেতু এই দশকে লুকায়িত আছে সেহেতু আমরা মহিলারা মা-বোনেরা আপনারা হিসেব করে বেজোড় রাত্রগুলো যার যার বাসায় আপনি সারা রাত জেগে থাকতে পারেন। আমরা যেরকম নৈশায়ন করেছি, সেইভাবে আপনি এই রাতগুলো নৈশায়নের জন্যে বাছাই করে নিতে পারেন। পুরষ ভাইয়েরা যারা আছেন তারা এখানে না আসতে পারলে কাছাকাছি মসজিদে চলে যান। যদি ব্যস্ততা থাকে তাহলে অন্তত শেষ তিনদিন ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে সন্ধ্যায় আপনি চলে যান মসজিদে এতেকাফ করেন। এতেকাফ করলে পরে আপনার লাইফস্টাইল চেঞ্জ হয়ে যাবে আল্লাহর রহমত বরকতে পূর্ণ হয়ে যাবে।

 

 

doa

ইফতার এর আগের মুহূর্ত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ৩০টি রোজার জন্য আলাদা আলাদা ৩০টি চাওয়া ঠিক করুন। ইফতার এর অন্তত ১৫ আগে স্থির হয়ে বসুন। চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে আপনার সে দিনের নির্ধারিত প্রার্থনায় নিমগ্ন হোন। আপনার সমস্ত আর্জি পেশ করুন পরম প্রভুর কাছে।

প্রার্থনা সকল ইবাদতের নির্যাস। প্রার্থনা হচ্ছে একাগ্রচিত্তে চাওয়া এবং পাওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে বিলীন করে দেয়া। স্রষ্টা প্রার্থনা পছন্দ করেন এবং তা কবুল করেন। তিনি আপনার প্রার্থনার ফল সাথে সাথে বা যথোপযুক্ত সময়ে বা পরকালে দিতে পারেন। প্রার্থনায় অবিচল বিশ্বাস ও সেইসাথে নিরলস পরিশ্রম করলেই বুঝতে হবে প্রার্থনার সাথে প্রার্থনাকারী একাকার হয়ে গেছেন। প্রার্থনার সময় মনে করুন, অনুভব করুন, সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে আপনি সেজদায় পড়ে আছেন। তিনি আপনাকে দেখছেন, আপনার সব কথা শুনছেন। শাশ্বত ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে মাতৃভাষায় গ্রন্থিত অডিও এ প্রার্থনায় আসুন সবাই নিমগ্ন হই অনন্ত কল্যাণের প্রত্যাশায়।

কোরআনের দোয়া:  ডাউনলোড

 

 

 

zakat

হযরত উসমান (রা) এর খেলাফতকালে আরবে যাকাত গ্রহণ করার কোনো মানুষ ছিল না। কারণ সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচ্ছল করে তোলাটাই যাকাতের মূল লক্ষ্য - ইসলামের এ বিধান বাস্তবায়নে তারা সচেতন ছিলেন। আর এটা সম্ভব তখনই যখন ব্যক্তিগত যাকাতের অর্থ একসঙ্গে জমা করে পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা হবে।

যাকাত কী ও কেন?

যাকাত ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম। কোনো ব্যক্তি যখন কালেমা পড়ে ইসলামের সীমার মধ্যে দাখিল হয়, তখন থেকেই ইসলামের যাবতীয় বিধি-নির্দেশ মেনে চলা তার জন্যে অপরিহার্য। যাকাত আদায় করা সচ্ছল মুসলমানের প্রতি সৃষ্টিকর্তার অলঙ্ঘনীয় নির্দেশ। কোনো মুসলমানের স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এ নির্দেশ অমান্য করার অর্থই হলো আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে মুনাফেকি করা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই যারা সত্যে বিশ্বাস করে, সৎকর্ম করে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তাদের প্রতিফল তাদের প্রতিপালকের কাছে সংরক্ষিত। তাদের কোনো ভয় বা পেরেশানি থাকবে না। বাকারা : ২৭৭

সূরা তওবার ৭১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন, "আর বিশ্বাসী নর হোক বা নারী, তারা একে অপরের সাথি। এরা পরস্পরকে সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ করে আর পাপ-অন্যায় থেকে বিরত রাখে। তারা নামাজ কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করে। এরাই আল্লাহর রহমতের ছায়ায় থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

বিদায় হজের ভাষণে রসুলুল্লাহ (স) বলেন, হে মানুষ ! তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে। নামাজ কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রোজা রাখবে, হজ করবে আর সঙ্ঘবদ্ধভাবে নেতাকে অনুসরণ করবে, তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।

যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্র করা, পরিশুদ্ধ করা বা প্রবৃদ্ধি দান করা। শরিয়তের ভাষায়, সুনির্ধারিত সম্পদ সুনির্ধারিত শর্তে তার হকদারকে অর্পণ করা। এক কথায় কোনো মুসলমান আল্লাহ নির্ধারিত (নিসাব) পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এবং তা এক বছর পর্যন্ত তার কাছে থাকলে তার নির্ধারিত পরিমাণ অংশ হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়াকে যাকাত বলা হয়। সুনির্ধারিত অংশটি শরিয়তসম্মতভাবে আদায় না করলে গোটা সম্পদই মুমিনের জন্যে হারাম হয়ে যায়।

যাকাত একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থা

২য় হিজরিতে যাকাত ফরজ হওয়ার পর রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মহানবী (স) যাকাত ব্যবস্থা চালু করেন। যাকাত আদায়ে যাকাতের নিসাব এবং খরচের খাত নির্ধারণ করে একে একটি সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলেন। হযরত মা'আজ ইবনে জাবাল (রা)-কে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দান করে রসূল (স) ঘোষণা দেন- তাদের জানিয়ে দাও যে, তাদের ধন-মালে আল্লাহ তায়ালা সদকা-যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন, যা তাদের ধনী লোকদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে ও গরীব বা ফকিরদের মাঝে বণ্টন করা হবে। (বোখারী, মুসলিম)

এসব সুস্পষ্ট নির্দেশের আলোকেই ইসলামের প্রখ্যাত ভাষ্যকারগণ বলেছেন, যে লোক কোরআন ও সুন্নাহর সরাসরি নির্দেশ অস্বীকার করবে, তার ফরজ হওয়াকে অমান্য করবে, সে নির্ঘাত কাফির বলে গণ্য হবে। (আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভীকৃত ইসলামের যাকাত বিধান, ১ম খণ্ড, পৃ- ১০১)

যাকাতের অর্থব্যয়ের শরীয়ত নির্ধারিত ৮টি খাত

"যাকাত তো শুধু (এক) দরিদ্র, (দুই) অক্ষম, (তিন) যাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মচারী, (চার) যাদের মন জয় করা প্রয়োজন, (পাঁচ) মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে, (ছয়) ঋণজর্জরিত অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে, (সাত) আল্লাহর পথে (জনকল্যাণমূলক কাজ, ধর্মপ্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে) এবং (আট) মুসাফিরদের জন্যে ব্যয় করা যাবে। (যাকাতের অর্থ ব্যয়ে) এটাই আল্লাহর বিধান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।" [সূরা তওবা : ৬০]

আপনার যাকাত হিসাবের সুবিদার্থে জন্য যাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারেন। যাকাত ক্যালকুলেটর

 

blood

রমজানে রক্তদান কার্যক্রমে অংশ নিন। এগিয়ে আসুন মানুষের জীবন বাঁচাতে। কোয়ান্টাম ল্যাবে এক ব্যাগ রক্তকে ৪টি ভিন্ন রক্ত উপাদানে আলাদা করা হয়। আর রমজান মাসে যেকোনো পুণ্যের সওয়াব ৭০ গুন বেশি হয়। তাই ১ ব্যাগ রক্তে ১*৪*৭০=২৮০ টি প্রাণ বাঁচানোর সওয়াব পেতে পারেন।

 

উপসংহার

আমরা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি হিসেবে রমজান মাসকে স্বাগত জানাব। দ্বিতীয়ত যে কাজ আমাদের আছে সেই কাজগুলো তো ১০০ ভাগ করবোই, কোরআন চর্চা থেকে শুরু করে দান, যাকাত এবং লোকদেরকে এই সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে যা যা করা দরকার সেই কাজগুলো আমরা বাড়িয়ে দেব। সেই কাজগুলো যদি আমরা বাড়িয়ে দেই তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ঘোষিত যে অতিরিক্ত বোনাস সেই জিনিসগুলো আমরা লাভ করতে পারব।

আসলে আমরা জীবনকে সুন্দর করতে চাই। আল্লাহও তাই চান। মাঝখানে লালিত অভ্যাস এবং শয়তানি চক্র নেতিবাচকতার কারণে আমরা পেরে উঠতে পারি না। সঙ্ঘের সাথে যদি আমরা একাত্ম থাকি তো ইনশাল্লাহ এই কাজ করতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।

Level 0

আমি মেহেদী হাসান শাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস