মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক হিসাব বিজ্ঞানঃ পর্ব(১) - হিসাব সম্পর্কিত ধারনা ও ডেবিট ক্রেডিট নির্নয়
আসসালামুআলাইকুম শুরু করছি ৯ম -১০ম এবং উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর জন্য হিসাব বিজ্ঞান। আমি শুধু এখানে হিসাব বিজ্ঞানের কিছু
কৌশল এবং টিপস নিয়ে আলোচনা করব । কেউ যদি আমার সাথেই সব গুলো পর্ব শেষ করতে পারেন আমি আশা করব আপনি
হিসাব বিজ্ঞানে যত কাঁচাই থাকুন ইনশাল্লাহ আর সমস্যা থাকবেনা।
আজ যেহেতু আমাদের ১ম পর্ব তাই আজ আমরা হিসাবের মৌলিক বিষয় গুলো আলোচনা করব এবং ডেবিট -ক্রেডিট নির্নয় করা
শিখব।
হিসাব কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়- ১) আধুনিক পদ্ধতি ২) সনাতন পদ্ধতি
আজ আমি শুধু আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাবের আলোচনা করব। আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব ৬ প্রকার
যথা - ১- সম্পত্তি হিসাব(Asset)=A
২- দায় হিসাব(Liabilities)= L
৩-মূলধন হিসাব(Capital) =C
৪-আয় হিসাব(Revenue)=R
৫-ব্যয়/খরচ হিসাব( Expense)=E
৬- উত্তোলন হিসাব (Drawings)= D
আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাবের মূল সূত্র হল- A=L+OE
এখানে OE (Owner's Equity)= মালিকানা স্বত্ব । মালিকান স্বত্ব হচ্ছে মালিকের অধিকার বা স্বত্ব। এই মালিকানা স্বত্বের উপাদান
৪টি যথা- মূলধন, আয়, ব্যয় উত্তোলন অর্থাৎ C, R, E , D
এখানে C এবং R মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি করে। E এবং D মালিকানা স্বত্ব হ্রাস করে সুতরাং OE= C+R-E-D। তাহলে আমাদের মূল
সূত্রটি ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায় A=L+C+R-E-D বা, A+E+D=L+C+R
লক্ষ করলে দেখা যাবে সম্পদ(A), ব্যয়(E) উত্তোলন(D) এক পাশে আর দায়(L), মূলধন(C) এবং আয় (R) অন্য পাশে। এই টুকু
ভালো ভাবে খেয়াল করতে হবে । ডেবিট যেহেতু বাম পাশের হিসাব তাই বাম পাশের গুলো অর্থাৎ সম্পদ(A), ব্যয়(E), উত্তোলন(D)
বৃদ্ধি পেলে ডেবিট হ্রাস পেলে ক্রেডিট । ক্রেডিট যেহেতু ডান পাশের হিসাব তাই ডান পাশের গুলো অর্থাৎ দায়(L), মূলধন(C) এবং
আয় (R) বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট হ্রাস পেলে ডেবিট।
এখন আমরা জানব কোনটা কোন হিসাব।
১- সম্পত্তি হিসাব(Asset)=A=নগদ, নগদ তহবিল/ নগদ উদ্ধৃত্ত, ব্যাংক জমা, প্রাপ্য বিল, বিবিধ দেনাদার , মজুদপন্য/সমাপনী মজুদ
পন্য, বিনিয়োগ, প্যাটেন্ট, খুচরা যন্ত্রাংশ, মোটর গাড়ী, আসবাবপত্র, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি, ইজারা সম্পত্তি, নিস্কর সম্পত্তি, ভুমি ও দালান
কোঠা, জমি বা ভুমি, সুনাম, ইমারত, প্লট, ভুমি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, অফিসসরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, সঞ্চয় পত্র, অব্যাবহৃ মনিহারি,
হাতে নগদ, প্রাথমিক খরচাবলী, বিলম্বিত বিজ্ঞাপন, শেয়ার অবলেখকের ব্যয়/ শেয়ার দালালি খরচ, ডিবেঞ্চার অবলেখন ব্যয়, ঋনপত্র
অবহার/ বাট্রা,পাওনাদার বাট্রা সঞ্চিতি, প্রদেয়বিল বাট্রা সঞ্চিতি, যাবতীয় অগ্রিম ব্যয় যেমন- অগ্রিম বাড়ি ভাড়া, অগ্রিম বিমা সেলামী,
অগ্রিম কর ইত্যাদি যাবতীয় বকেয়া ব্যয় যেমন- বকেয়া/অনাদায়ী বিনিয়োগের সুদ, বকেয়া প্রাপ্ত ভাড়া, বকেয়া সঞ্চয় পত্রের সুদ,
এছাড়া কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রাপ্য/পাওনা বোঝালে সেটা সম্পত্তি হবে।
২- দায় হিসাব(Liabilities)= L= ব্যাংক জমাতিরিক্ত, বিবিধ পাওনাদার, প্রদেয় বিল, বন্ধকী ঋন/ ঋন/ ব্যাংক ঋন/ %ঋন/
%ব্যাংক ঋন, সঞ্চিতি তহবিল, ব্যাংক ওডি( ওভার ড্রাফ্ট) , সাধারন সঞ্চিতি, শেয়ার অধিহার, শেয়ার প্রিমিয়াম, প্রতিপুরক তহবিল,
সিংকিং ফ্রান্ড, লভ্যাংশ সমতা করন তহবিল, ডিবেঞ্চার, অগ্রিম তলব, দাবিহীন লভ্যাংশ, আয়কর সঞ্চিতি, পেনশন তহবিল, ভবিষ্যৎ
তহবিল, কর্মচারী কল্যান তহবিল, বিমা তহবিল, শিক্ষা তহবিল, ত্রান ও দুর্যোগ তহবিল, বিনিয়োগ হ্রাস বৃদ্ধি জনিত তহবিল, অবচয়
সঞ্ছিতি তহবিল, যাবতীয় বকেয়া খরচ/ ব্যয় সমূহ যেমন- বকেয়া বেতন, বকেয়া মজুরি, বকেয়া ভাড়া, বকেয়া ঋনের সুদ, বকেয়া ব্যাংক
জমাতিরিক্তের সুদ, যাবতীয় ইত্যাদি, অগ্রিম আয় সমূহ যেমন- অগ্রিম শিক্ষানবিশ সেলামী, অগ্রিম বাড়ি ভাড়া প্রাপ্ত ইত্যাদি, এছাড়া
কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রদেয়/ দেনা বোঝালে সেটা দায় হবে।
৩-মূলধন হিসাব(Capital) =C= প্রারম্ভিক মূলধন, অতিরিক্ত মূলধন, মালিক কর্তৃক কোন অর্থ বা সম্পত্তি ব্যাবসায়ে আনয়ন( নিজ
তহবিল হতে), মূলধনের সুদ সহ মূলধন।
৪-আয় হিসাব(Revenue)=R= বিক্রয়, ক্রয়ের উপর বাট্রা, ভাড়া প্রাপ্তি, বিনিয়োগের সুদ, সঞ্চয়পত্রের সুদ, উত্তোলনের সুদ, প্রদত্ত
ঋনের সুদ, কমিশন প্রাপ্তি, শিক্ষানবিশ সেলামী, অনাদায়ী পাওনা আদায়, আমানতের সুদ, প্রাপ্ত বাট্রা(নগদ), ভাড়া আদায়, সম্পত্তি
বিক্রয়ে মুনাফা, চালানী কারবারের লাভ, ব্যাংক জমার সুদ, বিবিধ প্রাপ্তি, কুঋন আদায়, পুরাতন কুঋন/অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি, শেয়ার
হস্তান্তর ফি।
৫-ব্যয়/খরচ হিসাব( Expense)=E= ক্রয়, বিক্রয়ের উপর বাট্রা, ক্রয় পরিবহন/আন্তঃপরিবহন, অন্তর্মুখী পরিবহন, পরিবহন, বিক্রয়
পরিবহন/ বহিঃপরিবহন, শুল্ক, আমদানি শুল্ক, জাহাজ ভাড়া, মাল খালাসের খরচ, ডকচার্জ, মজুরি, গ্যাস, জ্বালানি, ও
বিদ্যুৎ , আলো ও উত্তাপ, কয়লা ও কোক, পানি ও বিদ্যুৎ ,বিশেষ প্যাকিং খরচ, কারখানা খরচ, কুলি খরচ, নগর শুল্ক , জলযান ভাড়া,
মজুরি ও বেতন, বেতন ও মজুরি, বেতন, ভাড়া, খাজনা ও কর, বিমা, বিমা সেলামী, ছাপা ও মনিহারি, ডাক ও তার, বৈদ্যুতিক খরচ,
টেলিফোন খরচ, পরিচালকের ফি, অফিস ব্যবস্থাপকের ফি, মেরামত ও নবায়ন, আইন খরচ, নিরিক্ষা ফি , যাতায়াত খরচ, সাধারন
খরচ, অফিস খরচ, বিবিধ খরচ, কারবার খরচ, শিক্ষানবিশ খরচ, রপ্তানি শুল্ক, বিজ্ঞাপন, ভ্রমন কারীর বেতন ও কমিশন, বিক্রয়
ব্যবস্থাপকের বেতন, কুঋন/ অনাদায়ী দেনা/ অনাদায়ী পাওনা, বাট্রা /প্রদত্ত বাট্রা, মঞ্জুরি কৃত বাট্রা(নগদ), কমিশন/প্রদত্ত কমিশন/
মঞ্জুরিকৃত কমিশন, নমুনা পন্য বিতরন, ব্যাংক জমাতিরিক্তের সুদ, সম্পত্তির অবলোপন, সম্পত্তির অবচয়, ছিনতাই জনিত ক্ষতি, দুর্ঘটনা
জনিত ক্ষতি , সম্পত্তি বিক্রয় জনিত ক্ষতি, বিবিধ ক্ষতি ইত্যাদি সহ যাবতীয় ক্ষতি।
৬- উত্তোলন হিসাব (Drawings)= D= উত্তোলন, নগদ উত্তোলন, পন্য উত্তোলন, নিজ প্রয়োজনে পন্য উত্তোলন, আয়কর, জীবন
বিমার প্রিমিয়াম/ সেলামী প্রদান,মালিকের ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবসায় হতে কোন কিছু উত্তোলন ।
উপরোক্ত বিষয় গুলো যদি ভালো ভাবে আয়ত্ব করা যায় তাহলে ডেবিট ক্রেডিট নির্নয় করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নিচে আমরা
একটু অনুশীলন করি-
যেমন, নগদে পন্য ক্রয় এখানে ক্রয় হিসাব ডেবিট আর নগদান হিসাব ক্রেডিট। কারন- ক্রয় এক ধরনের ব্যয়, এখানে ক্রয় বৃদ্ধি
পেয়েছে। আমরা জানি ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট, তাই ক্রয় হিসাব ডেবিট,। অপর দিকে নগদ একটি সম্পদ , এখানে নগদ হ্রাস পেয়েছে
আমরা জানি সম্পদ হ্রাস পেলে ক্রেডিট তাই নগদান হিসাব ক্রেডিট। আশা করা যায় এভাবে আরও আয়ত্ব করলে আর সমস্যা হওয়ার
কথা নয়। দেখা হবে আগামী পর্বে অন্য কোন বিষয় নিয়ে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন। আমার এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় এখানে
লেখাটি বোঝতে সমস্যা হলে আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন ফেইসবুকে
ধন্যবাদ।
আমি মোঃরকিবুল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 21 টি টিউন ও 80 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ ভাই। চালিয়ে যান। আপনার সাথে আছি।