তথ্যপ্রযুক্তির এই ভিরে আজ আপনাদের নিয়ে যাব অন্য এক প্রযুক্তি ভুবনে। যেখানে এই প্রযুক্তিবিদরা দিয়ে যাচ্ছে নিরলস মানব সেবা , যাদের প্রয়োজন একটি মানব সন্তান জন্মের পূর্ব থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত । তারা হচ্ছে স্বাস্থ্য প্রযুক্তিবিদ (Medical Technologist) আজ তাদের নিয়েই আমার এই ছুট্ট প্রয়াস ।
বর্তমান সয়মটা এখন এতই চ্যালেঞ্জিং যে , সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে তার প্রভাব বইতে হবে সারা জীবন। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন দেশে এমন অনেক পড়াশোনা আছে , যা সম্পন্ন করতে পারলে শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই জবের প্রস্তাব আসে । তেমনই একটি সম্ভাবনাময়ী ক্ষেত্র মেডিকেল টেকনোলজি ।
এস,এস,সির পাসের পরেই মেডিক্যাল টেকনোলজিতে নিজের সঠিক ক্যারিয়ার গড়ুন । এস,এস,সি পাশের পর বিষয় বা পেশা নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময়ে বেছে নিতে হবে এমন একটি বিষয়, যেখানে শিক্ষাব্যয় কম এবং পড়ালেখা শেষে বেকার বসে থাকতে হবে না। তেমনি একটি পেশা মেডিকেল টেকনোলজি। চিকিৎসা সেবায় ডাক্তারকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিক শুধু ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না। প্রত্যেকটি বিভাগে ডাক্তারদের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন হয়।
মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট স্বাস্থ্য খাতের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জনবল। যারা মানুষের রোগ নির্ণয় ও সরাসরি চিকিৎসা সেবা দান কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। এ লক্ষ্যেই ১৯৬৩ সাল থেকে সরকারী পর্যায়ে (I.H.T -Institute of Health Technology) এবং পরবর্তীতে বেসরকারী পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ এর মাধ্যমে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি (ল্যাবরেটরি, ডেন্টাল, ফিজিওথেরাপী,রেডিওলোজী, রেডিওথেরাপী) এবং "বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল" এর মাধ্যমে ফার্মেসী কোর্স পরিচালনা করে আসছে। উক্ত কোর্স গুলোতে ভর্তির যোগ্যতা স্বরূপ একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ (জীব বিজ্ঞান সহ) থেকে এবং সাম্প্রতিক সময়ে এসএসসি পাশ হতে হবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেক্টরের সকল কোর্স সমূহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ক্রমে পরিচালিত হয়ে থাকে।
চাহিদা ও কাজের ক্ষেত্র :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা'র পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একজন গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকের বিপরীতে ৫-৬ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। সে হিসেবে বাংলাদেশে ২ লাখেরও বেশি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এখনই দরকার। এর চাহিদাও বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ইউনিয়ন, উপজেলা থেকে শুরু করে বর্তমান দেশের সরকারি – বেসরকারি আধুনিক হসপিটাল , ক্লিনিক ও এনজিওতে এ জাতীয় প্রফেশনালদের চাহিদা ব্যাপক। অ্যাপোলো , স্কয়ার , ল্যাব এইড , ইউনাইটেড,মডার্ন পপুলার , ইবনে সিনা হসপিটাল ও ক্লিনিকগুলোতে এ পেশা ক্যারিয়ার গড়তে পারা সৌভাগ্য বৈকি ! শুধু তাই নয় , মধ্য প্রাচ্যে রয়েছে এ পেশাদারদের প্রচুর চাহিদা । তাছাড়া এসব পেশার ভিসাও তুলনামূলক সহজলভ্য ।
আয় কেমন :
মেডিকেল টেকনোলজির যেকোনো বিষয়ে চার বছরের ডিপ্লোমা শেষ করে কাজে যোগ দিলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন সহজেই পাওয়া যায়। অভিজ্ঞতা বাড়লে বাড়ে বেতনও।
পড়ালেখা :
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এসএসসি পাশের পর পছন্দের যেকোনো বিষয়ে ভর্তি হতে পারেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ও বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল অনুমোদিত বিষয়গুলো হলো ল্যাবরেটরি মেডিসিন (প্যাথলজি), ডেন্টাল, ফার্মেসি, ফিজিওথেরাপি, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং,ও রেডিওথেরাপী । চার বছরের (১ বৎসর ইন্টার্নশিপ সহ ) কোর্স শেষে ১৮-২০ বছর বয়সেই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া যায়। মেডিকেল টেকনোলজি কিংবা ফার্মাসিস্টদের উচ্চশিক্ষারও সুযোগ রয়েছে ।
জেনেনিন তাদের অবদান সম্পর্কে
ল্যাবরেটরি মেডিসিন (প্যাথলজি)-Laboratory
রোগীদের রক্ত, প্রন্রাব , মল ও অনন্যা পরীক্ষা নিরীক্ষার মূল দায়িত্ব ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টদের উপর নির্ভরশীল। আপনি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাইবেটিস ও অনন্যা সমস্যায় রক্ত, প্রস্রাবের যে পরীক্ষা দেয়, ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টদের সেই পরীক্ষা নিরীক্ষা গুলো করে থাকে । তাদের দেয়া এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ডাক্তারা চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন । যক্ষ্মা ও ক্যান্সারের মত জটিল রোগ নির্ণয়ও ল্যাবরেটরি টেকনোলজিস্টদের অবদান । তাদের কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বলে দিতে পারে আপনি সন্তান ধারণ করেছেন কিনা বা করতে পারবেন কিনা ?
রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং – Radiology & Imaging
বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে X-Ray, Mammography, OPG, CT Scan, PET CT Scan, MRI, HSG , RGU & MCU ইত্যাদি রেডিওলজিকেল পরীক্ষা নিরীক্ষা রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং টেকনোলজিস্টরা করে থাকে। এছাড়া CT Angiogram, Veinogram, Cardiac Cathlab , CT Guided FNAC , Mylogram ইত্যাদি পরীক্ষা নিরীক্ষায় রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং টেকনোলজিস্টরা সহয়তা করে থাকে। আর ডাক্তাররা উপরুক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার ফিল্ম ও রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা প্রদান করে থাকে ।
ফিজিওথেরাপি - Physiotherapy
প্রধানত ফিজিওথেরাপি টেকনোলজিস্টদের কাজ হচ্ছে বাত, ব্যাথা , প্যারালাইসিস রোগীদের শারীরিক ব্যয়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা । অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি (SWD, MWD, IRR, UST, LASER, TENS, EST, Cervical & Lumber Traction) ব্যবহার করে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন। সকল খেলোয়াড়দের ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে স্পোর্টস ফিজিওথেরাপি টেকনোলজিস্টরা সহায়তা করে থাকেন । শারীরিক প্রতিবন্ধী ( CP, Autistic ) বাচ্চাদের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপিষ্টরা বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকেন ।
ফার্মেসি -Pharmacy
প্রাথমিক চিকিত্সা সেবার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে । জেলা, উপজেলা ,ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে রুগীদের First Aid ও ঔষধ প্রদান করে থাকে ।
ডেণ্টাল টেকনোলজিস্ট –Dental
আমাদের সকলেরই জীবনের কোন না কোন এক সময় দাঁতের ব্যাথায় Dentist এর কাছে যাওয়া লাগছে । আর এই দাতের চিকিত্সায় Dentist এর পাশাপাশি ডেণ্টাল টেকনোলজিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। এরা দাতের চিকিত্সায় রুগীদের First Aid প্রদান করে থাকে । জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল ও ব্যাক্তি মালিকানাদিন অনেক বেসরকারী ডেণ্টাল ক্লিনিক গুলোতে ডেণ্টাল টেকনোলজিস্টরা কাজ করে থাকেন ।
রেডিওথেরাপী -Radiotherapy
রেডিওথেরাপী টেকনোলজিস্টদের কাজ হচ্ছে ক্যান্সার রুগীদের রেডিওথেরাপী প্রদান করা । জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী হাসপাতালে রেডিওথেরাপী টেকনোলজিস্টরা কাজ করে থাকেন ।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে নিচের Blog এ ঘুরে আসতে পারেন
http://www.nucleusboyz.blogspot.com
তাই বেশী না ভেবে আপনি এই পেশা বেছে নিতে পারেন আপনার নিশ্চিত,স্বাচ্ছন্দ্য ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।
টেকটিউনস এর নিয়মিত পাঠক হওয়ার সুবাদে টেকটিউনস এ নিজেকে একজন টিউনার হিসাবে দেখার সখ কার না জাগবে , এই সখ কে কেন্দ্র করে এই সামান্য লেখা । আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের ভাল লাগবে এবং ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । সামনে আরও ভাল পোস্ট দেওয়ার
আমি ফয়সাল আহমেদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 7 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Thanx to u.iam a m.technologist(lab.)