আপনার কি...মনে আছে সেই দিনগুলোর কথা যখন আপনার বাবার হাতের একটি আঙ্গুল পরম নিশ্চয়তার সাথে ধরে বাজারে যেতেন ? আপনার কি মনে হত না...কেউ আর আমার কিছু করতে পারবে না, ঐ দুষ্ট সবুজ ও না,কারণ বাবা আমার সাথে আছে?? আমার জীবনের কিছু কথা বলি...
আমার বাবা আমারে নিয়া যে কি শুরু করসে 🙁 !! ঘটনাগুলা পড়েন, বুঝতে পারবেন , __
ক্লাস 3 তে যখন উঠলাম তখন বলল,বাবা, ৪র্থ শ্রেণীতে তো বৃত্তি আছে, তুমি যদি বৃত্তি পাও তাহলে আমি খুব খুশি হব 🙂 ... যাক,অনেক কষ্টে Class 4 এর বৃত্তিটা পাইলাম ট্যালেন্টপুলে।
তারপর পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার পর বলল , বাবা, এইবার যদি ট্যালেন্টপুলে পাও তাহলে একটা সাইকেল কিনে দেব:o . যাক, আবারো ছাগলের মত পড়াশোনা করে ট্যালেন্টপুলেই বৃত্তি পেলাম, আর সাইকেলটা কব্জা করে নিলাম :p
ক্লাস এইট এ যখন উঠলাম, তখন বলল , এইবার যদি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাও তাইলে ' কম্পিউটার' কিনে দিব ,বাবা... কি আর করা, অনেক দিনের শখ যেহেতু , তুমুল মনযোগ দিয়া পড়াশোনা করলাম আর ট্যালেন্টপুলেই বৃত্তি পেলাম... হিসাব মতে, কম্পিউটার আমার পাবার কথা... বাবাও আগ্রহী...এমন সময় কে যেনো আব্বার কানে দিলো , '' এই বয়সে বাচ্চার হাতে কম্পিউটার দিলে পোলাপাইন নষ্ট হয়ে যায় 🙁
আমি কিন্তু হাল ছাড়ি নাই... প্রবল অনশন ধর্মঘট এর মাধ্যমে আমার কম্পিউটার আমি আদায় করে নিলাম... 😉
অতঃপর নবম শ্রেণীতে উঠার পর প্রবীণরা পরামর্শ দিলেন যে ৯,১০ ...এই দুই বছর জীবন গঠন করার উপযুক্ত সময়, ইন্টারমিডিয়েট এ গেলে বহুত ঘুরার টাইম পাইবা,বুঝছ??? :O ...এই সময়ে বিপথে গেলে এক্কেরে্...। যাক A+ ই পেলাম। 🙂
বিপুল,আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে যখন কলেজে গেলাম,তখন শিক্ষকরা বলল , '' বাবারা, এই দুই বছর বলে দিবে তুমি জীবনে কি হইবা আগে তো তোমরা নদীতে পড়াশোনা করছ,এবার সাগরে এসে পড়ছ, সে এক বিরাট মহাসাগর এইসময়, মানুষ বিপথে যায় বেশী, সারাক্ষন লেখাপড়া না করলে পাশ করবা না ''। বাবার কথামত ঘুরার টাইম তো পাইলাম ই না,তার ওপর আবার সারাক্ষন পড়া, বাবা কি তাহলে মিথ্যা বলল? যাক, A+ ই পেলাম
◘ ◘X◘ ◘ এইবার, এডমিশন টেস্ট এর আগের তিন মাস সময় যখন আসল,তখন বাবায় আমার সামনে এসে বলল ,''বাবা , আমি তোমারে নিয়া অনেক আশা করি, নিশ্চই তুমি এর প্রতিদান দিবে, মেডিক্যাল এ টিকার পর তুমি সম্পূর্ণ স্বাধীন... তোমার কাছে আর কিছু চাব না,শুধু মেডিক্যাল এ চান্স পেয়ে আমাকে দেখাও , আমি গর্বিত হব,সত্যিই আনন্দিত হব যা আমি আর কোনদিন হইনি...'' :'(
বাবার মান সম্মান রাখতে ব্যাপক ভাবে পড়াশোনা করলাম।। অবশেষে মেডিক্যাল এ টিকেই গেলাম এবং স্বাধীনতার অস্তিত্ত্ব খুজে পেলাম এই যখন অবস্থা তখন,...
যেদিন মেডিক্যাল কলেজ এ ভর্তি হতে গেলাম, আমাদের আশেপাশে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান এতো মেয়ে দেখে বাবার মুখে অন্যরকম কিছু দেখতে পেলাম,কেমন যেনো 😉 😮
এর তিনদিন পরে, বাবা আমাকে বলল , বাহাদুর নামে তোমার এক আঙ্কেল আছে , তিনি বলেছেন , '' ওরে বইলেন যে , ৫ বছরের আগে যেনো আশেপাশে না তাকায়,নাইলে জীবন শেষ... "" তার মানে এই বলল যে ,কোন মেয়ের দিকে তাকাইবানা, কোন কথা বলবানা, কোন ভালোবাসাবাসির দরকার নাই...এইসব আমি বুঝে নিলাম আরকি 🙁
আমার অবস্থা ইকো পার্কের ঐ বাঘের মত , তুমি স্বাধীন কিন্তু এই বেড়ার বাইরে বের হইতে পারবানা''' 🙁
পরিশেষে, আমি স্বাধীন হতে চাই না... যে স্বাধীনতা আমার ভবিষ্যৎ জীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে সেই স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন নেই, আমি আমার বাবার কাছে সারাজীবন পরাধীন থাকতে চাই... আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করি বাবা,কারণ তোমার জন্যই আমার এতদূর আসা.. 🙂
লেখকের ইমেইল ঃ [email protected]
লেখকের ফেসবুক প্রোফাইল লিঙ্ক ।
আমি নেক্সোপিয়ান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 148 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জীবনটা সংগ্রামের,কিন্তু তার সাথে লড়াই করে বেচে থাকার মাঝেই আছে__জীবনের সার্থকতা ''
স্যালুট করি ঐ সমস্ত বাবা-মা কে। আমি নিজেও বাবা-মার কাছে সারাজীবন পরাধীন থাকতে চাই। যে বাবা-মা সারা জীবন এতো কষ্ট করে রোজগার করে আমাদের লালন-পালন করতেছে তাদের (এবং নিজের তো বটেই) জন্য এইটুকু করতে পারা যাবে না, এটা কোন কথা হল নাকি? সবচেয়ে বড় কথা হল বাবা-মার চেয়ে এই পৃথিবীতে কেও আপন না। একটু চিন্তা করে দেখুন’ত আপনার Serious কোন অসুখ হলে কিংবা আপনার কোন বিপদ হলে সবচাইতে কে এগিয়ে আসে? যদি এটা সবার মাথাই কাজ করে তাহলে আমি মনে করি কেও বাবা-মা কে কষ্ট দিবে না।