বিভিন্ন কারণে আমাদের বিদেশ গমনের প্রয়োজন হতে পারে। আমাদের বিদেশ গমনের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে আমাদেরকে সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরীর ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। আমরা যেসব ক্যাটাগরীর আওতায় বিদেশ ভ্রমনের ভিসার জন্য আবেদন করে থাকি সেগুলো নিচে ছকের সাহায্যে দেখানো হল:
বিদেশ গমনের উদ্দেশ্য | ||||||||
চাকুরী (Employment) | অভিবাসন (Immigration) | উচ্চ শিক্ষা (Higher Studies) | আনন্দ ভ্রমন (Excursion) | ব্যবসায়িক ভ্রমন (Business Trip) | ||||
সরকারী ও পেশাগত | বেসরকারী ও পেশাগত | - | নিজ খরচে | স্কলারশীপ | আত্মীয় স্পন্সর | প্রাতিষ্ঠানিক আমন্ত্রণ | নিজস্ব বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান | যৌথ কারবার |
উপরোক্ত যে উদ্দেশ্যেই বিদেশ যাওয়া হোক না কেন, বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যাক্তিদের কিছু বিষয়াবলী সম্পর্কে পূর্বেই স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। যেমন:
ভিসার শ্রেণীবিভাগ (Immigration Visa)
ইমিগ্রেশন ভিসা:
বিদেশ গমনের জন্য ইমিগ্রেশন ভিসাই শ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী পদ্ধতি; আর এ কারনেই পদ্ধতিটি বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ। যেসব দেশে ইমিগ্রেশনের জন্য সরাসরি আবেদন করা যায় তাদের মধ্যে কানাডা, আষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইটালী ও আমেরিকা অন্যতম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতার ভিত্তিতে এসব দেশে ভিসার জন্য সরাসরি আবেদন করা যেতে পারে। এসব আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ স্থানীয় হাইকমিশন বা দূতাবাসে যাচাই বাচাই শেষে নির্বাচিত হলে দূতাবাসে তাদের সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সন্তোষজনক সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতে প্রার্থীকে বিস্তারিত ইমিগ্রেশন ফর্ম পূরণ করতে বলা হয়। সবশেষে প্রার্থীর মেডিক্যাল এক্সামিনেশন করা হয়; এতে ফলাফল অনুকূল হলে তাকে সংশ্লিষ্ট দেশে স্থায়ী বসবাসের (Permanent residency) সুযোগ করে দেয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রার্থী শুধু নিজেই নয় বরং পুরো পরিবারকে নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিতে পারেন। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ১-২ বছর সময় লেগে যেতে পারে।
ইমিগ্রেশন ভিসার জন্য যে কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয় সেগুলো নিম্নরূপ:
অষ্ট্রেলিয়া/ কানাডা/ নিউজিল্যান্ড
উপরোক্ত দেশগুলোতে ইমিগ্রেশনের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করতে আগ্রহী ব্যক্তিকে তার বয়স, শিক্ষা, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষাগত দক্ষতা, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদির উপরে ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করতে হয় যা এসব দেশ কর্তৃক নির্ধারিত করা আছে। যদি একজন ব্যক্তি ন্যূনতম পয়েন্ট অর্জন করে ইমিগ্রেশন আবেদনের প্রাথমিক যোগ্যতা লাভ করেন, তবে তিনি সরাসরি নির্ধারিত ঠিকানায় প্রাথমিক আবেদনপত্র প্রেরণ করবেন এবং উত্তরের জন্য অপেক্ষা করবেন। প্রার্থী যদি হ্যাঁ বোধক উত্তর পান তবে তিনি ভিসার মূল আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করে নিকটস্থ হাইকমিশনে জমা দেবেন। দরখাস্তের সাথে অবশ্যই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফি ও ফটো ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে। অতঃপর আবেদনপত্রের সিরিয়াল অনুসারে সাক্ষাৎকারের জন্য ১ থেকে ২ বছর পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হতে পারে। প্রার্থীর সিরিয়াল চলে আসলে সংশ্লিষ্ট হাইকমিশন থেকে সাক্ষাৎকারের জন্য প্রার্থীর কাছে আবেদনপত্র বা Invitation Letter প্রেরণ করা হয়।
সাক্ষাৎকার পর্ব
দূতাবাসের ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে সাক্ষাৎকার পর্ব ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। প্রার্থীকে মনে রাখতে হবে একজন ইমিগ্রেশন অফিসারের হাতে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া থাকে। ইনি যেসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রার্থীর যোগ্যতা নিরূপন করেন সে বিষয়গুলোতে প্রার্থীকে অবশ্যই সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। ইমিগ্রেশণ অফিসারের সাথে সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে কিছু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচে দেয়া হলো:
১) শালীনতাপূর্ণ মার্জিত পোষাক পরতে হবে। চুল, দাঁড়ির ছাঁট রুচিসম্মতভাবে হতে হবে। চোখের চাহনী এবং অভিব্যক্তিতে আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।
২) স্বাভাবিক স্বতস্ফুর্ত ভদ্রোচিত আচরন করতে হবে। যেমন: হাসিমুখে গুড মর্নিং বা গুড আফটারনুন বলে কথা শুরু করতে হবে।
৩। ইংরেজী ভাষায় শুদ্ধভাবে ও সংক্ষিপ্ত আকারে কথোপকথন চালাতে হবে। প্রশ্নদাতার কোন প্রশ্ন না বুঝতে পারলে সবিনয়ে বলতে হবে। pardon me বা excuse me, Would you please repeat the question? এর মানে হচ্ছে আমি আপনার প্রশ্নটি বুঝিনি, আপনিকি দয়া করে পুনরায় বলবেন। প্রশ্নের উত্তর স্পস্ট ও যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়াই বাঞ্চনীয়। মনে রাখতে হবে প্রশ্নটি না বুঝে কখনোই ভুল উত্তর দেয়া যাবে না। প্রশ্নকর্তার accent বুঝতে সমস্যা হলে বলতে হবে Would you please say that again? এটাই বিদেশী রেওয়াজ এবং প্রশ্নের সাথে Would you please বলে অনুরোধ করা এবং অনুরোধ মানলে Thank you বলে কৃতজ্ঞতা জানানো বাঞ্চনীয়।
৩) প্রশ্নকর্তা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে প্রার্থীর মানসিক দৃঢ়তা সম্পর্ক নিশ্চিত হতে চাইবেন। তাই তিনি যে ধরনের প্রশ্নই করুন না কেন কোন অবস্থাতেই উত্তেজিত হওয়া চলবে না, বরং ঠান্ডা মাথায় হাসিমুখে তার প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দিতে হবে। আর সর্বদাই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আর কখনোই এমন মনোভাব প্রদর্শন করা যাবে না যে আপনি তাদের অনুকম্প প্রার্থনা করছেন বরং আপনার কথাবার্তায় যেন তাদের মনে হয় যে এই ব্যাক্তিটি তাদের দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে। শুধু সেক্ষেত্রেই আপনি সফলভাবে সাক্ষাৎকার পর্বে উত্তীর্ণ হতে পারেন।
৪। চাহিবা মাত্র যেন কর্তৃপক্ষকে যে কোন ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারেন এজন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র, ফিস ইত্যাদি গুছিয়ে রাখতে হবে।
ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ভ্রমন (Private and Business trip)
ব্যক্তিগত ভ্রমণ ভিসা (Tourist’s Visa) প্রাপ্তি সংক্রান্ত তথ্যগুলো নিম্নরূপ:
কারা পেতে পারেন
১। উচ্চ পদস্থ সরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, পার্লামেন্ট সদস্য, সচিব, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
২। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, সামাজিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ব্যক্তি ও সংগঠক প্রমুখ।
৩। প্রবাসী আত্মীয় স্বজন দ্বারা আমন্ত্রিত এবং স্পন্সরকৃত আপনজন (যেমন: বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলেমেয়ে ইত্যাদি)।
৪। শিক্ষা সফরে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং প্রকল্প সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিনিধি বা প্রশিক্ষনার্থী।
৫। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও (NGO) বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও বিদেশ ভ্রমনের ভিসা পাওয়া সহজ তবে ঐসব বিষয়ে ভিসা প্রার্থীদের বিশেষ কিছু কৌশলগত প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। যেগুলো নিম্নরূপ:
কাজেই ভিসা প্রার্থীরা আগেই যদি উপরোক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে সম্যক অবহিত থাকেন এবং যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেন তাহলে সাক্ষাৎকার পর্বে অংশ নেয়া তার জন্য অনেক সহজ হয়ে যায় এবং ভিসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
স্টুডেন্ট ভিসা (Students Visa)
কোন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তির যোগ্যতা যাচাই পূর্বক উচ্চ শিক্ষার অনুমতি পেলে ছাত্র-ছাত্রীরা Students Visa পাওয়ার অনুমতি লাভ করে। এই ভিসাকে আমেরিকায় ও -২০, কানাডায় Students Authorization ও অন্যান্য দেশে Students Visa বলে।
কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে ছাত্র-ছাত্রীরা পার্টটাইম কাজ করার অনুমতি পেতে পারে। আর শুধু Graduate Level-এ বৃত্তি পাওয়া যায়। Under Graduate Level-এ সচরাচর কোন বিদেশী ছাত্র/ছাত্রীকে বৃত্তি দেওয়া হয় না। ইউরোপীয়ান দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে ছাত্র-ছাত্রীদের কোন টিউশন ফি লাগে না। স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী:
চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ ভিসা (Contract Employee)
বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠান পেশা ভিত্তিক দক্ষ বা অদক্ষ জনশক্তি আমদানী করলে প্রথমে চুত্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করে। এ চুক্তির শর্তানুযায়ী নিয়োগকর্তা “Letter of Authorization” পাঠায়। তার আগে এজেন্ট-এর মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করেন। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইটালী, কোরিয়া ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে এভাবে “চুক্তি নিয়োগ ভিসা” প্রদান করা থাকে।
ভিজিটর ভিসা (Visitor Visa)
স্বল্পকালীন ভ্রমন (ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল) বা বাণিজ্যিক কাজে ভিজিটরস ভিসা প্রযোজ্য। সরকারী এমপি, মন্ত্রী, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ লাল পাসপোর্ট (Red Passport) পেয়ে থাকেন। এতে যে কোন সময় সরকারী বা ব্যক্তিগত ভ্রমনে ‘ভিসা’ প্রাপ্তির সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। এছাড়া ব্যবসায়ীক কাজে বিত্তশালী বা খ্যাতনামা ব্যবসায়ীগণ সহজেই ‘ভিসা’ পান। পারিবারিক স্পন্সর (Family Sponsor) ডাক্তারী চিকিৎসা (Visa for medical Treatment) এবং কোম্পানী স্পন্সর (Company Sponsor) এর মাধ্যমে ভিসা পাওয়া যায়।
তবে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই মনে রাখা প্রয়োজন ভিসা অফিসার (Visa Officer) এর হাতে ঐ দেশের সরকার অসীম ক্ষমতা দিয়ে থাকে। কাজেই ভিসা অফিসারের সাথে সাক্ষাৎকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সাক্ষাৎকারের সময় অবশ্যই ভিসা অফিসারের এটা বুঝাতে হবে যে প্রার্থী প্রকৃতই তার দেশে ভ্রমন করতে যাচ্ছে এবং ভ্রমন শেষে সে নিজ দেশে ফিরে আসবে।
যারা সরাসরি চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে চান তারা এখানে ক্লিক করুন
আমার পূর্ববর্তী আরও কিছু পোস্ট
* ফোর-জি প্রযুক্তির মোবাইলের নানা দিক
* জাপানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের কথা ভাবছেন? আসুন জেনে নিই জাপানে পড়াশোনা করার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে
* জেনে নিন কীভাবে অফলাইন ও অনলাইনে জিডি করবেন (না দেখলে মিস করবেন)
* অনলাইন সিটিজেন হেল্প রিকোয়েস্টের নানা দিক
আমি শাহীন শিমুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 30 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
nice sir >> সময় থাকলে আর একটা নাতুন মজা Click Hear