''জীবন হলো এক কাপ কফি''
লেখক--অজ্ঞাত
শরতের এক স্নিগ্ধ বিকেল । ইউনিভার্সিটির চৌকাঠ পেরিয়ে কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে কিছু পুরোনো বন্ধুরা এসে জুটলো তাদের প্রিয় স্যারের বাসায় । আড্ডা, গল্প, খোশালাপ । কে কোথায় আছে, কার বেতন কত, কে কতটা প্রতিষ্ঠিত ... এই নিয়ে কথা বলতে বলতেই শুরু অভিযোগের পর্ব । আমার স্ত্রী দজ্জাল, আমার বসের মতো খারাপ মানুষ দুনিয়ায় নেই, আমার কপাল পোড়া যে এই চাকরি করছি । এসব কথা শুনতে শুনতে তাদের প্রিয় স্যার চলে গেলেন রান্না ঘরে । কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ে এলেন কয়েকটি কফিকাপ আর এক বড় পটভর্তি ঘন, সুমিস্ট কফি ।
'নাও, এবার নিজেরাই একটু কফি ঢেলে নাও । আর আমাকেও এককাপ কফি দাও কেউ একজন'।
অনেকক্ষনের আড্ডায় তৃষ্ণার্ত ছাত্ররা একে একে নেয়া শুরু করলো কফির একেকটি কাপ । একে একে সবার হাতে উঠে এলো ধুমায়িত কফির চুমুক ।
স্যার এবার বললেন, 'একটা মজার ব্যাপার কেউ কি দেখেছ?'
ছাত্রদের উত্সুক্যময় চোখ স্যারের দিকে ঘিরে ধরল উত্তরের আকাঙ্খায় । 'আমি অনেক রকমের কফি কাপ এনেছি' । ছাত্রদের দিকে পুরোনো অভাসের বশেই শিক্ষকসুলভ কন্ঠে তিনি বললেন, 'কিছু দেখতে সুন্দর, কিছু খুবই দামী, কিছু খুব সহজ-সাবলীল, কিছু রঙিন, কিছু নিতান্তই সাদামাটা-আমাদের আটপৌরে জীবনের প্রয়োজনে তৈরী' ।
'জী স্যার', ছাত্রদের কন্ঠেও সম্মতির সুর ।
স্মিত হেসে প্রফেসর জিগ্যেস করলেন, 'তোমাদের কফিটা কেমন হয়েছে, ভালো' ?
প্রানময় উচ্চারণে সকলেই জবাব দিল 'এককথায়, অসাধারণ' ।
'হুমম, অথচ মজার ব্যাপার হলো তোমরা কেউ কিন্তু সাধারণ কাপগুলো নাওনি, নিয়েছ যেগুলো দামী অথবা ঝা চকচকে' ।
নিশ্চুপ ছাত্রগুলো উত্তর খুজতে থাকে, বোঝার চেষ্টা কে যে তাদের পক্ককেশ শিক্ষক কি বোঝাতে চাইছেন এই সাধাসিদে কথায় . . .
প্রফেসর, আবার বলতে থাকেন । 'দেখ, তোমরা কিন্তু সবাই একই কফি নিচ্ছ । কফিটা সবার জন্যই একই রকম মিষ্টি, একই রকম সুঘ্রাণে মোহময় । কিন্তু, তোমরা যখন কাপগুলো নিলে তখন তোমরা কিন্তু সাদামাটা কাপগুলো নাওনি, নিয়েছ যেগুলো বেশি দামী, বেশি চকচকে । মজার ব্যাপার, এই কাপগুলো কিন্তু তোমাদের কফির স্বাদ পাল্টে দেবে না । এরকম ভাবার কোনো কারনই নেই যে বেশি দামী কাপের কফিটা সাধারণ কাপের কফির চেয়ে বেশি মিষ্টি হবে অথবা বেশি সুন্দর । বরং, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি দামী কাপে নেয়ার কারণে তোমরা কফিটা ভালো ভাবে দেখতেও পাচ্ছ না' ।
ছাত্রদের সম্মতির নোয়ানো মস্তক দেখে প্রফেসর আবার বললেন, 'এখন, ধর এই কাপের কফি হলো তোমার জীবন, তোমার অস্তিত্ব, তোমার বেঁচে থাকার প্রতীক । আর, যে কাপগুলো তোমাদের হাতে আছে সেগুলো হচ্ছে তোমাদের ক্যারিয়ার, তোমাদের চাকরি, তোমাদের যশ, তোমাদের প্রতিপত্তি বা বাইরের বিষয়গুলো । এখন, নিশ্চিতভাবেই এই কাপগুলো তোমার কফিকে ধরে আছে, যেভাবে তোমাদের চাকরি, তোমাদের ক্যারিয়ার তোমাদের জীবনকে ধরে রাখে । তোমরা সামনে এগিয়ে যাও, আরো ভালো ভাবে বাঁচার প্রত্যয়ে । কিন্তু, তোমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে তোমরা কফি চাও, সুন্দর একটা কফি, কফির কাপকে নয় । ঠিক এভাবেই, তোমরা কিন্তু জীবনকে চাও, বাঁচতে চাও, স্বপ্ন দেখো, বিশ্বাসে বেঁচে থাকো . . . কারণ, তোমরা জীবনকে পেতে চাও । এই যে বেঁচে আছ, এই বেঁচে থাকাকে উপভোগ করতে চাও । সমস্যার শুরু হলো যখন তোমরা কফির পেছনে না ছুটে কাপগুলোর পেছনে ছুটলে । তখন কিন্তু তোমাদের মধ্য সুক্ষ প্রতিযোগিতা হলো যে কে সবচাইতে ভালো কাপটা পেতে পারে । অথচ, তোমাদের চাওয়া উচিত ছিল সুন্দর সুমিস্ট কফি' ।
ছাত্ররা কিছুটা লজ্জা, কিঞ্চিত বোধদয়ের আনন্দে মাথা নাড়তে থাকে ।
'তাই', প্রফেসর আবার বলেন ,'জীবনকে নিয়ে বাঁচ ! জীবনের জন্য বাঁচ ! বাঁচ সরলভাবে , সহজভাবে, সাবলীলভাবে ! ভালোবাসো মানুষকে, গভীরতার সাথে, একাগ্রতার সাথে ! কথা বল নরম স্বরে, মমত্বের সাথে ! তাহলেই জীবনের সুমিস্ট স্বাদ পাবে তোমরাও . . .
বি.দ্র.---গল্পটি ইন্টারনেট সংগৃহিত । কোন [২য় ব্যক্তি] বাংলায় অনুবাদ করেন । লেখকের নাম পাই নি ।
(আমি mrikadey[৩য় ব্যক্তি] আপনাদের সাথে গল্পটি শেয়ার করলাম, যা [২য় ব্যক্তি] অনুবাদ করে ছিল)
। গল্পটি আপনাদের কাছে তুলে ধরাই আমার প্রধান উদ্দেশ্য ।
অবশ্যই comment করবেন............
আমি mrikadey। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 86 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
@ mrikadey : ভাই উদাহরনটি অসাধারন । আসলে আমরা এমনই । সর্বদাই কফির কাপটি নিয়ে মেতে থাকি । কফির কথা মাথায় থাকে না । ভালো থাকবেন । ধন্যবাদ ।