বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আসসালামুআলাইকুম । সবাইকে আমার আন্তরিক প্রীতি, সম্মান, শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জ্ঞাপন করছি। আশাকরি আল্লাহ্র অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।
কে বলেছে আমরা গরিব? যে জাতির এত এত সম্পদ তারা যদি সাময়িক ভাবে গরিব হয়েও থাকে, শুভদিন আবার আসবেই, আসতে বাধ্য। আমরাই পারবো আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। অনেকেই বলবেন আমাদে এত এত জনসংখ্যা, কি করবো? কি ভাবে চলবো? এই জনসংখ্যা যদি জনসম্পদ হয় তাহলে কি হবে?
টেকটিউনস কমিউনিটির কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন আমি এত আশাবাদি হলাম কি করে। আপনাদের পুরাতন সুন্দরকে বরণ করে নেয়া, আগ্রহ ও গঠনমূলক টিউন ও টিউমেন্ট আমার ভিরু মনটাকে অনেক আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। ওডেস্কে আমরা বর্তমানে আউটসোর্সিং এ তিন নম্বর। খুব শিষ্র শীর্ষস্থানে আসবো। আমরা যদি আমাদের সম্পদগুলোকে না চিনি না বুঝি তাহলে সেটা হবে চরম নিরাশার কথা।
লালনের একটি গান মনে পড়লো । শুনুন -
“রাম কি রহিম সে কোনজন?
মাটি কি পবন,
জল কি হুতাশন।
শুধাইলে তার অন্বেষণ,
মূর্খ দেখে কেউ বলে না।।”
এই টিউনটি উৎসর্গ করছি শুভঙ্করের ফাঁকি টিউনটিতে যে সকল টেকটিউনস কমিউনিটি টিউমেন্ট করেছিলেন তাদের উদ্দ্যেশে।
খনার জীবনী আমি ভালো জানি না তাই জীবনীটুকু সংগ্রহ করতে হয়েছে উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে।
খনা বা ক্ষণা কথিত আছে তার আসল নাম লীলাবতী জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারীর যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত। মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিস পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম ছিন অনাচার্য। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে তিনি ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার প্রখ্যাত জোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরকে খনার স্বামীরূপে পাওয়া যায়। কথিত আছে বরাহ তার পুত্রের জন্ম কোষ্ঠি গণনা করে পুত্রের আয়ূ এক বছর দেখতে পেয়ে শিশু পুত্র মিহিরকে একটি পাত্রে করে সমুদ্র জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌছলে সিংহলরাজ শিশুটিকে লালন পালন করেন এবং পরে কন্যা খনার সাথে বিয়ে দেন। খনা এবং মিহির দু'জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে প্রতিহিংসায় বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।
এই রচনা গুলো চার ভাগে বিভক্ত করা যায়।
যথা
১.
শ্রাবণের পুরো ভাদ্রের বার।
এর মধ্যে যত পার।।
[ধান রোপনের প্রকৃত সময় সারা শ্রাবণ ও বারোই ভাদ্র পর্যন্ত]
২.
ষোল চাষে মূলা।
তার অর্ধেক তূলা।।
তার অর্ধেক ধান।
বিনা চাষে পান।।
[মূলার ক্ষেত্রে ষোল বার, তুলার ক্ষেত্রে আট বার, ধানের ক্ষেত্রে চার বার হাল চালনা করা কর্তব্য। পানের জমিতে হাল চালনার প্রয়োজন নাই।]
৩.
পূর্ণিমা আমায় যে ধরে হাল।
তার দুঃখ সর্বকাল।।
তার বলদের হয় বাত।
নাহি থাকে ঘরে ভাত।।
খনা বলে আমার বাণী।
যে চষে তার, প্রমোদ গণি।।
[পূর্ণিমা আমারস্যাতে হাল চালনা করতে নেই। ওই দুই দিন যে হাল চালনা করে তাকে চিরদিন কষ্ট পেতে হয়। বাতে সেই কৃষকের বলদ কষ্ট পায় ও তার গৃহে অন্ন সংস্থান হয় না।]
৪.
যে বার গুটিকাপাত সাগর তীরেতে।
সর্বদা মঙ্গল হয় কহে জ্যোতিযেতে।।
নানা শস্যে পূর্ণ এই বসুন্ধরা হয়।
খনা কহে মিহিরকে নাহিক সংশষ।।
[সমুদ্র তীরে যে বৎসর গুটিকাপাত হয়, ধরণী সেই বৎসর শস্যপূর্ণা হয়।]
৫.
বুধ রাজা আর শুক্র মন্ত্রী যদি হয়।
শস্য হবে ক্ষেতভরা নাহিক সংশয়।।
[যে বছর বুধ রাজা ও শুক্র মন্ত্রী হয় সে বছর পৃথিবী শস্য পরিপূর্ণ হয়।]
৬.
মঙ্গলের ঊষা বুধে পা।
যথা ইচ্ছা তথা যা।।
[ মঙ্গলবারের রাত্রি গত হইলে ঊষাকালে বুধবারের আরম্ভে যাত্রা করিলে যাত্রা শুভ হয়ে থাকে।]
৭.
রবি গুরু মঙ্গলের ঊষা।
আর সব ফাসাফুসা
[রবি, বৃহস্পতি আর মঙ্গলবারের ঊষাকালে যাত্রা করতে পারলে দিন ক্ষন দেখবার কোনো প্রয়োজন হয় না।]
৮.
যদি বর্ষে আঘনে।
রাজা যান মাগনে।।
যদি বর্ষে পৌঁষে।
কড়ি হয় তুষে।।
যদি বর্ষে মাঘের শেষ।
ধন্য রাজার পুণ্যদেশ।।
যদি বর্ষে ফাল্গুনে।
চিনা কাউন দ্বিগুণে।।
[অগ্রহায়ণ মাসে যদি ভাল বর্ষণ হয়, তা হলে শষ্যকীটে ধান কেটে ফেলে। উত্তমরূপ শস্য না পাওয়ার দরুন প্রজাগণ রাজস্ব দিতে অক্ষম হয়, সে কারণে রাজাকেও বিপদগ্রস্ত হতে হয়। পৌষ মাসে বৃষ্টি হলে হৈমান্তিক ধান্য ঝরে পড়ে ধান মহার্ঘ্য হয়ে যায়, আর তুষেও অর্থ উপার্জন হয়। আর যদি মাঘের শেষে বৃষ্টি হয় হেমন্তের ধান ও আশু ধানের কৃষি ভালোভাবে হয়ে থাকে। চিনা ও কাউন ধান ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি হলে দ্বিগুণ হয়ে থাকে]
আজ খনার বচন নিয়ে গবেষনা হচ্ছে এত আগে তিনি এত বিজ্ঞানীক কথাবর্তা বলেছেন কি করে। হয়তো আমাদের মাঝেও এমন কেউ থাকা অসম্ভব নয় যাকে নিয় হয়তো আরও ৫০০ বছর পরে গবেষণার পর গবেষণা হবে।
কষ্ট করে আমার এই টিউনটি দেখার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত ও পরিতৃপ্ত। আপনাদের ব্যাপক সাড়া আমার নিত্যদিনের প্রেরণা।
আমি মোঃ আসিফ- উদ-দৌলাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 1147 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মা ও বাংলা ভাষার কাঙ্গাল
অসাধারণ, সংগ্রহে রাখার মত টিউন।