বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আসসালামুআলাইকুম । সবাইকে আমার আন্তরিক প্রীতি, সম্মান, শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জ্ঞাপন করছি। আশাকরি আল্লাহ্র অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।
আমার অন্যতম পছন্দের একটি খেলা দাবা। কারপভ, ক্যাসপেরাভ, বিশ্বনাথ আনন্দ সহ কতো দাবারুদের খেলার কোড নিয়ে তা দাবা কোটে উঠিয়ে দেখেছি বলতে পারবো না। একটি মজার তথ্য হল এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে যতগুলো দাবা খেলা হয়েছে তার কোনটার সাথে কোনটার হুবুহু মিল নেই। কেন নেই তা দাবা আবিষ্কারের কাহিনীটি পড়লেই বুঝতে পারবেন। আমি টিউনটি উৎসর্গ করছি বিখ্যাত গণিতজ্ঞ “ইয়াকভ পেরেলমান” কে। তার মূল লেখা থেকে এটি অনুবাদিত হল। আমি ভাবার্থ দেবার চেষ্টা করেছি। টাইপে কিংবা কোনো জায়গায় অসংগতি থাকলে দয়া করে জানাবেন এডিট করে দেবো।
দাবাখেলা – পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো খেলার একটা। খেলাটা আবিষ্কার হয়েছে বহু শতাব্দী আগে। দাবা খেলা আবিষ্কার সম্বন্ধে একটি গল্প বহুল প্রচলিত। অন্যান্য কাহিনীগুলোর বেলায় যা হয়, সেগুলোর সত্যি-মিথ্যা জানা অসম্ভব হয়ে ওঠে। এই গল্পটা বুঝতে দাবা খেলা বুঝতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শুধু দাবার কোর্ট সম্পর্কে ধারণা থাকলেই হবে। একটা সাদা কালো ছক কাটা কোটে যে মোট ৬৪টি (৮x৮=৬৪) ঘর থাকে, এটুকু জানা থাকলেই চলবে।
অনেক গবেষকদের মতে, দাবা খেলার উদ্ভব হয়েছে ভারতবর্ষে। একটা খেলায় যে কতরকম বুদ্ধির চাল দেয়া যায় তা দেখে শেরাম নামের এক রাজা জানতে পারলেন দাবা খেলার উদ্ভাবক তারই প্রজা সেসা। এই অসাধারণ খেলার আবিষ্কারককে রাজা পুরষ্কার দিবেন বলে ঠিক করলেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজার সামনে তাকে উপস্থিত করতে বলা হলো।
খুব সদাসিধে পোশাক পরা এই লোকটির নাম ছিল সেসা। শিক্ষকতা ছিলো সেসার পেশা। সেসা রাজার সামনে উপস্থিত হলেন।
রাজা আন্তরিক অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন- “আপনার অদ্ভুত ও অসাধারণ আবিষ্কারের জন্য আমি আপনাকে পুরষ্কার দিতে চাচ্ছি। বলুন কি চান?”
সেসা রাজাকে কুর্ণীশ করে কিছুই নিতে রাজি হলেন না। রাজার পিড়াপিড়িতে সেসার কিছু না চেয়ে আর উপায় নেই। সেসা খানিকটা নীরব। রাজ্যসভার পন্ডিত মহাদয় রাজাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন “জাঁহাপানা উনি খুব সম্ভবত কি চাইবেন বুঝতে পারছে না, তাই ওনাকে একদিন ভাবার সময় দিন।” রাজা পন্ডিতের কথা মেনে নিলেন।
পরদিন সেসা রাজ দরবারে উপস্থিত হলেন। সেসার এক তুচ্ছ চাওয়ায় রাজা অবাক হয়ে গেলেন সেই সাথে যারা উপস্থিত ছিলেন সবাই অবাক ও আশ্চর্য হয়ে গেলেন।
সেসার চাওয়া হল দাবা কোটের প্রথম ছক বা ঘরটার জন্য এক দানা গম।
“সামান্য এক দানা গম?” রাজা কৌতুক দ্বীপ্ত নয়নে বলে উঠলেন।
সেসা বললেন “ হ্যাঁ জাহাপানা প্রথম ছকের জন্য একটি দানা, দ্বিতীয়টির জন্য দুটি, তৃতীয় ছকের জন্য চারটি, চতুর্থ ঘরটির জন্য আটটি, পঞ্চমটার জন্য ১৬টি, য়ষ্ঠটির জন্য ৩২টি.........”
সেসা কথা শেষ করার আগেই রাজা সাসাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- “ দাবার ৬৪টি ছকের জন্যই আপনার ইচ্ছেমত গমের দানা পাবেন। কিন্তু জেনে রাখুন আপনার প্রার্থনাটা ঠিক আমার দেবার ইচ্ছার উপযুক্ত হলো না। এই রকম নগন্য জিনিস চেয়ে আপনি আমাকে অসম্মান করলেন। আপনি চলে যান! আমার ভৃত্যরা আপনার গমের থলি পৌঁছে দেবে।”
খাবার সময় সেসার কথা মনে পড়ল রাজার। সেই বেকুব আবিষ্কারক তার নগণ্য পুরষ্কার পেয়ে গেছে কিনা জিজ্ঞেস করলেন তিনি। রাজকে জানানো হলো “জাহাপানা আপনার আদেশ পালন করা হচ্ছে। কতগুলো গমের দানা তিনি পাবেন, তা পন্ডিতগণ হিসেব করছেন।”
রাজা বললেন, “এই সামান্য কতগুলো গমের দানার হিসেব করতে এতো সময় লাগে?”
রাতে শোবার আগে রাজা আবার জিজ্ঞেস করলেন সেসা কে তার গমের থলিটি দেয়া হয়েছে কিনা।
রাজা উত্তর পেলেন- “ জাহাপানা আপনার হিসেবকারীরা হিসেব করে যাচ্ছে অক্লান্ত ভাবে, তারা আশা করছেন সকালের আগেই হিসেব করা শেষ হয়ে যাবে”
রাত্রি শেষ সকাল হল। রাজার সাথে তার প্রধান হিসেবকারী দেখা করতে চাইলেন। রাজা তাকে দেখা করতে বললেন। রাজা প্রধান হিসেবকারীকে বললেন- “আপনার কথা শোনার আগে জানতে চাচ্ছি সেসাকে তার প্রাথনা মতো নগণ্য পুরষ্কার কি দেয়া হয়েছে?”
বুড়ো প্রধান হিসেবকারী বললেন, “এই কারণেই তো এত ভোরে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। সেসার প্রার্থনা মতো গমের দানার সংখ্যা হিসেব করতে একটানা খেটেছি আমরা। হিসেব টা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে।”
রাজা বললেন, “ যত বড়ই হোক আমার শস্যভান্ডার থেকে দিয়ে দিন।”
বুড়ো প্রধান হিসেবকারী বললেন, “ মহারাজ, সেসার প্রার্থনা পূর্ণ করা আপনার ক্ষমতার বাইরে। সেসা যা চেয়েছে তত দানা আপনার গোলায় নেই। আপনার পুরো রাজ্যেও এত দানা নেই। সারা পৃথিবীতেও এত দানা নেই। সুতারং সেসার প্রাথনা মতো শস্য দানা দেয়া আপনার ক্ষমতার বাইরে!!!”
রাজা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। অবাক বিস্ময়ে হিসেবকারীর কথা শুনছিলেন তিনি” রাজা জানতে চাইলেন- “কতগুলো দানা?”
“মহারাজ, সংখ্যাটা ১,৮৪,৪৬,৪০,৭৩,৭০,৯৫,৫১,৬১৫”
গল্পটা কতখানি সত্য তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু পুরষ্কারটা যে এই রকম একটা সংখ্যা দঁড়াবে তা বোঝা কঠিন না। একটু ধর্য্য নিয়ে আমরা হিসেব টা দেখতে পারি।
১ থেকে শুরু করে ১,২,৪,৮ ইত্যাদি সংখ্যাগুলো যোগ করতে হবে। ২ এর ৬৩তম ঘাত যা হবে সেটাই হল ৬৪তম ছকের জন্যে আবিষ্কারকের প্রাপ্যের সমান। ২ টু দি পাওয়ার ৬৪ এর থেকে ১ বিয়োগ করলেই খুব সহজে শস্যদানার সংখ্যাটা পেয়ে যাব আমরা। এর অর্থ হল ২ কে ২ দিয়ে ৬৪ বার গুন করতে হবে:
২ x ২ x ২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ x২ মোট ৬৪বার।
মোট= ১,৮৪,৪৬,৪০,৭৩,৭০,৯৫,৫১,৬১৫
এই বিরাট সংখ্যাটা সম্বন্ধে ঠিকঠাক ধারনা করতে হলে ভেবে দেখুন শস্যগুলো রাখতে কত বড় গোলার দরকার হবে? এক ঘন মিটার গমের ভেতর থাকে ১,৫০,০০,০০০ দানা। তাহলে সেসার দাবি মত পুরষ্কার রাখতে হলে ১,২০,০০,০০,০০,০০,০০০ ঘন মিটার বা ১২,০০০ ঘন কিলোমিটারের কাছাকাছি আয়তনের গোলা দরকার হবে। এমন একটা গোলাঘর হয় যা ৪ মিটার উঁচু আর পাশে ১০মিটার তাহলে এর দৈর্ঘ্য হবে ৩০ কোটি কিলোমিটার, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সুর্যের দুরত্ব এর দ্বিগুণ।
রাজা তার কথা রাখতে পারলেন না।
কষ্ট করে আমার এই টিউনটি দেখার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি আপনাদের ভালবাসায় সিক্ত ও পরিতৃপ্ত। আপনাদের ব্যাপক সাড়া আমার নিত্যদিনের প্রেরণা।
আমি মোঃ আসিফ- উদ-দৌলাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 1147 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মা ও বাংলা ভাষার কাঙ্গাল
Osadharon…apner ai tune ta Kub e valo lage amr..Thanks a lot………