যারা মেডিকেলের প্রস্তুতি নিচ্ছ তাদের মোট ২০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। ১০০ স্কোর আর ১০০ MCQ. মেট্রিকের GPA গুনন ৮+ HSC এর GPA গুনন ১২= তোমার স্কোর। মেডিকেলের জন্য GPA কাউন্ট করা হয় অপশনাল সহ। মানে গোল্ডেন A+ আর সাধারণ A+ এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। SSC তে 5 আর HSC তে 5 থাকলেই তোমার স্কোর ১০০. আর যাদের GPA ৮ এর কম তার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেনা। মিনিমাম GPA ৮.০০.
জীববিজ্ঞানঃ 30, রসায়নঃ 25,পদার্থ 20, ইংরেজী 15 ও সাধারণজ্ঞান 10 এই 100 নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সময় 60 মিনিট মানে 1 ঘন্টা। চিরায়ত নিয়ম অনুসারে মেডিকেল পরীক্ষা হয় কোন এক শুক্রবারে সকাল 10-11 টায়। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য 0.25 মার্কস কাটা যাবে মানে প্রতি 4টি ভুল উত্তরের জন্য 1 মার্কস কাটা যাবে। মেডিকেলের MCQ তে ডাবল অ্যানসার, ট্রিপল অ্যানসার বা ব্লাংক থাকতে পারে। অর্থাৎ 4টি MCQ এর মধ্যে কখনো 2টি বা কখনো 3টি উত্তর থাকতে পারে আবার কখনো উত্তর নাও থাকতে পারে। উত্তর না থাকলে দাগানো যাবেনা। দুটো উত্তর থাকলে দুটো উত্তরই দাগাতে হবে।
সাধারণত 160 পেলে আশা করা যায় মেডিকেলে চান্স হবে। মানে স্কোর 100 থাকলে পরীক্ষায় 60 পেলেই মোটামুটি চান্স নিশ্চিত থাকে।
মেডিকেলের প্রশ্নগুলোতে মারপ্যাচ অনেক বেশী থাকে। স্বাভাবিকভাবে দেখলে প্রশ্ন সহজ মনেহয়, কিন্তু ভুলটা ধরতে পারেনা নবীনেরা। যেমন কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়ঃ দ্বিপদ নামকরনের আবিষ্কারক কে? HSC পড়ুয়ারা একলাফে বলে উঠবে ক্যারোলাস লিনিয়াস, কিন্তু এটা ভুল। আবিষ্কারকের নাম হল ক্যাসপার বাউহিন। ক্যারোলাস লিনিয়াস কে বলা হয় দ্বিপদ নামকরণের প্রবর্তক।
মেডিকেলে ভর্তির জন্য নিখুঁত প্রস্তুতি প্রয়োজন। কোন গাইড বা নোট পড়ে, পড়াকে কমিয়ে নিলে কাজ হবেনা। টেক্সটবুক এর A 2 Z এর উপর দক্ষতা থাকতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষায় বায়োলজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই বায়োলজির বইগুলো দাগিয়ে পড়তে হবে। বায়োলজি থেকে সাধারণত বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য, ছক আর উদাহরণ পড়তে হয়। এগুলো মনেরাখা বেশ কষ্টের। ছড়া, ছন্দ সাজিয়ে পড়লে এবং কঠিন বিষয়গুলো বারবার লেখার অভ্যাস করলে সহজে আয়ত্বে আসবে।
মূল বই পড়ার সময় প্রতিটি অধ্যায়ের পাশে নিজের নোট লিখে রাখবে, এগুলো শেষ সময়ে তোমাকে সাহায্য করবে। দক্ষতা যাচাই এর জন্য নিয়মিত পরীক্ষা দেবে। এজন্য কোচিং এর প্রশ্ন কালেক্ট করে বাসায় পরীক্ষা দিতে পার, কোচিং এ ভর্তি হয়ে পরীক্ষা দিতে পার, বা স্পেশালিস্টদের কাছে প্রাইভেট পড়ে দিতে পার, যেটা তোমার সামর্থে কুলায়।
ভর্তি পরীক্ষা যেহেতু MCQ নির্ভর তাই প্রশ্ন নিয়ে তোমাকে প্রচুর নাড়াচারা করতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো নিয়মিত দেখে নেবে তাহলে চ্যাপ্টারের কোথা থেকে প্রশ্ন বেশী আসে সে ব্যাপারে তোমার ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ডিসকাস করে পড়া ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যারা মেসে থাক, বন্ধুদের নিয়ে বসে একজন অন্যদের প্রশ্ন ধরবে, এভাবে অল্প সময়ে অনেক কিছু শিখতে পারবে। যারা প্রাইভেট পড় তারা নিয়মিত VIVA পরীক্ষা দেবে, এতে তোমার সমস্যাগুলো ট্রেস করতে পারবে। কম সময়ে ভাল প্রস্তুতির জন্য ডিসকাস করে পড়ার কোন বিকল্প নেই।
মেডিকেলে গাণিতিক সমস্যা খুব কম আসে। তাই পদার্থ ও রসায়নের থিওরীর দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।
মেডিকেলে উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যার মধ্যে প্রাণি থেকে প্রশ্ন বেশী আসে। অন্যদিকে রসায়ন ১ম ও ২য় পত্রের মধ্যে ১মপত্র থেকে প্রশ্ন বেশী আসে। পদার্থের ক্ষেত্রে ২য় পত্র থেকে বেশী প্রশ্ন করতে দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো জেনে নিয়ে ভালমত রপ্ত করতে হবে।
ইংরেজী এবং সাধারণজ্ঞানের বাধাধরা কোন সিলেবাস নেই। তবে ইংরেজীর Voice, Narration, Transformation, Article , Parts Of Speech, Synonym -Antonym, Idiom-Phrase থেকে প্রতিবছর প্রশ্ন আসে তাই এগুলোতে ভাল দক্ষতা থাকতে হবে।
বিগত দুবছরের প্রশ্ন থেকে দেখা যায় সাধারণ জ্ঞান কোন নির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করছেনা। মেডিকেলে সাধারণত সাম্প্রতিক বিশ্ব থেকে কোন প্রশ্ন আসেনা। তাই সাম্প্রতিক বিশ্ব বাদ দিয়ে সাধারণজ্ঞান যেমন: রাজধানী, মুদ্রা, সদরদপ্তর,ঐতিহাসিক স্থান, নদ-নদী, বিবিধ আন্তর্জাতিক ও বিবিধ বাংলাদেশ বিষয় ভাল করে রপ্ত করতে হবে। প্রতিদিন রুটিন করে সময় বের করে নিয়ে ইংরেজী ও সাধারনজ্ঞান চর্চা বাড়াতে হবে মূল পড়াশোনার পাশাপাশি।
স্টুডেন্টদের পড়াশোনো সহজীকরণের জন্য আমার নিজস্ব কিছু প্রফেশনাল টেকনিক্যাল শীট রয়েছে। এর মধ্যে রসায়নের একটি শীট শেয়ার করলাম। ভার্সিটি মেডিকেল বা প্রকৌশল সব ধরণের শিক্ষার্থীরাই এটি নামিয়ে প্রিন্ট করে নেবে। ৬ পেজের এই শীট থেকে বিগত বছরগুলোতে ভার্সিটিতে মিনিমাম ২টো প্রশ্ন কমন পড়েছে বলে দেখা যায়।
এভাবেই, সততা,নিষ্টা এবং পরিশ্রমই তোমাকে দেবে সফলতার স্বাদ।
ভাল থেকে, সুস্থ থেক।
তানজিল,
রংপুর মেডিকেল কলেজ।
সিনিয়র সাবজেক্ট স্পেশালিষ্ট (বায়োলজি ও কেমিস্ট্রি)
রংপুর শাখা, রংপুর।
Author: Dr. Tanzil
আমি নেট মাস্টার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 64 টি টিউন ও 1834 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 9 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যদিও মেডিকেল আমার জন্য না, তবে এটা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ! কারণ বেশ কিছু তথ্য কাজে লাগবে। 😀
অনেক ধন্যবাদ 🙂