সুখী হবার সহজ তরিকাঃ শত ক্ষোভ আর দুঃখের মাঝেও হাঁসবেন কেন জানতে হলে আসুন!

জাপানী সাধক হো তেই এর জীবন দর্শন দিয়েই শুরু করা যাক!

হো তেই বুদ্ধের বাণী প্রচার করতেন। কিন্তু তাঁর পুরো শিক্ষাই ছিলো হাসি। শুধুমাত্র হাসি। তিনি গ্রাম থেকে গ্রামে; বাজার থেকে বাজারে ঘুরে বেড়াতেন। গ্রামের মাঠে বা বাজারের মাঝখানে দাঁড়াতেন। তারপর হাসতে শুরু করতেন।

এই হাসি ছিল তার বাণী। তাঁর হাসি যেমন ছিল প্রাণবন্ত, তেমনি ছোঁয়াচে। হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসত এই হাসি। দমকে দমকে সারা শরীর নাচিয়ে, পেটে ঢেউ তুলে উঠে আসত এই হাসি। হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি যেতেন তিনি। তার চারপাশে সমবেত জনতাও হাসতে শুরু করত।

সেই হাসি ছড়িয়ে পড়ত চারপাশে। পুরো গ্রাম-জনপদের সবাই যোগ দিত হাসিতে, হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যেত তারা। গ্রামের লোকেরা হো তেই-এর জন্যে অপেক্ষা করত। কখন তিনি আসবেন। কারণ তিনি নিয়ে আসতেন হাসি, আনন্দ, উচ্ছলতা, আশীর্বাদ। তাঁর সাথে হাসিতে যোগ দিয়ে দুঃখ-শোক ভুলে যেত, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত হতো মানুষ।

অবাক হলেন? হাঁসির মাধ্যমে না হয় দুঃখ-শোক ভুলে থাকা যায় মানলাম, কিন্তু তাই বলে রোগ-ব্যাধি সারানো!

হাসির নিরাময় ক্ষমতা নিয়ে ডাক্তাররা প্রচুর গবেষণা করেছেন এবং করছেন। যত গবেষণা হচ্ছে তত নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে, এবং প্রাপ্ত তথ্য থেকে প্রমাণিত যে হাঁসির মাধ্যমে ছোটখাটো অনেক রোগ-ব্যাধি সেরে যায়! কেউ যখন হাসে তখন তার সারাদেহেই স্পন্দন তৈরি হয়। আর এই স্পন্দন অবশ্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনে। তাই অনেকে বলেন হাসিই সর্বোত্তম ওষুধ। ছোটখাটো যে কোনো রোগ সেরে যায় হাসিতে।

সাধারণ সময়ের থেকে হাসির সময় গভীর নিশ্বাস নেয়া হয়, যা পুরো শরীরে প্রভাব ফেলে। গভীর শ্বাস নেয়ার জন্য অক্সিজেন শরীরে বেশি পরিমাণে প্রবেশ করে। ফলে শ্বাসনালীতে বায়ু চলাচল বাড়ে, মাংসপেশির আরাম হয়, হৃৎপিণ্ড ও রক্তসঞ্চালন উদ্দীপ্ত হয়। হাসতে থাকা মানুষের মস্তিষ্ক শরীরে অবসাদের হরমোন যেমন অ্যাড্রেনালিন, এপিনেফ্রিন ও কর্টিজন তৈরি বন্ধ করে দেয়। যখন কেউ হাসে তখন সেরোটনিন নিঃসরণ হয়। এটা সুখী হরমোন হিসেবে পরিচিত। তাই যত বেশি হাসবে মানুষ তত বেশি সুখী বোধ করবে।

অনেকে বলে সব সময় হাঁসা পাগলের লক্ষণ, তখন বুঝতে হবে কথাটি যে বলেছে সে নিজেই হাঁসির উপকারীতা সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা সে নিজেই একটা পাগল! 🙂 কেউ হাসলেই যে তার পার্সোনালিটি কমে যাবে আর মুখ ভেড়ার মত গম্ভীর করে রাখলেই যে তার পার্সোনালিটি বেড়ে যাবে এমন হাস্যকর চিন্তা শুধুমাত্র বোকাদের মাথাতেই আসা সম্ভব!

এখন আপনি বলতে পারেন, মাথার মধ্যে নানা দুঃশ্চিন্তা, ক্ষোভ, রাগ আর কস্টের অনুভূতি নিয়ে কিভাবে হাঁসবো! এটা ঠিক যে মনের মধ্যে ক্ষোভ-রাগ-বিষাদ নিয়ে হাঁসা টা খুবই কঠিন একটা কাজ, কিন্তু অসম্ভব নয়! আরো অনেকের মত আমার নিজের ও এমন মাইনকার চিপায় পড়া অনুভূতি অনেকবার ই হয়েছে।

ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে- “Fake it, Until you make it!”

তাই যতক্ষন না আপনার ভেতর থেকে রাগ-ক্ষোভ বা বিষাদের অনুভূতি পুরোপুরি না যাচ্ছে, অভিনয় করে হলেও হাসুন! তাতেও আপনি হাঁসির পজিটিভ ফলগুলো পাবেন। কারন আপনি যখন হাঁসবেন, আপনার রাগ-ক্ষোভ আর কস্টের অনুভূতি গুলো আস্তে আস্তে মিইয়ে যেতে থাকবে। এক সময় একেবারেই নাই হয়ে যাবে! ফলে আপনি রিল্যাক্সড বোধ করবেন। পাশাপাশি আপনার অবদমিত রাগ-কস্ট বা অন্যান্য অনুভূতি গুলির সাথে লড়াই করার মত মানসিক শক্তি ততক্ষনে পেয়ে যাবেন।

অতএব! বেশি বেশি হাসুন! সব সময় হাসুন!! প্রাণ খুলে হাসুন!!! হো তেই-এর মত করে হাসুন। 😀

হাঁসির উপকারীতাঃ

সময়াভাবে এবং পোস্ট বেশি বড় হয়ে যাবে সেজন্য উপরে অল্প কিছু শারিরীক এবং মানসিক উপকারীতা কথা উল্লেখ করেছি। তবে হাঁসির সামাজিক উপকারীতার কথাও একেবারে ফেলনা নয়।

•হাঁসি যেকোন সম্পর্ককে মজবুত করে। প্রবাদে আছে, “হাঁসি মুখের লোক ছাড়া দোকান খোলা উচিৎ নয়”। আপনি যখন কোন শপিং মলে বা দোকানে আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য যান, দোকানদার যদি আপনার সাথে হাঁসিমুখে অভ্যর্থনা জানায় এবং ভাল ব্যবহার করে-আপনি সে দোকান/শপিং মলের নিয়মিত একজন কাস্টোমার হবেন এটা নিশ্চিত।

•একজন গোমড়া মুখো রাশভারী লোকের সঙ্গ খুব কম মানুষেই পছন্দ করে। হাঁসিখুশি মানুষের দিকেই সবাই বেশি আকৃষ্ট হয়। আপনি যতক্ষন একজন হাঁসিখুশি মানুষের সাথে সময় কাটাবেন, আপনার মনটাও ভাল থাকবে।

•কর্পোরেট লাইফেও হাঁসির উপকারীতা অনেক! অফিসের বস যদি হাঁসিখুশি হয় তাহলে সে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে তার সহজেই একটা বন্ডিং তৈরি হয়ে যায়। কেউই হুকুম পছন্দ করেনা, কিন্তু একটি হাঁসিমুখের অনুরোধ সবাই ফেলতে পারেনা! 😉

•প্রেম-ভালবাসার ক্ষেত্রেও হাঁসির ভূমিকা অপরিসীম! নতুন কোন সম্পর্ক তৈরিতে হাঁসি একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। কারো দিকে তাকিয়ে আপনি যখন মোলায়েম ভাবে হাঁসছেন, স্বভাবতই সে কৌতুহলি হবে আপনার প্রতি।

•প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও হাঁসতে পারাটা আপনার প্রচন্ড মানসিক ক্ষমতার পরিচয় বহন করে। আপনার আশে-পাশে অনেককেই দেখবেন বুকের ভেতর এক সমুদ্র কস্ট নিয়েও মুখে সারাক্ষন হাঁসি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! মুভিতে দেখে থাকবেন, ভিলেন কোন কারনে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত কিন্তু তারপর ও তার মুখে একটা ক্রুর হাঁসি খেলা করে! হাঁসির মাধ্যমেই সে তার রাগকে দমন করছে। আমি আপনাকে ভিলেনের মত ক্রুরভাবে হাঁসতে বলছিনা। তার মানসিক ক্ষমতার উদাহরণ দিতে চেয়েছি মাত্র! 😉

এবার আসুন দেখি কিভাবে আমরা আরো বেশি বেশি হাঁসির সুযোগ তৈরি করে নিতে পারি

•হাতের কাছে মজার কোন কমেডী মুভি থাকলে দেখতে বসে যান।

•মজার কোন কৌতুক বা কমিক্সের বই সংগ্রহে রাখুন এবং মাঝে মাঝে পড়ুন।

•ফেসবুকের বিভিন্ন জোক্সের গ্রুপ আছে ওগুলোতে জয়েন করতে পারেন, পাশাপাশি ব্লগের বিভিন্ন মজার মজার পোস্ট গুলো পড়তে পারেন।

•যারা সবসময় হাঁসি-খুশি থাকে বা মজা করতে পারে এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন।

•বাসায় পোষা কোন প্রাণী যেমন কুকুর বা বিড়াল থাকলে ওগুলোর সাথে খেলা করতে পারেন।

•বাসায় বা আশে-পাশে কোন ছোট বাচ্চা থাকলে খেলা বা খুনসুটি করতে পারেন।

•ছোটখাটো কিছু পাগলামি করতে পারেন। (এই পাগলামির ব্যাপারটা ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবোনা, একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম। তাই এটাকে আপেক্ষিক হিসাবে ধরে নিতে পারেন!)

আজ এ পর্যন্তই, সবাই ভাল থাকুন। হাঁসিখুশি থাকুন!

Level 0

আমি মাহবুব হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 12 টি টিউন ও 377 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

খুব বেশি কিছু জানিনা। তবে যেটুকু জানি শেয়ার করতে চেষ্টা করি। ফেসবুকেঃ https://www.facebook.com/shornomrigo


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

পুত্তুম পেলাচ। :mrgreen:
এইবার পড়ি 😀

টেকটিউনসে বেশ কয়েকদিন যাবৎ অনলাইন আয়\PT CHih! এর ভীড়ে নির্মল আনন্দ বিষয়ক টিউন পড়লাম। 🙂
চালিয়ে যান 😀

Level 0

ধন্যবাদ

ভালো লাগলো।প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্বেও হাসতে পারছি না কারন কাল রবিবার ছুটির দিনেও ৪ ঘন্টা কাজ আছে।(দারুন একটা দুঃখের ইমো হবে)।ইমো দিতে পারিনা।

    @প্রবাসী: আপনার জন্য এইটা 😉
    😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥
    😛

    @প্রবাসী:
    ধন্যবাদ লিটন ভাই! 🙂
    হাঁসলে অনেক স্ট্রেস রিলিজ হয়। যদিও সব সময় হাঁসা সম্ভব হয়না, কিন্তু পারলে বেটার।
    ভাল থাকবেন। শ্রাবণের জন্য শুভকামনা রইলো।

    @প্রবাসী: ভাই আপনার জন্য এইটা 😉
    😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 পুরাই কপি পেস্ট মারলাম কারণ নিওফাইটের রাজ্যে আগেই দিয়া দিছে লগিন করতে দেরী হয়ে গেছে আমার । অফ: পি: ভাইজানেরা পুরো সাড়ে দশ ঘন্টায় ঢাকায় আসছি আমার বাড়ী টাঙ্গাইল থেকে যেখানে আমার আসতে লাগে মাত্র দের ঘন্টা সে এক বিশাল করুন কাহিনী আমিতো তবু কনো মতে ঢাকা আসলাম কিন্তু যারা এখনো পথে রয়েছেন তাদের জন্য 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥

লেখাটি পড়ে অনেক ভাল লাগলো, ধন্যবাদ

হা হা হা হা হা হা হা হাহ 😆
দাড়ান হাইসা লই পরে অন্য কমেন্ট করমু 😛 😛

ধন্যবাদ মাহাবুব ভাই সুন্দর একটি টিউন উপহার দেয়ার জন্য। 😆 😆 😆 😆 😆 😆 😛 😛 😀 😀 🙂 😉 🙄

Level 0

picchi bacchader sathe somoy katale ja hashi tuki ora dey. oi hashite apnar mone jotoi dukkho thak na kano ta kete jabe. Ar akta hashir sathe kono kichu tulona hoy na MA ER HASHI………… am i right or am i right…. 🙂

    @tanmoycsit:
    সহমত। আপনি ঠিকই বলেছেন।
    শিশুদের হাঁসির সাথে কেবল স্বর্গীয় কিছুর ই তুলনা চলে।
    শেষের টার সাথেও সহমত। 🙂
    ভাল থাকবেন।

😀 😀 😀 😀 😀 বিমলানন্দ পেলুম 😀 😀 😀 😀 😀

    @Ochena Balok:
    এমন ই যুগ…আনন্দ কি জিনিস সেটা অনুভব করতেই ভুলে গেছে অনেকে।
    আপনি এখনো বিমলানন্দ অনুভব করতে পারছেন জেনে ভালই লাগলো! 😀
    শুভকামনা রইলো।

      @মাহবুব হাসান: আনন্দ ভুলে গেলে আমাকে মারা যেতে হবে।যত সমসসাই থাকুক না হেসে থাকতে পারি না।আপনার প্রতিও শুভকামনা রইল

মাহবুব ভাই কে অনেক দি পরে দেখলাম । তারপর ভাবলাম কি নিয়া হাসি ? একটা তো কারন বা উপলক্ষ দরকার। পরে মনে পড়ে গেল ,আগে একট লোক গাছের গায়ে হেলান দিয়ে কি করত ? তখন বুঝতাম না । এখন কাউ বয় এর টুপি দেখে বুঝতে পারলাম গাছের নীচে হেলান দিয়ে বসে বসে সি করত ? ব্যাফুক হাসি পাইল ।
। 🙂 🙂

পরিশেষে – দারুন পোস্টের জন্য আরো তিনিটি টুপি উপহার দিলাম ।

    @অপু.পশ্চিমবাংলা:
    ঠিকই ধরেছেন! ব্যস্ততার কারনে টিটি বা ব্লগ কোথাও আর আগের মত যাওয়া বা লেখা হয়না। 🙂
    …আজ্ঞে ইয়ে মানে একটি লোক গাছের গায়ে গেলান দিয়ে বসে কি করতো?! 😛
    খুইলা কন-আমিও একটু হাঁসি! 😀
    টুপি তিনটার জন্য অনেক ধন্যবাদ!
    ভাল থাকবেন, অনেক ভাল!

he he he he ha ha ha ha ho ho ho ho khikz. Moja pailam. R dhonnobad apnake.