কিভাবে মূল্যবোধ গড়ে উঠে !

(আমি কনফিউজ্ ড যে এই টিউনটি এডুটিউনের মধ্যে পড়ে কিনা । যদি না পড়ে তবে মডুদের কাছে অনুরোধ ডিলিট করে দেয়ার জন্য)

আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ সিয়েরালিয়ন। অনেক বছর ধরে গৃহবিবাদে জড়িয়ে আছে । সেখানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে একটি দলের দ্বায়িত্বে আছেন বাংলাদেশের মেজর শরিফুল ইসলাম খোকন। সারাদিন কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে আবাস ভবনে ফিরে আসা রাতের পর আবার কাজে নেমে পড়া। এভাবেই চলছে । সেদিন ছিল ১৪ ডিসেম্বর। রাতে শুতে যাবার আগে মেজর শরিফূল ইসলাম তার ব্যাগে রাখা একটি ফটো এলবাম বের করলেন । সেখান থেকে এক বৃদ্ধের ছবির দিকে অপলক চেয়ে থাকলেন । ছবিটি তার প্রানপ্রিয় বাবার। আজ উনার মৃত্যু দিবস ।

ব্যাগ থেকে আরো একটি জিনিস বের করলেন । পুরনো একটি পতাকা । বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ২৫ বছর আগের তৈরি করা পতাকা । আজও তার সবসময়ের সঙ্গী। যতবার সে পতাকাটি বের করে ততবার তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়।

তখন ক্লাশ সিক্সে পড়ে । দুই দিন পরেই ১৬ ই ডিসেম্বর, বিজয় দিবস । তার সকল বন্ধুরা বিজয় দিবসে পতাকা কিনবে । সেই পতাকা গায়ে জড়িয়ে স্কুলের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাবে । স্কুল থেকে বাসায় ফিরে কোন রকমে কাধেঁ ঝুলানো স্কুল ব্যাগটা রেখে মাকে ডাকতে ডাকতে মায়ের কাছে গিয়ে বলল -

''মা আব্বুকে আমাকে একটা আমাদের দেশের জাতীয় পতাকা কিনে দিতে বলবা ?''
- ''কেনরে বাবা ?''
''জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে স্কুলের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান যাব।''
- ''আচ্ছা তোর আব্বু আসলে বলবো। যা এখন হাত মুখ আয় খেতে বসবি''
''আব্বুকে ভাল করে বলবা কিন্তু!''
-''ঠিক আছে ভাল করেই বলবো।''

সারাটা দিন আর তার তর সইছে না কখন তার আব্বু বাড়িতে আসবে আর কখন তার মা কথাটা বলবে । অপেক্ষা করতে করতে একসময় যখন তার আব্বু বাড়িতে আসল তখন সে তার মায়ের কাছে গিয়ে পতাকা কিনার কথাটা মনে করিয়ে দিল । তার মা খাবার দেবার সময় এক ফাঁকে তার আব্বাকে বলল -

''দুই দিন পর বিজয় দিবস''
-''হমম (খেতে খেতে জবাব দিল)''
''আমাদের খোকন স্কুলের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যাবে''
-''হমম যাবে''
"খোকা বলছিল ওর বন্ধুরা সবাই মিলে জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে স্কুলে যাবে। তাই একটা জাতীয় পতাকা কিনে দিতে।''
তার বাবা কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে বললেন - ''ঠিক আছে কাল ব্যবস্থা করব''।

দরজার পাশে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে থাকা খোকা তার আব্বুর কথা শুনে খুব খুশি হল । রাতে সে খুব ভাল করে পড়াশুনা করল ।

পরদিন তার বাবা একটি প্যাকেট হাতে করে বাসায় আসল এবং খোকাকে ডেকে বলল এটা নিয়ে ঘরে যাও। খোকা ভাবল তার জন্য মনে হয় পতাকা কিনে নিয়ে এসছে। তাই সে খুশিমনে প্যাকেটটা নিয়ে ঘরে গেল কিন্তু প্যাকটটা খুলে তার মন খারাপ হয়ে গেল । এটাতো পতাকা নয়!! এতো কাপড়, একটা সবুজ আর একটা লাল । সে মুখ গোমড়া করে বসে রইল।

কিছুক্ষণ পর তারা বাবা তার কক্ষে এসে দেখল খোকা মুখ গোমড়া করে বসে আছে । তার বাবা খুব সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে খোকাকে বলল-
''আমার আব্বুটার মুখ গোমড়া কেন ?''
কোন কথা নাই খোকার মুখে । তার আব্বু আবার বলব-
''ও বুঝেছি ! আমি পতাকা কিনে আনিনি তাই ? ''
- ''তুমি এই কাপড় কিনে আনছ কিন্তু পতাকা আননি কেন ? (একটু রাগ দেখিয়ে)''
''ঠিক আছে পতাকা কিনে আনিনি এইজন্য সরি । আচ্ছা খোকন তুমি কি জান কিভাবে আমাদের পতাকা বানাতে হয় ?''
-''না''
''আমাদের জাতীয় পতাকার পরিমাপ ঠিকমত জান ?''
-''হমম! জানি। একদিন আমাদের স্যার ক্লাশে আমাদের বলেছে।''
"তাহলে চল আজ আমরা নিজেরাই আমাদের জাতীয় পতাকা বানাব।''
একথা শুনে খোকনের চেহারায় একটু হাসিখুশি ভাব আসল । তার বাবা বলল- '' যাও আম্মুর কাছ থেকে কাঁচি, রুলার নিয়ে এসো।" খোকন দৌড়ে গিয়ে সবকিছু নিয়ে আসল । তারপর তার বাবা কিভাবে কাপড় কাটতে হয় কিভাবে সেলাই করতে হয় সবকিছু খোকনকে দেখিয়ে দিল । তারপর বলল-" খোকন, তোমাদের স্কুলের অনুষ্ঠানে কি আমাকে নিবে তুমি ?"
-" আব্বু তুমি সত্যি যাবে !!!!"
"হমম যাব। তুমি খুব সুন্দর করে একটা জাতীয় পতাকা তৈরি কর আমি তোমার সাথে কাল তোমাদের স্কুলে যাব।''
এই বলে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেল ।

খোকন অনেক সময় ধরে কয়েকবারের চেষ্টায় একটা পতাকা তৈরি করল । সেটা তার আব্বু আম্মুকে দেখাতে নিয়ে গেল ।
"আব্বু ! দেখ, আমি পতাকা তৈরি করে ফেলেছি !"
তার বাবা পতাকাটি হাতে নিয়ে ছড়িয়ে নিয়ে খুব ভাল করে দেখল আর হাসি মুখে বলল যে পতাকাটি খুব সুন্দর হয়েছে । তারপর পতাকাটি খোকনের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে খোকনকে কোলে বসিয়ে বলল-
"আমি পতাকা না কিনে কাপড় কিনে আনায় রাগ করেছিলে ?"
-"হুম"
"বাবা শোন, আমাদের দেশটা আগে স্বাধীন ছিলনা । পাকিস্তানিরা আমাদের শাসন করত । এইযে তুমি অনেক সময় ব্যয় করে অনেক চেষ্টার বিনিময়ে একটা পতাকা বানিয়েছ । তেমনি আমাদের দেশের স্বাধীনতাও কেউ এনে দেয়নি। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে অনেক কষ্টে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, পেয়েছি আমাদের এই জাতীয় পতাকা । কখনও এই পতাকার অসম্মান করোনা। এই পতাকাকে ভালবেসো, দেশকে ভালবেসো। কখনও দেশের অসম্মান করোনা ।"

চোখের কোন দিয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে পতাকার উপর । এ অশ্রু যেন আনন্দ বেদনার মিশ্র দ্রবনের এক জলন্ত সাক্ষী ।

Level 0

আমি ছাত্র ও শিক্ষক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 54 টি টিউন ও 1010 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

তুমি যদি শিক্ষিত হও,অশিক্ষিতকে আলো দেবে। না পারলে তুমি অহংকার করবেনা,তুমি দূর্ব্যবহার করবেনা,বিনয়ের সঙ্গে কথা বলবে,তুমি শিক্ষিত বলেই এ তোমার অতিরিক্ত দায়।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

ঘটনাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো , কিন্তু কি কমেন্ট করবো বুঝতে পারছিলাম না ….thnx vai

দারুন হয়েছে লিখাটা ।

টিউনের গন্ধ পেয়ে আমি খোকন হাজির হইয়া গেছি। আমিতো জানতামই না যে আমাকে নিয়ে টেকটিউন্সে লেখালেখি হয়। অনেক ভাল হয়েছে যা বলার ভাষা নেই।

ধন্যবাদ

আচ্ছা স্যার ! আপনি আমাকে এত খারাপ ভাবেন ক্যান? 🙁 আমি কিন্তু হ্যাব্বি মাইন্ড খাইছি 🙁

হুব্বুল ওয়াতান মিনাল ঈমান ,(স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ ) ।
দেশ কে ভালোবাসতে শিখুন ।
যাই হোক না কেন
এটাই তো জন্ম ভূমি
R বাবা তো বাবা ই যার কথা লিখে শেষ করা যাবে না ।
বাবা আসলে একটু রাগি টাইপের , আমার মতে ,

    @আজিজ: ধন্যবাদ আপনাকে। স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ – এ কথাটা মনে হয় ঠিক না। দেশপ্রেম সওয়াবের কাজ ও সকলের উচিত দেশকে ভালবাসা। কিন্তু এটা কিভাবে ঈমানের অঙ্গ হয় তার শপক্ষে প্রমান দেখালে খুশি হতাম। ধন্যবাদ।

লেখাটা যে মারাত্মক সেটা না বললেও চলে। 😉
ধন্যবাদ। 🙂

ভাল লাগল টিউনটি পড়ে,ধন্যবাদ।
যখন স্বাধীনতার কথা এসেই গেল তখন আর একটা কথা না বলে পারছিনা,স্বাধীনতার ৪০ বছর পর আমার মনে হয় আমাদের এই প্রযন্মে আরেকটা মুক্তি যুদ্ধের দরকার আর সেই যুদ্ধটা হবে দেশের সকল দুর্নীতিবাজদের থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য তবেই আগের মুক্তি যুদ্ধের ফল আমারা ভাল ভাবে ভোগ করতে পারব।

লেখা ভালো হয়েছে, পিলাচ

@শাওন ভাই,নাহ, খাওয়ার এত ভাল ভাল জিনিস থাকতে ব্যান খাইতে যামু কোন সুখে? 🙄
পরীদের সহ্যসীমা দেখতে মুঞ্চায়! :mrgreen:

Level 0

ধন্যবাদ……আপনাকে।