অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং শরীরের ওপর অত্যাচারের কারণে আমাদের সবারই কোনো না কোনো সময় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হওয়ার আগেই সাবধান হলে জীবন হবে সুস্থ, সুন্দর ও উপভোগ্য। অজ্ঞতা, অসচেতনতা, অবহেলা ও ছোটখাটো ভুলের জন্য আমরা অনেক সময় বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। <>যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান, ধূমপান বর্জন করেন, প্রয়োজনীয় ঘুম, পর্যাপ্ত বিশ্রামসহ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করেন এবং বদ-অভ্যাস ত্যাগ করেন, নিয়ম মেনে চলেন, তবে নিশ্চিন্ত থাকুন আপনি অনেক সুস্থ থাকবেন। সুস্থ থাকা আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত। সুস্থ মানুষেরা পরম সুখী মানুষ। অসুস্থতা বড় অভিশাপ। মানুষ অসুস্থ না হলে সুস্থ থাকার মূল্য সহজে বুঝতে পারে না। এমন কিছু রোগ আছে, যা আপনার জীবন কেড়ে নিতে পারে বা চিরজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিতে পারে।
পিডিএফ বই
বেশির ভাগ অসুস্থতার কারণ আমরা নিজেরাই। আপনি যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে তার কারণ খুঁজতে চেষ্টা করুন। দেখবেন শরীরের প্রতি হয়তো আপনি যথাযথ যত্ন নেননি অথবা শরীরের প্রতি অবহেলা করেছেন বা কোনো না কোনো ছোট বা বড় ভুলভ্রান্তি করে বসেছেন। কোনো রোগই শরীরে আকাশ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে না। তবে অসম্ভব জটিলতার কারণে কোনো কোনো রোগের প্রকৃত কারণ হয়তো আপনি খুঁজে পাবেন না। কিন্তু বেশির ভাগ রোগের ক্ষেত্রে কারণগুলো স্পষ্ট বুঝতে পারবেন, যদি একটু সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করে চিন্তা করেন। ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, ম্যালেরিয়ার মতো সাধারণ কিছু রোগের কথা ধরা যাক। সবার অবশ্যই জানা উচিত ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসজাতীয় রোগ সৃষ্টি হয় দূষিত অস্বাস্থ্যকর পানি ও খাবার থেকে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া হয় বিভিন্ন প্রজাতির জীবাণুবাহিত মশার কামড় থেকে; যদিও ক্যান্সারের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে, তার পরও বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান কারণ। জেনেটিক ডায়াবেটিস ছাড়া অন্য ডায়াবেটিসের অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো মাত্রাতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাবার খাওয়া ও ব্যায়াম না করা। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ অতিমাত্রায় ভাত, রুটি, চিনি, কোল্ড ড্রিংকস, আইসক্রিম খাওয়াসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা। নিয়মিত ব্যায়াম করলে, সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেলে, ধূমপান বর্জন করলে, প্রয়োজনীয় ঘুম, পর্যাপ্ত বিশ্রামসহ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করলে, বদ-অভ্যাস ত্যাগ করলে এবং নিয়ম মেনে চললে মানুষের স্ট্রোক ও হৃদেরাগের ঝুঁকি ৮০ শতাংশ, ডায়াবেটিস ৯০ শতাংশ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে যায়। অস্বাভাবিক জীবনযাপন ও নিয়ম না মানার কারণে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হই। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে দৌড়াতে হয়, হরেক রকম ওষুধে অভ্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। মানুষের ওষুধ খাওয়ার এই প্রবণতা প্রাকৃতিক নয়, কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। অসুস্থ হলে জীবন স্বাভাবিক নিয়মে চলে না। সর্বক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, জীবনের সুখ-শান্তি নষ্ট হয়, টাকা-পয়সার অপচয় হয়। জীবনে নেমে আশাকরি। নিজের ভুল বা অপকর্মের কারণে আমাদের অসুখবিসুখ হলে, জীবনে কোনো বিপর্যয় বা দুর্যোগ নেমে এলে আমরা বলে থাকি—যা হয়েছে সব আল্লাহর হুকুমে হয়েছে। এ ধরনের চিন্তা ঠিক নয়। আল্লাহ বান্দার অমঙ্গল চান না এবং তিনি কোনো মন্দ কাজের আদেশ দেন না। আপনি জেনেশুনে দূষিত পানি ও খাবার খেয়ে অসুস্থ হবেন আর দোষ হবে আল্লাহর—এটা কোন বিচার? আমরা অনেকেই জানি না বা বুঝতে চেষ্টা করি না যে ঢাকা শহরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে আমাদের অসংখ্য রোগের শিকার হতে হচ্ছে। ইসলাম ধর্ম বলে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। ঢাকা শহরের নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পচনশীল ময়লা-আবর্জনার কারণে চারদিকে দুর্গন্ধ ও রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকায় ধূলিদূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, হাঁপানির মতো রোগ দেখা দিচ্ছে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় ধূলিদূষণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা। পরিবেশদূষণের কারণে অধিক হারে মানুষ অ্যাজমা ও নানা রকম অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। পরিবেশদূষণের কারণে সংক্রামক রোগের হার বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের নির্বিচার ব্যবহার, যা সৃষ্টি করছে ভয়ানক অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। এখন বলুন, এসব কি আল্লাহর হুকুমে হচ্ছে, না মানুষের কারণে হচ্ছে। অভ্যাসগত কারণে আমরা নিজেরাই কি নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছি না? আমরা যদি আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের এসব অনাকাঙ্ক্ষিত রোগের শিকার হতে হতো না, চিকিৎসকের কাছে দৌড়াতে হতো না এবং ওষুধেরও প্রয়োজন হতো না। তাই আমাদের সুস্থ থাকার সব রকম পথ খুঁজতে হবে এবং সুস্থ থাকতে হবে।
আমি বই লাভারস পোলাপাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।