নতুন বছর কি করছি ও কি করা উচিত- একটি ইসলামিক দৃষ্টিকোন
আসসালামুআলাইকুম রাহমাতুল্লাহে ওবারাকাতুহু
আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছেন আল্লাহর রহমতে আশা করি। আজ চারদিকে 31st Night চারিদিকে এর ঈমান বিধ্বংসী কর্মকান্ডের অশুভ সুচনা করছে অনেকে। আসুন একটু সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে লেখাটি পড়ি এবং self-analysis করি। আগেই ধন্যবাদ জানাই সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি – এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ তাৎপর্য নেই। আর তাই তো ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে, না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপলক্ষ পালন করেছেন। এমনকি পয়লা মু্হাররামকে নববর্ষের সূচনা হিসেবে গণনা করা শুরুই হয় নবীজীর(সা.) মৃত্যুর বহু পরে, উমার ইবনুল খাত্তাবের (রা.) আমলে। এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যহীন, এর সাথে জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই, আর সেক্ষেত্রে ইংরেজি বা অন্য কোন নববর্ষের কিই বা তাৎপর্য থাকতে পারে ইসলামে?
কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে আল্লাহ এই উপলক্ষের দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে গেল। আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন:
“নিশ্চয়ই যেকেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে, আল্লাহতার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তারবাসস্থান হবে অগ্নি।এবং যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (কুর’আন, ৫:৭২)
নববর্ষ উদযাপনের সাথে মঙ্গলময়তার এই ধারণার সম্পর্ক রয়েছে বলে কোন কোন সূত্রে দাবী করা হয় , যা কিনা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়। মুসলিমদেরকে এ ধরনের কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে ইসলামের যে মূলতত্ত্ব: সেই তাওহীদ বা একত্ববাদের ওপর পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
আমাদের সমাজে নববর্ষ যারা পালন করে, তারা কি ধরনের অনুষ্ঠান সেখানে পালন করে, আর সেগুলো সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কি? নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে: পটকা ফুটিয়ে বা আতশবাজি পুড়িয়ে রাত ১২টায় হৈ হুল্লোড় করে পরিবেশ ও প্রতিবেশের শান্তি বিনষ্ট করে নববর্ষকে স্বাগত জানানো, ব্যান্ড সঙ্গীত বা অন্যান্য গান-বাজনার ব্যবস্থা, সম্ভ্রান্ত পল্লীর বাড়ীতে বা ক্লাবে গান-বাজনা, মদ্যপান ও পান শেষে ব্যভিচারের আয়োজন ইত্যাদি – এছাড়া রেডিও টিভিতে বিশেষ অনুষ্ঠান ও পত্রপত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্র ও “রাশিফল” প্রকাশ।
এবারে এ সকল অনুষ্ঠানাদিতে অনুষ্ঠিত মূল কর্মকান্ড এবং ইসলামে এগুলোর অবস্থান সম্পর্কে পর্যালোচনা করা যাক:
এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্য-পূজারী ও প্রকৃতি-পূজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র, যা আধুনিক মানুষের দৃষ্টিতে পুনরায় শোভনীয় হয়ে উঠেছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজের অনেকেরই ধর্মের নাম শোনামাত্র গাত্রদাহ সৃষ্টি হলেও প্রকৃতি-পূজারী আদিম ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নকল করতে তাদের অন্তরে অসাধারণ পুলক অনুভূত হয়। সূর্য ও প্রকৃতির পূজা বহু প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন জাতির লোকেরা করে এসেছে। যেমন খ্রীস্টপূর্ব ১৪ শতকে মিশরীয় “অ্যাটোনিসম” মতবাদে সূর্যের উপাসনা চলত। এমনি ভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় এবং মেসো-আমেরিকান সংস্কৃতিতে সূর্য পূজারীদেরকে পাওয়া যাবে। খ্রীস্টান সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত যীশু খ্রীস্টের তথাকথিত জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বরও মূলত এসেছে রোমক সৌর-পূজারীদের পৌত্তলিক ধর্ম থেকে, যীশু খ্রীস্টের প্রকৃত জন্মতারিখ থেকে নয়। ১৯ শতাব্দীর উত্তর-আমেরিকায় কিছু সম্প্রদায় গ্রীষ্মের প্রাক্কালে পালন করত সৌর-নৃত্য এবং এই উৎসব উপলে পৌত্তলিক প্রকৃতি পূজারীরা তাদের ধর্মীয়-বিশ্বাসের পুনর্ঘোষণা দিত। মানুষের ভক্তি ও ভালবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির সাথে আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরক বা অংশীদারিত্বে লিপ্ত করানো শয়তানের সুপ্রাচীন “ক্লাসিকাল ট্রিক” বলা চলে। শয়তানের এই কূটচালের বর্ণনা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে তুলে ধরেছেন:
“আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয়ক রেছে…”(কুর’আন, ২৭:২৪)
নববর্ষের পার্টি বা “উদযাপন আয়োজনের” অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নারীর সহজ-লভ্যতা – নিউ-ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে অথবা ঢাকার গুলশান ক্লাবে – পশ্চিমেও এবং তাদের অনুকরণে এখানেও ব্যাপারটা একটা অলিখিত প্রলোভন। নববর্ষের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে সমাজ-বিধ্বংসী যে বিষয়গুলো পাওয়া যাবে, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে নারীকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা। নববর্ষের পার্টি বা উদযাপন আয়োজনের সবর্ত্রই সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীকে পুরুষের সাথে অবাধ মেলামেশায় লিপ্ত দেখা যাবে। পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে যে সকল আকষর্ণীয় বস্তু দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারী। রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন:
“আমি পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছিনা।” (বুখারী ও মুসলিম)
সমাজ নারীকে কোন অবস্থায়, কি ভূমিকায়, কি ধরনের পোশাকে দেখতে চায় – এ বিষয়টি সেই সমাজের ধ্বংস কিংবা উন্নতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। নারীর বিচরণক্ষেত্র, ভূমিকা এবং পোশাক এবং পুরুষের সাপেক্ষে তার অবস্থান – এ সবকিছুই ইসলামে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ দ্বারা নির্ধারিত, এখানে ব্যক্তিগত বা সামাজিক প্রথা, হালের ফ্যাশন কিংবা ব্যক্তিগত শালীনতাবোধের কোন গুরুত্বই নেই। যেমন ইসলামে নারীদের পোশাকের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেয়া আছে, আর তা হচ্ছে এই যে একজন নারীর চেহারা ও হস্তদ্বয় ছাড়া দেহের অন্য কোন অঙ্গই বহিরাগত পুরুষেরা দেখতে পারবে না। বহিরাগত পুরুষ কারা? স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীদের পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, মুসলিম নারী, নিজেদের মালিকানাধীন দাসী, যৌনকামনাহীন কোন পুরুষ এবং এমন শিশু যাদের লজ্জাস্থান সম্পর্কে সংবেদনশীলতা তৈরী হয়নি, তারা বাদে সবাই একজন নারীর জন্য বহিরাগত। এখানে ব্যক্তিগত শালীনতাবোধের প্রশ্ন নেই। যেমন কোন নারী যদি বহিরাগত পুরুষের সামনে চুল উন্মুক্ত রেখে দাবী করে যে তার এই বেশ যথেষ্ট শালীন, তবে তা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা শালীনতা-অশালীনতার সামাজিক মাপকাঠি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়, আর তাই সমাজ ধীরে ধীরে নারীর বিভিন্ন অঙ্গ উন্মুক্তকরণকে অনুমোদন দিয়ে ক্রমান্বয়ে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে যে, যেখানে বস্তুত দেহের প্রতিটি অঙ্গ নগ্ন থাকলেও সমাজে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় – যেমনটা পশ্চিমা বিশ্বের ফ্যাশন শিল্পে দেখা যায়। মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ভারতবর্ষে যা শালীন, বাংলাদেশে হয়ত এখনও সেটা অশালীন – তাহলে শালীনতার মাপকাঠি কি? সেজন্য ইসলামে এধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে মানুষের কামনা-বাসনার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়নি, বরং তা কুরআন ও হাদীসের বিধান দ্বারা নির্ধারণ করা হয়েছে। তেমনি নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেননা এই অবাধ মেলামেশা ও অবাধ কথাবার্তাই ব্যভিচারের প্রথম ধাপ। যিনা-ব্যভিচার ইসলামী শরীয়াতের আলোকে কবীরাহ গুনাহ, এর পরিণতিতে হাদীসে আখিরাতের কঠিন শাস্তির বর্ণনা এসেছে। এর প্রসারে সমাজ জীবনের কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে, ছড়িয়ে পড়ে অশান্তি ও সন্ত্রাস এবং কঠিন রোগব্যাধি। আল্লাহর রাসূলের হাদীস অনুযায়ী কোন সমাজে যখন ব্যভিচার প্রসার লাভ করে তখন সে সমাজ আল্লাহর শাস্তির যোগ্য হয়ে ওঠে। আর নারী ও পুরুষের মাঝে ভালবাসা উদ্রেককারী অপরাপর যেসকল মাধ্যম, তা যিনা-ব্যভিচারের রাস্তাকেই প্রশস্ত করে। এ সকল কিছু রোধ করার জন্য ইসলামে নারীদেরকে পর্দা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, নারী ও পুরুষের বিচরণ ক্ষেত্র পৃথক করা এবং দৃষ্টি অবনত রাখার বিধান রাখা হয়েছে। যে সমাজ নারীকে অশালীনতায় নামিয়ে আনে, সেই সমাজ অশান্তি ও সকল পাপকাজের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়, কেননা নারীর প্রতি আকর্ষণ পুরুষের চরিত্রে বিদ্যমান অন্যতম অদম্য এক স্বভাব, যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই সামাজিক সমৃদ্ধির মূলতত্ত্ব। আর এজন্যই ইসলামে সুনির্দিষ্ট বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে যে কোন প্রকার সৌন্দর্য বা ভালবাসার প্রদর্শনী ও চর্চা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শনের ফলাফল দেখতে চাইলে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকানোই যথেষ্ট, গোটা বিশ্বে শান্তি, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ঝান্ডাবাহী খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ছয় মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত তথাকথিত সভ্য দেশে মানুষের ভিতরকার এই পশুকে কে বের করে আনল? অত্যন্ত নিম্নবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেও সহজেই বুঝতে পারে যে, স্রষ্টার বেঁধে দেয়া শালীনতার সীমা যখনই শিথিল করা শুরু হয়, তখনই মানুষের ভিতরকার পশুটি পরিপুষ্ট হতে শুরু করে। পশ্চিমা বিশ্বের অশালীনতার চিত্রও কিন্তু একদিনে রচিত হয়নি। সেখানকার সমাজে নারীরা একদিনেই নগ্ন হয়ে রাস্তায় নামেনি, বরং ধাপে ধাপে তাদের পোশাকে সংক্ষিপ্ততা ও যৌনতা এসেছে, আজকে যেমনিভাবে দেহের অংশবিশেষ প্রদর্শনকারী ও সাজসজ্জা গ্রহণকারী বাঙালি নারী নিজেকে শালীন বলে দাবী করে, ঠিক একইভাবেই বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে দেহ উন্মুক্তকরণ শুরু হয়েছিল তথাকথিত “নির্দোষ” পথে।
এছাড়া যা কিছুই মানুষকে ব্যভিচারের দিকে প্রলুব্ধ ও উদ্যোগী করতে পারে, তার সবগুলোকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতের দ্বারা:
“তোমরা ব্যভিচারের কাছে ও যেওনা।অবশ্যই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্টপন্থা।” (কুর’আন, ১৭:৩২)<
ব্যভিচারকে উৎসাহিত করে এমন বিষয়, পরিবেশ, কথা ও কাজ এই আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
বিভিন্ন সাজে সজ্জিত পর্দাবিহীন নারীকে আকর্ষণীয়, প্রগতিশীল, আধুনিক ও অভিজাত বলে মনে হতে পারে, কেননা, শয়তান পাপকাজকে মানুষের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে তোলে। যেসব মুসলিম ব্যক্তির কাছে নারীর এই অবাধ সৌন্দর্য প্রদর্শনকে সুখকর বলে মনে হয়, তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের বক্তব্য:
ক. ছোট শিশুরা অনেক সময় আগুন স্পর্শ করতে চায়, কারণ আগুনের রং তাদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু আগুনের মূল প্রকৃতি জানার পর কেউই আগুন ধরতে চাইবে না। তেমনি ব্যভিচারকে আকর্ষণীয় মনে হলেও পৃথিবীতে এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং আখিরাতে এর জন্য যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে, সেটা স্মরণ করলে বিষয়টিকে আকর্ষণীয় মনে হবে না।
খ. প্রত্যেকে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি, একজন নারী যখন নিজের দেহকে উন্মুক্ত করে সজ্জিত হয়ে বহু পুরুষের সামনে উপস্থিত হয়ে তাদের মনে যৌন-লালসার উদ্রেক করে, তখন সেই দৃশ্য দেখে এবং সেই নারীকে দেখে বহু-পুরুষের মনে যে কামভাবের উদ্রেক হয়, সেকথা চিন্তা করে এই নারীর বাবার কাছে তার কন্যার নগ্নতার দৃশ্যটি কি খুব উপভোগ্য হবে? এই নারীর সন্তানের কাছে তার মায়ের জনসম্মুখে উন্মুক্ততা কি উপভোগ্য? এই নারীর ভাইয়ের কাছে তার বোনের এই অবস্থা কি আনন্দদায়ক? এই নারীর স্বামীর নিকট তার স্ত্রীর এই অবস্থা কি সুখকর? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে কিভাবে একজন ব্যক্তি পরনারীর সৌন্দর্য প্রদর্শনকে পছন্দ করতে পারে? এই পরনারী তো কারও কন্যা কিংবা কারও মা, কিংবা কারও বোন অথবা কারও স্ত্রী? এই লোকগুলোর কি পিতৃসুলভ অনুভূতি নেই, তারা কি সন্তানসুলভ আবেগশূন্য, তাদের বোনের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ স্নেহশূন্য কিংবা স্ত্রীর প্রতি স্বামীসুলভ অনুভূতিহীন? নিশ্চয়ই নয়। বরং আপনি-আমি একজন পিতা, সন্তান, ভাই কিংবা স্বামী হিসেবে যে অনুভূতির অধিকারী, রাস্তার উন্মুক্ত নারীটির পরিবারও সেই একই অনুভূতির অধিকারী। তাহলে আমরা আমাদের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য যা চাই না, তা কিভাবে অন্যের কন্যা, মাতা, ভগ্নী কিংবা স্ত্রীদের জন্য কামনা করতে পারি? তবে কোন ব্যক্তি যদি দাবী করে যে, সে নিজের কন্যা, মাতা, ভগ্নী বা স্ত্রীকেও পরপুরুষের যথেচ্ছ লালসার বস্তু হতে দেখে বিচলিত হয় না, তবে সে তো পশুতুল্য, নরাধম। বরং অধিকাংশেরই এধরনের সংবেদনশীলতা রয়েছে। তাই আমাদের উচিৎ অন্তর থেকে এই ব্যভিচারের চর্চাকে ঘৃণা করা। এই ব্যভিচার বিভিন্ন অঙ্গের দ্বারা হতে পারে, যেমনটি নবীজী(সা.) বর্ণনা করেছেন:
“…চোখের যিনা হচ্ছে তাকানো, জিহ্বার যিনা হচ্ছে কথা বলা, অন্তর তা কামনা করে এবং পরিশেষে যৌনাঙ্গ একে বাস্তবায়ন করে অথবা প্রত্যাখ্যান করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার দ্বারা সংঘটিত যিনাই মূল ব্যভিচার সংঘটিত হওয়াকে বাস্তব রূপ দান করে, তাই জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য সে সকল স্থান থেকে শতহস্ত দূরে থাকা, যে সকল স্থানে দৃষ্টি, স্পর্শ, শোনা ও কথার ব্যভিচারের সুযোগকে উন্মুক্ত করা হয়।
সঙ্গীত ও বাদ্য: নববর্ষের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকে সংগীত ও বাদ্য। ইসলামে নারীকন্ঠে সংগীত নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ – একথা পূর্বের আলোচনা থেকেই স্পষ্ট। সাধারণভাবে যে কোন বাদ্যযন্ত্রকেও ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া, যেমন বিশেষ কিছু উপলক্ষে দফ নামক বাদ্যযন্ত্র বাজানোর অনুমতি হাদীসে এসেছে। তাই যে সকল স্থানে এসব হারাম সংগীত উপস্থাপিত হয়, সে সকল স্থানে যাওয়া, এগুলোতে অংশ নেয়া, এগুলোতে কোন ধরনের সহায়তা করা কিংবা তা দেখা বা শোনা সকল মুসলিমের জন্য হারাম। কিন্তু কোন মুসলিম যদি এতে উপস্থিত থাকার ফলে সেখানে সংঘটিত এইসকল পাপাচারকে বন্ধ করতে সমর্থ হয়, তবে তার জন্য সেটা অনুমোদনযোগ্য। তাছাড়া অনর্থক কথা ও গল্প-কাহিনী যা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তা নিঃসন্দেহে মুসলিমের জন্য বর্জনীয়। অনর্থক কথা, বানোয়াট গল্প-কাহিনী এবং গান-বাজনা মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য শয়তানের পুরোনো কূটচালের একটি, আল্লাহ এ কথা কুরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন:
“এবং তাদের মধ্যে যাদেরকে পার পর্যায়ক্রমে বোকাবানাও তোমার গলার স্বরের সাহায্যে, … ” (কুর’আন, ১৭:৬৪)
যে কোন আওয়াজ, যা আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহবান জানায়, তার সবই এই আয়াতে বর্ণিত আওয়াজের অন্তর্ভুক্ত। (তফসীর ইবন কাসীর)
আল্লাহ আরও বলেন:
“এবং মানুষের মাঝে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর পথ থেকে [মানুষকে] বিচ্যুত করার জন্য কোন জ্ঞান ছাড়াই অনর্থক কথাকে ক্রয় করে, এবং একে ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে, এদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (কুর’আন, ৩১:৬)
রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন:
“আমার উম্মাতের মধ্যে কিছু লোক হবে যারা ব্যভিচার, রেশমীবস্ত্র, মদ এবংবাদ্যযন্ত্রকে হালাল বলে জ্ঞান করবে।” (বুখারী)
এছাড়াও এ ধরনের অনর্থক ও পাপপূর্ণ অনুষ্ঠান সম্পর্কে বহু সতর্কবাণী এসেছে কুরআনের অন্যান্য আয়াতে এবং আল্লাহর রাসূলের হাদীসে।
যে সকল মুসলিমদের মধ্যে ঈমান এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, তাদের উচিৎ এসবকিছুকে সর্বাত্মকভাবে পরিত্যাগ করা।
সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এজন্য যে, এতে নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয় রয়েছে:
এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। এ প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে:
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন, এবং কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী(সা.)-এঁর ওপর, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের ওপর।
“এবং তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমাও সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার পরিধি আসমানও জমীনব্যাপী, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য।” (আলে-ইমরান, ৩:১৩৩)
আরো যদি বিস্তারিত জানতে চান ভিজিট করুন-
http://muslim.zohosites.com/সমসাময়িক বিষয়সমুহ
দোআ করবেন সমস্ত মুসলিম উম্মতের জন্য।
আসসালামুআলাইকুম রাহমাতুল্লাহে ওবারাকাতুহু
শাহরিয়ার আজম
সাভার
আমি Sharear Azam। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 42 টি টিউন ও 365 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে আসার সুযোগ দিন।আমীন।