প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বর্তমানে পণ্য ও সেবার বিপণনে এসেছে নতুন ধারা। প্রথাগত মার্কেটিং এর জায়গা দখল করে নিয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং। কেননা প্রায় সকল মানুষের হাতে হাতে আছে এখন স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। আর এই নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে যে কোনো বিজ্ঞাপণ।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ই-মেইল মার্কেটিং। যদিও ই-মেইল মার্কেটিং এর সুফল সম্পর্কে সকলের স্পষ্ট ধারনা নেই। কিন্তু ই-মেইল মার্কেটিং এর সঠিক ব্যবহার করতে পারলে এই সেক্টর থেকেই ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব। তাই সিরিয়াস ভাবে কাজ শিখলে ও ই-মেইল মার্কেটিং এর ওপরে দক্ষ হয়ে উঠলে এই সেক্টরেই একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন।
আজকের টিউনের মাধ্যমে ই-মেইল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ টিউনটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে ই-মেইল মার্কেটিং করে আয় করতে পারবেন এবং কীভাবে এই সেক্টরে কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
ই-মেইল মার্কেটিং করার উপায় সম্পর্কে জানার আগে একটু ই-মেইল মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা নেয়া যাক। ই-মেইল এর মাধ্যমে কোনো পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপণ সম্ভাব্য ক্রেতার নিকট পৌঁছে দেয়াকে ই-মেইল মার্কেটিং বলে। আমরা অনেক সময় আমাদের ই-মেইলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণ জাতীয় ই-মেইল দেখতে পাই। এই ইমেইল গুলো মূলত মার্কেটিং এর উদ্যেশ্যে প্রেরণ করা হয়।
ঐ সকল ই-মেইলে প্রবেশ করলে বেশিরভাগ সময় দেখবেন আপনাকে অন্য একটি ওয়েবসাইটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে আবার বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করার জন্য ছবি ও অর্ডার অপশন পাবেন। অনেক সময় এইসকল বিজ্ঞাপণে প্রলুব্ধ হয়ে আপনি হয়তো কোনো কিছু কিনেও ফেলেছেন অথবা পরবর্তীতে কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই যে ইমেইল এর মাধ্যমে আপনাকে কিছু ক্রয় করার জন্য প্রলুব্ধ করা হলো এটাই মূলত ই-মেইল মার্কেটিং।
এই যে ই-মেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ক্রেতাদের এনগেজড রাখা এটা কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজে করেন না। কোনো একজন এক্সপার্ট মার্কেটার হায়ার করে তাকে দিয়ে কাজ করান। আপনি চাইলে ই-মেইল মার্কেটিং শিখে এই ধরনের একটি কাজে জয়েন করতে পারেন। অথবা নিজের ব্যবসার মার্কেটিং এর জন্যও ই-মেইল মার্কেটিং শিখতে পারেন।
ই-মেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আসলে কাজ শেখার থেকেও বড় বিষয় হলো ব্যক্তিগত বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা। সেই সাথে আপনার টেকনিক্যাল বিষয়েও ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। ই-মেইল মার্কেটিং করে আয় করার জন্য আপনাকে বেসিক ই-মেইল তৈরির বিষয়ে ভালো দক্ষতা তৈরি করতে হবে। সেই সাথে বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করার নিয়মাবলি জানতে হবে। সকল টেকনিক্যাল বিষয় ভালোভাবে শেখার জন্য ই-মেইল মার্কেটিং কোর্স করতে পারেন।
মনে রাখবেন একটি বা দুটি কোর্স করলে আপনি পুরোপুরি ই-মেইল মার্কেটিং এর ওপরে এক্সপার্ট হতে পারবেন না। আপনাকে প্রতিনিয়ত প্রাকটিস করতে হবে এবং লিড জেনারেশন এর জন্য নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করতে হবে।
আপনি যখন ক্লায়েন্টকে পর্যাপ্ত ক্রেতা এনে দিতে পারবেন তখন আপনি মার্কেটিং সেক্টরে সফল হবেন। আর ই-মেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কাস্টমার জোগাড় করতে হলে আপনার বিশেষ কিছু স্কিল বা দক্ষতা থাকা জরুরি। জেনে নিন ই-মেইল মার্কেটিং সেক্টরে সফল হতে আপনার কী কী দক্ষতা থাকতে হবে।
ই-মেইল মার্কেটিং এর এর প্রথম শর্ত হলো আপনার কাছে সম্ভাব্য ক্রেতার ই-মেইল এড্রেস থাকতে হবে। ই-মেইল এড্রেস না থাকলে আপনি কার কাছে মেইল করবেন? এই যে সম্ভাব্য ক্রেতার তথ্য বা ই-মেইল এড্রেস সংগ্রহ করার কাজ এটাকেই বলা হয় লিড জেনারেশন। আর ই-মেইল মার্কেটিং সেক্টরে সফল হওয়ার পূর্বশর্ত লিড জেনারেশনে অভিজ্ঞ হওয়া।
আপনি আপনার ক্লায়েন্ট এর ওয়েবসাইট থেকে ইউজার দের ই-মেইল এড্রেস সংগ্রহ করতে পারেন। অন্য কোনো বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে তাদের ই-মেইল এড্রেস সংগ্রহ করতে পারেন। এমন অসংখ্য ট্রিকস রয়েছে লিড জেনারেশন এর। আপনি যখন ই-মেইল মার্কেটিং কোর্স করবেন তখন তার মধ্যে লিড জেনারেশন এর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অথবা আপনি নিজেও এই সেক্টরে একটু ঘাটাঘাটি করলে অনেক নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করতে পারবেন।
আপনি যে ই-মেইল টির মাধ্যমে মার্কেটিং করবেন তা হতে হবে খুবই আকর্ষণীয়। ই-মেইল এর স্ট্রাকচার কেমন হলে তা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে সেই বিষয়ে আপনার ধারণা থাকতে হবে।
আরেকটি বিষয় হলো লোকজন এখন অল্পের মধ্যে ভালো কিছু খোঁজে। বেশ বড় লেখা হলে কেউ পড়তে চাইবে না। তাই এমনভাবে ই-মেইল সাজাতে হবে যাতে দু-চার লাইনে পুরো বিষয়টি সম্ভাব্য ক্রেতার সামনে তুলে ধরা যায়। সাথে আকর্ষণীয় ছবি বা ডিজাইন এড করে আরও সুন্দরভাবে বিষয়টি সাজাতে পারেন। কাস্টমার আকৃষ্ট করে এমন ই-মেইল তৈরির বিষয়ে আপনার পূর্ণ আয়ত্ত থাকতে হবে।
সাধারণ ভাবে ই-মেইল করতে তো কমবেশি সবাই পারে। কিন্তু ই-মেইল মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে ই-মেইল এর বিভিন্ন এডভান্স টুল ব্যবহার করার উপায় জানতে হবে। এই সকল টুল ব্যবহার করে আপনি একসাথে হাজার হাজার মেইল এড্রেসে একই সময়ে ই-মেইল পাঠাতে পারবেন৷ তাছাড়া ই-মেইল সেট করে রাখতে পারবেন যাতে করে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে সেটা পৌঁছে যায়। এছাড়াও অসংখ্য শর্টকাট টুল রয়েছে ই-মেইল মার্কেটিং করার জন্য।
আপনাকে সকল কার্যকরী ই-মেইল টুলস ব্যবহারের ওপরে পূর্ণ আয়ত্ত রাখতে হবে। জানতে হবে কোন টুল দিয়ে কোন কাজ করতে হবে। ই-মেইল এর কাজকে সহজ করতে Feed Burner, Mailchimp, Constant Contact, Sendpress সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় টুলস রয়েছে।
একজন ই-মেইল মার্কেটার হিসেবে আপনার অবশ্যই কমিউনিকেশন স্কিল হাই থাকতে হবে। আপনি যতো ভালোভাবে লোকজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন ততোই বিকক্রয় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তাই ই-মেইল মার্কেটিং সেক্টরে কাজ শুরু করার আগে নিজের কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত করার দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত।
ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরের অন্যান্য শাখায় মূলত সাধারণ ভাবে উন্মুক্ত বিজ্ঞাপণ দেয়া হয়। এতে টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে বিজ্ঞাপণ পৌঁছানোর চান্স খুব কম৷ কিন্তু ই-মেইল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে খুঁজে খুঁজে টার্গেট অডিয়েন্সকে মেইল করা হয়। তাই সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে খুব সহজেই এনগেজড থাকা যায়।
ই-মেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে রিপিট কাস্টমার পাওয়া যায়। কেউ একজন আপনার বা আপনার ক্লায়েন্ট এর সাইট থেকে কিছু কিনলে তার ই-মেইল এড্রেসে পুনরায় বিজ্ঞাপণ পাঠানো যায়৷ এক্ষেত্রে রিপিট কাস্টমার আসার চান্স অনেক বেশি৷
এছাড়াও ই-মেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ক্রেতার ফিডব্যাক নেয়া যায়, ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়৷ সবথেকে বড় কথা হলো ই-মেইল মার্কেটিং সঠিকভাবে করতে পারলে বিক্রয় বৃদ্ধি পায়৷ ফলে ক্লায়েন্ট খুশি হয় আর আপনার আয়-ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই ই-মেইল মার্কেটিং সেক্টরে একটি সফল ক্যারিয়ার তৈরি করার আশা করা যেতেই পারে।
আশাকরি ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ শাখা ই-মেইল মার্কেটিং সম্পর্কে একটি ক্লিয়ার ধারণা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন। আপনার নিজের যদি একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে তো ই-মেইল মার্কেটিং আপনার জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। তাছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে যারা ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন তাদের জন্যও ই-মেইল মার্কেটিং হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর।
টিউনটি ভালো লাগলে একটি জোসস করবেন প্লিজ। ডিজিটাল মার্কেটিং, অনলাইন চাকরি ও অনলাইন বিজনেস সম্পর্কে আকর্ষনীয় সকল টিউন পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।