আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন। আজকে হাজির হলাম "ডিজিটাল মার্কেটিং কে? কী? কেন? কীভাবে?" এর ৬ষ্ঠ পর্ব নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করব Inbound Marketing এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য নিয়ে। বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
অনেকে Inbound Marketing এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না তারা ভাবে এই দুইটা টার্ম একই। না, Inbound এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য কিন্তু রয়েছে। এই পর্বে আমরা এই বিষয়টিই পরিষ্কার করব।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের মার্কেটিং করা হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। এটা হতে পারে আপনার ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, অথবা ইমেইলের মাধ্যমে। অন্যদিকে Inbound Marketing হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি মার্কেটিং মেথডোলজি। এখানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কৌশল গুলোই ব্যবহার করা হয় তবে এই পদ্ধতি নির্দিষ্ট মেসেজ বিশাল অডিয়েন্সকে না দিয়ে, লক্ষ্য থাকে কোয়ালিটি লিড জেনারেট করা।
অনলাইন মাধ্যমে প্রোমোশন করার সব পদ্ধতি গুলোকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে, এটা হতে পারে ইমেইল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ওয়েবসাইট ব্যানার ইত্যাদি। কিন্তু ইনবাউন্ড মার্কেটিং হচ্ছে নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট একটি মার্কেটিং কৌশল। এখানে ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল গুলোই অবলম্বন করা হয় তবে এর উদ্দেশ্য থাকে কোয়ালিটি অডিয়েন্স এবং লিড জেনারেট করা। বলা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং একটি শর্ট টাইম প্রসেস অন্যদিকে ইনবাউন্ড মার্কেটিং লং টার্ম প্রসেস।
ইনবাউন্ড মার্কেটিং একটা মেথডোলজি যা ডিজিটাল মার্কেটিং এসেস্ট গুলো ব্যবহার করে কাস্টমারদের আকর্ষণ করে, এনগেজ করে এবং তাদের তৃপ্ত করতে সাহায্য করে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর তুলনা করা হয় কিন্তু ইনবাউন্ড বা আউটবাউন্ড পদ্ধতির সাথে একে পার্থক্য করা হয় না। ডিজিটাল মার্কেটিং এ, ইনবাউন্ড বা আউটবাউন্ড পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন যখন বিশাল অডিয়েন্স কে লক্ষ্য করে কোন বিজ্ঞাপণ দেয়া হবে সেটা হবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর আউটবাউন্ড পদ্ধতি। এখানে আক্রমণাত্মক ভাবে অডিয়েন্সকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হবে। অন্যদিকে ইনবাউন্ড পদ্ধতিতে অডিয়েন্সকে তার সুবিধা মত প্রোমোশন করা হবে। যখন ওয়েবসাইটে ব্যানার দিয়ে এড দেয়া হবে তখন সেটা হবে আউটবাউন্ড পদ্ধতি, কারণ ওই নির্দিষ্ট টপিকে অডিয়েন্স এর আগ্রহ নাও থাকতে পারে কিন্তু যখন ব্লগ টিউনের মাধ্যমে কিছু প্রমোট করা হবে তখন সেটা হবে ইনবাউন্ড পদ্ধতি, কারণ সে আগ্রহী বলেই এটা পড়বে।
প্রতিটি কোম্পানির নির্দিষ্ট মার্কেটিং লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজন সঠিক এবং কার্যকর মার্কেটিং স্ট্রেটেজি। মার্কেটিং স্ট্রেটেজির কোন শেষ নেই, তবে আপনি কোন স্ট্রেটেজি অবলম্বন করবেন সেটা নির্দিষ্ট করতে পারেন দুটি মার্কেটিং কনসেপ্ট এর মাধ্যমে, এর মধ্যে একটি হচ্ছে ইনবাউন্ড মার্কেটিং অন্যটি আউটবাউন্ড মার্কেটিং। এই দুটি মার্কেটিং কনসেপ্ট এর এপ্লিকেশনে রয়েছে ভিন্নতা, রয়েছে সুবিধা এবং কিছু চ্যালেঞ্জ। এখন আমরা জানব এই দুটি কনসেপ্ট এর সুবিধা, চ্যালেঞ্জ এবং ওভারভিউ।
এই দুই মার্কেটিং এর মধ্যে প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর লক্ষ্য হচ্ছে কাস্টমারের কাছে এমন ভাবে পৌঁছানো যার মাধ্যমে সে পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অন্যদিকে ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন কন্টেন্ট তৈরি এবং বিতরণ করা যার মাধ্যমে কাস্টমাররা ওয়েবসাইটের দিকে ধাবিত হয়।
আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর পদক্ষেপ গুলো হবে আক্রমণাত্মক, বিশদ যার লক্ষ্য হবে বিভিন্ন শ্রেণীর লোককে ক্রেতায় পরিণত করা অন্যদিকে ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর পদক্ষেপ গুলো হবে স্পেসিফিক গ্রুপ কেন্দ্রিক যারা সময়ের সাথে সাথে পণ্য ক্রয় করবে।
চলুন ইনবাউন্ড মার্কেটিং এবং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর পার্থক্য গুলো দেখে নেয়া যাক,
প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস সম্পর্কে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার কৌশল হল ইনবাউন্ড মার্কেটিং। পরিসংখ্যান বলে ৬৩% ভোক্তারা তাদের শপিং জার্নির অনলাইন থেকে শুরু করে। তারা প্রোডাক্ট সার্চ করে এবং সর্বশেষ পণ্য বা সেবা ক্রয়ের মাধ্যমে অভাব বা চাহিদা পূরণ করে। তাই ইনবাউন্ড মার্কেটিং এ প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে যাতে কাস্টমার বুঝতে পারে এর মাধ্যমে তাদের কি ধরনের সমস্যার সমাধান হবে।
এটি করার অনেক পথ রয়েছে যেমন ব্লগ, ভিডিও কন্টেন্ট, গাইডবুক ইত্যাদি। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া Post, পডকাস্ট, রিপোর্ট এর মধ্যে প্রোডাক্ট কম্পারিজন, টেস্টিমোনিয়াল, কম্পিটিটিভ প্রাইজিং, রিভিউ এমন ভাবে তুলে ধরতে হবে যেন কাস্টমাররা অন্য পণ্য থেকে আপনারটি আলাদা করতে পারে।
যেমন ধরুন কাস্টমার কোন মার্কেটিং সফটওয়্যার খুঁজছে। তারা সম্ভবত প্রথমে সার্চ ইঞ্জিনে লিখবে “best marketing tool” এবং সার্চ ইঞ্জিনের অর্গানিক রেজাল্টে সেরা কিছু টুল লিয়ে ব্লগ আর্টিকেল আসবে। আর্টিকেলটি পড়ে তারা হয়তো আরও কিছু জানতে চাইবে।
হয়তো নিচে কোন ওয়েববিনারের লিংক দেয়া থাকবে। যেখানে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখানো হবে। অডিয়েন্সরা লিংকে ক্লিক করবে, জয়েন করুক বা না করুক নিজেদের নাম ও ইমেইল সেখানে দেবে। সাইট সেই ইনফরমেশন গুলো স্টোর করে রাখবে।
অডিয়েন্সরা ওয়েববিনারে যুক্ত হলে তারা বিভিন্ন সফল স্ট্রেটেজি সম্পর্কে জানবে আরও আগ্রহী হবে, ওয়েবসাইট তাদের ফলোআপ মেইল পাঠাবে। মার্কেটিং টুলের প্রমোশনাল মেসেজ পাঠাবে। আর এভাবে কাস্টমার নির্দিষ্ট পণ্য বা সার্ভিস কিনবে
ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর বেশ কিছু সুবিধা আছে যার মাধ্যমে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন আপনার কোম্পানির জন্য সঠিক স্ট্রেটেজি কোনটা।
অবশ্যই সব কোম্পানির জন্য ইনবাউন্ড মার্কেটিং নয়। চলুন ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর চ্যালেঞ্জ গুলো দেখে নেয়া যাক
আউটবাউন্ড মার্কেটিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে বিশাল অডিয়েন্স এর মধ্যে মার্কেটিং মেসেজ পাঠানো হয়। বড় রিটার্ন পাবার জন্য বড় অডিয়েন্স গ্রুপে প্রোমোশন চালানো হয়। আউটবাউন্ড মূলত ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং প্রসেস যেমন ডাইরেক্ট মেইল, ইভেন্ট, বিলবোর্ড, কোল্ড কলিং, টিভি, নিউজপেপার, রেডিও ইত্যাদি। তাছাড়া মডার্ন টেকনোলজি যেমন Pay Per Click এবং স্প্যাম ইমেইলেও আউটবাউন্ড মার্কেটিং এপ্লাই করা হয়।
এই মার্কেটিং এ কাস্টমাররা পণ্য সার্চ করে না, হয়তো তারা টিভি দেখছে এমন সময় প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপণ দেখানো হয়, এমন বিজ্ঞাপণের উদ্দেশ্য থাকে কাস্টমারকে জানানো পণ্যটি কেন কেনা প্রয়োজন।
স্বাভাবিক ভাবেই কাস্টমার এটা ভুলে যায়। আবার ধরুন কোথাও ড্রাইভিং করে যাচ্ছেন আবার একই পণ্যের বিজ্ঞাপণ বিলবোর্ডে দেখা গেল। আবার এটির কথা মনে হল, কিছু দিন পর নিউজপেপারে দেখলেন আরেকটু আগ্রহী হলেন। ফাইনালি আপনাকে মেইলে কুপন কোড পাঠানো হল। এবার আপনি এটি কেনার সিদ্ধান্ত নিলেন। আউটবাউন্ড মার্কেটিং এ এভাবেই আসলে প্রোডাক্ট ফাইনাল কাস্টমারের কাছে পৌছায়। মার্কেটিং স্ট্রেটেজি গুলো ডেইলি লাইফে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিনিয়ত কাস্টমারদের আগ্রহী করে তুলা হয়।
চলুন আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর সুবিধা গুলো জেনে নেয়া যাক,
আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর সুবিধা থাকার পরেও এখানে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। চলুন চ্যালেঞ্জ গুলো দেখে নেয়া যাক।
মোট কথা ট্র্যাডিশনাল মেথড ব্যবহার করে বিশাল অডিয়েন্স এর মাঝে প্রমোশনাল মেসেজ পাঠানো হচ্ছে আউটবাউন্ড মার্কেটিং এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে মার্কেটিং প্রোমোশন চালানো হল ইনবাউন্ড মার্কেটিং। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আউটবাউন্ড মার্কেটিং এ হাইয়ার কাস্টমার পাওয়া সম্ভব তবে এতে খরচও বেশি হয়। অন্যদিকে টার্গেট কাস্টমারকে টার্গেট প্রোমোশন চালিয়ে কখনো কখনো বেশি সেলস পাওয়া সম্ভব।
ডিজিটাল মার্কেটিং এমন একটা বিষয় যেখানে একই ছাতার নিচে বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতি বিদ্যমান থাকে। অন্যদিকে ইনবাউন্ড মার্কেটিং হচ্ছে এটা নির্দিষ্ট কৌশলের নাম। আশা করছি আজকের এই পর্বটি আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে। মতামত থাকলে অবশ্যই জানান। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।