বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে, আমরা প্রায় সকলেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আমাদের পার্সোনাল ইনফরমেশন শেয়ার করে থাকি। কিন্তু সকল ওয়েবসাইটই কি নিরাপদ? অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিছু ওয়েবসাইটে তথ্য শেয়ার করার ফলে আমরা বিপদের সম্মুখীন হই। অনিরাপদ ওয়েবসাইটগুলো আমাদের তথ্য চুরি করে বিভিন্নভাবে অপব্যবহার করতে পারে, যা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বিশাল ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আজকের এই টিউনে আমি আলোচনা করব, এমন ৬ ধরনের ওয়েবসাইটের সম্পর্কে যেখানে আপনার রিয়েল ইনফরমেশন দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ইন্টারনেটে আপনার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য এবং আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন সুরক্ষিত রাখার জন্য এই তথ্যগুলি আপনার অবশ্যই জানা গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পণ্য বা সার্ভিস প্রোমোট করার জন্য বিজ্ঞাপণ দেওয়া হয়। অনেক সময় এমন কিছু ওয়েবসাইট থাকে, যা অত্যন্ত আকর্ষণীয় অফার বা ডিসকাউন্টের প্রলোভন দেখায়। কিন্তু, এসব ওয়েবসাইটে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন দেওয়ার আগে অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কেননা, অনেক ক্ষেত্রেই এসব ওয়েবসাইটগুলি ভুয়া বা সাইবার অপরাধীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। আর যারা আপনার তথ্য সমূহ চুরি করতে পারে।
এসব ওয়েবসাইট গুলোতে আপনার নাম, এড্রেস, ফোন নম্বর এবং ক্রেডিট কার্ড তথ্য সহ সকল সেনসিটিভ ইনফরমেশন দেওয়ার তথ্য আগে নিশ্চিত করুন যে, ওয়েবসাইটটি নিরাপদ এবং বিশ্বাসযোগ্য। এক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি যাচাই করতে, এর URL এর শুরুতে "https://" দেখুন এবং ওয়েবসাইটটির প্রাইভেসি পলিসি ও ব্যবহার শর্তাবলী ভালভাবে পড়ে দেখুন। এছাড়াও, অজানা ওয়েবসাইটগুলো থেকে বিজ্ঞাপণের বিভিন্ন অফার দেখে যেকোন সার্ভিস বা পণ্য নেওয়ার আগে অবশ্যই বিভিন্ন প্লাটফর্মে তাদের রিভিউ গুলো দেখে নিশ্চিত হতে পারেন।
মনে রাখবেন, যেসব ওয়েবসাইটে খুব বেশি লোভনীয় এবং হট ডিল এর মত অফার গুলো থাকে, সেগুলো হ্যাকিং বা স্ক্যাম করার উদ্দেশ্যেও হতে পারে। অতএব, এ ধরনের ওয়েবসাইটে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন বা যেকোনো ধরনের ফিন্যান্সিয়াল ইনফরমেশন শেয়ার না করে যাচাই-বাছাই করে নিন।
সাধারণত, বিভিন্ন পাবলিক প্লেস যেমন ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, এয়ারপোর্ট বা শপিং মলগুলোতে ফ্রি Wi-Fi ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। এই ধরনের জায়গাগুলিতে Wi-Fi ব্যবহার করতে গেলে একটি ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার কিছু পার্সোনাল ইনফরমেশন প্রদান করতে হতে পারে। এই ধরনের ওয়েবসাইটগুলো আপনার নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রেই ফ্রি Wi-Fi পেজগুলি সাইবার অপরাধীদের একটি ফাঁদ হতে পারে, যেখানে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন চুরি হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের ওয়েবসাইটে আপনার নাম, ইমেইল এড্রেস, ফোন নম্বর বা অন্য কোনও ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার আগে খুবই সতর্ক থাকুন।
এছাড়াও আপনি যেকোনো একটি ফ্রি Wi-Fi কানেকশনের সময় সবসময় নিশ্চিত হোন যে, এটি একটি নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত কোন নেটওয়ার্ক থেকে আসছে। তাই, আপনার যে কোনো সন্দেহজনক বা অপরিচিত ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে কানেক্ট না হওয়াই ভালো। আর, এ ধরনের স্থানগুলোতে ওয়াইফাই কানেক্ট করলেও সেখান থেকে আপনার গুরুত্বপূর্ণ বা সেনসিটিভ তথ্য আদান-প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন।
পাবলিক প্লেসে যেকোনো একটি ফ্রি ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক করার আগে সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য আপনি একটি VPN ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনার ডেটা এনক্রিপ্ট করে রাখবে এবং সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।
অনেকের কাছেই অনলাইনে সার্ভে বা কুইজ বিনোদনের একটি মাধ্যম হতে পারে। এই ধরনের সার্ভে বা কুইজের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বা সার্ভিসের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আবার এ ধরনের ক্যাম্পেইন গুলোর মাধ্যমে কখনও কখনও আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু, এইসব অনলাইন সার্ভে বা কুইজের মাধ্যমে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন চুরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এসব সার্ভে বা কুইজ আসলে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে সাইবার অপরাধীরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করতে পারে। আর তাই, আপনার নাম, ইমেল অ্যাড্রেস, ফোন নম্বর, জন্ম তারিখ বা এমনকি ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে এই ধরনের সার্ভে বা কুইজ এর ওয়েবসাইটগুলোতে তথ্য দিয়ে পূরণ করার আগে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
এই ধরনের ওয়েবসাইটে আপনার তথ্য দেওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার তথ্য দেওয়া ওয়েব সাইটটি একটি নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত সাইট। এছাড়াও, পপ-আপ বিজ্ঞাপণ বা সন্দেহজনক ইমেলের মাধ্যমে প্রাপ্ত সার্ভে বা কুইজে অংশগ্রহণ না করাই ভালো।
অনলাইন ফ্যানড কমিউনিটিগুলো সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ইন্টারেস্টের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। যেখানে অনেক ভক্তরা মূলত তাদের মতামত শেয়ার করে, আলোচনা করে এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। যদিও এই কমিউনিটি গুলো অনেক সময় তথ্য আদান প্রদানের এবং নতুন ফ্রেন্ড বানানোর জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম এর মত কাজ করে। কিন্তু, এ ধরনের কমিউনিটি গুলোতে তো আপনার যেকোনো পার্সোনাল ইনফরমেশন শেয়ার করার আগে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত।
কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের ফ্যানড কমিউনিটিগুলি হ্যাকারদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, যারা বিভিন্ন প্রতারণামূলক এক্টিভিটির মাধ্যমে আপনার তথ্য চুরি করতে পারে। যেরকম নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর বা অন্য কোনো পার্সোনাল ইনফরমেশন এখানে শেয়ার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
ই-কমার্স সাইটগুলো বর্তমানে অনলাইন কেনাকাটার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপনি সহজেই বিভিন্ন পণ্য ও সার্ভিস অনলাইনে কিনতে পারেন। তবে, কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র ওয়ান টাইম কেনাকাটা করার সময় আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রেই, এই ধরনের ওয়েবসাইট গুলোতে পণ্য কেনার সময় আপনাকে নাম, এড্রেস, ফোন নম্বর এবং পেমেন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য দিতে হয়। এখানে সমস্যা হলো যে, যদি সাইটটি নিরাপদ না হয়, তাহলে আপনার এই সংবেদনশীল তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে।
আর তাই, যেকোনো ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে কিছু কেনাকাটা করার আগে আপনি অবশ্যই সেই ওয়েবসাইটটির URL এ "https://" চিহ্নটি দেখবেন। এর মানে হল যে, সাইটটি নিরাপদ। দ্বিতীয়ত, যেকোন অনলাইন কেনাকাটায় পরিচিত এবং বিশ্বস্ত সাইট থেকে কেনাকাটা করার চেষ্টা করুন। এছাড়াও, আপনি যে ওয়েবসাইটটি থেকে কেনাকাটা করছেন, সেসব ব্যবহারকারীদের রিভিউ পড়ে এবং রেটিং দেখে সাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করুন। এক্ষেত্রে যদি কোনও সাইট সম্পর্কে সন্দেহ হয়, তবে সেই সাইট থেকে কেনাকাটা না করাই ভাল।
অনেক কোম্পানি তাদের পণ্য বা সার্ভিসের ফ্রি ট্রায়াল অফার করে থাকে, যা গ্রাহকদেরকে সেই পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে সাহায্য করে। যদিও ব্যবহারকারীর জন্য ফ্রি ট্রায়াল একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে তারা বিনামূল্যে সেই সার্ভিসটি ব্যবহার করা সুযোগ পান। তবে, এজন্য এ সময় ওয়েবসাইটগুলোতে সাইন-আপ করার সময় কখনো কখনো আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এ ধরনের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফ্রি ট্রায়াল সাইন-আপের সময় সাধারণত আপনার নাম, ইমেল এড্রেস, ফোন নম্বর এবং পেমেন্ট তথ্য চাওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এই তথ্যগুলো সাইবার অপরাধীদের হাতে চলে যেতে পারে, যারা পরবর্তীতে সেই তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতারণা করতে পারে।
তাই, এই ধরনের ফ্রি ট্রায়াল সাইন-আপের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকার জন্য আপনার কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। প্রথমত, নিশ্চিত হয়ে নিন যে ওয়েবসাইটটি নিরাপদ। এজন্য ওয়েব সাইটটির ইউআরএল এর শুরুতে "https://" চিহ্নটি দেখে নিন এবং ওয়েবসাইটের প্রাইভেসি পলিসি পড়ে দেখুন। দ্বিতীয়ত, শুধুমাত্র পরিচিত এবং বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট গুলো থেকে ফ্রি ট্রায়াল গ্রহণ করুন।
এছাড়া, কিছু কোম্পানি ফ্রি ট্রায়ালের মেয়াদ শেষ হলে, অটোমেটিক্যালি পেইড সাবস্ক্রিপশন চালু করে দেয়, যা মূলত আপনার পেমেন্ট ইনফরমেশন সেভ করে রাখে। তাই, কোন একটি ওয়েবসাইটে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন দিয়ে ফ্রি ট্রায়াল নেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের শর্তাবলী গুলো ভালোভাবে পড়ে দেখুন এবং তারপর ফ্রি ট্রায়াল নিন। আর আপনি অবশ্যই ফ্রি ট্রায়ালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সাবস্ক্রিপশন ক্যানসেল করতে ভুলবেন না, যদি পরবর্তীতে আর তাদের সার্ভিস ব্যবহার করার ইচ্ছা না থাকে।
আজকের এই ডিজিটাল যুগে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন গুলোর সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাই, অনলাইনে যেকোনো তথ্য শেয়ার করার আগে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে, আপনি যখন ফ্রি ট্রায়াল এর জন্য সাইন-আপ, ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে ওয়ান-টাইম কেনাকাটা, ফ্রি WiFi অ্যাক্সেস, অনলাইন সার্ভে ও কুইজ, বিজ্ঞাপণ এর সাইট, এবং ফ্যানড কমিউনিটি মত সাইটে তথ্য শেয়ার করেন।
এই ধরনের সাইটে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন দেওয়া অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে এবং সেই সাথে আপনার ডেটা সিকিউরিটি জন্য এটি অনেক হুমকি তৈরি করতে পারে। তাই, সবসময় নিশ্চিত করুন যে, আপনি যে ওয়েবসাইটে তথ্য শেয়ার করছেন, সে ওয়েবসাইট আসলেই নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)