পারসোনাল ডাটা যেভাবে ডার্ক ওয়েবে কেনাবেচা হয়?

Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আবার হাজির হলাম আপনাদের জন্য নতুন টিউন নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

আমরা সব সময় শুনি ইন্টারনেটে পারসোনাল ডাটার মূল্য অনেক। কিন্তু কখনো হয়তো কাউকে এই সব তথ্য সেল করতে দেখেন নি বা বিক্রয়ের বিজ্ঞাপনও চোখে পড়ে নি। তাহলে এই সব তথ্য কোথায় বিক্রি হয়? আজকের এই টিউনে আমরা এই বিষয়টিই জানার চেষ্টা করব।

বর্তমানে বিভিন্ন ভাবে অনলাইন ইউজারদের ডাটা চুরি হয়। আর এই সমস্ত ডেটা ইন্টারনেটে থাকা খারাপ পক্ষ গুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করে। পারসোনাল এই ডাটা গুলো সাধারণ ভাবে ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হয়।

ডার্ক ওয়েব কী?

ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে কম বেশি আমরা জানি। আমরা স্বাভাবিক ভাবে যেসব ওয়েবসাইট ব্যবহার করি সে সব গুলো সারফেস ওয়েবসাইট যেমন, গুগল সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন, অনলাইন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও ইন্টারনেটের আরেকটা অংশ আছে যেখানে সব অবৈধ কাজ কর্ম হয়৷ ইন্টারনেটের সে অংশকে বলা হয় ডার্ক ওয়েব৷

যেকেউ চাইলেই ওই সমস্ত ওয়েবসাইটে এক্সেস করতে পারে না কারণ সাধারণ ব্রাউজার দিয়ে সেই ওয়েবসাইট গুলোতে ঢুকা যায় না বা সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে পাওয়া যায় না। ডার্ক ওয়েবসাইটে ঢুকতে হলে Tor এর মত স্পেশাল ব্রাউজারের দরকার হয়।

অনেকে Silk Road নামের একটি ডার্ক ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে অবৈধ ড্রাগস কেনাবেচা করে। এমন আরও ডার্ক ওয়েবসাইট আছে যেগুলো দিয়ে অবৈধ জিনিস পত্র বিক্রি হয় যেমন, ফেক পাসপোর্ট, ডিগ্রি, ম্যালওয়ার, অস্ত্র, এবং সেনসিটিভ পারসোনাল ইনফরমেশন।

ডার্ক ওয়েবে সব সময় অবৈধ জিনিসপত্রই কেনাবেচা হয় না, শিক্ষণীয় বিষয়ও পাওয়া যায়। তবে পুরোপুরি বেনামি থাকার সুবিধা থাকায় অপরাধমূলক কাজ কর্ম নিশ্চিন্ত করা যায়।

পারসোনাল ডাটা কেন ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হয়

পারসোনাল ডাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এই ডাটা দিয়ে কী কী করা যাবে তা লিখে শেষ করা যাবে না। কেউ আপনার পেমেন্ট ডিটেল এর মাধ্যমে আপনার টাকায় কেনাকাটা করতে পারবে, আপনার ইমেইল এড্রেস দিয়ে ফ্রি স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবে, সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার দিয়ে ফ্রি মেডিক্যাল কেয়ার নিতে পারবে। আরও কী কী করতে পারবে আপনি নিজে কিছুক্ষণ ভাবলেই বুঝতে পারবেন।

ডাটার পরিমাণ এবং ভ্যালুর উপর ভিত্তি করে কখনো মিলিয়ন ডলারও সেল হয়। এমন হাজার হাজার ব্যক্তি আছে যারা নিজেদের কাজে পারসোনাল ডাটা ডার্ক ওয়েব থেকে কিনে থাকে। প্রতি নিয়ত এই মার্কেট বড়ই হচ্ছে।

ডাটার দাম কেমন এবং কীভাবে ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হয়?

পারসোনাল ডাটা হ্যাকাররা বিভিন্ন ভাবে কালেক্ট করে। একক ইউজারের ডাটাও কালেক্ট করতে পারে আবার কখনো বড় কোম্পানি বা অর্গানাইজেশনের ডাটা লিক হলেও বিপুল পরিমাণ ইউজার ডাটা তাদের হাতে চলে যায়। যেমন কোন হ্যাকার যদি শপিং ওয়েবসাইট হ্যাক করে তাহলে তার কাছে কাস্টমারের ইমেইল চলে যাবে আবার স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানির ওয়েবসাইট হ্যাক হলে সে অসংখ্য গ্রাহকের সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার পেয়ে যাবে। যা ডার্ক ওয়েবে চড়া দামে বিক্রি হবে।

একবার ডার্ক ওয়েবে আপনার ডাটা বিক্রয়ের জন্য লিস্ট করা হলে সেটা রিমুভ করা অনেক কঠিন। ডার্ক ওয়েবে বেশিরভাগ সময় পেমেন্ট কার্ড কেনাবেচা হয়। তবে কার্ডের তথ্যের উপর ভিত্তি করে দাম কম বেশি হয়। যেমন কোন কার্ডের CVV না থাকলে এর দাম কমে যায়।

ডার্ক ওয়েবে বৈধ ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের ক্লোনও পাওয়া যায় যা দিয়ে কেনাকাটাও করা যায়। মানে আপনার কার্ডের ক্লোন দিয়ে আপনার টাকায় কেনাকাটাও করতে পারবে অন্য পক্ষ। এই কার্ড গুলো ভাল দামে বিক্রি হয়৷ যদি সাথে পিন নাম্বার দেয়া হয় তাহলে ভ্যালু আরও বাড়ে।

ডার্ক ওয়েবের আরেকটি ভ্যালুয়েবল প্রোডাক্ট হল ইমেইল এড্রেস। ইমেইল এড্রেস কিনে যে চাইলে এই ইমেইলের সাথে কানেক্ট করা বিভিন্ন একাউন্টে এক্সেস নিতে পারে। আমরা সাধারণত একটি ইমেইল দিয়ে অনেক একাউন্ট খুলি এই সুযোগটা হ্যাকাররা কাজে লাগায়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ একাউন্টও ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হয়। যদি হ্যাক করা একাউন্টে ক্রিপ্টো থাকে তাহলে সেগুলো চড়া দামে বিক্রি হয়৷ ডার্ক ওয়েবের সবচেয়ে দামী প্রোডাক্ট এটি।

ডার্ক ওয়েবের আরেকটি প্রোডাক্ট হচ্ছে ম্যালওয়্যার। ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে ইউজারের ডিভাইস হ্যাক করে তার থেকে সেনসিটিভ তথ্য সহ আরও অনেক কিছু কালেক্ট করে নেয়া যায়। আর ম্যালওয়্যার অবশ্যই লোকাল স্টোরে পাওয়া যাবে না। ম্যালওয়্যার কেনাবেচার জায়গায়ই হল ডার্ক ওয়েব। ডার্ক ওয়েবে ম্যালওয়্যার Malware as a service হিসেবে বিক্রি করা হয়।

কেনাকাটা কোন মাধ্যমে করা হয়?

ডার্ক ওয়েবের দুই পক্ষ ভাল করেই জানে অবৈধ কেনাকাটায় ট্রেডিশনাল পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করলে সহজেই ধরা খেয়ে যাবে। আর তাই তারা এই সমস্ত লেনদেনে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে বিটকয়েন বেশ জনপ্রিয় তাছাড়া Litecoin এর মত কারেন্সিও ব্যবহৃত হয়। আর এই কারণেই বিটকয়েন নিয়ে এত নেতিবাচক মনোভাব।

শেষ কথা

সাইবার ক্রিমিনালরা অনেক ভাবে পারসোনাল ডাটা কালেক্ট করে। আমরা কোথায় আমাদের সেনসিটিভ ইনফরমেশন দিচ্ছি এই দিকে নজর রাখতে হবে। কারণ অখ্যাত কোম্পানি বা সিকিউরিটিগত ভাবে দুর্বল কোম্পানিতে ডাটা দিলে সেগুলো হ্যাক হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। যতটা পারা যায় সতর্ক থাকুন।

তো আজকে এই পর্যন্তই, কেমন হল আজকের টিউন তা অবশ্যই টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 623 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 117 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস