আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আবার হাজির হলাম আপনাদের জন্য নতুন টিউন নিয়ে।
অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমকে অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে এখন আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে বা জমা দিতে হয় না। অনলাইন ব্যাংকিং আমাদের জীবনকে সহজ করে দিলেও এখানে রয়েছে ফাইনান্সিয়াল রিস্ক।
আপনার অসতর্কতায় টাকা চলে যেতে পারে হ্যাকারের একাউন্টে। ব্যাংক ডিটেল ও ক্রেডিট কার্ড নাম্বার চুরি করে টাকা হাতিয়ে নেয়া খুব বেশি কঠিন কাজ নয়, যদি আপনি অনলাইন সিকিউরিটির ব্যাসিক না জানেন। আজকের এই টিউনে আমরা জানব কীভাবে অনলাইন ব্যাংকিং একাউন্ট নিরাপদে রাখবেন।
ব্যাংক একাউন্ট গুলো নিরাপদ রাখতে ঘন ঘন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। এবং অবশ্যই প্রতিবার স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। এটা এখন খুব বেশি ঝামেলার কাজ না। আপনাকে প্রতিবার নতুন নতুন পাসওয়ার্ড বানাতে হবে না, এখন ক্রোমেই স্ট্রং পাসওয়ার্ড সাজেস্ট করে।
পাসওয়ার্ড ভুলে যাবার সমস্যা থাকলে থার্ডপার্টি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন অথবা ক্রোমের ডিফল্ট পাসওয়ার্ড ম্যানেজারও ব্যবহার করতে পারেন। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের আরও অনেক সুবিধা আছে। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের ব্যবহারের ফলে পাসওয়ার্ড মনে রাখা এবং স্ট্রং পাসওয়ার্ড তৈরি করার ঝামেলা অনেক কমে আসবে।
পাবলিক ওয়াই-ফাই এর অনেক সমস্যা রয়েছে সেগুলো ইতিমধ্যে অনেক টিউনে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কখনো পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করবেন না। পাবলিক ওয়াই-ফাই এ ইন্টারনেট সিকিউর থাকে না। হ্যাকার চাইলেই সব ইনফরমেশন দেখতে পারে।
সব সময় খেয়াল রাখবেন আপনার ওয়েবপেজ এনক্রিপ্টেড কিনা। ব্যাংকিং যেকোনো ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে দেখুন সেটা https:// দিয়ে শুরু হয়েছে কিনা। কানেকশন http:// হলে ব্যাংকিং ওয়েবসাইটে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন। তবে আপনার কানেকশন এনক্রিপ্টেড থাকলেও পাবলিক ওয়াই-ফাই এড়িয়ে চলুন।
পাবলিক ওয়াই-ফাই হ্যাকাররা নজরদারি করে, আপনি যখন কোন লগইন ইনফরমেশন ইনপুট করবেন তখন সেটা তাদের কাছে চলে যেতে পারে। কানেকশন সিকিউর না হলে আপনি অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন৷
চাইলে VPN ব্যবহার করতে পারেন তবে পাবলিক ওয়াই-ফাই না ব্যবহার করা ভাল। ব্যাংকিং লেনদেনে সব সময় মোবাইল ডাটা ব্যবহার করা নিরাপদ।
বর্তমান সময়ে অনলাইনের প্রায় সকল একাউন্টে Two Factor Authentication ব্যবস্থা থাকে। 2FA লগইন এর কিছু অসুবিধা থাকতে পারে তবে এর সুবিধা বেশি। একাউন্টে আপনি এক্সট্রা প্রোটেকশন পাবেন। Two Factor Authentication সম্পর্কে হয়তো আমরা সবাই জানি। পাসওয়ার্ড প্রবেশ করানোর পরেও যদি নতুন ব্রাউজার হয় তাহলে ফোনে কোড যাবে। সঠিক কোড প্রবেশ করলেই কেবল একাউন্টে এক্সেস নেয়া যাবে।
2FA এনেভল থাকলে হ্যাকার পাসওয়ার্ড জেনে গেলেও একাউন্টে এক্সেস করতে পারবে না। তাছাড়া মেসেজ আসলে আপনি বুঝতে পারবেন কেউ হয়তো একাউন্টে এক্সেস নেয়ার চেষ্টা করছে, আপনি সতর্ক হয়ে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলতে পারবেন। সুতরাং আপনার অনলাইন একাউন্ট গুলোতে 2FA এনেভল করে রাখুন।
সন্দেহজনক ইমেইল গুলো থেকে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার পারসোনাল তথ্য চায় এমন ইমেইল এড়িয়ে যেতে হবে। ইমেইল দেখে মনে হতে পারে অথেনটিক কোন সোর্স থেকে এসেছে কিন্তু এটা হ্যাকারের ফাঁদ।
ইমেইল দেখে মনে হবে এটা হয়তো অথেনটিক কোন সোর্স থেকে এসেছে কিন্তু ভাল করে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন এটা আসল না। এই ধরনের ইমেইল গুলোতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হতে পারে অথবা ব্যাংক ডিটেল প্রবেশ করতে বলা হতে পারে।
মনে রাখবেন কোন ব্যাংকিং কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনার কাছে কখনো পারসোনাল কোন তথ্য চাইবে না।
আবার কখনো কোন লিংক এড করা থাকতে পারে, যখনই লিংকে ক্লিক করবেন আপনার সামনে লগইন পেজ চলে আসবে। লগইন ইনফরমেশন দিয়েছেন তো আপনার তথ্য চলে গিয়েছে।
ব্যাংকিং একাউন্টে এক্সেস করতে সবসময় অটোমেটিক লগইন এড়িয়ে চলুন। প্রতিবার ইউজারনেম পাসওয়ার্ড দেয়া বিরক্ত লাগলেও কখনো অটো লগইন অপশনটি এনেভল রাখবেন না। ব্যাংক একাউন্টে লগইন করার সময় যদি পাসওয়ার্ড নতুন করে লিখতে না হয় আগে থেকে সেভ থাকে তাহলে সেটা আপনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
ল্যাপটপ বা ফোন কারো হাতে গেলে তারা খুব সহজেই সেখানে ঢুকে যেতে পারবে। আপনার ব্যাংক একাউন্ট থাকবে ঝুঁকিতে। এক্সেস করে নিলে ফান্ড ট্রান্সফার করা থেকে শুরু করে সেনসিটিভ তথ্যও দেখে নিতে পারে।
আপনার ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং অ্যাপ এর মাধ্যমে ব্যাংকিং কাজ করুন। বেশিরভাগ সময় ডেক্সটপের মাধ্যমে অনলাইন ব্যাংক একাউন্ট বেশি হ্যাক হয়। তাছাড়া ডেক্সটপে ম্যালিসিয়াস এটাকের পরিমাণ বেশি।
সব ডিভাইস থেকেই হ্যাংকিং এর মত ঘটনা ঘটতে পারে তবে ফোনে এর সম্ভাবনা কিছুটা কম। ফোনের ডাটা দিয়ে অ্যাপে লগইন করা এবং মোবাইলের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন করা আপনাকে অনেক বেশি সিকিউর রাখতে পারে। তাছাড়া ফোন ডেক্সটপ থেকে অনেক বেশি সিকিউর যেমন ফোনে ডেক্সটপের মতো ম্যালওয়ার এটাক হয় না। আবার আইফোন হলে তো আরও নিরাপদ কারণ সেখানে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কম।
ফোন বা কম্পিউটার আপডেট করতে যত সময়ই লাগুক না কেন সিস্টেম আপডেট আপনাকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। প্রতিনিয়ত হ্যাকাররা নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে আর এজন্য এই সমস্ত এটাক প্রতিহত করতে ফোনে রেগুলার আপডেট আসে। তাই যখন আপডেট আসে তখনই সিস্টেম আপডেট করে ফেলা উচিৎ।
আমরা Zero Day Vulnerability সম্পর্কে কম বেশি হয়তো জানি। এটা হচ্ছে কোন অ্যাপে অজানা কোন ত্রুটি থাকা যেগুলো পরবর্তীতে হ্যাকাররা বের করে আক্রমণ চালায়। কোন কোম্পানি যখন এমন ত্রুটি পায় সাথে সাথে সেটা ফিক্স করে দেয় আর এই জন্য অ্যাপ বা সিস্টেম সব সময় আপডেট রাখা উচিৎ।
আপনি যদি ফোনে ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে ফোনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করুন। ফোনটি অবশ্যই পিন, ফেসিয়াল রিকুইজিশন, প্যাটার্ন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে লক রাখুন। এর ফলে কেউ আপনার অবর্তমানে ফোনে যেমন এক্সেস করতে পারবে না তেমনি ফোন কখনো চুরি হলেও আপনার ডেটা নিরাপদ থাকবে।
ফোনের প্যাটার্ন, পাসওয়ার্ড অবশ্যই শক্তিশালী রাখার চেষ্টা করুন যেন কেউ অনেক বার চেষ্টা করে খোলে ফেলতে না পারে।
যেকোনো ধরনের লেনদেনে যেন আপনি মেসেজ পান এই সুবিধাটি ব্যাংক দিলে তা অবশ্যই চালু রাখুন। এতে করে হটাৎ করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলা হলে আপনি মেসেজের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন।
সন্দেহজনক কোন লেনদেন হলে তৎক্ষণাৎ টের পাবেন এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
প্রতি মাসে আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্টের উপর নজর রাখুন। হতে পারে কখনো কোন নোটিফিকেশন মিস করেছেন, মেসেজ মিস করেছেন কিন্তু আপনি যদি স্টেটমেন্ট এর দিকে নজর রাখেন তাহলে যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন আপনার চোখে পড়বে।
উপরের টিপস গুলো মেনে চললে আশা করা যায় আপনি অনলাইন ব্যাংকিং ফ্রড থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারবেন। তবে অনলাইনে যেকোনো হ্যাক বা লিক থেকে বাঁচতে সতর্ক ও সচেতন থাকার কোন বিকল্প নেই।
তো আজকে এই পর্যন্তই, কেমন হল আজকের টিউন তা অবশ্যই টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।