আপনার ‘সাইবার হাইজিন’ উন্নত করুন ৫ টি উপায়ে

Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আবার হাজির হলাম আপনাদের জন্য নতুন টিউন নিয়ে।

সুস্থ জীবন যাপন ও বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেইনটেইন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ আমরা সেটা সবাই জানি। বর্তমান সময়ে শারীরিক স্বাস্থ্যবিধি মেইনটেইন করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সাইবার স্বাস্থ্যবিধির দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে৷ ডিজিটাল এই যুগে সাইবার প্লেসে নিরাপদ থাকতে আমাদের মেনে চলা উচিৎ কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন। সাইবার স্বাস্থ্যবিধি বা Cyber hygiene টার্মটি নতুন। এর অর্থ অনলাইনে নিরাপদ থাকতে বিভিন্ন অভ্যাসের পরিবর্তন করা এবং নিয়মিত সিকিউরিটি বিষয় গুলো চেক করা।

আজকের এই টিউনে আমরা দেখব কীভাবে আপনার সাইবার স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করবেন, এবং জানব সাইবার স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করার পাঁচটি ধাপ,

১. সফটওয়্যার আপ টু ডেট রাখা

সফটওয়্যার আপডেটে অলসতা করা যাবে না। আমরা নিয়মিত যে অ্যাপ বা সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করছি সেগুলো শতভাগ নিরাপদ এটার কোন গ্যারান্টি নেই। যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমের সফটওয়ারেই হিডেন ত্রুটি থাকতে পারে। ডেভেলপাররা সেটা আইডেন্টিফাই করা মাত্রই ফিক্স করে দেন আর এজন্য সফটওয়্যার আপ টু ডেট রাখা উচিৎ। প্রতিনিয়ত আপডেট করা আপনার কাছে বিরক্ত লাগতে পারে তবে এটি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের সাইবার এটাক থেকে নিরাপদে রাখতে পারে।

WannaCry এবং Notpetya এর মত Ransomware এটাকের কথা আমরা সবাই জানি। বিশ্বব্যাপী সাইবার ওয়ার্ল্ডে এগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছিল। কোডিং এর বিভিন্ন ত্রুটির মাধ্যমেই ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে পড়েছিল। মজার বিষয় হচ্ছে এই এটাক হবার কয়েক মাস আগেই মাইক্রোসফট এটার ফিক্স আপডেট করে দিয়েছিল কিন্তু যারা সিস্টেম আপডেট করে নি তারাই পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তবে এখন সিস্টেম আপডেট করা এতটাও কষ্টকর নয়। Windows 10 এর পরবর্তীতে ভার্সন গুলো থেকে আছে অটো আপডেটের ব্যবস্থা। MacOS এর ক্ষেত্রে অন্যান্য অ্যাপের পাশাপাশি Mac App Store থেকে সরাসরি সিস্টেম আপডেট হয়ে যায়। তবে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে যেমন আইফোন এবং এন্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত ফোন আপডেট করতে হবে। অ্যাপের আপডেট আসলে সেটা যত দ্রুত সম্ভব আপডেট করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংক বা ফাইনেন্সিয়াল অ্যাপ গুলো আপডেট রাখতে হবে।

২. নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা

নিয়মিত ব্যাকআপ রাখাও সাইবার স্বাস্থ্যবিধির অংশ। বর্তমানে প্রায় সব ডিভাইস এবং অপারেটিং সিস্টেমেই সহজ ব্যাকআপ ব্যবস্থা রয়েছে।

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে থার্ডপার্টি অপশন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকআপ অপশন রয়েছে। এর আগে ২০০৭ সাথে অ্যাপ নিয়ে এসেছে Time machine নামক দারুণ ব্যাকআপ অপশন। বর্তমানে স্মার্টফোন গুলোতে নিজস্ব ব্যাকআপ অপশনের পাশাপাশি গুগল ড্রাইভও থাকে। যেমন আইফোনে এক সাথে iCloud এবং Google Drive দুইটাই আছে।

প্রায় সকল টেক কোম্পানি গুলোই এখন ক্লাউড স্টোরেজ অফার করে। একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাসিক ১০ ডলারেই ক্লাউড স্টোরেজ প্রোভাইট করছে তারা।

আপনি ক্লাউড স্টোরেজ গুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ব্যাকআপ রাখতে পারবেন অথবা লোকাল ব্যাকআপ প্রেফার করলে NAS বা Network Attached Storage ব্যবহার করতে পারেন।

৩. এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা

একটা সময় উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য এন্টিভাইরাস বাধ্যতামূলক ছিল। তবে Windows 10 এর পর থেকে থার্ডপার্টি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা অনেকটা কমেছে কারণ এখন সিস্টেমেই রয়েছে Windows Defender এর মত শক্তিশালী এন্টিভাইরাস ব্যবস্থা। তবে পুরোপুরি নিরাপদ থাকতে আপনার হাতে অনেক অপশন তো রয়েছেই।

ম্যাক ডিভাইসে ভাইরাস ম্যালওয়্যার আক্রমণ করতে পারে, এটা অনেকবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং ম্যাকে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা খারাপ নয়। স্মার্টফোন গুলোকে হ্যাকাররা প্রতিনিয়ত এটাক করার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছে আর তাই স্মার্টফোন গুলোর ব্যাপারেও আমাদের সচেতন হতে হবে।

৪. শক্তি পাসওয়ার্ড

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা অবশ্য নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিদিন আমরা অনলাইনে কত গুলো একাউন্ট ব্যবহার করি, এখন সহজ হবার জন্য যদি ১২৩৪৫৬৭৮ ব্যবহার করি বা নির্দিষ্ট কীবোর্ড লেআউট ব্যবহার করি সেটা হ্যাক করা হ্যাকারের জন্য সেকেন্ডের ব্যাপার। আপনাকে অবশ্যই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে এবং যদি মনে না থাকে তাহলে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে হবে।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজারে একটা মাস্টার পাসওয়ার্ড থাকবে যা কেবল আপনাকে মনে রাখলেই হবে৷ বিভিন্ন পাসওয়ার্ড ম্যানেজার আছে যেগুলো আপনাকে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সাজেশন দেবে সুতরাং কষ্ট করে স্ট্রং পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে না।

৫. অনলাইন স্ক্যাম, স্প্যাম বা ফ্রড থেকে সতর্ক থাকা

প্রতিনিয়ত হ্যাকাররা তৈরি করছে নতুন নতুন ম্যাথড যেগুলোর মাধ্যমে তারা ইউজারদের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের স্প্যামে, হ্যাকিং এ ভর্তি ইন্টারনেট জগত। ইমেইলে ফিশিং বা স্প্যাম এসে আপনার ব্যাংকের টাকা উধাও হয়ে যেতে পারে। পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের কাছে চলে যেতে পারে।

এই ক্ষেত্রে সাইবার স্বাস্থ্যবিধি হবে Two Factor Authentication ব্যবহার করা। ইন্টারনেটে ডাটা চুরি না লিক রোধে VPN ব্যবহার করা।

শেষ কথা

অনলাইনের এই যুগে সাইবার স্বাস্থ্যবিধি আপনাকে অবশ্যই মানতে হবে তা না হলে আপনার প্রাইভেসি নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে আর্থিক ভাবেও আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সাইবার স্বাস্থ্যবিধি মেইনটেইন করতে এই টিউনে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয়ে আপনি সচেতন হোন।

তো আজকে এই পর্যন্তই, কেমন হল আজকের টিউন তা অবশ্যই টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 623 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 117 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস