অনলাইনে প্রায়ই হ্যাকিং কথাটি আমরা শুনে থাকি। অনেকেই হয়তো ইতোমধ্যে হ্যাকিং এর সম্মুখীন হয়েছেন। আর আপনি শুনলে অবাক হবেন যে আমরা সবাই কমবেশি হ্যাকিং এর ঝুঁকিতে আছি। মূলত অনলাইন সেক্টরে যাদের বিভিন্ন তথ্য, সম্পদ বা গুরুত্বপূর্ণ একাউন্ট রয়েছে তারা সকলেই কমবেশি এই ঝুঁকিতে রয়েছে।
আসলে অফলাইনে আমাদের জীবন ও জিনিসপত্র রক্ষার ক্ষেত্রে যেমন নানা ধরনের ঝুঁকি রয়েছে তেমন অনলাইনেও রয়েছে। বলা যায় অনলাইনে ঝুঁকির মাত্রা তুলনামূলক আর-ও বেশি। তবে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ঝুঁকি যেমন বেশি তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রয়েছে অনেক। তবে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তো আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে। নয়তো যে কোনো সময় আমরা দূর্ঘটনার শিকার হতে পারি।
এই টিউনের মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চেষ্টা করবো Cyber Risk বা সাইবার ঝুঁকি কী এবং কীভাবে আপনি Cyber Risk বা সাইবার ঝুঁকি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন। তাই চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
অনলাইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত তথ্য বা সম্পদ চুরি বা হ্যাকিং হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকেই মূলত Cyber Risk বা সাইবার ঝুঁকি বলে। আর এই চুরি বা হ্যাকিং করার কাজটিকে বলা হয় সাইবার অপরাধ। ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকলে বা আর্থিক সচ্ছলতা থাকলে অথবা সাইবার অপরাধীর ইচ্ছা হলেই যে কেউ এই সাইবার ঝুঁকির আওতায় চলে আসতে পারে।
মূলত সাইবার অপরাধীদের একটি দল বা সংগঠন থাকে, যারা তাদের টার্গেট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে লাভবান হওয়ার চেষ্টায় থাকে। আবার কখনও কখনও ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেও এই ধরনের অপরাধের চেষ্টা হতে পারে। এই যে সাইবার অপরাধের ভিকটিম হওয়ার সম্ভাবনা এটাই হলো সাইবার ঝুঁকি।
অনলাইন মাধ্যমের সাথে যুক্ত প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা যে কোনো সংস্থা সাইবার ঝুঁকির আওতাভুক্ত থাকে। তাই প্রত্যেকের Cyber Risk বা সাইবার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত।
Cyber Risk বা সাইবার ঝুঁকি কথাটির বিপরীত শব্দ হলো সাইবার সিকিউরিটি। সাইবার ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচার জন্য যে উপায় বা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তাই মূলত সাইবার সিকিউরিটির আওতাভুক্ত। বর্তমানে সাইবার অপরাধ ও ঝুঁকির মাত্রা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সাইবার নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাইবার সিকিউরিটির উপায় বের করেছে।
তাই সাইবার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকতে হলে আমাদের সাইবার সিকিউরিটির সকল উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কীভাবে অনলাইনে আমাদের সকল তথ্য ও যাবতীয় সম্পদ নিরাপদ রাখবো এই সম্পর্কে বিস্তর ধারণা রাখতে হবে।
সাইবার ঝুঁকি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সাইবার নিরাপত্তার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জেনে নিন।
আমরা অনেক সময় বিভিন্ন বিজ্ঞাপণ দেখে প্রলুব্ধ হয়ে অজানা কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড করে নেই। কিন্তু নিরাপত্তা সম্পর্কে না জেনে এভাবে আসলে কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড করা উচিত না। কারণ বর্তমানে চারদিকে বিভিন্ন ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার এর ছড়াছড়ি। ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারগুলো সাধারণত হ্যাকিং গ্রুপ কর্তৃক তৈরি করা হয়।
একজন ইউজার যখন না জেনে ঐ সফটওয়্যার ডাউনলোড করে তখন হ্যাকারের কাছে সাথে সাথে ইউজারের সকল তথ্য পৌঁছে যায়৷ ইউজার এর ডিভাইস এর যাবতীয় সকল তথ্য হ্যাকার হাতিয়ে নেয়। তারপর ঐ তথ্য ব্যবহার করে ভিকটিম ব্যক্তি বা কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
তাই যে কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড করার আগে বা ব্যবহার করার আগে ঐ সফটওয়্যার এর সিকিউরিটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। বিশেষ করে এটা খেয়াল করবেন সফটওয়্যারটির গুগল সিকিউরিটি আছে কি না।
বর্তমানে হ্যাকাররা টার্গেট একাউন্ট বা সাইটের সম্ভাব্য পাসওয়ার্ড বারবার ট্রাই করে। তাই একটু সহজ পাসওয়ার্ড থাকলে খুব সহজেই তারা পাসওয়ার্ড খুঁজে বের করতে পারে। কেননা তারা শক্তিশালী বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে এই কাজটি করে।
পাসওয়ার্ড স্ট্রং করার ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ডে একটু বৈচিত্রতা আনুন। সংখ্যা, অক্ষর, চিহ্ন এই সকল কিছুর সমন্বয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। একই পাসওয়ার্ড একাধিক একাউন্টে ব্যবহার করবেন না। সেই সাথে নিজের নাম, মোবাইল নম্বর দিকে কখনোই পাসওয়ার্ড সেভ করবেন না।
স্ট্রং পাসওয়ার্ড তৈরির পাশাপাশি ঘন ঘন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা জরুরি। কারণ হ্যাকার দল চেষ্টা করতে করতে আপনার সম্ভাব্য পাসওয়ার্ডের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। ঠিক ঐ মুহূর্তে যদি আপনি আরেকটি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করেন তাহলে আপনার পাসওয়ার্ড খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই স্ট্রং পাসওয়ার্ড সেট করার পাশাপাশি কয়েকদিন পর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন জানা অজানা বিভিন্ন লিংক এর ছড়াছড়ি। এসব লিংক আসলে হ্যাকার দের একটি ফাঁদ। এই ধরনের হ্যাকিং-কে বলে ফিশিং।
এই ফিশিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে কোনো ব্যক্তিকে লিংকে প্রবেশ করানো হয়। লিংকে প্রবেশ করার সাথে সাথে ঐ ব্যক্তির মোবাইলের বা কম্পিউটারের যাবতীয় সকল তথ্য হ্যাকারের কাছে চলে যায়। ফলে হ্যাকার খুব সহজেই টার্গেট ব্যক্তির ডিভাইসের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তাকে হুমকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। অথবা কারো অনলাইনের সম্পদ চুরি করতে পারে।
তাই প্রলোভনে পড়ে অযথা কোনো লিংকে ঢুকবেন না। বিশেষ করে অপরিচিত কারো মাধ্যমে পাওয়া লিংকে তো ঢুকবেন-ই না।
বর্তমানে একদল হ্যাকার সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন ইমেইজকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে হ্যাকার অনেকদিন ধরে টার্গেট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর নজর রাখে। তাদের গতিবিধি লক্ষ করে। প্রয়োজনে ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে ছদ্মবেশে সরাসরি কথা বলে। তারপর তারা আনুমানিক পাসওয়ার্ড দিয়ে পুরো সিস্টেম টিকে হ্যাক করে নেয়।
এই ধরনের হ্যাকিং গুলো মূলত বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা সোস্যাল মিডিয়ায় খুবই প্রতিষ্ঠিত এমন কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে করা হয়। কেননা এই ধরনের হ্যাকিং-এ তুলনামূলক অনেক বেশি সময় এবং টেকনিক্যাল সিস্টেম এর প্রয়োজন। তাছাড়া ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা থেকেও এই ধরনের হ্যাকিং সংঘটিত হয়ে থাকে।
তাই অচেনা কেউ যেচে কথা বলতে আসলে কিংবা ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে সাবধানতার সাথে কথোপকথন শেষ করতে হবে। যাতে কোনো ভাবেই আপনার বা আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত কোনো তথ্য লিক না হয়ে যায়। প্রয়োজনে অচেনা কারোর কথায় রেসপন্স না করাটাই ভালো। তাছাড়া সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে খুব বেশি স্ট্যাটাস দেয়া বা মাতামাতি করা থেকেও বিরত থাকা উচিত। আপনার ব্যক্তিগত বিষয় লোকজন যতো কম জানতে পারবে আপনার একাউন্ট বা সাইট ততো কম হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
এটা ছিল সাইবার ঝুঁকি থেকে বাঁচার একদম প্রাথমিক কিছু টিপস। আপনার একাউন্ট বা সাইট যদি খুবই মূল্যবান হয় তাহলে আপনি অনলাইন সিকিউরিটি গার্ড হায়ার করে রাখতে পারেন। তারা প্রতিনিয়ত আপনার সাইটের ওপর নজর রাখবে যাতে কোনো ধরনের বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া দেখলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে। তাছাড়া এন্টি ম্যালওয়ার সফটওয়্যার ও এন্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডিভাইসকে সাইবার ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখতে পারেন।
আশাকরি সাইবার ঝুঁকি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন৷ তাই নিজের ব্যক্তিগত অনলাইন একাউন্ট ও প্রাতিষ্ঠানিক সাইটের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টিপস গুলো মাথায় রাখবেন। এতে করে আপনার তথ্য ও অনলাইন সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে। ফলে যে কোনো ধরনের ক্ষতি থেকে খুব সহজেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।