কল্পনা করুন যে, আপনি রাতের ডিনার করছেন, কিন্তু হঠাৎ করে আপনার মোবাইলে ডেবিট কার্ডের টাকা শূন্য হয়ে যাওয়ার নোটিফিকেশন আসলো। আপনি তখন দেখতে পাচ্ছেন যে, আপনার একাউন্ট থেকে ক্রমাগত লেনদেন হচ্ছে এবং আপনার একাউন্টের ব্যালেন্স চলে যাচ্ছে। কিন্তু, এক্ষেত্রে আপনি কিছুই করতে পারছেন না কিংবা করতে পারবেন ও না।
এমন পরিস্থিতিতে আপনি যখন সাহায্যের জন্য কল করতে যাচ্ছেন, তখন দেখা গেল, আপনার লাইনটি কানেক্ট হচ্ছে না। আর, সেই সাথে আপনি কাউকে টেক্সট মেসেজ ও করতে পারছেন না। তাহলে, এমন কী হলো যে, আপনার কাজ করছে না এবং আপনিও কোন সাহায্যের জন্য কল করতে পারছেন না?
আপনি যদি এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে, আপনার SIM বা Subscriber Identity Module টি Swap আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং আপনি এই জালে আটকা পড়েছেন।
আজকের এই টিউনে আপনারা জানতে পারবেন সিম সোয়াপ কী এবং আপনার সাথে যাতে এরকমটি না ঘটে, সেজন্য আপনি কী করতে পারেন।
SIM Swapping এর বিষয়টি SIM Jacking নামেও পরিচিত। সিম সোয়াপ হলো এমন একটি সিস্টেম, যার মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তির মোবাইল নাম্বারে প্রতারণামূলক ভাবে অ্যাক্সেস পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন অপরাধী আপনার সেলুলার সিম প্রোভাইডারের ফোন নাম্বার অন্য কোন সিম কার্ডে স্থানান্তর করে, এটিকে SIM Swapping বলে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন একজন ব্যক্তির সিম কার্ডের নাম্বার অপরাধীরা তাদের নিজের সিম কার্ডে স্থানান্তর করে নেয়। যার ফলে, সিমের মূল ব্যবহারকারী প্রতারিত হন।
কোন অপরাধী যদি SIM Swapping করতে সফল হয়, তাহলে সে সকল কল, টেক্সট মেসেজ এবং ইন্টারনেট এর মত বিষয়গুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন সিম কার্ডে স্থানান্তরিত করে এবং আগের সিম কার্ড টি কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
যদিও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে SIM-Swap এর মত ঘটনা ঘটা প্রায় অসম্ভব। কেননা, এখানে সিম কার্ড রিপ্লেস করতে হলেও মূল ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট দরকার হয়। কিন্তু তবুও, বাংলাদেশে অপরাধীরা কিছু টেকনিক ফলো করে SIM Swapping এর কাছাকাছি যেতে পারে কিংবা কোন ব্যক্তির সিম কার্ড সাময়িক অচল করে দিতে পারে। যে বিষয়টি নিয়ে এই টিউনের নিচের দিকে আলোচনা করা হবে।
আমাদের এখন জানার প্রয়োজন, কীভাবে সিম সোয়াপ হয়ে থাকে। কেননা, যেহেতু আপনি কাজের প্রয়োজনে বিশ্বের যেকোন প্রান্তে থাকতে পারেন এবং সে দেশের স্থানীয় সিম কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, তাই এখানে আপনার কোন ভুলের কারণে সিম সোয়াপ এর ঘটনা ঘটতে পারে।
কোন প্রতারক ঘরে বসেই আপনার সিম কার্ড Swapping করতে পারে, যদি তার কাছে একটি সিম কার্ড থাকে এবং সেই সাথে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য থাকে। এক্ষেত্রে তারা আপনার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট গুলো থেকে ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়াও, তারা বিভিন্ন ব্ল্যাক মার্কেটে হ্যাকারদের কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, যেগুলো তারা বিভিন্ন ফিশিং সাইটের মাধ্যমে চুরি করেছে। বিশেষ করে, কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বৈধ ওয়েবসাইটে আদলে একটি জাল ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় এবং সেটির মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়া হতে পারে।
একবার যদি তারা আপনার সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে তারা মোবাইল অপারেটরকে ফোন কল করে সেসব তথ্যগুলো উপস্থাপন করবে। এক্ষেত্রে তারা মোবাইল সার্ভিস দেওয়ার প্রতিনিধিকে যদি বোঝাতে পারে যে, সেই ব্যক্তি আপনি এবং তার আসল সিমটি ভুল কোন জায়গায় রেখে দিয়েছে; তাহলে তিনি হেল্প লাইনের সেই প্রতিনিধিকে উক্ত সিম কার্ড নম্বরটি পরিবর্তন করার জন্য রিকোয়েস্ট করতে পারে।
আর যদি Swap সম্পন্ন হয়, তাহলে আপনার লাইন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হবে। যার ফলে, আপনি আর কল করা, টেক্সট মেসেজ পাঠানো, বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আপনি উক্ত সমস্যাদের সমাধান করার জন্য যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে তাদের কাস্টমার কেয়ারে বা অফিসে না যাবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি একাউন্টের অরিজিনাল মালিক হিসেবে প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
আর যদি কেউ প্রতারণা কিন্তু অপরাধের উদ্দেশ্যে আপনার সিম কার্ড Swap করে থাকে, তাহলে হয়তোবা ইতিমধ্যেই তিনি সেই সিমকার্ডের সাথে সম্পর্কিত অ্যাকাউন্ট গুলোর অ্যাক্সেস নেওয়ার চেষ্টা করবে। এর ফলে, হয়তোবা ইতিমধ্যেই আপনার অনেক অ্যাপ্লিকেশন এবং অনলাইন প্রোফাইলের অ্যাক্সেস তার কাছে চলে যাবে এবং সেখান থেকে তিনি অনেক ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
আপনি এই মুহূর্তে কোন ফোন ব্যবহার করছেন, সেটি SIM Swapping এর জন্য বিবেচ্য বিষয় নয়। যদিও শুধুমাত্র ই-সিম যুক্ত iPhone 14 এবং iPhone 15 এর মত ফোনগুলো SIM-Swap অ্যাটাক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এক কথায় বলতে গেলে, যদি প্রতারকেরা আপনার সিমটিকে Swap করে, তাহলে তারা সম্পূর্ণভাবে আপনার সিমের অ্যাক্সেস পেয়ে যাবে। যেখানে আপনার সিমটি হল একটি অতি প্রয়োজনীয় সার্ভিস গুলোর জন্য প্রধান উপাদান। আপনি একটি সিম কার্ডকে কল এবং টেক্সট টেক্সট মেসেজ রিসিভ করার জন্য ব্যবহার করেন। আর সম্ভবত, আপনার ব্যাংক একাউন্ট, ইমেইল এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের টু ফ্যাক্টর অথেন্টিফিকেশন হিসেবে হয়তোবা সেই সিমটি ব্যবহার করেছেন।
অতএব, যদি কোন একজন প্রতারক আপনার সিমের অ্যাক্সেস পেয়ে যায়, তাহলে সে এগুলোর সমস্ত সার্ভিসগুলো অ্যাক্সেস পেয়ে যাবে। এর ফলস্বরূপ, প্রতারকেরা আপনার এই অ্যাকাউন্টগুলোতে লগইন করে ব্যাংক একাউন্ট খালি করার সহজ সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের ক্ষতি করতে পারে। এমনকি সে আপনার পরিচিত জন এবং বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে স্ক্যাম করতে পারে।
ইন্টারনেটে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য টু ফেক্টর অথেন্টিফিকেশন ডিজাইন করা হয়েছে। এমনকি একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে কোন একাউন্টে লগইন করার পরিবর্তে শুধুমাত্র Two-factor Authentication এর সংক্ষিপ্ত কোড দিয়েই লগইন করা যায়। আবার, কোন একটি একাউন্টের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে Two-factor Authentication এর মাধ্যমে তা রিসেট করা যায়।
অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এটি তাই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যার কারণে, কোন একজন সাইবার অপরাধী চাইলেও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কোন একাউন্টে প্রবেশ করতে পারে না এবং তার জন্য এই প্রক্রিয়া কঠিন করে তোলে। কেননা, এক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড এবং ফোন উভয়েরই প্রয়োজন।
যাইহোক, সকল শক্তিশালী সিস্টেমের একটি দুর্বল পয়েন্ট রয়েছে। Authentication কোনগুলো সাধারণত ইমেইল, মোবাইল নাম্বার এবং Authentication অ্যাপস গুলোতে পাঠানো হয়। তার মানে হল যে, যার কাছে সেই ফোনের অ্যাক্সেস রয়েছে, তিনিই একমাত্র সেগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে। এটি আসলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি এর মত নয়, যেখানে Authentication এর জন্য ফিজিক্যাল ভাবে উপস্থিত হতে হবে।
আর সাইবার অপরাধীরা ও জানে যে, যদি কোন ভাবে সেই ফোন বা সিম কার্ডের অ্যাক্সেস নেওয়া যায়, তাহলে খুব সহজেই অনলাইন একাউন্টের এসব নিরাপত্তাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হবে। কেননা, এক্ষেত্রে তারা সেই সিমটির অ্যাক্সেস নিয়ে Two Factor Authentication কোড পেয়ে যাবে।
বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থা এবং সিম অপারেটররা SIM Swapping প্রতিরোধে কাজ করে চলেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে FCC করেছিল যে, তারা SIM Swapping এবং Port-out জাতীয় অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি খসড়া রুল তৈরি করছে। আর এই বিষয়ে কাজ করার সময়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মোবাইল অপারেটর T-Mob সিস্টেমটি উন্নত করার জন্য কিছু ইন-হাউজ প্রটোকল এর বিষয়ে ইম্প্রুভ করেছে।
এখন সিম কার্ড পরিবর্তন করতে একজন প্রতিনিধির পরিবর্তে দুইজন প্রতিনিধির এসএমএস ভেরিফিকেশন ও অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
সিম সোয়াপ হওয়ার সময় যত দ্রুত সম্ভব আপনি পদক্ষেপ নিলে, প্রতারকেরা আপনার একাউন্ট গুলোর ক্ষতি করতে পারবেনা। আপনি যদি নিম্নলিখিত সতর্কতা চিহ্নগুলোর মধ্য থেকে আপনার ক্ষেত্রে কোন একটি লক্ষ্য করেন, তাহলে অবিলম্বে আপনার সেলুলার প্রোভাইডার এর সাথে যোগাযোগ করুন এবং আপনার আক্রমণ হওয়ার কথা বলুন।
আপনি যদি একটি সিম ব্যবহার করার সময় এসব লক্ষণগুলো দেখতে পান, তাহলে অতি দ্রুত অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন এবং আপনার সমস্যা সম্পর্কে অবগত করুন। যা আপনাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে SIM Swapping এর মত জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
যদিও কোন একটি সিমকে সফলভাবে Swap করা হলে, আপনি সেই ব্যবহার করে আর সিম সার্ভিস প্রোভাইডার এর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না। তবে, যদি আপনি উপরের লক্ষণ গুলির মধ্যে কোন একটি লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন। এ সময় আপনার একটু সময় নষ্ট করার মানে হল, অপর প্রান্তের আক্রমণকারীকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া; যা সে আপনার সিমের সাথে সম্পর্কিত সার্ভিস গুলোর ক্ষতি করার কাজে ব্যয় করবে।
আপনার সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনার একাউন্টে কোন পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা। আর, যদি কোন পরিবর্তন করা হয়, তাহলে আপনি আবার সেটির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
যদি প্রতারকটি আপনার সিমটি সত্যিই Swap করতে সক্ষম হয়, তাহলে সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে সেই সিমটি ব্যবহার করে যোগাযোগ করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কল করার জন্য আপনার একটি ব্যাকআপ নাম্বার থাকা বাঞ্জনীয়।
একটি সিম Swap এর ফলে আপনার অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার জন্য সর্বোত্তম কাজ হল, প্রথমেই সিম সোয়াপিং এড়ানোর জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া। তাই, এখানে আমি এরকম কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি, যার মাধ্যমে আপনি SIM Swapping প্রতিরোধ করতে পারেন।
বেশিরভাগ ফোনে পিন, পাসওয়ার্ড, প্যাটার্ন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। সেই সাথে, আধুনিক স্মার্টফোন গুলোতে নিরাপত্তার জন্য আরও কয়েক স্তরের ব্যবস্থা রয়েছে, যেগুলো আপনি Enable করতে পারেন।
সেই সাথে, আপনার ফোনে স্ক্রিন লক এর পাশাপাশি ফিজিক্যাল সিমটিকে ও লক করা উচিত। কেননা, হয়তোবা আপনার পরিচিত জনদের মধ্য থেকেই কোন অপরাধী আপনার মোবাইল থেকে সিম কার্ডটি খুলে নিয়ে আপনার সাথে প্রতারণা করতে পারে। এজন্য, আপনি এটিকে ও একটি নিউমেরিক পিন দিয়ে লক করতে পারেন। এর ফলে, যখনই সেই সিম কার্ডটি ডিভাইস থেকে খুলে অন্য কোন ডিভাইসে প্রবেশ করানো হবে, তখন পুনরায় চালু করার সময় সিমের পিন কোড প্রবেশ করাতে হবে।
আপনি অ্যান্ড্রয়েড বা iPhone থেকে সিমের জন্য পিন তৈরি করতে পারেন। আর এখানে ও পিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি কখনোই নিজের জন্ম সাল বা গুরুত্বপূর্ণ কারো জন্মদিন ব্যবহার করবেন না। ফলে, অনেকে এটিও অনুমান করে নিতে পারে।
অনেক নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার Port Freeze এবং Number Lock অফার করে, যার মাধ্যমে মোবাইল নাম্বার এর অননুমোদিত ট্রান্সফার থেকে সিমকে রক্ষা করা যায়। এটি যদি Actived হয়ে যায়, তাহলে আপনার নাম্বারটি অন্য কোন লাইন বা ক্যারিয়ারে পোর্ট করতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপনি একটি পিন দিয়ে লকটি রিমুভ না করছেন।
এই মুহূর্তে আপনি যে অপারেটরের সিম ব্যবহার করছেন, তারা যদি এই ফিচারটি Allow করে থাকে, তাহলে এটি আপনার সিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে।
আপনি যদি বিভিন্ন একাউন্ট এর জন্য আপনার জন্মদিন বা নিজের নামকে পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে এখনই সেটি বন্ধ করার সময় এসেছে। আপনাকে এমন একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে, যা অনুমান করা প্রায় অসম্ভব। এজন্য আপনার পাসওয়ার্ডটি কমপক্ষে ১২ অক্ষর এর হওয়া উচিত। যার মধ্যে ছোট-বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ কিছু চিহ্ন যুক্ত করতে হবে। এতে করে আপনার একাউন্টের পাসওয়ার্ড হবে অনেক বেশি শক্তিশালী, যা কারো পক্ষে অনুমান করা সম্ভব হবে না।
সেই সাথে, আপনার বিভিন্ন একাউন্ট এর জন্য বিভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাও একটি ভালো অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত হবে। যাতে করে, একটি একাউন্টের পাসওয়ার্ড হ্যাক হলে, অন্যগুলো না হয়।
কিন্তু, আপনি এত পাসওয়ার্ড কীভাবে মনে রাখবেন? পাসওয়ার্ড গুলো মনে রাখার জন্য আপনি কিছু পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ড ছাড়াও কিছু সার্ভিস বা অ্যাপের নিরাপত্তার সেটিংস আপনাকে সিকিউরিটি কোশ্চেন সেট করতে দেয়। এক্ষেত্রে ও আপনি এমন সব প্রশ্ন ও উত্তর সিলেক্ট করুন, যেগুলো আপনার পরিচিত জনেরা ও অনুমান পারবে না।
টু হেক্টর অথেনটিকেশন হল আপনার একাউন্টের নিরাপত্তার জন্য একটি অতিরিক্ত স্তর। আপনি অনলাইনের যেকোনো অ্যাকাউন্ট ই তৈরি করুন না কেন, সেটির সিকিউরিটি সেটিংস থেকে Two Factor Authentication Enable করুন। এটি SMS ভিত্তিক Authentication এর মাধ্যমে একাউন্টগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি দূর করে।
আর আপনি 2FA এর জন্য Google Authenticator বা Authy এর মত এপ্লিকেশন গুলো ব্যবহার করতে পারেন।
যদিও একটি পাসওয়ার্ড, পিন এবং টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন এর মত সিকিউরিটি ফিচারগুলো বিভিন্ন একাউন্ট এবং মোবাইল ডিভাইসের জন্য দুর্দান্ত। তবে, ফেস এবং টাচ আইডি এ ধরনের প্রটেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরো অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে। এর অন্যতম কারণ হলো, ফেস এবং টাচ আইডি এর জন্য শারীরিক উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। ফলে, অ্যাকাউন্টগুলোর সিকিউরিটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর পদ্ধতি।
তাই যখনই সম্ভব হবে, তখনই সেসব মোবাইল অ্যাপস এবং সার্ভিসগুলোতে দ্বি ফ্যাক্টর বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে চোরেরা বা প্রতারক আপনার ফোন নাম্বার হাতে পেলেও, বায়োমেট্রিক বাধা বাইপাস করতে পারবে না।
প্রতারকেরা আপনার মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধিকে কল করার মাধ্যমে এমনটি বোঝাবে যে, তিনিই হলেন আসল ব্যক্তি। আর এক্ষেত্রে তারা আপনার পুরো নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং জন্ম তারিখ গুলো সম্পর্কে তাদেরকে সঠিক তথ্য দিবে। আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি পূর্বে এরকম ভাবে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো হুবহু শেয়ার করে থাকেন, তাহলে তারা ভবিষ্যতে প্রতারণার উদ্দেশ্যে সেগুলো সংগ্রহ করতে থাকবে এবং একটা পর্যায়ে আপনার SIM Swap এর ঘটনা ঘটবে।
তাই, সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার পোষা প্রাণীর নাম, আপনার প্রিয় খাবার, প্রিয় রং এবং ব্যক্তিগত জীবনের এরকম বিবরণ গুলো শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। এমনকি কিছু ওয়েবসাইটে পরিচয় যাচাই করার জন্য Security Question হিসেবে তারা এসব তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারে।
ফিশিং ইন্টারনেটের একটি পুরনো পদ্ধতি। যে আক্রমণের মাধ্যমে প্রায়ই লগইন ডেটা, ক্রেডিট কার্ড নম্বর এবং ব্যবহারকারীর ডাটা চুরি করা হয়। ফিশিং এ সাধারণত অপরাধীরা জড়িত থাকে, যারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকে। এক্ষেত্রে অনেক ব্যবহারকারী তাদের দেওয়া লিংকে ক্লিক করে নিজের ব্যক্তিগত অনেক তথ্য সাবমিট করেন। আবার, কোন প্রকার যাচাই ছাড়াই তাদের বানানো নকল ওয়েবসাইটে দুজনই ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে পারে।
যাইহোক, অনেকভাবে ফিশিং আক্রমণ হয়ে থাকে। যেখানে মূল টার্গেট থাকে, বিভিন্ন উপায়ে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহ করা বা তার একাউন্টে লগইন করেন ইনফরমেশন নেওয়া।
তবে, কোন একটি ব্যাংক বা জনপ্রিয় ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ কখনোই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাইবে না। তবে, আপনি নিজে থেকে অনলাইনে কোন ব্যাংকের প্রতিনিধির সাথে লাইভ চ্যাট করলে, তারা আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগত তথ্য ভেরিফাই এর উদ্দেশ্যে চাইতে পারে। আপনাকে যদি কোন একটি ওয়েবসাইট থেকে মেইল, কল বা এসএমএস এর মাধ্যমে এ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়, তাহলে সেগুলো ডিলিট করে দিন এবং Ignore করুন। আর, কোন সন্দেহ হলে, আউটরিচ নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সেই এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
যদিও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সরাসরি সিম সোয়াপিং এর মাধ্যমে অন্য কোন নাম্বারে সিমের নাম্বার ট্রান্সফার করে নেওয়ার সিস্টেম নেই। এখানে শুধুমাত্র সিম কার্ড রিপ্লেস করে পুরাতন সিমকে বাতিল করা সম্ভব। যেখানে, একটি সিম কার্ড বাদ দিয়ে নতুন একটি সিমে নাম্বার ট্রান্সফার করার জন্য সেই সিমের মূল মালিককে সিম বিক্রেতার কাছে উপস্থিত হতে হয়। আর সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে নতুন সিমে ফোন নাম্বার ট্রান্সফার করে সিম রিপ্লেস করে দেওয়া হয়।
যার ফলে, কেউ চাইলেই কিন্তু ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ব্যবহার করে মোবাইল অপারেটরের কাছে ফোন করে সিম নাম্বার ট্রান্সফার করে নিতে পারবে না।
সিমের বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভেরিফিকেশন এর কারণে কেউ বাংলাদেশে SIM Swapping করতে পারবে না। আর এখানে অন্যান্য দেশের মতো জরুরী ভিত্তিতে সিমের নাম্বার অন্য একটি সিমের ট্রান্সফার করে নেওয়ার সিস্টেম নেই। তবে, এখানে ও চাইলে কেউ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও সিমের কলিং ইনফরমেশন জানার মাধ্যমে আপনাকে সাময়িক অসুবিধায় ফেলতে পারে।
এক্ষেত্রে তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো প্রথমে সংগ্রহ করবে। তারপর তাদের টার্গেট করা সিমের কল হিস্টরি এবং রিচার্জ হিস্ট্রি গুলো সংগ্রহ করবে। এরপর তারা কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে সিম দিয়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে সিমটিকে ব্লক করে দিতে পারে।
যেহেতু কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি শুধুমাত্র কয়েকটি বিষয় জিজ্ঞাসা করে এবং এসব বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারলে ধরে নেয় যে, অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি সিমের প্রকৃত মালিক। তাই, আপনাকে ও নিজের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যাতে করে, কেউ দুষ্টামি কিংবা অন্য কোন কারণে আপনার সিমটিকে সাময়িক ব্লক করে ও না করতে পারে।
যদিও SIM Swapping এর ঘটনা খুবই কম করে থাকে। তবে, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ভুক্তভোগী অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বিশেষ করে, সেই ফোন নাম্বারের সাথে সংযুক্ত অ্যাকাউন্ট গুলোর নিয়ন্ত্রণ তার হাতে চলে যাবে। তাই, আজকের আলোচনা করা সিম সোয়াপিং প্রতিরোধের টিপস গুলো থেকে আপনিও যতটা সম্ভব সেগুলো নিজের জন্য বাস্তবায়ন করুন। বিশেষ করে, আপনার সমস্ত একাউন্টের জন্য 2FA Enable করুন।
যেসব অ্যাপে বায়োমেট্রিক লক সেটআপ করা যায়, সেগুলোতে তা সেট করুন। আর, একটি সিম কার্ডকে পিন দিয়ে সুরক্ষিত করুন। সেই সাথে, একটি স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যাবতীয় নিরাপত্তা কৌশল ফলো করুন, যাতে করে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার কোন ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারেরা হাতিয়ে নিতে না পারে এবং তা ব্যবহার করে SIM Swap করতে না পারে। ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)