VPN কি ডিভাইসকে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচাতে পারে?

Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আবার হাজির হলাম আপনাদের জন্য নতুন টিউন নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

যখন সাইবার ক্রাইম বা ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা হয় তখনই কয়েকটা শব্দ খুবই কমন ব্যবহৃত হয় যেমন, ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, ডাটা ব্রিচ, হ্যাকিং, ফিশিং। হ্যাঁ, ইন্টারনেট যেমন আমাদের জীবন ধারাকে সহজ করেছে তেমনি নতুন নতুন বিপদ তৈরি করেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে এসব ক্ষতিকর দিক থেকে কিন্তু চাইলেই বেঁচে থাকা সম্ভব।

অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন থাকে, VPN ব্যবহার করলে কি ভাইরাস থেকে পিসিকে রক্ষা করতে পারব? বা যেকোনো ডিভাইস নিরাপদ থাকবে? এর সহজ উত্তর হচ্ছে, সঠিক ভাবে VPN ব্যবহার করলে আপনার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমবে তবে VPN কখনো আপনাকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারবে না।

মূলত VPN এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যার জন্য এটি কোন ডিভাইসকে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে না। ভাইরাস থেকে ডিভাইস রক্ষা করার জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার। তো আজকের টিউনে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হবে। চলুন শুরু করি,

ভাইরাস কী এবং কীভাবে আপনার ডিভাইস আক্রান্ত হয়?

ভাইরাস মূলত এক ধরনের প্রোগ্রাম তবে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম। এটি খারাপ উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ভাবে আপনার পিসি ভাইরাস প্রবেশ করে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত করতে পারে, পারসোনাল তথ্য চুরি করতে পারে, নির্দিষ্ট ফাইল নষ্ট করে দিতে পারে। আপনার অজান্তে ইমেইল পাঠানোর মত কাজও করতে পারে। পুরো সিস্টেম কন্ট্রোলে নিয়ে নিতে পারে। পিসিতে কানেক্ট থাকা অন্য ডিভাইস গুলোতেও ফাইল শেয়ারিং এবং নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

ডিভাইস ভাইরাস আক্রান্ত হয় বিভিন্ন সফটওয়্যার ডাউনলোড দিলে, ম্যালিসিয়াস ওয়েবসাইট থেকে, ইমেইলের এটাচমেন্ট থেকে এবং USB এর মত এক্সটারনাল স্টোরেজ ডিভাইস থেকে।

VPN কি ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে?

 

VPN একটি কার্যকরী সাইবার সিকিউরিটি সলিউশন হলেও এটি আপনার ডিভাইসকে ভাইরাস থেকে সরাসরি রক্ষা করতে পারবে না। তবে আপনি VPN ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ভাইরাসের আক্রমণ কম এক্সপেরিয়েন্স করবেন। ডিভাইস হ্যাক হওয়া এবং ভাইরাসের আক্রান্ত হবার চান্স অনেকটাই কমে আসবে। VPN যা যা করতে পারে,

  • এনক্রিপশনের মাধ্যমে আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক সিকিউর করতে পারে
  • আপনার আসল আইপি এড্রেস মাস্ক করতে পারে
  • সিকিউর সার্ভার সেট অফার করতে পারে

VPN নাকি এন্টিভাইরাস কোনটি ব্যবহার করবেন?

হ্যাকার থেকে বাঁচতে আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন এটা জানতে আপনাকে আগে জানতে হবে কোনটির কাজ কী,

  • এন্টিভাইরাস ডিজাইন করা হয় ভাইরাস, স্ক্যান, ডিটেক্ট এবং রিমুভ করার জন্য। VPN ডিজাইন করা হয় আপনার আইপি, ট্রাফিক, এবং লোকেশন হাইড করার জন্য।
  • এন্টিভাইরাস কম্পিউটার এবং এর সিস্টেম ফাইল স্ক্যান করে, কোন ম্যালিসিয়াস কোড আছে কিনা চেক করে এবং পেলে সেটা সাথে সাথে রিমুভ করে। ইন্টারনেটে এক্সেসের সময়, VPN আপনার ডিভাইস এবং এর একটি সার্ভারের সাথে সিকিউর, এনক্রিপ্টেড টানেল তৈরি করে।
  • এন্টিভাইরাস রিয়েল টাইম প্রোটেকশন নিশ্চিত করতে ব্যাকগ্রাউন্ডে সব সময় চালু থাকে। ডিভাইসকে ভাইরাস মুক্ত রাখে। অন্যদিকে VPN সিকিউর এবং প্রাইভেট ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্স দেয়, এটি পাবলিক ওয়াই-ফাই বা ফ্রি ওয়াইফাই এর মত অনিরাপদ ইন্টারনেট কানেকশনকেও নিরাপদে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।

ভাইরাস প্রোটেকশনের জন্য কোনটি ভাল এর কোন সঠিক উত্তর নেই। ডিভাইসে এন্টিভাইরাস এবং VPN উভয় ইন্সটল থাকলে আপনি ইন্টারনেটে থাকা এসব ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারবেন।

VPN কী এবং কীভাবে কাজ করে?

অনলাইন প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে VPN ডিজাইন করা হয়েছে৷ এটি আপনার ইন্টারনেট কানেকশনকে এনক্রিপ্ট করে এবং রিমোট সার্ভারে নিয়ে যায়, সেখানে আপনার আইপি এড্রেস হাইড থাকে। ফলে আপনার অনলাইন এক্টিভিটি যে কারো পক্ষে ট্র‍্যাক করা কঠিন হয়ে পড়ে৷

ইন্টারনেটে এক্সেসের সময়, VPN আপনার ডিভাইস এবং ইন্টারনেটের মধ্যে একটি সিকিউর টানেল তৈরি করে ফলে কোন থার্ডপার্টি বা সরকার আপনার ট্রাফিক মনিটরের সুযোগ পায় না।

VPN কখনোই এন্টিভাইরাসের বিকল্প নয়। এন্টিভাইরাস যা করতে পারবে VPN তা করতে পারবে না যেমন ভাইরাস আক্রান্ত হলে ওয়ার্নিং দেয়া এবং সেগুলো রিমুভ করা ইত্যাদি।

এন্টিভাইরাস কী করে?

এন্টিভাইরাসকে বানানো হয়েছে ডিভাইসকে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার এর মত ম্যালিসিয়াস প্রোগ্রাম থেকে রক্ষা করার জন্য। এটি ফাইল, ইমেইল এটাচমেন্ট, ডাউনলোড ইত্যাদিকে স্ক্যান করতে পারে এবং যাচাই করতে পারে সেখানে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়ার, এডওয়্যার, বা ট্রোজেন আছে কিনা।

ডিভাইসে এমন কিছু পেলে এন্টিভাইরাস এটিকে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারে অথবা সরাসরি ডিলিট করে দিতে পারে। তাছাড়া এটি প্রতিনিয়ত চেক করে আপনার পিসিতে নতুন কোন ভাইরাস প্রবেশ করেছে কিনা। ইন্টারনেটে নতুন কোন ভাইরাস আসলে ডাটাবেইজ আপডেট করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।

এন্টিভাইরাস ডিটেকশন এবং রিমুভ ছাড়াও আরও যদি অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে যেমন, Firewall Protection, Spam Filtering, Phishing Protection ইত্যাদি। ম্যালওয়্যার, ভাইরাসের বিপক্ষে অতিরিক্ত সিকিউরিটি লেয়ার নিশ্চিত করে এন্টিভাইরাস আপনার ডিভাইসকে নিরাপদ রাখতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন আপনার ডিভাইস ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে কিনা?

পিসির অস্বাভাবিক আচরণে আপনি বুঝতে পারবেন পিসিতে ভাইরাস প্রবেশ করেছে। যে লক্ষ্মণ গুলো দেখা দিতে পারে,

  • আপনার ডিভাইস অনেক স্লো হয়ে যাবে৷ ম্যালওয়্যার বিভিন্ন কাজে সিস্টেমের রিসোর্স দখল করে রাখায়, স্বাভাবিক পারফরম্যান্স আপনি পাবেন না।
  • ডিভাইসে অনেক পপআপ বা এড দেখা যাবে৷ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপণ আপনি দেখতে পাবেন। সেই সব এড লিংকে ক্লিক করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
  • আপনি বিভিন্ন ধরনের Error মেসেজ দেখতে পাবেন যেগুলো আগে কখনো দেখেন নি।
  • অটোমেটিক ব্রাউজারের হোমপেজ বা সার্চ ইঞ্জিন চেঞ্জ হয়ে যাওয়া ভাইরাস আক্রান্ত হবার লক্ষ্মণ।
  • আপনি ইন্সটল করেন নি এমন প্রোগ্রাম পিসিতে ইন্সটল হয়ে থাকতে পারে।
  • আপনি যদি দেখেন হটাৎ করে ডিভাইসের ডাটা ইউজেস বেড়ে গেছে তাহলে ভাইরাসের আক্রমণ ভেবে নিতে পারেন। ম্যালওয়্যার রিমোট সার্ভারে কমিউনিকেশন এবং ডাটা কালেক্ট করার ফলে ডাটা ইউজ বেড়ে যায়।
  • তাছাড়া আপনার ডিভাইস যদি আপনার নির্দেশনা ছাড়াই অটোমেটিক কোন প্রোগ্রাম ওপেন করে ক্লোজ করে বা অন্যান্য কাজ করে তাহলে ধরে নিতে পারেন ডিভাইসটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

কীভাবে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া রোধ করবেন

আপনার পিসি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলে বা ডিভাইসকে আক্রমণ থেকে রক্ষা নিচের পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করতে পারেন,

  • নিয়মিত অপারেটিং সিস্টেম, ওয়েবব্রাউজার, এবং সব ধরনের সফটওয়্যার আপডেট রাখুন। এতে করে কোন Vulnerability আসলে সেটা ফিক্স হবে।
  • সুনামধন্য কোন এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইন্সটল করুন এবং আপ টু ডেট রাখুন
  • অপরিচিত সোর্স থেকে আসা ইমেইলের লিংকে ক্লিক করবেন না
  • অনলাইন একাউন্ট গুলোতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। ইউনিক, কমপ্লেক্স কম্বিনেশনে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন, Two Factor Authentication ব্যবহার করুন।
  • বিভিন্ন রিস্কি ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলুন যেমন পাইরেট সফটওয়্যার, মুভি ওয়েবসাইট, পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট ইত্যাদি৷
  • এড ব্লকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। বিভিন্ন এডে ক্লিক করার ফলে পিসিতে ম্যালওয়্যার ইন্সটল হয়ে যেতে পারে তাই সতর্ক থাকুন।
  • বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করুন, ডাউনলোড করার পর সেটা এন্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন।
  • নিয়মিত আপনার অতি প্রয়োজনীয় ফাইল গুলো ব্যাকআপ করুন। ব্যাকআপ এক্সার্নাল ড্রাইভে রাখুন অথবা ক্লাউডে আপলোড করুন৷

VPN vs Antivirus

ভিন্ন ভাবে কাজ করলেও VPN এবং এন্টিভাইরাস উভয়ই আপনার পিসিকে নিরাপদে রাখতে একই সাথে কাজ করবে। VPN যেমন আপনার কানেকশন এনক্রিপ্ট করে অনলাইন প্রাইভেসি রক্ষা করবে তেমনি এন্টিভাইরাস ম্যালওয়্যার স্ক্যান করে রিমুভ করে পিসিকে নিরাপদ রাখবে। VPN বিভিন্ন ধরনের সাইবার এটাক প্রতিহত করলেও অতিরিক্ত সিকিউরিটি লেয়ার হিসেবে এন্টিভাইরাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

শেষ কথা

প্রযুক্তির এই যুগে নিজের প্রাইভেসি রক্ষায় যথাযথ অনলাইন সিকিউরিটি টুল ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। VPN, এন্টিভাইরাস উভয়ই আপনার ডিভাইসকে ক্ষতিকর বিভিন্ন পক্ষ থেকে নিরাপদ রাখতে পারে। এই দুটি টুল নিয়ে পার্থক্য করার কিছু নেই। VPN, এন্টিভাইরাস ব্যবহারের পাশাপাশি নিজের ডিভাইস যেন আপ টু ডেট থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

তো আজকে এই পর্যন্তই, কেমন হল আজকের টিউন তা অবশ্যই টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস