তথ্য প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের এই যুগে অনেক দামি একটা জিনিস হচ্ছে তথ্য। এজন্যই এই তথ্য বা ইনফরমেশন কালেক্ট করতে হ্যাকারদের পাশাপাশি অনেক বড় বড় অর্গানাইজেশনে কিন্তু মাঠে নেমে পড়েছে। আর এখন সময়টা এমন যে আমাদের যাবতীয় সব তথ্য আমাদের স্মার্টফোনেই থাকে। নিজের পার্সোনাল ছবি বা ভিডিও, ইমেইল বা সোস্যাল মিডিয়া একাউন্ট, ব্যাংকিং ইনফরমেশন ইত্যাদি সবকিছুই কিন্তু আমাদের স্মার্টফোনেই থাকে। আর তাই এই তথ্য বা ইনফরমেশনের জন্য হ্যাকারদের প্রথম পছন্দের জিনিসটি হচ্ছে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটা। আজকের টিউনে আমি প্রথমতঃ জানাবো আপনার স্মার্টফোনটি হ্যাক হয়েছে কিনা সেটা কিভাবে বুঝবেন এবং দ্বিতীয়তঃ আপনার স্মার্ট ফোন যেন কখনো হ্যাক না হয় সে জন্য কি কি করনীয়। এখন প্রস্তুত হয়ে যান গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।
প্রথমেই পাঁচটা ছোট ছোট পয়েন্ট বলি যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে আপনার ফোনটা হ্যাক হয়েছে কিনা। ইদানীং কি আপনার মনে হচ্ছে আপনার ফোনটা ব্যাটারি ব্যাকআপ কম দিচ্ছে? এর কারণ কি আপনার ফোনের ব্যাটারি পুরনো হয়ে গেছে? এমনটাও তো হতে পারে আপনার অজান্তে কোন অ্যাপ আপনার ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করে এবং সে আপনার ফোনের ইনফরমেশনগুলো কোন ওয়েবসাইট কিংবা কোন হ্যাকারের কাছে পাঠিয়ে দেয়, আর এটার জন্যই আপনার ফোনের ব্যাটারি আসলে আজকাল বেশি ইউজ হচ্ছে। এমনটা হলে আসলেই আপনার ফোনের ব্যাটারি দুর্বল হয়ে গিয়েছে নাকি ফোনটা হ্যাক হয়ে গিয়েছে একটু নিশ্চিত করা উচিত। এক্ষেত্রে অবহেলা না করে একজন টেকনিশিয়ানের কাছে নিয়ে যান এবং চেক করে নিন ব্যাটারীতে কোন প্রবলেম আছে কিনা।
দ্বিতীয় পয়েন্ট হচ্ছে আপনার ফোন কি মাঝেমাঝে অটো রিস্টার্ট হয় কিংবা মাঝে মাঝে অটোমেটিক অফ হয়ে যায়? এমনটা হয়ে থাকলে কিন্তু সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত।
তিন নাম্বার পয়েন্টে দেখার বিষয় হচ্ছে আপনার ফোনটা কি সম্প্রতি খুব বেশি গরম হয়ে যাচ্ছে? ফোনটা বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে গরম হবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু ব্যাপারটা যদি এরকম হয় আপনি খুব বেশি ফোন ব্যবহার করছেন না কিংবা একেবারেই ব্যবহার করছেননা তারপরও ফোনটা গরম হয়ে যাচ্ছে? এখন হতে পারে ফোনটা হ্যাক হয়ে গেছে আর আপনি ব্যবহার না করলেও হ্যাকার কিন্তু ঠিকই ফোনটা ব্যবহার করছে। দূর থেকে সে ফোনটি ব্যবহার করলেও কিন্তু এটি গরম হয়ে যাবে।
চার নাম্বার পয়েন্টে বলবো আপনার ফোনটা কি আজকাল আপনার করা সেটিংস অনুযায়ী চলছেনা? মানে নিজে নিজেই ভলিউম আপ-ডাউন করে ফেলছে কিংবা ব্রাইটনেস লেভেল হারিয়ে ফেলছে? তাছাড়া আরো অনেক রকমের আচরণ করছে যেটাকে আপনি টেকনিক্যাল সমস্যা ভেবে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কিন্তু এসব ছোটখাটো ব্যাপার গুলো আসলে হ্যাক হওয়া ফোনের লক্ষণ। এক্ষেত্রে ফোনে আসলেই কোন টেকনিক্যাল সমস্যা আছে কিনা তা একজন টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
এবার পাঁচ নম্বর পয়েন্টে আসি। আপনার ফোনের যে ভয়েস কোয়ালিটি অর্থাৎ ফোনে কথা বলার সময় অপরপ্রান্ত থেকে যে ভয়েস শুনতে পান সেটা কি আস্তে শোনা যাচ্ছে? কিংবা প্রতিধ্বনি বা নয়েজ হচ্ছে? এমন হলে শুধুই ভেবে নিবেন না যে আপনার মাইক্রোফোন কিংবা ইয়ারফোন অথবা আপনার এলাকার নেটওয়ার্কের সমস্যা। এমনও হতে পারে যে আপনার ফোন ইতিমধ্যে কেউ ট্রাক করছে, কিংবা আত্মগোপনে থেকে আপনার কথোপকথন শুনে ফেলছে। তাই এসব ব্যাপারগুলোকে ছোটখাট ব্যাপার মনে করে অবহেলা করবেন না। আরেকটা কথা বলি, আপনার ফোনে যদি অপরিচিত নাম্বার থেকে খুব বেশি কল আসে কিংবা বিদেশি নাম্বার থেকে কল বা এসএমএস আসে সেটা কিন্তু চিন্তার বিষয়। তাই এ ব্যাপারটিও আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
এবার বলি কিভাবে আপনি আপনার স্মার্টফোনটিকে হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারেন। পাঁচটি সহজ পদক্ষেপের কথা বলব তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
প্রথমতঃ পাবলিক ওয়াই-ফাই কিংবা ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা আর নিজের ঘর খুলে রেখে চোরকে চুরি করতে দেয়া একই কথা। যখন আপনি একটি অনিরাপদ ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন তখন একজন হ্যাক ব্যাপার কিন্তু খুব সহজে আপনার ফোনে এক্সেস নিয়ে নিতে পারে। যদি নিতান্তই বাধ্য হয়ে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে হয় তবে খুব অল্প সময়ের জন্য এটি ব্যবহার করুন।
দ্বিতীয়তঃ আপনার ফোনটিকে হ্যাকারের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে যে কাজটি থেকে বিরত থাকা উচিত তা হল অজানা কোন লিংকে ক্লিক করা। হ্যাকাররা কিন্তু অনলাইনে বিভিন্ন লোভনীয় অফারের নামে প্রতারণামূলক লিংক শেয়ার করে থাকে সেখানে যদি আপনি ক্লিক করেন তবে মুহূর্তেই তারা কিন্তু আপনার ফোনে এক্সেস নিয়ে নিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় মেসেঞ্জারে কিছু লিংক আসে যেখানে বলা হয় যে আপনি এত লাখ টাকা জিতেছেন কিংবা কোনো সুন্দরী একটা মেয়ে আপনাকে তার সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল লিংক দিয়েছে যা সবচেয়ে কমন। এসব লিঙ্কে একটা ক্লিকই হ্যাকারের পক্ষে আপনার ফোনের এক্সেস নিতে পারার জন্য যথেষ্ট।
দ্বিতীয়তঃ যেটা করা যাবে না তাহলে আপনার সকল একাউন্ট গুলোতে অটো লগইন করে রাখা। কারণ অটো লগইন করা থাকলে আপনার ফোন যদি হ্যাক হয় তবে হ্যাকার কিন্তু আপনার ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যাংক ইনফরমেশনসহ সবকিছুই কিন্তু মুহুর্তেই তার আয়ত্তে নিতে পারবে। তবে আপনার যদি ফোনে যদি ভালো নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে বা কোন পেইড এন্টিভাইরাস থাকে তবে ভিন্ন কথা।
তিন নাম্বারে যেটা করা উচিত সেটা হচ্ছে গুগল প্লে স্টোরের বাইরে থেকে কোন রকমের কোন অ্যাপ ডাউনলোড বা ইনস্টল না করা। কারণ অনেক third-party অ্যাপের কাজ হচ্ছে আপনার ফোনের বিভিন্ন রকমের ইনফরমেশন বা তথ্য কালেক্ট করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া। আর যদি কখনো এরকম হয় যে গুগল প্লে স্টোরে আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপ টা নেই তখন যাচাই-বাছাই করে বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট থেকে এপিকে ফাইল ডাউনলোড করতে পারেন।
চার নাম্বারে কথা বলব অ্যাপ পারমিশন নিয়ে। কোন অ্যাপ ইনস্টল করার সময় একটা জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে আপনি কি টাইপের অ্যাপ ইন্সটল করছেন আর সে আপনার কাছে কিসের পারমিশন চাচ্ছে। মনে করেন আপনি একটা গেম ডাউনলোড করে ইন্সটল করছেন আর সেই অ্যাপ আপনার কাছে পারমিশন চাচ্ছে ক্যামেরার বা আপনার কন্টাক্টের যা সন্দেহজনক। তাই অ্যাপে পারমিশন দেওয়ার আগে বুঝে শুনে তারপর দিন।
এবার পাঁচ নাম্বার পয়েন্টে আসি। অনেকেই আছেন যারা দুই তিনটা ব্রাউজার ব্যবহার করেন যেমন গুগল ক্রোম, ফায়ারফক্স, ইউসি, অপেরা ইত্যাদি। এমনিতেই যেকোনো ব্রাউজার অনেক বেশি র্যাম ব্যবহার করে। আর কিছু ব্রাউজারের বদনাম আছে যে তারা আপনার ফোনের তথ্য চুরি করে যেমন আপনার ব্রাউজিং হিস্ট্রি, লোকেশন হিস্ট্রি, ফোনের আইএমইআই নাম্বার ইত্যাদি। তারা এগুলো থার্ড পার্টির কাছে পাচার করে দেয় যার স্পষ্ট প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। আমার মতে দুই তিনটা ব্রাউজার না রেখে যে কোন একটা ট্রাস্টেড ব্রাউজার ইউজ করাই ভালো। আমার মতে গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো। যেহেতু এটি গুগলের ফিচারড ব্রাউজার তাই অনেক বেশি নিরাপদ।
আমি শেখ মোঃ সাইফুল্লাহ। , Khulna। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি খুলনা থেকে শেখ মোঃ সাইফুল্লাহ বলছি । বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি নতুন। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।