আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে, ডার্ক ওয়েবে অনেক অবৈধ কার্যকলাপ সম্পন্ন হয় এবং এটি ব্যবহার নিরাপদ নয়। আমাদের সবসময় একটি ধারণা থাকে যে, বিভিন্ন অপরাধমূলক ক্রিয়া-কলাপ গুলো Dark web-এর মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। তাহলে, ডার্ক ওয়েবে বিচরণ করা কি সত্যিই বেআইনি?
আপনি সম্ভবত ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনে থাকবেন। এর মধ্যে যেমন: এখানে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নিয়ে বিক্রি করা হয়, মাদক পাচার এবং এমনকি সন্ত্রাসবাদের মতো অপরাধ মূলক কার্যকলাপ গুলো ডার্ক ওয়েবের সহায়তায় হয়ে থাকে। আর আপনি সম্ভবত ডার্ক ওয়েবের সাথে সম্পর্কিত এসব বিষয়গুলো নিয়ে অনেক সন্দেহের মধ্যে রয়েছেন। সেই সঙ্গে আপনি হয়তোবা Deep web, Tor browser এবং Anonymous browsing সম্পর্কে সন্দেহজনক অবস্থায় রয়েছেন।
তাহলে, Dark web কী এবং এটা আসলেই কি বাস্তব? আর ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করা কি সত্যিই বেআইনি? চলুন তবে, এসব বিষয় নিয়েই বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা যাক।
Dark web নিয়ে আলোচনা করার আগে আপনাকে প্রথমতেই জানতে হবে, ডার্ক ওয়েব আসলে কি? এই ওয়েব এর নাম শুনেই আপনার কাছে অনেকটা ভীতিকর ওয়েবের মতো মনে হতে পারে। এটি অবশ্য এমন ভীতিকর কিছু নয়, যা আপনি নিজে থেকে অনুমান করছেন। আসলে, ডার্ক ওয়েবের নামটির মাধ্যমেই এটি বেআইনি হিসেবে শোনাচ্ছে। তবে, এটি সম্পর্কে আপনি যতটা ভীতিকর কথা শুনেছেন এবং আপনি নিজে থেকে যা অনুমান করেন, এটি আসলে ততটা ভয়ের নয়।
ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের একটি উপসেট, যা ডার্কনেট নামে পরিচিত। আর ওয়েব এর সমস্ত বিষয়বস্তুগুলো অ্যাক্সেস করার জন্য বিশেষ ধরনের একটি ব্রাউজার বা সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। আর, ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করার জন্য সবচাইতে জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত একটি মাধ্যম হলো টর ব্রাউজার। আর আমরা হয়তোবা এই ব্রাউজারটি নাম অনেকেই ইতিমধ্যে শুনে থাকবো। এই ব্রাউজারটি গুগল ক্রোম এবং ফায়ারফক্স এর মত একটি ব্রাউজার। তবে, এটি আপনাকে এমন সব কনটেন্ট গুলো দেখতে দিবে, যা অন্য সব ব্রাউজারে দেখা যায় না বা সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হয় না।
টর ব্রাউজার হলো: ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে জানার জন্য দুর্দান্ত একটি উপায়। টর ব্রাউজার বা Onion Router এর মাধ্যমে আপনার রিকোয়েস্ট করা ওয়েবসাইট এর তথ্যগুলো আপনার ডিভাইসে আসার ক্ষেত্রে অনেকগুলো স্তর ভেদ করে আসে। এক্ষেত্রে আপনার সেই রিকোয়েস্ট প্রথমে একটি কম্পিউটার সার্ভার থেকে অন্য একটি কম্পিউটার যাবে এবং সেটি থেকে আরও একটি কম্পিউটার যাবে। এভাবে করে কয়েকটি সার্ভার ঘুরে মূল সার্ভারে আপনার রিকোয়েস্ট যাবে এবং তারপরে একইভাবে আবার আপনার ডিভাইসে ফিরে আসবে। আর, প্রত্যেকটি সার্ভারে আপনার তথ্য স্থানান্তর হওয়ার ক্ষেত্রে, এখানে আলাদা আলাদা এনক্রিপশন ব্যবহার হবে। তাই আমরা টর ব্রাউজার কে Onion Router বলে থাকি।
টর ব্রাউজার টি আসলে পিঁয়াজের স্তরের মত কাজ করে। যেখানে একটি স্তর থেকে অন্য একটি স্তরে ডাটা যাবার সময় এনক্রিপ্ট হয়ে যায় এবং আসার সময়ও একই পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যার ফলে, সেই ডেটার প্রকৃত উৎস খুঁজে বের করা অনেক কঠিন হয় এবং এটি একেবারে অসম্ভব ও বটে।
ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে উপরের এসব আলোচনা শুনে, আপনার কাছে সবই হয়তোবা ঠিক শোনাচ্ছে, তাই না? যেখানে আপনি শুধুমাত্র ইন্টারনেটের একটি অংশ ব্যবহার করছেন।
যাইহোক, আমরা জানি যে, ডার্ক ওয়েবে শক্তিশালী এনক্রিপশন এবং আরো অন্যান্য সুবিধার কারণে নিজের পরিচয় গোপন থাকে। আর সেই পরিচয় গোপন রাখা বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্ম দেয়। অপরদিকে Dark web-এর একটি নির্দিষ্ট খ্যাতি রয়েছে। আর সেটা হল, ডার্ক ওয়েব কালো বাজারে পূর্ণ। যেখানে লোকেরা র্যানসামওয়্যার দ্বারা আক্রমণ হওয়া লোকদের তথ্য খুঁজে পেতে পারে, মাদকদ্রব্য কিনতে পারে, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও এর প্রচার করতে পারে এবং বিভিন্ন হ্যাকিং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা গুলো বিক্রি করতে পারে।
মোট কথা, এখানে আপনি এমন সব অপরাধ মূলক কার্যকলাপ এর সন্ধান পেতে পারেন, যা সাধারণ সার্ফেস ওয়েবে সম্ভব নয়। এছাড়াও, এখানে আপনি এমন সব কনটেন্ট খুঁজে পেতে পারেন, যেগুলো ভয়ংকর ধরনের অপরাধমূলক কাজ। আর ডার্ক ওয়েবের আরেকটি ভয়ংকর বাস্তবতা হলো: এখানে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির বিস্তার, যেটি মারাত্মক ধরনের অপরাধমূলক কাজ।
সুতরাং, আমাদের জন্য এটি ভাবা স্বাভাবিক যে, আমাদের জন্য ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করা নিরাপদ এবং নৈতিক কাজ হবে না। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখানে প্রবেশ করা যায়।
মূলকথা হলো যে, Dark web মোটেও বেআইনি নয়। তবে, এখানে যেহেতু বেশিরভাগ অনৈতিক কাজ গুলোই সংঘটিত হয়ে থাকে; তাই আমাদের এখানে প্রবেশ করা নৈতিক মূল্যবোধের মধ্যে পড়ে না। ডার্ক ওয়েবের কিছু কিছু সাইটে প্রবেশ করা বেআইনি হলেও, বেশিরভাগ জায়গায় প্রবেশ করা বেআইনি নয়।
আপনি একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করেই ইন্টারনেটের এই ক্ষুদ্র অংশটি অ্যাক্সেস করতে পারেন। তবে, ডার্ক ওয়েবে এসে আপনার কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে আপনার ডার্কওয়েবে বিচারণ এর সংজ্ঞা দেওয়া যাবে। অর্থাৎ, এটি ব্যবহার করে আপনি যদি কোন অপরাধ মূলক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে মাদক দ্রব্য ক্রয় করতে যান, তাহলে এটি অবশ্যই অবৈধ কাজ হবে। একইভাবে কেউ যদি ডার্ক ওয়েবের কোন সাইট ব্যবহার করে সন্ত্রাসমূলক কাজের সাথে জড়িয়ে যায়, তাহলে সেটি ও অবৈধ হবে।
মূলত ডার্ক ওয়েবে বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট ই আছে। যেখানে অনেকেই বিচরণ করে ইন্টারনেটে নিজেকে অধিক নিরাপদ রাখতে। সর্বোপরি, এই ওয়েব প্রথম তৈরি করা হয়েছিল একটি মুক্ত সত্তা হিসেবে।
যাই হোক, আপনি Dark web-এ যা কিছু করেন সেটির উপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ হয় যে, সেটি বেআইনি কিনা। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সাইট পরিদর্শন করা বা নির্দিষ্ট কার্যকলাপে জড়ানো অবৈধ।
আর ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অঞ্চলের উপর ও নির্ভর করতে পারে। সাধারণভাবে যেসব দেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিটি গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেখানে ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করা বেআইনি। এসব দেশগুলোর মধ্যে যেমন: রাশিয়া, চীন ও ইরান। এসব দেশে থেকে আপনি ডার্ক ওয়েবের কোন বৈধ সাইটে অ্যাক্সেস করলেও সেটি বেআইনি হিসেবেই গণ্য হবে।
ডার্ক ওয়েব এক্সপ্লোর করার জন্য টর ব্রাউজার শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করে। তাই, অনেক দেশে তাদের সরকার নাগরিকদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায়, এটিকে নিষিদ্ধ করে। এছাড়াও, সেসব দেশের নাগরিকদের অনলাইনে অ্যানোনিমাস করার আরো বিভিন্ন উপাদান যেমন: ভিপিএন ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ।
তাহলে ডার্ক ওয়েব নিজেই কি অবৈধ? সাধারণত তা নয়। এক্ষেত্রে অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য এবং ভারতের মতো অধিকাংশ দেশগুলোতেই এটির ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়। তবে, ভারতের কিছু কিছু রাজ্যে এটি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ভিপিএন ব্যবহার করলে বা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করলে, সরকার আপনার অনলাইন অ্যাক্টিভিটি গুলো নজরদারি করতে পারবে না। আর এক্ষেত্রে আপনার জন্য অবশ্যই Dark web অবৈধ হতে পারে।
ডার্ক ওয়েব এর মত টর ব্রাউজারটি ও অবৈধ নয়।
স্বাভাবিকভাবে Dark web এর অন্তর্ভুক্ত কনটেন্টগুলো অ্যাক্সেস করার জন্য টর ব্রাউজার কে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটির মাধ্যমে শুধু আপনি ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করাই নয়, বরং স্বাভাবিক ওয়েবেও অ্যাক্সেস করতে পারবেন। প্রচুর লোক নিয়মিত ব্রাউজিংয়ের জন্যও টর ব্রাউজার ব্যবহার করে থাকে।
যেমন, ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে আপনি ফেসবুক ও খুঁজে পেতে পারেন। এই ওয়েব ব্যবহার করে ফেসবুকে অ্যাক্সেস করার বিষয়টি আপনার কাছে তখনই সুবিধাজনক হবে, যখন আপনি ফেসবুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন কোন অঞ্চলে থাকবেন। অথবা আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া গুলো থেকে নিজের কুকিজ এবং লগ গুলির রেকর্ড এড়াতে চান, তাহলেও আপনি Tor browser কে ব্যবহার করতে পারেন। যার ফলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলো থাকবে আরো অনেক বেশি নিরাপদ।
কিন্তু সমস্যা হল যে, অধিকাংশ ব্যক্তিই খারাপ উদ্দেশ্যেই ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে। তাই সরকারি সংস্থা এবং সিক্রেট সার্ভিসগুলো এখানকার অ্যাক্টিভিটি গুলো মনিটর করে। এক্ষেত্রে কোনো একটি সাইটে যদি অনৈতিক বা অপরাধমূলক কাজ গুলো যদি সংঘটিত হয়, তাহলে অবশ্যই সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
মোট কথা, ডার্ক ওয়েবে যাওয়া এবং এখানে থাকা সামগ্রীগুলো ব্যবহার করা সম্পূর্ণ আইনি ও বৈধ। তবে, টর ব্রাউজার এর মাধ্যমে ডার্ক ওয়েবে এসে অনৈতিক কোন সাইটে অ্যাক্সেস করা আপনার জন্য অবৈধ হতে পারে। তাই, ডার্ক-ওয়েবে আসা এবং এখানে এসে আপনার কাজের উপর ভিত্তি করে সেটি আইনি অথবা বেআইনি হতে পারে।
এখানে একটি কথা বলে রাখি যে, আপনি যে দেশে বা যে অবস্থানে থাকেন, সেখানে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করা বৈধ হতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। বরং, ডার্ক ওয়েব আপনার জন্য নিরাপদ অথবা অনিরাপদ উভয়ই হতে পারে।
সাধারণ ইন্টারনেটের মত, আপনি ডার্ক ওয়েবে ও ভালো এবং খারাপ উভয় কন্টেন্ট গুলো খুঁজে পাবেন। সাধারণ ইন্টারনেটের মত, আপনি Dark web-এ যদি অবৈধ কোন কিছু অনুসন্ধান করতে চান বা করেন, তবে ডার্ক ওয়েব আপনাকে সেটিই প্রদান করবে। এক্ষেত্রে, এখানে শুধুমাত্র আপনি অনুসন্ধান করে নতুন বিষয়বস্তু খুঁজে পেতে পারেন এবং আপনি নজরদারি থেকে বাঁচতে পারেন।
ডার্ক ওয়েবে এমন অনেক দুর্দান্ত ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলো আপনি Google-এ সার্চ করে পাবেন না। উদাহরণস্বরূপ, এখানে ProPublica নামক নিউজ সাইটের কথা বলা যায়। যে সাইটটির লক্ষ্য হলো: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নৈতিক শক্তি ব্যবহার করে, সরকার, ব্যবসা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের আস্থার বিশ্বাসঘাতকতা সমূহ প্রকাশ করা।
কিন্তু তবুও, ডার্ক ওয়েবে অনেক বিপদ রয়েছে। এটি আমাদের সাধারণ অন্যান্য ওয়েবসাইট গুলোর মত নয় যে, এখানে থাকা ওয়েবসাইটগুলো আপনি খুব সহজেই ব্রাউজ করলেন। বরং, এখানে থাকা অনেক ওয়েব সাইটে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে সেই সাইটের সঠিক URL জানতে হবে। কেননা, ডার্ক ওয়েবের বেশিরভাগ ওয়েবসাইটগুলোর ইউআরএল হয় এলোমেলো এবং পাসওয়ার্ড এর মত সংখ্যা যুক্ত। যদিও আপনি কিছু ডিরেক্টরি ব্যবহার করতে পারেন; যেমন, TorLinks এবং The Hidden Wiki।
ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করার সময় আপনি যদি নিজেকে ভুল কোন ওয়েবসাইটে খুঁজে পান, তাহলে আপনি অপরাধমূলক কার্যকলাপের মুখোমুখি হতে পারেন। আর এই বিষয়টি আপনাকে জেলে ও নিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, আপনি যদি ডার্ক ওয়েবের অসংখ্য মার্কেট প্লেসগুলোর মধ্য থেকে যেকোন একটিতে ও অবৈধ কিছু কিনে থাকেন। এছাড়া, আপনি এখানে দুর্ঘটনাক্রমে বিভিন্ন ক্ষতিকারক সফটওয়্যার গুলো নিজের ডিভাইসের ডাউনলোড করতে পারেন। যেমন: Ransomwar, Keyloggers, এবং Botnets।
তাহলে, ডার্ক ওয়েব কী নিরাপদ? বেশ, ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিষয়গুলো অ্যাক্সেস করা জিনিস গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে নিরাপদ নয়। কিন্তু, তবুও এটি সম্পূর্ণ বিপদজনক নয়। আর আপনি যদি নিশ্চিত না হন, তবে অবশ্যই ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করতে যাবেন না।
অবশ্যই, না। আমরা ইন্টারনেটের যে বেশিরভাগ অংশ নিয়মিত ব্যবহার করি, সেটির মধ্যে ডিপ ওয়েব অন্যতম। আর ইন্টারনেটের বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে ডিপ ওয়েব। আর Deep web এবং Dark web এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। যদিও অনেকেই এই দুই ওয়েবকে একই মনে করে এবং এই বিষয়টিকে অনেকটা গুলিয়ে ফেলে। ডার্ক ওয়েব হল ডিপ ওয়েব এর একটি অংশ; কিন্তু ডিপ ওয়েব আরো ব্যাপকভাবে বিস্তৃত এবং এটি সবচাইতে বেশি ব্যবহার।
ডিপ ওয়েব Invisible web ও Hidden web নামেও পরিচিত। ইন্টারনেটের এই ওয়েব টি সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা ইনডেক্স হয় না। কিন্তু, তবুও আপনি ডিপ ওয়েব অ্যাক্সেস করতে পারেন। এই ওয়েব টি সবার ব্যক্তিগত একটি অনলাইন স্টোরেজ এবং এটির বেশিরভাগ অংশই পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। যার কারণে, কোন ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির তথ্যে অ্যাক্সেস করতে পারে না।
আপনি গুগলের মাধ্যমে সব কিছু দেখতে পাবেন না। আপনি বরং Gmail বা Hotmail-এ যেতে পারেন; কিন্তু, আপনি কোনোভাবেই আপনার ইমেইলটি গুগলে অনুসন্ধান করে পাবেন না। এমনকি আপনি আপনার অনলাইন ব্যাংকিং এর এড্রেস ও গুগলে অনুসন্ধান করে পাবেন না।
ডিপ ওয়েবে এমন সব বিষয় বস্তু থাকে, যেগুলো সবসময় অন্যের থেকে লুকানো অবস্থায় থাকে। আর এসব তথ্যগুলো সবসময় পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত, Paywall এর আড়ালে লুকানো বা স্ট্যান্ডার্ড HTTPS/HTTP ব্যবহার করে না। অর্থাৎ, এগুলো টর ব্রাউজারের মাধ্যমে পাওয়া সেই সমস্ত ওয়েবসাইট গুলোর মত লুকায়িত অবস্থায় থাকে।
ডিপ ওয়েব যেহেতু একান্তই নিজের ব্যক্তিগত একটি ওয়েব। তাই, ডিপ ওয়েবে প্রবেশ করা অবশ্যই বেআইনি নয়।
Dark web অবশ্যই সত্য এবং আসল। আর এখানে প্রচুর অবৈধ কার্যকলাপ ঘটে থাকে। তবে, এসব কথা শুনে আপনি অবশ্যই ভয় পাবেন না। প্রযুক্তির অন্যান্য সব বিষয়ের মত, এটিরও ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে।
সাধারণত আপনি যদি ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, তাহলে আপনার অবশ্যই ডার্ক-ওয়েবে অ্যাক্সেস করা উচিত হবে না। এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করুন। আপনার অবস্থান বা এলাকার উপর ভিত্তি করে Dark web-এ প্রবেশ করা বেআইনি হতে পারে। তবে, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এই ওয়েবে প্রবেশ করা বৈধ। তবে, আপনার দেশে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করা বৈধ হলেও, এখানে এসে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। এখানে এসে আপনার কাজের উপর ভিত্তি করে সেটি পরবর্তীতে বৈধ বা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।
অন্যান্য প্রযুক্তির মত ডার্ক ওয়েবের ভালো এবং খারাপ উভয় দিকেই রয়েছে। এখানে যে কেউ চাইলে অবৈধ কাজ করতে পারে এবং কেউ কেউ এখানে আসে নিজেকে অধিক সুরক্ষিত রাখতে। একটি বন্দুক দিয়ে যেমন অপরাধ করা যায়, ঠিক তেমনিভাবে এটি দিয়ে অপরাধ দমন ও করা যায়। তাই, ডার্ক ওয়েবে এসে কোন একজন ব্যক্তির অ্যাক্টিভিটির উপর নির্ভর করবে, তার জন্য এটি অবৈধ কিনা।
আর ডার্ক-ওয়েবে অনেকেই আসে নিজেকে অধিক সুরক্ষিত রাখতে এবং ইন্টারনেট থেকে নিরাপদ থাকতে। এছাড়াও, ডার্ক ওয়েবে নতুন কোন কিছু খুঁজে পাওয়ার জন্য অনেকে এটি ব্যবহার করে। তাই, আপনি এই ওয়েব কিভাবে ব্যবহার করবেন, সেটির উপর নির্ভর করবে এটি আপনার জন্য বৈধ এবং নিরাপদ কিনা।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)