আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে।
ইন্টারনেট এর এই দুনিয়ায় আপনি সব সময় কিন্তু নজরদারীতে আছেন। আমরা জেনে না জেনে আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ করছি। আমরা প্রতিনিয়ত যেসব ডেটা ইন্টারনেটে দিচ্ছি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লোকেশন ডেটা বা GPS। আমাদের ফোনটি কিন্তু জানে আমরা কখন কোথায় যাচ্ছি, কোন জায়গায় বেশি সময় দিচ্ছি, আমাদের বাসস্থান কোথায় ইত্যাদি।
মোবাইলের GPS সিস্টেমটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে করে তুললেও, ইন্টারনেট মার্কেটে এই GPS ডেটা অন্যতম একটি বিজনেস হাতিয়ার। আপনার লোকেশন ডেটা ব্যবহার করে ফেসবুক এবং গুগলের মত কোম্পানি তাদের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বিজনেস চালাচ্ছে।
এই লোকেশন ডেটা দিয়ে মূলত এড টার্গেট করা হয় যা বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে লাভজনক বিজনেস মডেল। এড টার্গেটের মাধ্যমে অডিয়েন্স তাদের আগ্রহ অনুযায়ী বিজ্ঞাপণ দেখে। আর এই ধরনের বিজ্ঞাপণে বিভিন্ন কোম্পানি মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে।
তবে আশার কথা হচ্ছে আপনি চাইলেই আপনার লোকেশন ডেটা যেন এই সব কাজে যেন ব্যবহার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে পারবেন। কোম্পানি গুলো এইধরনের ডেটা ব্যবহার করলেও, ইউজার চাইলে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। অনেকেই এই বিষয় গুলো জানে না আর এইজন্যই আজকের এই টিউন। এই টিউনে দেখাব কিভাবে আপনি লোকেশন ট্র্যাক থেকে বাচতে পারেন।
যদিও প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল তারপরেও আপনি চাইলে iOS এবং অ্যান্ড্রয়েডের ট্র্যাকিং বন্ধ করতে পারবেন। সেটিংটি ফোনের অভ্যন্তরে দেয়া আছে যা প্রতিদিনের ডেটা সংগ্রহ করছে।
অ্যাপল ডিভাইসে লোকেশন ট্র্যাক ডিজেবল করা,
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে লোকেশন ডিজেবল করা
আপনি লোকেশন অফ করার পর আরেকটি কাজ করবেন সেটা হচ্ছে এড ট্র্যাকিং লিমিট করা। সৌভাগ্যবশত iOS এবং অ্যান্ড্রয়েডে এড সীমাবদ্ধ করার অপশন রয়েছে।
যত অপশনই থাকুক আপনি কখনো এড থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারবেন না তবে কিছুটা লিমিট করতে পারবেন। আপনি আপনার Advertising ID রিসেট করে দিতে পারবেন, এতে করে আগে যে এড গুলোতে টার্গেট করা হয়েছিল সেগুলো থেকে মুক্তি পাবেন।
iPhone, iPad, এবং iPod Touch এর ক্ষেত্রে,
অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে,
ডিভাইস গুলো থেকে লোকেশন ডিজেবল করার পর আপনার গুগল একাউন্ট থেকে সেগুলো ডিজেবল করতে হবে। চলুন ধাপ গুলো জেনে নিই,
এখানে কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন Location History, Paused করা মানে লোকেশন ট্র্যাক অফ করা নয়, এটি Pause করলে আপনি কোথায় যাচ্ছেন এটি শুধু টাইমলাইনে শো করবে না। সব অফ করতে চাইলে Web and App Activity অপশনটিও অফ করে দিন৷ এটি করলে আপনার কোন এক্টিভিটি আর গুগল একাউন্টে সেভ হবে না।
আপনি ব্রাউজারে ওপেন ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ট্র্যাকিং এর শিকার হতেই পারেন। পুরোপুরি ট্র্যাকিং মুক্ত থাকতে আপনি প্রাইভেট ব্রাউজিং করতে পারেন। প্রায় সকল ব্রাউজার গুলোতেই এই সুবিধা দেয়া থাকে।
Chrome এ আপনি Incognito Mode ব্যবহার করে গুগলের ট্র্যাক থেকে বাচতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার কোন ডেটা গুগল সেভ রাখবে না। Incognito Mode ব্যবহার করতে প্রথমে ক্রোম ওপেন করুন এবং থ্রিডটে ক্লিক করে New Incognito tab সিলেক্ট করুন।
Mozilla এর Firefox Focus অ্যাপটি ব্যবহার করেও আপনি একই কাজ করতে পারেন। এমনকি আইফোনের ডিফল্ট ব্রাউজার বা Safari তেও প্রাইভেট ব্রাউজিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। ব্রাউজার ওপেন করে Private এ ক্লিক করে এই সুবিধাটি আপনি পেতে পারেন।
তাছাড়া গুগলের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে DuckDuckGo সার্চ ইঞ্জিনটিও ব্যবহার করতে পারেন।
আমরা প্রতিনিয়ত যেসব অ্যাপে বেশি সময় দিচ্ছি সেই সমস্ত অ্যাপের কোম্পানি গুলো আমাদের প্রতিটি ক্লিক রেকর্ড রাখছে। এলগোরিদম গুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা যে আপনি কোন টপিক গুলোতে আগ্রহী সেটা তারা রেকর্ড করে পরবর্তীতে সেই টপিক থেকে ফিড দেখাচ্ছে।
তবে কিছু কোম্পানি আপনাকে এই বিষয় গুলো থেকে নিজেকে বের করে আনার সুযোগ দেয়৷ যেমন আপনি গুগল এবং মাইক্রোসফটের ক্ষেত্রে একাউন্ট ড্যাশ-বোর্ডে গিয়ে বিষয় গুলো নিজের মত করে ডিসাইড করতে পারবেন। একই ভাবে ফেসবুকেও এমন ব্যবস্থা রয়েছে।
আপনি চাইলে ইন্টারেস্ট ভিত্তিক এড বন্ধ করতে পারবেন এই সুযোগ আপনাকে দেয়া হয়েছে। Digital Advertising Alliance এর consumer choice পেইজ রয়েছে যেখানে গিয়ে আপনি দেখতে পারবেন কোন কোন কোম্পানি আপনাকে টার্গেট করেছে।
প্রথমে আপনি এই ওয়েবসাইট ভিজিট করলে এটি আপনার ডিভাইস স্ক্যান করবে এবং সকল টার্গেট কোম্পানি গুলোর লিস্ট দেবে। এখান থেকে আপনি “opt-out cookies” এ ক্লিক করে টার্গেট থেকে মুক্ত হতে পারেন।
তবে আপনি মনে রাখবেন এটি করলে আপনার এড আসা বন্ধ হবে না, শুধু মাত্র টার্গেট করা এড গুলো বন্ধ হবে।
আমরা প্রতিনিয়ত যে ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট গুলো ব্যবহার করছি সেগুলো কিন্তু প্রচুর পরিমাণে ডেটা কালেক্ট করে। মোবাইলে থাকা এসিস্ট্যান্ট অথবা ডিভাইস সব গুলোই প্রচুর ডেটা নিয়ে কাজ করে।
ভার্চ্যুয়াল এসিস্ট্যান্ট গুলো কি কি তথ্য কালেক্ট করছে সে ব্যাপারে সচেতন হোন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
যেকোনো অ্যাপ ইন্সটল দেবার আগে জানার চেষ্টা করুন সেই সমস্ত অ্যাপ কি কি পারমিশন চাইবে। রিভিউ গুলো পড়ুন। অ্যাপের ধরন অনুযায়ী পারমিশন দেয়া যেতে পারে কিন্তু কাজের বাইরে ভিন্ন পারমিশন দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যেমন কোন গেম যদি কল বা এস এম এস এর পারমিশন চায় সেটা এড়িয়ে চলুন।
একই সাথে যাচাই করুন আগে যে অ্যাপ গুলো ইন্সটল দিয়েছেন সেগুলোতে কি কি পারমিশন দেয়া আছে।
আর এভাবেই আপনি ফোনের সকল ট্র্যাকারকে অফ করে ইন্টারনেটে নিরাপদে থাকতে পারবেন।
পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।