আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে। আজকে আমি আলোচনা করব কিভাবে অনলাইনে নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন। চলুন শুরু করা যাক।
আমরা এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট এর সাথে খুব বেশিই কানেক্টেড। ইন্টারনেট কে বর্তমানে কোন ভাবেই অস্বীকার করার ব্যবস্থা নেই। আমরা সারাদিন ইন্টারনেটে হয় সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ, না হয় ই-কমার্স সাইট গুলোর সাথে কানেক্টেড।
এগুলো আমাদের লাইফে একটি অংশ হয়ে গেলেও মাঝে মাঝে হয়ে উঠে বিরক্তির কারণ। আমাদের অনলাইন অবস্থান কে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপণী প্রতিষ্ঠান গুলো আয় করে নিচ্ছে মিলিয়ন ডলার, আমাদের দ্বারা কিনিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন দরকার অদরকারী পণ্য।
এসব কিছু থেকে নিস্তার পেতে কেউ কেউ চায় শান্তিতে অনলাইনে অবস্থান করতে। যেখানে থাকবে না কোন সোশ্যাল মিডিয়া, থাকবে না অতিরিক্ত কোন চাপ। অনেকেই আছেন যারা চান আপনি অনলাইনেই থাকবেন কিন্তু কেউ আপনাকে ব্যবহার করতে পারবে না। কেউ আপনার কোন তথ্য নিতে পারবে না। তাদের জন্যই মূলত আজকের এর টিউন।
এই যে আপনি এমন একটি লাইফ চান যেখানে অনলাইনের কোন চাপ থাকবে না। একেই সাধারণ ভাবে বলা হয় Off the Grid। ইংরেজিতে এটির মানে ইলেকট্রনিক থেকে মুক্ত একটি লাইফ। যেমন ধরুন আপনি যদি পুরোপুরি Off the Grid জীবন ধারণ চান তাহলে আপনার নিচের বৈশিষ্ট্য গুলো থাকবে,
এটা এমন, যে আপনি একটি দ্বীপে বসবাস করছেন। সুতরাং সব কিছু নিয়ে বসবাস করা হচ্ছে on-the-grid এবং এগুলো বাদ দিয়ে হচ্ছে off-the-grid। তো কেমন হবে আপনি on-the-grid থেকেও off-the-grid বসবাস করবেন? মানে হচ্ছে ইন্টারনেট বা সব সুবিধাও ব্যবহার করবেন সাথে সাথে থাকবেন ঝামেলা মুক্ত off-the-grid লাইফেও।
খুব সহজে এই বিষয়টিকে বলা হয় ইন্টারনেটে Anonymous থাকা।
হ্যাঁ বলছিলাম, কেমন হবে যদি on-the-grid থেকে off-the-grid এর সুবিধা পাওয়া যায়। আপনার ফোন থাকবে কিন্তু কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। বা জানবে না আপনি কে, আপনি অনলাইনে থাকবেন কিন্তু কেউ বুঝতে পারবেনা না সেটা। আপনি পুরোপুরি থাকা মানে হ্যাকার থেকে দূরে থাকা।
এই Anonymous থাকার মাধ্যমে আপনি কানেক্টেড থাকবেন কিন্তু কেউ আপনাকে ট্র্যাক করতে পারবে না। আপনার প্রাইভেসি দিক থেকে আপনি পাবেন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। কেউ আপনাকে না পারবে ট্র্যাক করতে না পারবে আপনার কোন তথ্য ব্যবহার করতে।
তবে ইন্টারনেটে থাকার কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে যেমন, দুইটি লাইফ ব্যালেন্স করা মাঝে মাঝে কষ্ট সাধ্য হয়ে যায় অনেকের জন্য আবার নিজেকে Anonymous করতে যে টুল বা সফটওয়ার গুলো ব্যবহার করতে হয় সচরাচর সেগুলো অনেক দামি হয়। সব কিছুর পরেও আপনি যে সফটওয়্যার টি ব্যবহার করে নিজেকে Anonymous করছেন সেটি আপনাকে কোন দিক থেকে ধোঁকা দিচ্ছে কিনা বা আপনার কোন তথ্য হ্যাক হচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নটি কিন্তু থেকেই যায়।
অনেকে ভাল খারাপ দুই কাজের জন্যই নিজেকে Anonymous করে থাকে। কেউ কেউ নিজেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে বা হ্যাকারের হাত থেকে বাচতে নিজে Anonymous করে আবার অনেকে নিজে হ্যাকিং করতে এবং নিজেকে যাতে কেউ খুঁজে না পায় সেজন্য Anonymous করে। আমি এখন দেখাব কিভাবে আপনি নিজেকে Anonymous করতে পারেন এবং আশা করব আপনি সেটা ভাল কাজে ব্যবহার করবেন।
সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে গুগল বেস্ট হলেও যখন আপনি Anonymous ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাইবেন তখন কখনোই গুগল ব্যবহার করা যাবে না। আমরা জানি গুগল আপনার সব তথ্য কালেক্ট করে তাই এই সার্চ ইঞ্জিন কখনোই নিরাপদ নয়। বিশ্বাস যোগ্যতার দিক থেকে গুগলকে অনেক বারই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন তাদের সার্চ রেজাল্টে প্রতারণা, ইউজারদের তথ্য চুরি, অন্য সার্চ ইঞ্জিনদের চাপে ফেলে লাভবান হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে গুগলের বিরুদ্ধে।
শুধু গুগলের সার্চ ইঞ্জিনই নয় গুগলের অন্য কোন প্রোডাক্টও ব্যবহার করা যাবে না যেমন, Google Map, Gmail ইত্যাদি।
Anonymous থাকতে Ecosia, Startpage, Qwant, DuckDuckG ইত্যাদি ব্রাউজার ব্যবহার করুন।
আমরা মাঝে মাঝে একটা ভুল করি সব জায়গায় একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি, এটা করা থেকে বিরত থাকুন কারণ আপনি যতই সতর্ক হোন না কেন আপনার পাসওয়ার্ড হ্যাকারের হাতে চলে যেতে পারে। তাই একেক ওয়েবসাইটে একেক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে প্রতিমাসে একবার করে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করুন।
প্রতিটি ওয়েবসাইটেরই প্রোটোকল থাকে। প্রোটোকলের কাজ হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভার থেকে তথ্য আপনার কম্পিউটারে নিয়ে আসা। প্রতিটি ওয়েব সাইটেই Http প্রোটোকল থাকে। কিন্তু এই প্রোটোকলটি প্রটেক্টেড না। এর মাধ্যমে আপনার তথ্য চলে যেতে পারে সার্ভারে। তাই Https প্রোটোকল ব্যবহার করুন যার মাধ্যমে এটি আপনার তথ্যকে রক্ষা করবে।
এজন্য এই এক্সটেনশন টি ব্যবহার করতে পারেন।
আমরা জানি প্রতিদিন কয়েকশো স্প্যাম ইমেইল আসে আমাদের ইমেইল। কেউ কেউ আছে যারা আবার স্প্যাম মেইল গুলোকে ভালবাসে। আপনি যদি এমনটি করতে চান তাহলে গোপন একটি মেইল খুলে সব স্প্যাম মেইল সেখানে ফরওয়ার্ড করে দিতে পারেন। এতে আপনার পাবলিক মেইলও পরিষ্কার থাকবে সাথে সাথে সিকরেট মেইলেও মেসেজ যাবে।
VPN এর মাধ্যমে আপনার আইপি এবং লোকেশন চেঞ্জ হয়ে যায়। আপনি ভিপিএন ব্যবহার করলে ইন্টারনেটে আপনার সকাল তথ্য থাকবে নিরাপদ। কোন কোন দেশে বিশেষ কিছু ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়া হয় সেই ব্লক করা ওয়েব সাইটেও এক্সেস করতে পারবেন ভিপিএন এর মাধ্যমে।
এটি এমন একটি ইন্টারনেট ব্রাউজার যা ব্যবহার করলে আলাদা ভিপিএন বা প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করতে হয় না। এর মাধ্যমে আপনার আইপি বারবার চেঞ্জ হয়ে ইন্টারনেটে পাবলিশ হয় যার মাধ্যমে আপনি আসল পরিচয় গোপন থাকে। আপনারা অনেকে হয়তো ডার্ক ওয়েবের কথা শুনেছেন, ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করতে এর Tor ব্রাউজার ব্যবহার করা হয়।
আমরা জানি আপনার ফোন যেকোনো ভাবে ট্র্যাক হতে পারে যেমন আপনার যে সিম কার্ড আছে সেখানে সমস্ত তথ্য দেওয়া আছে এবং আপনার যে স্মার্ট-ফোন আছে সেটিতেও অন থাকতে পারে লোকেশন তাই প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন ডিসপোজাল ফোন।
আপনি আর্থিক লেনদেনে গতানুগতিক সিস্টেম ব্যবহার না করে ব্যবহার করতে পারেন সিক্রেট কয়েন বা Bitcoin। নতুন আরেকটা এমন হচ্ছে Dash। যদিও আমাদের দেশে Bitcoin ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।
আমরা যে অপারেটিং সিস্টেম গুলো ব্যবহার করছি সব গুলো অপারেটিং সিস্টেমেই ভার্চুয়াল মেশিন ব্যবহারে সুযোগ আছে। যেমন আপনি উইন্ডোজ ইউজার হলে ভার্চুয়াল মেশিনে ম্যাক ইন্সটল দিয়ে ম্যাক চালাতে পারবেন। সেখানে আপনার আসল তথ্য এনক্রিপ্ট থাকবে। এভাবে নিজের কম্পিউটারে ভার্চুয়াল মেশিন ব্যবহার করেও নিরাপদ থাকতে পারেন।
আমরা যে ব্রাউজারে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সাইট ভিজিট করছি বা লগইন করছি এগুলোর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার ফাইল যেগুলো Cookies নামে পরিচিত। এই Cookies ব্যবহার করেই বিজ্ঞাপণী কোম্পানি গুলো আপনাকে বিজ্ঞাপণ দেখায়। তাই যেকোনো ওয়েবসাইটে গেলে Cookies, allow পারমিশন গ্র্যান্ড করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার কম্পিউটার ও ডিভাইস থেকে সবসময় সব ধরনের কুকি ক্লিন করে রাখুন।
ইন্টারনেট থেকে P2P সফটওয়ার বা ডিজিটাল ফাইল ডাউনলোড করার একটি মাধ্যম হচ্ছে টরেন্ট। এখানে বিশ্বের অনেক ইউজার আছে যারা এখানে ফাইল আপলোড করে ডাউনলোড করে। এবং সমস্ত কিছু হলেও যেকেউ আপনার আইপি দেখতে পারে। বা দেখা যায় কোন আইপি ডাউনলোড দিচ্ছে বা আপলোড দিচ্ছেন।
তাই Seedbox ব্যবহার কররুন। Seedbox এর সুবিধা হচ্ছে এখানে প্রতিটি ইউজারকে প্রাইভেট Dedicated সার্ভার থাকে যার মাধ্যমে হাই স্পীডে ডিজিটাল ফাইল আপলোড এবং ডাউনলোড করতে পারেন।
ইন্টারনেটে আপনি হয়তো Anonymous থাকতে পারেন কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে কখনোই ১০০ % Anonymous থাকা যায় না। আপনি সর্বোচ্চ ৮০% পর্যন্ত Anonymous থাকতে পারবেন। যেমন একটি দেশে বসবাস করতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু তথ্য দিতে হবে যা ছাড়া আপনি দেশের নাগরিক সুযোগ সুবিধাই ভোগ করতে পারবেন না।
অনলাইনে একেক জন একেক কারণে Anonymous থাকতে পারে। প্রযুক্তিকে কে কিভাবে ব্যবহার করবে সেটা নির্ভর করে একান্তই তার ইচ্ছের উপর।
পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।
অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ এই টিউনটির জন্য।