Vishing (ভিশিং) ও Smishing (স্মিশিং) ফিশিং কি? কিভাবে বাঁচবেন এই দুই ধরনের ফিশিং থেকে?

টিউন বিভাগ সাইবার সিকিউরিটি
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মতি আজকেও চলে আসলাম নতুন কোন টিউন নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করব সাইবার সিকিউরিটি এবং আপনার অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে।

সাইবার সিকিউরিটি

সাইবার সিকিউরিটি বর্তমানে অনেক বড় একটা ইস্যু। অনলাইনে আপনি কিভাবে নিরাপদে থাকবেন এটা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। দেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সকল স্তরে এই সাইবার নিরাপত্তার জন্য নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন পদক্ষেপ। ইউজারদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন করতে আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন সেমিনার।

এত কিছু করার উদ্দেশ্য কি? এত কিছু করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনি যাতে অনলাইনে নিরাপদ থাকতে পারেন, আপনার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সকল তথ্য যাতে নিরাপদে রাখতে পারেন, অনলাইনে যেন নিশ্চিন্তে আর্থিক লেনদেন করতে পারেন। তাই আপনাকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে, সবার আগে আপনার ডাটা প্রাইভেসিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

ডাটা প্রাইভেসি

আমরা জানি বর্তমানে এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমাদের ব্যক্তিগত ডাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে টাকার থেকে বেশি গুরুত্বের সাথে দেখা হয় মানুষের ডাটাকে। আপনার ডাটা বিভিন্ন ভাবেই ইন্টারনেটে চলে যেতে পারে ব্যবহার হতে পারে বিভিন্ন কাজে। আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন, আমরা প্রতিদিন জানা অজানা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করি সেখানে আপনার/আমার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন, ফোন নাম্বার, বর্তমান ঠিকানা, ইমেইল এড্রেস ইত্যাদি দেই।

আপনি কি জানেন সেই ওয়েবসাইটটি কতটা বিশ্বস্ত? আপনি কি নিশ্চিত আপনার তথ্য বিভিন্ন কাজে লাগানো হবে না? টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করা হবে না? তাই আপনার নিরাপত্তার জন্যই যেকোনো অফার পেয়েই এমন অচেনা ওয়েবসাইটে তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

আমি আগের কিছু টিউন গুলোতে ফিশিং নিয়ে আলোচনা করেছিলাম এবং আপনারা অনেকে হয়তো জানেন যে হ্যাকাররা কিভাবে কাজ গুলো করে।

ফিশিং এর নতুন টেকনিক

আমরা জানি ফিশিং হচ্ছে কোন ব্যক্তিকে ইমেইলে বা ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং এ লিংক পাঠিয়ে তাকে কোন ভাবে লিংক ঢুকিয়ে তার প্রয়োজনীয় লগইন ইনফো হাতিয়ে নেয়া হয়।

এই ফিশিং বর্তমানে পরিচিত একটি হ্যাকিং মেথড এবং অনেকেই এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানে এবং সচেতন। কিন্তু আপনার মনে রাখতে হবে হ্যাকাররা অনেক বেশিই চালাক তারা শুধু একধরনের ফিশিং নিয়েই বসে নেই বের করছে আরও নতুন নতুন ফিশিং মেথড। চলুন দেখে নেয়া যাক নতুন দুটি  ফিশিং মেথড।

Vishing (ভিশিং)

Vishing মানে Voice Phishing. আপনি যখন আপনার কম্পিউটার বা ইন্টারনেট নিয়ে বেশ সতর্ক তখন হ্যাকার হ্যাকিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে একটি ফোন কলের মাধ্যমে।

সাধারণত ফোন করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চাওয়া হয় এই হ্যাকিং এর মাধ্যমে যেমন, আপনার ডেবিট কার্ড নাম্বার, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, বিভিন্ন পাসওয়ার্ড বা পিন নাম্বার। কলটি এমন ভাবে করা হয় ভিকটিম বুঝতেই পারবে না হ্যাকার কল করেছে বা তাকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে।

আমাদের দেশে এই কাজটি করার প্রমাণ পাওয়া গেছে বিকাশের ক্ষেত্রে, কল করে বলা হয়, আমি বিকাশের কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছি আমাদের আপনার এই এই তথ্য গুলো লাগবে, না দিলে আজকের ভেতর আপনার একাউন্ট ব্লক হয়ে যাবে। আপনি যদি ভুল করে আপনার পিন নাম্বার, জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার, দিয়ে দেন তাহলে আপনার একাউন্টের টাকা চলে যেতে পারে হ্যাকারের একাউন্টে।

বাইরের দেশ গুলোতেও এমনটি হয়। যেমন, যারা কোন কোম্পানিতে কাজ করে তাদের ফোনে কল দিয়ে বলা হয় আমি অমুক কোম্পানির আইটি ডিপার্টমেন্ট থেকে বলছি, অফিসের কাজের জন্য এখনি এই তথ্য গুলো আমাদের লাগবে। যদি ভিকটিম তার কথা শুনে সব বলে দেয় তখনি হয় সর্বনাশ।

আরও ভয়াবহ খবর হচ্ছে হ্যাকাররা মাঝে মাঝে ল্যান্ডলাইন হ্যাক করেও এমনটি করতে পারে। ধরুন কেউ আপনাকে কল দিয়ে যখন এমন তথ্য চাইলো আপনি কল কেটে দিলেন! কিন্তু কলটি না কেটে সেই কলেই কানেক্ট থাকলো, যখন আপনি ব্যাংকে কল দিলেন বিষয়টি পরিষ্কার হবার জন্য তখন সেই কল আবার হ্যাকারের কাছেই গেল এবং তাকে আপনি কাস্টমার কেয়ার ভেবে সব তথ্য দিয়ে দিলেন।

এই Vishing হ্যাকিং এ মূলত ভিকটিম কে ভয় দেখানো হয় যেমন, এখনি তথ্য না দিলে আপনার আকাউন্ট ব্লক হয়ে যাবে বা অফিসের কাজে জরুরী এই তথ্য গুলো লাগবে ইত্যাদি।

এই ফিশিং থেকে বাঁচতে আপনাকে সব সময় মনে রাখতে হবে কোন ব্যাংক কখনোই আপনাকে কল দিয়ে পিন নাম্বার বা একাউন্ট ডিটেইল জানতে চাইবে না। যদি কখনো কেউ নিজেকে অফিসের আইটি কর্মকর্তারা বলে দাবী করে তাহলে তাকে তথ্য দেবার আগে অবশ্যই পরিচিত নাম্বারে কল দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।

Smishing (স্মিশিং)

Smishing মানে SMS Phishing. এটি হচ্ছে এক ধরনের SMS হ্যাকিং। এর মাধ্যমে হ্যাকার ইন্টারনেট ব্যবহার না করে শুধু মাত্র টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে পারে হাজার হাজার টাকা।

আমাদের দেশে ২০১৯ সালের দিকে এ ধরনের হ্যাকিং দেখা যেত। আপনার বিকাশ একাউন্টে হটাৎ করে বিশাল একাউন্টের টাকা ক্যাশ ইন হতো সাথে সাথে কেউ একজন কল করে বলতো, ভাই ভুল করে আপনার ফোনে টাকা চলে গেছে দয়া করে পাঠিয়ে দিন। আপনি ব্যালেন্স না চেক করে টাকা পাঠালেন তো আপনার টাকা চলে গেল তাদের হাতে।  অথচ আপনার একাউন্টে কোন টাকাই আসে নি।

এই ধরনের হ্যাকিং এর ক্ষেত্রে কোন পরিচিত নাম্বার ব্যবহার করা হয় যেমন, Bkash, Rocket, Paypal। দেখে বুঝতেই পারবেন না এটা ফেইক নাম্বার।

অন্যান্য দেশে যাদের Paypal আছে তাদের ফোনে মাঝে মাঝে এমন হ্যাকিং মেসেজ আসে যারা ভুল করে তথ্য রিপ্লাই দেয় তাদের সব তথ্য চলে যায় হ্যাকারের হাতে।

কখনো কখনো টেক্সট মেসেজে লিংক পাঠিয়েও বিভ্রান্ত করা হয় ভিকটিমকে। লিংকে ক্লিক করে ফিশিং সাইটে চলে যায় এবং ইউজার বুঝে উঠার আগেই সে হ্যাকিং এর শিকার হয়

এই ফিশিং থেকে বাঁচতে আপনাকে আগে সচেতন হতে হবে। মেসেজে টাকা এসেছে দেখে বিশ্বাস করলেই হবে না নিজের একাউন্টে চেক করে দেখতে হবে।

এই ধরনের হ্যাকিং থেকে বাঁচতে কি করবেন?

সকল হ্যাকিং থেকে বাঁচতে সবার প্রথম আপনাকে সচেতন হতে হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক এই Vishing এবং SMiShing হ্যাকিং থেকে কিভাবে বাঁচতে পারবেন,

  • কল বা মেসেজে এমন কোন মেসেজ আসলে বারবার চেক করুন এটা আপনার অফিসের বা ব্যাংকের নাম্বার কিনা।
  • যখন আপনি ব্যাংকে কল করার কথা ভাববেন তখন প্রয়োজনে অন্য ল্যান্ড লাইন ব্যবহার করুন।
  • যতই জরুরী হোক কখনোই ফোনে আপনার ব্যাংক ডিটেইলস, ব্যক্তিগত পিন নাম্বার দিতে যাবেন না। মনে রাখবেন ব্যাংক কখনোই আপনার কাছে এমন তথ্য চাইবে না।
  • কখনো র‍্যান্ডম কোন ফোন কলে নির্দিষ্ট নাম্বারে টাকা পাঠাবেন না। মনে রাখবে আপনার ব্যাংক কখনো আপনাকে কোন নাম্বারে টাকা পাঠাতে বলবে না।
  • ব্যাংক বা অফিসের সকল টেক্সট মেসেজ অবশ্যই গুরুত্বের সাথে নিন।
  • আপনাকে টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে কোন লিংক পাঠালে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে একাউন্টে বা ইমেইলে চেক করে দেখুন কোন আপডেট এসেছে কিনা।

শেষ কথাঃ

টেকনোলজি উন্নত হবার সাথে হ্যাকাররাও আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এজন্য আমাদের নিজেদেরকে সচেতন করতে হবে। হ্যাকিং এড়াতে উপরের পদক্ষেপ গুলো অবশ্যই মেনে চলুন। আর কোথাও নিজেদের তথ্য দেওয়ার আগে ভেবে চিন্তে তারপর দিন।

কেমন হল আজকের টিউন জানাতে অবশ্যই টিউমেন্ট করুন।

পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন। আমাদের সমসাময়িক যে সংকট চলছে এর থেকে রক্ষা পেতে সবাই সচেতন থাকবেন কারণ আপনার সচেতনতাই পারে আমাদের সবাইকে খারাপ অবস্থা থেকে বাচাতে। সবাই বাসায় থাকুন আর আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, আল্লাহ হা-ফেজ।

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস