ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং কী? আপনার কী Crypto Cloud Mining করা উচিত?

Level 15
কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা

বর্তমান এই ডিজিটাল বিশ্বে ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। যেখানে বিটকয়েন থেকে শুরু করে ইথেরিয়াম পর্যন্ত বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে মানুষের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। এমনকি, বর্তমানে বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ও পেমেন্ট নিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি এর জন্য এটিএম বুথ ও রয়েছে।

বাংলাদেশের মতো কিছু দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ হলেও, এই মুহূর্তে যারা বিভিন্ন দেশে রয়েছেন এবং যেখানে ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন বৈধ, সেখানকার অনেকেই ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর কারণে প্রতারিত হতে পারেন। ‌

ক্রিপ্টোকারেন্সি আয় করার জন্য মাইনিং প্রক্রিয়া, অর্থাৎ ব্লক চেইনে নতুন ব্লক যোগ করার প্রক্রিয়া ক্রমেই আরো জটিল এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। আর এই কারণেই, ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর ধারণাটি সামনে এসেছে এবং যার ফলে ব্যবহারকারীরা দূরবর্তী কোনো ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে মাইনিং করার পাওয়ার ভাড়া নিয়ে নিজের জন্য মাইনিং করতে পারেন।

Disclaimer: এই টিউনটিতে শুধুমাত্র ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন বাংলাদেশ আইনে অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং, এই মূহূর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করে কেউ ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। তবে, বাংলাদেশের কোন নাগরিক এই টিউনটি দেখে ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করলে, টিউনার ও টেকটিউনস কোন দ্বায় বহন করবে না।

আজকের এই টিউনে আমরা Crypto Cloud Mining কী, এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং কী?

ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং কী?

ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তি দূরবর্তী ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করতে পারেন। এক্ষেত্রে, সেসব ব্যবহারকারীকে ক্রিপ্টো মাইনিং করার জন্য সরাসরি কোন হার্ডওয়্যার কিনতে কিংবা পরিচালনা করতে হয় না। এর পরিবর্তে, তারা থার্ড পার্টি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই মাইনিং করার পাওয়ার ভাড়া নেন। আর অন্যদিকে, এসব সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো নিজেরা বড় বড় ডেটা সেন্টারে স্থাপন করে এবং সেগুলোর মাধ্যমে মাইনিং পরিচালনা করে থাকে।

মাইনিং প্রক্রিয়া ও হল ব্লক চেইনে নতুন ব্লক যোগ করার এবং লেনদেন নিশ্চিত করার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে উচ্চ কম্পিউটার পাওয়ার এর প্রয়োজন হয় এবং যার ফলে এটি ব্যয়বহুল। আর এর ফলে, ব্যক্তিগতভাবে মাইনিং করা ক্রমশই অনেক কঠিন হয়ে উঠছে। আর এই সমস্যা থেকেই সামনে আসে, ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং।

Crypto Cloud Mining প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ অর্থ দিয়ে মাইনিং পাওয়ার কিনে নেন এবং সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে তাদের জন্য সেই সার্ভারে মাইনিং কার্য সম্পন্ন হতে থাকে।

ক্লাউড মাইনিং সার্ভিসের প্রকারভেদ

ক্লাউড মাইনিং সার্ভিসের প্রকারভেদ

ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো, হোস্টেড মাইনিং এবং লিজিং হ্যাশ পাওয়ার। ‌

হোস্টেড মাইনিং

হোস্টেড মাইনিং হলো এমন একটি মাইনিং মডেল, যেখানে ব্যবহারকারীরা সরাসরি মাইনিং করার হার্ডওয়্যার কিনে সেগুলোকে থার্ড পার্টি কোন ডেটা সেন্টারে স্থাপন করে এবং সেখানে সেগুলো পরিচালনা করে। এই পদ্ধতিতে, কোন ব্যক্তি একটি মাইনিং ডিভাইসের মালিক হন, তবে সেগুলোর সেটআপ রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ সেই ডেটা সেন্টার কর্তৃপক্ষের উপর থাকে।

হোস্টেড মাইনিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা প্রথমে একটি মাইনিং ডিভাইস কেনেন। তারপর, সেসব ডিভাইস গুলো একটি নির্দিষ্ট ডাটা সেন্টারে প্রেরণ করা হয়, যেখানে সেটিকে ইন্সটল এবং পরিচালনা করা হবে। এসব ডেটা সেন্টারগুলো সাধারণত দক্ষ ও প্রফেশনাল লোকদের দ্বারা পরিচালিত করা হয়, যেখানে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। মোটকথা, মাইনিং প্রক্রিয়া কার্যক্রমকে কার্যকর ভাবে চালাতে সহায়তা করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা এসব ডেটা সেন্টার থেকে নেওয়া হয়।

হোস্টেড মাইনিং-এর সুবিধা

হোস্টেড মাইনিং মডেলটির মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর জন্য অংশগ্রহণকারীরা বেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে কেউ শুধুমাত্র মাইনিং হার্ডওয়্যার গুলো কিনে সেটি পরিচালনা করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এছাড়াও হোস্টেড মাইনিং এর আরো কিছু সুবিধা হল:

  • এক্সপার্টদের দ্বারা পরিচালনা: হোস্টেড মাইনিং এর ক্ষেত্রে সেসব ডেটা সেন্টার গুলো প্রফেশনাল টেকনিশিয়ান দ্বারা মাইনিং ডিভাইস গুলোকে পরিচালনা করা হয় এবং তারাই সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে। ‌এর ফলে, যেকোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা কিংবা জটিলতা দেখা দিলে, তারা সেগুলো দ্রুত সমাধান করতে সক্ষম হন।
  • উন্নত অবকাঠামো ব্যবস্থা: এ ধরনের হোস্টেড মাইনিং ডেটা সেন্টারগুলোতে সাধারণত পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। হোস্টেড মাইনিং এ এই ধরনের উন্নত অবকাঠামো ব্যবস্থা থাকার কারণে, মাইনিং ডিভাইস গুলোকে সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা যায়। ‌এর ফলে, মাইনিং এর মালিকগণ সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
  • সময় এবং শ্রমের সাশ্রয়: ব্যক্তিগতভাবে মাইনিং ডিভাইস গুলো পরিচালনা করতে অনেক সময় এবং শ্রম ব্যয় করতে হবে। কিন্তু, হোস্টেড মাইনিং এর ক্ষেত্রে এই ঝামেলার এড়ানো যায়। কারণ, এক্ষেত্রে ডেটা সেন্টারের কর্মীরাই এসব কাজগুলো পরিচালনা করে থাকেন।
  • দ্রুত মাইনিং শুরু: কোন ব্যক্তির জন্য মাইনিং হার্ডওয়্যার গুলো কেনা, সেগুলো সেটআপ এবং পরিচালনা করতে প্রথমে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। আর, কেউ এই বিষয়ে অভিজ্ঞ না থাকলে আরো বেশি সময় লাগতে পারে। তবে, ও হোস্টেড মাইনিং এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের জন্য দ্রুত মাইনিং শুরু করতে পারেন। কারণ, এক্ষেত্রে মাইনিং সার্ভিস প্রদান করা সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোর ডেটা সেন্টার সাধারণত সবসময় এই কাজের জন্যই প্রস্তুত থাকে।
  • স্থিতিশীল কার্যক্রম: ডাটা সেন্টারে থাকা মাইনিং ডিভাইস গুলো সর্বদা কর্মক্ষম রাখার জন্য উচ্চমানের রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। ‌ এক্ষেত্রে, থার্ড পার্টি এসব ডেটা সেন্টার গুলোর এ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকে এবং এর ফলে মাইনিং কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন ঘটে না।

এইসব সুবিধার কারণে অনেকের কাছে হোস্টেড মাইনিং ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।

লিজিং হ্যাশ পাওয়ার

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে মাইনিং করার ক্ষেত্রে লিজিং হ্যাশ পাওয়ার‌ হল অন্যতম একটি মাইনিং মডেল। মাইনিং করার ক্ষেত্রে এই মডেলে ব্যবহারকারীরা সরাসরি মাইনিং হার্ডওয়্যার গুলো না কিনে কিংবা সেগুলো সেটআপ না করেই বরং একটি সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ হ্যাশিং পাওয়ার ভাড়া নেন এবং তার মাধ্যমে মাইনিং করেন।

হ্যাশ পাওয়ার, যা হ্যাশ রেট নামে ও পরিচিত। এই পদ্ধতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করার জন্য আপনাকে সর্ব প্রথম এমন কোন সার্ভিস প্রোভাইডার খুঁজে বের করতে হবে, যারা হ্যাশ পাওয়ার ভাড়ার সেবা দিয়ে থাকে। এসব সংস্থাগুলোর সাধারণত বড় বড় ডেটা সেন্টার থাকে, যেখানে তাদের মাইনিং করার ডিভাইস গুলো স্থাপন করা থাকে। ‌

এখন, ‌তারা বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে তাদের মাইনিং ডিভাইস গুলোর হ্যাশ পাওয়ার প্যাকেজ অফার করে। এক্ষেত্রে, তাদের প্রতিটি প্যাকেজে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ হার্ডওয়্যার ক্যাপাসিটি বা হ্যাশিং পাওয়ার বরাদ্দ করা থাকে। আপনি যখন আপনার বাজেট অনুযায়ী এসব প্যাকেজগুলো থেকে কোন একটি সিলেক্ট করেন, তখন এসব মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার আপনার পক্ষে মাইনিং করা শুরু করবে।

উদাহরণস্বরূপ ধরুন, আপনি কোন একটি মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি থেকে ১০০ ডলার দিয়ে ১০ টেরা হ্যাশ (TH/s) ক্ষমতার প্যাকেজ ভাড়া নিলেন। এখন, সেই কোম্পানির ডেটা সেন্টারে আপনার পক্ষে মাইনিং করা শুরু হবে এবং প্রতি মাসে আপনি সেই মাইনিং থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি পাবেন যেগুলো আপনার ডিজিটাল ওয়ালেটে জমা হবে। এখানে আপনাকে নিজের জন্য কোন হার্ডওয়্যার কিনতে হচ্ছে না।

বরং, আপনি শুধুমাত্র তাদের নির্দিষ্ট প্যাকেজ গুলো ক্রয় করার মাধ্যমে হার্ডওয়ারের কিছু পাওয়ার ক্রয় করছেন এবং যার মাধ্যমে আপনার পক্ষে সেসব কোম্পানি মাইনিং করছে।

ক্রিপ্টো মাইনিং-এ লিজিং হ্যাশ পাওয়ারের সুবিধা

ক্রিপ্টো মাইনিং-এর ক্ষেত্রে লিজিং হ্যাশ পাওয়ার মডেলটি একটি সহজ এবং সুবিধাজনক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই তাদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করতে পারেন।

লিজিং হ্যাশ পাওয়ার মডেলের মাধ্যমে ক্রিপ্টো মাইনিং এর কিছু সুবিধা হল:

  • প্রাথমিক বিনিয়োগ কম প্রয়োজন: মাইনিং শুরু করার জন্য সাধারণত মাইনিং ডিভাইস কেনা, সেগুলো সেটআপ করা এবং পরিচালনা করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, এই পদ্ধতিতে বা এই মডেলের ব্যবহারকারীরা থার্ড পার্টি কোম্পানির কাছ থেকে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণ হ্যাশিং পাওয়ার ভাড়া নেওয়ার মাধ্যমেই তাদের ক্রিপ্টো মাইনিং শুরু করতে পারেন, যা তুলনামূলক ভাবে মাইনিং এর খরচ কমায়।
  • টেকনিক্যাল জ্ঞানের প্রয়োজন নেই: মাইনিং শুরু করার জন্য মাইনিং হার্ডওয়্যার ম্যানেজ করতে সাধারণত প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়, যা মাইনিং এ আগ্রহী বেশিরভাগ লোকেরই থাকে না। কিন্তু, লিজিং হ্যাশ পাওয়ার মডেলে, এ ধরনের দক্ষতার কোন প্রয়োজন হয় না। কারণ, তাদের হয়ে সেসব থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানগুলোই এ ধরনের প্রযুক্তিগত দিকগুলো ম্যানেজ করে থাকেন।
  • সহজে শুরু করা যায়: এই মডেলে ক্রিপ্টো মাইনিং শুরু করার জন্য খুব সহজেই কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বা তাদের প্যাকেজ ক্রয় করেই বিনিয়োগকারীরা মাইনিং শুরু করতে পারেন।
  • রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলা মুক্ত: মাইনিং হার্ডওয়্যার গুলো পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য অনেক সময় এবং শ্রমের প্রয়োজন হয়। ‌কিন্তু, লিজিং হ্যাশ পাওয়ার মডেলে এই দায়িত্ব সেসব সার্ভিস প্রোভাইডারের উপর থাকে।
  • নিয়মিত আয়: লিজিং হ্যাশ পাওয়ার মডেলে মাইনিং কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত হয় এবং এর ফলে ব্যবহারকারীরা ধারাবাহিকভাবে এখান থেকে আয় করতে পারেন। ‌আর এর ফলে, সেসব সার্ভিস প্রোভাইডার থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ব্যবহারকারীর একাউন্টে অর্থ জমা হতে থাকে।

এসব সুবিধা গুলোর কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর ক্ষেত্রে লিজিং হ্যাশ পাওয়ার মডেলটি ব্যবহারকারীদের নিকট অনেক জনপ্রিয় একটি পছন্দ। তবে, এই মডেলটিতে ক্রিপ্টো মাইনিং এর ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, যেগুলো অবশ্যই একজন ব্যক্তির বিবেচনা করা উচিত।

ক্লাউড মাইনিং-এর ঝুঁকি

ক্লাউড মাইনিং-এর ঝুঁকি

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ক্লাউড মাইনিং ব্যবহারকারী নিকট একটি সুবিধাজনক পদ্ধতি হলেও, এই মডেলে মাইনিং করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঝুঁকি ও রয়েছে। আর, ক্লাউড মাইনিং এর নামেই বিশ্বজুড়ে বর্তমানে অনেক বেশি স্ক্যাম হয়ে থাকে। তাই, অনেকে না বুঝে এখানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত ও হতে পারেন।

ক্লাউড মাইনিং এর কিছু সাধারণ ঝুঁকির বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলো:

১. প্রতারণার ঝুঁকি

ক্লাউড মাইনিং এর নামে প্রায়ই বিভিন্ন প্রতারণার মত ঘটনাগুলো ঘটে। এক্ষেত্রে, কোন সার্ভিস প্রোভাইডার মাইনিং এর নামে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেবা প্রদান না করেই অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়। তাই, এ ধরনের ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীদের অর্থ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।

২. ক্লাউড মাইনিং-এ কম নিয়ন্ত্রণ থাকে

ক্লাউড মাইনিং পদ্ধতিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা মাইনিং ডিভাইস গুলো সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে, এগুলোর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সেসব সার্ভিস প্রোভাইডার এর কাছে থাকে এবং যার ফলে ব্যবহারকারীরা সম্পূর্ণভাবে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

৩. আয় কম হয়

সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে মাইনিং ডিভাইস সেটআপ করে সেগুলো দিয়ে উপার্জিত আয়ের তুলনায় Cloud Mining মডেলে লাভের পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে কম হয়। এক্ষেত্রে সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো তাদের পরিচালনার খরচ এবং লভ্যাংশ কেটে নেয়। আর যার ফলে, ক্রিপ্টো মাইনিং এর ব্যবহারকারীদের Net Income ও কমে যায়।

৪. ক্রিপ্টো মার্কেটের অস্থিতিশীলতার ক্ষতি

ক্রিপ্টোকারেন্সির মার্কেট সব সময় অস্থিতিশীল থাকে। ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম সব সময় ওঠানামা করে। তাই, আপনার Mining শুরু করা থেকে অর্জিত ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য কখনো হ্রাস পেতে পারে। আর এমনটি ঘটলে, সেসব বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

৫. হিডেন কস্ট

অনেক সময় ক্লাউড মাইনিং এর সার্ভিস দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে চুক্তির বাহিরে ও অতিরিক্ত খরচ অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, আর এটিকে হিডেন কস্ট বলে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এ ধরনের অতিরিক্ত খরচ তাদের লাভ অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে এবং তাদেরকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও করতে পারে।

এছাড়াও, ক্লাউড মাইনিং এর মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করতে আরো কিছু ঝুঁকি ও সমস্যা থাকতে পারে। তবে, এ ধরনের ঝুঁকি গুলোর কারণেই মূলত ক্লাউড মাইনিং এর বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত এবং সেই সাথে, ভালোভাবে মার্কেটে এনালাইসিস করে নির্ভরযোগ্য কোন ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার নির্বাচন করা উচিত।

কীভাবে একটি নির্ভরযোগ্য ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার সিলেক্ট করবেন?

কীভাবে একটি নির্ভরযোগ্য ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার সিলেক্ট করবেন?

ক্লাউড মাইনিং করার জন্য ব্যবহারকারীদের কে অবশ্যই একটি নির্ভরযোগ্য ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার সিলেক্ট করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটি সঠিক সার্ভিস প্রোভাইডার আপনার বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং আপনার লাভ নিশ্চিত করবে।

একটি ভালো এবং নির্ভরযোগ্য ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার খুঁজে নেওয়ার জন্য আপনি যেসব কাজগুলো করতে পারেন, সেগুলো হল:

সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো সম্পর্কে এনালাইসিস ও রিভিউ করা

কোন একটি ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার আগে আপনি সেই প্রোভাইডার সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের রিভিউ পর্যালোচনা করুন। এজন্য আপনি নির্ভরযোগ্য কোন ওয়েবসাইট এবং ফোরাম থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

সেই প্রতিষ্ঠানটির বিগত ইতিহাস ও খ্যাতিগুলো যাচাই করুন

কোন একটি প্রতিষ্ঠানে ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং এর জন্য বিনিয়োগ করার আগে আপনি সেই প্রতিষ্ঠানের বিগত ইতিহাস গুলো এবং তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে পর্যালোচনা করুন। দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে থাকে।

চুক্তির শর্তাবলী গুলো পর্যালোচনা করুন

সার্ভিস প্রোভাইডারের চুক্তির শর্তাবলী গুলো এবং প্রাইস রেটিং নির্ধারণের পদ্ধতি গুলো আপনি একবার রিভিউ করুন। এক্ষেত্রে দেখুন যে, তাদের শক্তিতে কোন লুকানো খরচ কিংবা ও স্পষ্ট শর্তাবলী আছে কিনা। আর সেসব চুক্তির শর্তাবলী আপনার বিনিয়োগের উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, সেটিও বিশ্লেষণ করুন।

Available মাইনিং প্যাকেজ এবং লাভ বিশ্লেষণ করুন

আপনি যে মাইনিং প্যাকেজটি ক্রয় করছেন, সেই প্যাকেজের সুবিধা ও খরচের পরিমাণ তুলনা করুন। এক্ষেত্রে প্যাকেজের লাভজনকতা বিশ্লেষণ করুন। আপনাকে বরাদ্দ দেওয়া মাইনিং পাওয়ার, খরচ এবং প্রত্যাশিত মুনাফা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিন এবং তারপর কোন প্যাকেজ বাছাই করুন।

প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা জেনে নিন

কোন একটি ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার আগে আপনি এই বিষয়ে জানার জন্য বিভিন্ন ফোরাম ওয়েবসাইট অথবা ইউটিউবে সার্চ করে প্রকৃত ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এটি আপনাকে, একটি নির্ভরযোগ্য ও সঠিক ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার এর খোঁজ দিতে পারে।

এসব নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি একটি বিশ্বাসযোগ্য Cloud Mining Service Provider খুঁজে পেতে পারেন। আর যা আপনাকে আপনার ক্রিপ্টো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থের সুরক্ষা ও লাভজনকতা নিশ্চিত করতে পারে।

Disclaimer: এই টিউনটিতে শুধুমাত্র ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন বাংলাদেশ আইনে অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং, এই মূহূর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করে কেউ ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। তবে, বাংলাদেশের কোন নাগরিক এই টিউনটি দেখে ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবহার করলে, টিউনার ও টেকটিউনস কোন দ্বায় বহন করবে না।

শেষ কথা

ক্রিপ্টো ক্লাউড মাইনিং বর্তমানে ক্রিপ্টো কারেন্সিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। এর কারণ হলো, এই পদ্ধতিতে নিজস্ব মাইনিং হার্ডওয়্যার কেনা কিংবা সেটআপ করার ঝামেলা থাকে না। সেই সাথে, ক্রিপ্টো কারেন্সি মাইনিং এর জন্য এই পদ্ধতি অনেক সহজ ও সুবিধাজনক।

ক্লাউড মাইনিং এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কম প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিয়েই মাইনিং শুরু করতে পারেন এবং এক্ষেত্রে মাইনিং ডিভাইস গুলো রক্ষণাবেক্ষণেরও কোন ঝামেলা থাকে না। তবে, ক্লাউড মাইনিং এর সুবিধা থাকার পাশাপাশি এর বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন, ক্লাউড মাইনিং এ প্রতারণার ঝুঁকি, কম নিয়ন্ত্রণ থাকা, মুনাফা কম হওয়া এবং ক্রিপ্টো মার্কেটের অস্থিতিশীলতা। তাই, কোন একটি ক্লাউড মাইনিং সার্ভিস প্রোভাইডার বেছে নেওয়ার আগে আপনার অবশ্যই ভালোভাবে তাদের সম্পর্কে এনালাইসিস করা উচিত এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য সার্ভিস প্রোভাইডার নির্বাচন করা উচিত।

অন্যদিকে, আপনি যদি আপনার বিনিয়োগের নিরাপত্তা এবং মাইনিং ডিভাইস গুলোর নিয়ন্ত্রণের উপর বেশি গুরুত্ব দেন, তাহলে নিজের জন্য অন্য কোন মাইনিং পদ্ধতির কথা বিবেচনা করতে পারেন। মোটকথা, ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর জগতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আপনি আপনার মার্কেট এনালাইসিস এবং নিজের জ্ঞানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। কেননা, ক্রিপ্টো কারেন্সির ভবিষ্যৎ সবসময় অনেকটাই অনিশ্চিত থাকে। তাই, আপনাকে সব সময় এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।

Level 15

আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।

“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস