স্মার্ট গৃহিনীদের রান্নাঘরে জায়গা পাচ্ছে এখন নতুন নতুন গ্যাজেট। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আধুনিক হচ্ছে প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘর। আর বর্তমানে গ্যাস লাইনের গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির কারনে সকলেই এখন বেছে নিচ্ছে বিকল্প পদ্ধতি। বাংলাদেশে গ্যাস লাইনের বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে বেশিরভাগ বাড়িতেই ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত বিভিন্ন চুলা বা রান্নার সরঞ্জাম।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গ্যাস লাইনে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সার্ভিস না থাকায় বাজারে ইন্ডাকশন কুকার ও ইনফ্রারেড কুকার এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। দেখতে প্রায় একই রকম হলেও ব্যবহারিক দিক থেকে এই দুটো ইলেকট্রিক চুলার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাইতো ইলেকট্রিক এই সকল চুলা কিনতে গেলে চিন্তায় পড়তে হয় যে কোনটি তুলনামূলক ভালো সুবিধা দেবে। ইন্ডাকশন কুকার কিনবেন নাকি ইনফ্রারেড কুকার কিনবেন এই নিয়ে বেশ ঝামেলার মধ্যে আছেন অনেকেই।
তাই আজকে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো কোন ইলেকট্রিক চুলাটি আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে। অর্থাৎ ইন্ডাকশন কুকার ভালো হবে নাকি ইনফ্রারেড কুকার ভালো হবে। তবে দুটো চুলা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করার আগে এই দুটি চুলা সম্পর্কে আগে ভালোভাবে ধারনা নেয়া উচিত। তাই চলুন প্রথমে আলাদা আলাদা ভাবে দুটো চুলা সম্পর্কেই ভালোভাবে জেনে নেয়া যাক।
বাংলাদেশে প্রচলিত প্রতিটি ব্রান্ডের ইন্ডাকশন কুকার চারকোনা আকৃতির হয় এবং উপরের অংশটি কাচের তৈরি থাকে৷ চুলার অভ্যন্তরে একটি ম্যাগনেটিক সেন্সর থাকে যার মাধ্যমে ইন্ডাকশন কুকার এর জন্য তৈরি বিশেষ পাত্রকে চৌম্বকীয় বলের মাধ্যমে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে। এর ফলে ঐ পাত্রে তাপ সঞ্চালন হয় এবং খুব দ্রুত যে কোনো রান্না হয়ে যায়। ইন্ডাকশন কুকারে রান্না করলে আপনাকে এক সেট স্টিলের রান্নার পাত্র কিনে নিতে হবে যা ইন্ডাকশন কুকার এর ম্যাগনেটিক সেন্সরকে আকর্ষণ করতে পারে। কেননা সব ধরনের পাত্র এই চুলায় রান্নার জন্য উপযুক্ত না।
তবে একটি ভালো দিক হলো ইন্ডাকশন কুকার এর ওপরের অংশ বা নিচের অংশ কোনো সাইড থেকেই চুলা গরম হয় না। শুধুমাত্র চুলায় বসানো পাত্রটি গরম হয়। তাই রান্না করা যায় একেবারে নিরাপদে। ইন্ডাকশন কুকারে বিদ্যুৎ বিল খুব বেশি আসে না। নিয়মিত রান্না করলে আনুমানিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মতো বিল আসতে পারে।
বাংলাদেশের মার্কেটে ইন্ডাকশন কুকার এর মূল্য তিন হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। সেই সাথে আপনাকে একসেট স্টিলের পাত্র কিনতে হবে যা এক হাজার টাকা বা তার থেকে কম মূল্যে কিনতে পারবেন৷ কিন্তু সবথেকে ভালো হয় মার্বেল কোটিং কুক সেট কিনতে পারলে। চার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে আপনি ইন্ডাকশন কুকার সাপোর্ট করে এমন মার্বেল কোটিং কুকিং সেট পেয়ে যাবেন।
ইনফ্রারেড কুকার দেখতে একদম ইন্ডাকশন কুকার এর মতো চারকোনা আকৃতির ও উপরের স্তরটি মোটা গ্লাসের তৈরি। ইনফ্রারেড কুকার বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ ছড়িয়ে দেয় ফলে চুলার ওপরের অংশের গ্লাসটি গরম হয়ে তাপ ওপরের দিকে তুলে দেয়। ফলে চুলার ওপরে যে কোনো পাত্র বসালে তা খুব সহজেই গরম হয়ে যায়। তবে চুলার ওপরে হাত বা কাপড়ের কোনো প্রান্ত পড়লে সাথে সাথে তা পুড়ে যাবে।
ইনফ্রারেড কুকারে রেগুলার রান্না করলে আনুমানিক ৪০০ টাকার মতো বিদ্যুৎ বিল আসতে পারে। সাধারণ গ্যাসের চুলার থেকে ইনফ্রারেড কুকারের তাপ সামান্য কম। তবে এই চুলায় আপনি খুব সহজেই বারবিকিউ থেকে শুরু করে যে কোনো রান্না যে কোনো পাত্রে করতে পারবেন।
বাংলাদেশের মার্কেটে ইনফ্রারেড কুকার এর মূল্য সাধারণত সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকার মধ্যে।
আসলে সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করলে দেখা যায় দুটো চুলার মধ্যেই কিছু সুবিধা আছে আবার কিছু অসুবিধা আছে। তাই একতরফা ভাবে কোনোটা খারাপ না আবার কোনোটা একেবারে ভালো না। তাই আপনার সুবিধা, বাজেট ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে সঠিক চুলাটি বাছাই করে নিতে হবে।
যেমন প্রাথমিক পর্যায়ে চুলা ও পাত্র সহ সব মিলিয়ে ইন্ডাকশন চুলার দাম বেশি পড়ছে। অন্যদিকে ইনফ্রারেড কুকারে সব ধরনের পাত্র ব্যবহার করা যায় বলে আলাদা করে আর কোনো পাত্র কিনতে হচ্ছে না। তাই এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ কম লাগছে। তাই যাদের বাজেট কম এবং জরুরি ভিত্তিতে ইলেকট্রিক চুলা কেনা প্রয়োজন তাদের জন্য ইনফ্রারেড কুকার ভালো হবে।
আবার বিদ্যুৎ খরচের দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় ইন্ডাকশন কুকার এর খরচ কম। বিদ্যুৎ বিল এর দিক থেকে একদম যে অনেক পার্থক্য তা কিন্তু নয়। কিন্তু সামান্য হলেও কম খরচ হবে ইন্ডাকশন কুকারে। তাই বিদ্যুৎ বিল নিয়ে চিন্তা থাকলে ইন্ডাকশন কুকার নেয়াটাই উত্তম হবে।
ইন্ডাকশন কুকারে সরাসরি পাত্র হিট হয়। তাই তাপ অপচয় হয় না এবং রান্না দ্রুত হয়। অন্যদিকে ইনফ্রারেড কুকারের ওপরের স্তর হিট হয়ে সেটা পাত্রকে হিট করে। ফলে তাপের অপচয় হয় এবং রান্নায় সময় বেশি লাগে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে ইন্ডাকশন কুকার ভালো।
আবার ইন্ডাকশন কুকার এর তুলনায় ইনফ্রারেড কুকার কম সময় লাস্টিং করে। উচ্চ তাপে ইনফ্রারেড কুকার এর ওপরের অংশ ফেটে যাওয়ার চান্স থাকে। তাছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানি এই চুলার জন্য কোনো গ্যারান্টি দিতে পারে না। তবে একদম যে খারাপ সার্ভিস দেয় তা-ও না।
আমি মনে করি প্রথমেই যাদের একটু বাজেট ভালো তাদের ইন্ডাকশন কুকার কেনা উচিত। আর যাদের বাজেট একটু কম তারা ইনফ্রারেড কুকার নিতে পারেন। আসলে কোনোটিই একেবারে খারাপ সার্ভিস দেয় না৷ আপনি আপনার সুবিধা মতো যে কোনো একটি বাছাই করতে পারেন। আর ইনফ্রারেড কুকারে রান্নার সময় অবশ্যই বাচ্চাদের সাবধানে রাখবেন যাতে অজান্তেই চুলার গরম কাচের ওপর হাত না দিয়ে দেয়।
আশাকরি ইন্ডাকশন কুকার আর ইনফ্রারেড কুকার নিয়ে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন৷ এখন আপনি আপনার সুবিধা ও বাজেট অনুযায়ী যে কোনো একটি কিনতে পারেন। আর অবশ্যই নিজের চাহিদা ও সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।