হ্যালো ভিউয়ার্স, আসসালামু আলাইকুম। মোবাইল ফোন, বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। অত্যাধুনিক ফিচার সম্পন্ন মোবাইল ফোন গুলো জীবনযাত্রাকে করেছে অনেক সহজ এবং যোগাযোগ মাধ্যম কে করেছে অনেক উন্নত। কিন্তু বাজারে মোবাইল ফোন কিনতে গেলে সাধারণ জনগণকে হর হামেশাই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তা হচ্ছে, আপনি অফিসিয়াল মোবাইল ফোন কিনবেন নাকি আনঅফিশিয়াল?
আজকের এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে উপরের প্রশ্নটিকে ঘিরে। এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, আপনার অফিশিয়াল মোবাইল ফোন কেনা উচিত হবে নাকি আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন কেনা উচিত হবে।
প্রথমে আলোচনা করা যাক অফিশিয়াল মোবাইল ফোন গুলো নিয়ে।
ফোন কোম্পানিগুলো সরকারের সকল নিয়ম-কানুন মেনে ও ট্যাক্স এবং ভ্যাট প্রদান করে, বৈধ ভাবে সকল ফরমালিটিস গুলো পূরণ করে, মাদার কোম্পানি থেকে যে মোবাইল ফোন গুলো দেশে নিয়ে আসে ও অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল দায় ভার বহন করে সেসব মোবাইল ফোনগুলোকে অফিশিয়াল মোবাইল ফোন বলা যায়। প্রায় সকল কোম্পানির অফিসিয়াল ফোন গুলো বাজারে অ্যাভেলেবল, হাতে গোনা দু একটি কোম্পানি ছাড়া।
এখনো আলোচনা করব অফিসিয়াল ফোন কেনার সুবিধা গুলোঃ
১) দেশের প্রতি অবদানঃ
অফিসিয়াল ফোন গুলো সাধারণত সরকার কতৃক ধার্যকিত সকল ট্যাক্স এবং ভ্যাট প্রদান করে দেশে আনা হয়। তাই এই ফোন ক্রয় করা মানে আপনি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন।
২) ওয়ারেন্টি সার্ভিসঃ
অফিসিয়াল ফোন গুলো ক্রয় করলে আপনি কোম্পানি করতে নির্ধারিত একটি ওয়ারেন্টি পিরিয়ড পাচ্ছেন। যে ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে কোনরকম সমস্যা হলে সেই ফোনটির সকল দায়ভার কোম্পানি বহন করবে।
৩) নিশ্চয়তাঃ
আপনি টাকা খরচ করে আপনি একটি ব্র্যান্ড নিউ মোবাইল ফোন কিনছেন এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারবেন।
৪) আপডেট ইস্যুঃ
মোবাইল ফোনের ছোটখাটো বাগ বা নেটওয়ার্ক প্রবলেম গুলো সমাধানের জন্য কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত সকল আপডেট নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে করে আপনার ফোনটি আপটুডেট থাকবে।
৫) রিসেল ভ্যালুঃ
পুনরায় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অফিশিয়াল ফোনগুলো বিক্রয় মূল্য তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। কারণ এই ফোনের সাথে কোম্পানি কতৃক আই এম ই নাম্বার সহ বক্স ও যাবতীয় ডকুমেন্ট পাওয়া যায়।
৬) আইনি জটিলতাঃ
এ ধরনের ফোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা নেই এবং এই ফোন গুলোর সার্ভিস বন্ধ হওয়ার কোন ঝুঁকি নেই।
৭) সরকারি রেজিস্ট্রেশনঃ
অফিসিয়াল ফোনের আইএমই নাম্বার গুলো ডাটা বিটিআরসির কাছে মজুদ রয়েছে। তাই এই ফোন গুলো হারিয়ে গেলে ট্রাকিং করা সহজ। এতে করে আপনি একটি অ্যাডভান্টেজ পেতে পারেন।
অফিসিয়াল ফোনের অসুবিধা সমূহ:
১) মূল্যঃ
সরকারকে ভ্যাট এক্স প্রদান করা লিগাল ভাবে দেশে আসার জন্য অফিসিয়াল ফোন গুলোর দাম তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। ফ্লাগসিপ মোবাইল গুলোর ক্ষেত্রে যা খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায়।
২) গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টিঃ
বেশিরভাগ ফোনেই ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কোম্পানির কর্তৃক আর কোন সার্ভিস পাওয়া যায় না।
৩) লিমিটেশনঃ
অনেক ক্ষেত্রেও একটি ফোনের সবগুলো ভেরিয়ান্ট অফিসিয়ালি পাওয়া যায় না। কোম্পানি গুলো দেশের উপর ভিত্তি করে করে কিছু কিছু ভেরিয়ান্ট নিয়ে আসে না। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে প্রসেসর চিপ, রেম ও রম কন্সিডার করতে হতে পারে।
৪) স্পেয়ার পার্টসঃ
অফিসিয়াল স্পেয়ার পার্টস এর মূল্য তুলনামূলক বেশি। অফিসিয়াল সার্ভিস ওয়ারেন্টি গ্রহণ করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই অফিশিয়াল পার্টস ক্রয় করতে হবে। অনেকেই এই ব্যাপারে কম্পেইন করে থাকে।
এবার আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন গুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
যে ফোনগুলি সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স গুলো ফাঁকি দিয়ে দেশে প্রবেশ করে সেগুলোই মূলত আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন। এই ধরনের ফোন গুলো সরকারের কাছে কোন রেজিস্ট্রেশন থাকে না।
আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোনের সুবিধা সমূহঃ
১) মূল্যঃ
আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোনগুলো মানের দিক থেকে অফিসিয়াল ফোন গুলোর সমকক্ষ বা একটু বেশি ফিচার সমৃদ্ধ হওয়ার পরে ও এর দাম তুলনামূলক কম। কারণ, এই ফোন গুলোর ক্ষেত্রে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয় না বা তা ফাঁকি দেয়া হয়।
২) রেসেল ভ্যালুঃ
আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোনের একটি বিশাল মার্কেট বাংলাদেশে রয়েছে যার কারণে এই ফোনগুলো বিক্রি করাতেও খুব একটা হ্যাশেল নেই। তবে অরিজিনাল বক্স না থাকলে দামে কম বেশি হতে পারে।
৩) অ্যাডভান্টেজঃ
আনঅফিসিয়াল ফোন প্রায় সবগুলো ভেরিয়েন্টটি বাজারে পাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী প্রসেসর চিপসেট, রেম ও রম নিতে পারেন। যা মাঝে মাঝে অফিসিয়াল ফোন গুলোর থেকেও আপনাকে বেশি সাপোর্ট দিবে।
আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোনের অসুবিধা সমূহ:
১) ওয়ারেন্টিঃ
আনঅফিসিয়াল ফোন গুলো চোরাই পথে আনায় অথরাইজড ইম্পোর্টারদের সাথে এর কোন রিলেশন থাকে না, তাই এই ফোনগুলোতে অফিসিয়াল কোনরকম সার্ভিস ওয়ারেন্টি পাওয়া যায় না।
২) ডাটাবেজঃ
এই ধরনের ফোনের কোনরকম রেজিস্ট্রেশন থাকেনা। এমনকি বিটিআরসির কাছে এই আনঅফিসিয়াল ফোন গুলোর কোন ডাটা নেই।
৩) আইনি জটিলতাঃ
ম্যাট্রিক্স ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে এই ফোনগুলো বাজারে আসে বলে সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে এ ধরনের ফোন গুলোর সার্ভিস বন্ধ হওয়ার একটি ঝুঁকি আছে। তাই বলা যেতে পারে এ ধরনের ফোন গুলো ব্যবহার একটু আইনি ঝুঁকি আছে।
৪) ট্র্যাকিংঃ
আন-অফিসিয়াল ফোনগুলো হারালে তা ফেরত পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ, এটি ট্রাকিং করা কঠিন। কারণ, এই ফোন গুলোর প্রপার কোন ডাটাবেজ নেই।
৫) নিশ্চয়তাঃ
অর্থ খরচ করে আপনি যে আনঅফিসিয়াল একটি ফোনে প্রথম মালিক তা কিন্তু অনিশ্চিত।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এতক্ষণে আপনারা অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল ফোনগুলো সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পেয়েছেন। এবার আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি ডিসাইড করতে পারবেন আপনি আনঅফিসিয়াল ফোন নেবেন নাকি অফিসিয়াল। তবে আনঅফিসিয়াল ফোন গুলো বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে এবং এই আনঅফিসিয়াল ফোন গুলো বৈধকরণে কাজ করে যাচ্ছে এনইআইআর।
সাবধানতাঃ অনেক সময় আনঅফিসিয়াল ফোন গুলো ক্লোন করে বা অফিশিয়াল বলে বিভিন্ন শোরুমে বিক্রি করা হয়।
সেই ক্ষেত্রে নিম্ন লিখিত কাজগুলো করতে পারেন:
১) #০৬# ডায়াল করে ফোনের আইএমই বের করে, তা আই এম ই চেকারে দিলেই ফোনের যাবতীয় ডিটেলস বের হয়ে আসছে কিনা।
২) সকল ফোনে একটি সিক্রেট কোড থাকে সেই সিক্রেট কোড, মোবাইলের মডেল দিয়ে গুগল সার্চ করলে অফিশিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল ফোন চিন্তে পারবেন।
৩) ২০১৮ সালের পরে বাজারে আসা সকল ফোনের ডাটাবেজ বিটিআর সি এর কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। চাইলে সেখান থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে দেখে নিতে পারেন।
আমি দেশি বাইকার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।