প্রসেসর এবং সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে ৩২ বিট এবং ৬৪ বিট আসলে কি? জেনে নিন ৩২ বিট এবং ৬৪ বিট এর সবকিছু

টিউন বিভাগ কম্পিউটিং
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালই আছেন। আজকে আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা যখন কোন কম্পিউটার কিনতে যান বা ডেক্সটপের জন্য প্রসেসর ঠিক করতে চান তখন দেখে থাকবেন প্রসেসর এর স্পেক এ লেখা আছে “64 Bit” অথবা  “32 bit”। এখন যদিও ৩২ বিট ডেক্সটপ প্রসেসর পাওয়া যায় না। সবাই এখন ৬৪বিট প্রসেসর ব্যবহার করে। তো আসলে এই ৩২ বিট বা ৬৪ বিট প্রসেসর জিনিসটা আসলে কি? এটাই আমি এই টিউনে আপনাদের কে বিস্তারিতভাবে জানাবো।

৬৪-বিট কম্পিউটার আসলে কি?

আমরা যখন কম্পিউটারে কোন কাজ করি বা কোন কিছু স্টোর করি তখন আমরা গিগাবাইট বা গিগাহার্জ এ হিসাব করি। কিন্তু আসলে কম্পিউটারের ভিতরের সব হিসাব বিট হিসেব করে করা হয়। বিট হলো এক ধরনের বাইনারি সংখ্যা যেগুলো শূন্য এবং এক দিয়ে হিসাব করা হয়। সোজা কথায় যত বেশি বিট তত বেশি ইনফর্মেশন নিয়ে কাজ করা সম্ভব।

সাধারণত কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলোতে সবসময় ডাটা আদান প্রদান হয় না। এগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে আদান প্রদান হয়। এবং এগুলো একটি নির্দিষ্ট বিট সাইজে লিমিটেড থাকে। তেমনি কম্পিউটারের প্রসেসরেরও নির্দিষ্ট একটি লিমিট আছে এবং এই পরিমাণ ডাটা নিয়ে প্রসেসর একক সময়ে কাজ করতে পারে। এবং এই নির্দিষ্ট পরিমাণকে “Word size” বলা হয়। আপনাদের হয়ত বুঝতে একটু সমস্যা হতে পারে।

যাই হোক আমরা যখন ৬৪বিট প্রসেসর বলি তখন আমরা আসলে বুঝাই যে অই প্রসেসরটির “word size” ৬৪ বিট। অর্থাৎ ঐ প্রসেসরটি নির্দিষ্ট সময়ে ৬৪ বিট কাজ করতে পারে। জতটা সহজ মনে হচ্ছে আসলে ততোটা সহজ নয়। ব্যাপারগুলো একটু কঠিন।

অপারেটিং সিস্টেমে ৩২ বিট বনাম ৬৪ বিট

কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের প্রসেসরকে বলে দেয় কখন কি করতে হবে। কথা থেকে ফাইল অ্যাক্সেস নিতে হবে।

আমরা যখন নতুন উইন্ডোজ দিতে যাই বা অন্য যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করতে যাই তখন সবসময় অপারেটিং সিস্টেমের দুইটি ভার্সন দেখতে পাই। একটি x64 এবং অন্যটি x86। এখানে x64 দিয়ে আসলে ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম বুঝায়। আর x86 দিয়ে আসলে ৩২ বিট অপারেটিং সিস্টেম বুঝায়। কেউ ৮৬ দেখে আবার ৮৬বিট ভাইবেন না। তাই অপারেটিং সিস্টেম ডাউনলোড করার আগে দেখে নিবেন আপনার কম্পিউটারের প্রসেসর কত বিট এর।

কারণ আপনার কম্পিউটার যদি ৬৪ হয় তাহলে আপনাকে ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করতে হবে। কারণ তা না হলে আপনি ৬৪ বিট প্রসেসরের পুরো ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবেন না। তবে আমরা চাইলে ৬৪ বিট কম্পিউটারে ৩২ বিট অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করতে পারি। কিন্তু ৩২ বিট প্রসেসর ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট করে না। তাই ৩২ বিট কম্পিউটারে ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল দেয়া সম্ভব না।

৩২ বিট থেকে ৬৪ বিট প্রসেসরের ইতিহাস

প্রথমে কম্পিউটারের প্রচেসরগুলো ৩২ ছিল। কারণ আজ থেকে ১০ বছর আগেও ৪ মেগাবাইট র‍্যাম ছিল সাধারণ। এবং তাদের কাছে এটাই অনেক ছিল। এবং ভাল কাজ করতে পারত। কিন্তু এখন চিন্তা করে দেখুন। আমরা যখন নতুন কম্পিউটার কিনি তখন আমরা সাধারণত ৪ গিগাবাইট এর র‍্যাম কিনি। কোথায় ৪ মেগাবাইট আর কোথায় ৪ গিগাবাইট।

দিন দিন কম্পিউটারের সফটওয়্যার গুলোর ক্ষমতা বাড়তে শুরু করলে আমাদের আরো বেশ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার দরকার হল। তখন তৈরি করা হল ৬৪বিট প্রসেসর। ৩২বিট প্রসেসর সর্বোচ্চ ৩.৩-৩.৫ জিবি র‍্যাম ব্যবহার করতে পারে। টেকনিকালি ৬৪ বিট প্রসেসরে ১৬ এক্সাবাইট র‍্যাম পর্যন্ত ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু এও রিমান র‍্যাম সারা পৃথিবীর সব কম্পিউটার এক করলেও হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

৬৪ বিট প্রসেসরের সুবিধা

৩২ বিট প্রসেসর থেকে অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায় ৬৪ বিট প্রসেসরে। সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যায় র‍্যাম এবং প্রসেসিং পাওয়ার এর ক্ষেত্রে। এবার দেখা যাক ৬৪ বিট কম্পিউটারের সুবিধাগুলো।

স্পিড

৩২ বিট কম্পিউটারের চেয়ে ৬৪ বিট কম্পিউটারের গতি অনেক বেশি। কারণ ৩২ বিট থেকে ৬৪ বিট এর “word size” দ্বিগুণ। তাই এক সাথে অনেক বেশি কাজ করা সম্ভব। তাছাড়া ৬৪ কম্পিউটারে আপনি ৩২ কম্পিউটারের তুলনায় প্রায় ৪ বিলিয়ন গুন বেশি কম্বিনেশন তৈরি করতে পারবেন।

বেশি র‍্যাম সাপোর্ট করে

প্রসেসর যখন কোন বিষয় নিয়ে কাজ করে তখন তা র‍্যামে স্টোর করে। এবং ঐ ডাটা কই আছে তা পরে খুঁজে বের করার জন্য কম্পিউটার র‍্যাম এর যেখানে ডাটা রেখেছে তাকে একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা দিয়ে দেয়। এবং পরে সেই অনুযায়ী ডাটা খুঁজে বের করে। এবং এই ঠিকানা কতটি পর্যন্ত দেয়া যাবে তা নির্ভর করে র‍্যাম এর বিট সাইজ এর উপর। বিট যত বেশি হবে প্রসেসর তত বেশি ঠিকানা এসাইন করতে পারবে। তাই ৬৪ বিট প্রসেসর ৩২ বিট এর থেকে অনেক বেশি র‍্যাম নিয়ে কাজ করতে পারে।

৩২ বিট কম্পিউটারে ৪ গিগাবাইট র‍্যাম ব্যবহার করা গেলেও আসলে প্রসেসর এই র‍্যাম এর পুরো অংশ কাজে লাগাতে পারে না। এবং আপনি যদি ৩২ বিট কম্পিউটারে ৪ গিগাবাইট এর বেশি র‍্যাম লাগান সেটি কোন কাজে আসবে না। কারণ ৩২ বিট কম্পিউটার তা ব্যবহার করতে পারবে না।

তাই আপনার যদি ৪ গিগাবাইট এর বেশি র‍্যাম এর প্রয়োজন হয় তবে আপনার অবশ্যই ৬৪ বিট প্রসেসর ব্যবহার করতে হবে। কারণ এখনকার এ.এম.ডি প্রসেসরগুলো প্রায় ২৫৬ টেরাবাইট পর্যন্ত র‍্যাম ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু এই পরিমাণ র‍্যাম ব্যবহার করার মত প্রযুক্তি এখনো তৈরি হয়নি।

মেমরি ম্যাপিং

আপনি যখন কম্পিউটারে কোন ডাটা রাখেন তখন কম্পিউটার কিভাবে বুঝে যে আপনি কোণ জায়গায় ডাটা রেখেছেন? আসলে আপনি যখনই কথায় কিছু স্টোর করেন তখন কম্পিউটার সেই জায়গার একটি ঠিকানা দিয়ে দেয়। এবং আপনি যখন কম্পিউটার কে সেই ফাইল খুঁজে বের করতে বলে তখন কম্পিউটার প্রসেসর এবং কম্পিউটার র‍্যাম শেই ফাইল খুঁজে বের করার জন্য কাজ করে। তাই প্রসেসর যত ক্ষমতা সম্পন্ন হবে আপনি তত তারাতারি ফাইল খুঁজে পাবেন। তাই আপনি যদি অনেক বেশি ডাটা নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই ৬৪বিট কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত।

কোন ধরনের সফটওয়্যার ৬৪ বিট প্রসেসর থেকে সুবিধা নিতে পারে?

এক কথায় বলতে গেলে যেসব সফটওয়্যার অনেক ডাটা নিয়ে একসাথে কাজ করে তারাই ৬৪ বিট প্রসেসর থেকে সুবিধা নিতে পারে। এখনকার সব সফটওয়্যারই আসলে এরকম। তবে ভিডিও বা ফটো এডিটিং সফটওয়্যারগুলোর জন্য ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম প্রয়োজন। কারণ এসব সফটওয়্যার অনেক বেশি ডাটা নিয়ে কাজ করে। এছাড়াও বিভিন্ন ডাটাবেস সফটওয়্যার এবং সার্ভারগুলোকে বিপুল পরিমাণ ডাটা নিয়ে একসাথে কাজ করতে হয়। তাই এসব ক্ষেত্রেও ৬৪ বিট প্রসেসর দিয়ে অনেক দ্রুত গতিতে অনেক কাজ করা সম্ভব।

৬৪ বিট কম্পিউটারের সমস্যাগুলো

আসলে কিছু সুবিধা পেতে হলে কিছু সমস্যা থাকবেই। ৬৪ বিট কম্পিউটারের আসলে তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে আপনি যদি ৬৪ কম্পিউটারে ২ গিগাবাইট এর কম র‍্যাম ব্যবহার করেন তাহলে আপনার কম্পিউটার স্লো থাকবে। এখনকার সব সফটওয়্যারেরই ৬৪ বিট ভার্সন আছে। তবে কিছু কিছু সফটওয়্যারে সমস্যা হতে পারে। আর সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হতে পারে যদি আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার পুরানো হয়। কারণ ৩২ ড্রাইভার ৬৪ বিট কম্পিউটারে কাজ করে নাই। তাই এমন অবস্থায় পরলে আপনাকে হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করতেই হবে।

আজ এ পর্যন্তই। আজকের টিউনটি মনে হয় বেশি কঠিন করে ফেললাম। আমি যতটুকু পারি আপনাদের সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরেও যদি আপনাদের বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই টিউমেন্ট করুন। আমি বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। আর আমার এই টিউনে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে টিউমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন আমি তা ঠিক করে দিব। সবাইকে টিউনটি পরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।

 

Level 2

আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস